Prothomalo:
2025-02-27@23:19:26 GMT

ভোট ও দলীয় ঐক্যের কথাই উঠে এল

Published: 27th, February 2025 GMT

বিএনপির বর্ধিত সভায় তিন শীর্ষ নেতাসহ মাঠপর্যায়ের নেতাদের বক্তব্যে মূলত ভোটের কথাই উঠে এল। পাশাপাশি ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান–পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের সুযোগ কাজে লাগাতে দলীয় ঐক্যের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।

সভায় তৃণমূল নেতাদের কাছ থেকে সারা দেশে দখল ও চাঁদাবাজির ব্যাপারে দলের ‘কঠোর’ অবস্থানে দৃঢ় থাকার পরামর্শ এসেছে। আগামী জাতীয় নির্বাচন ‘কঠিন’ হবে জানিয়ে অনেকে প্রার্থী মনোনয়নে এবার ‘হাইব্রিড’ নেতাদের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। সভায় একসময়ের রাজনৈতিক মিত্র জামায়াতে ইসলামীর প্রসঙ্গও ওঠে। দলটির সাম্প্রতিক তৎপরতায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকার মতও দিয়েছেন কোনো কোনো নেতা।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিএনপির এই বর্ধিত সভায় দলের কেন্দ্রীয় এবং জেলা, উপজেলা ও পৌর কমিটির ১০০ জনের বেশি নেতা বক্তৃতা করেন। জাতীয় সংসদের এলডি হল-সংলগ্ন মাঠে এ সভা হয়। বেলা ১১টায় শুরু হয়। রাত ১১টায় সভা শেষ হয়।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নানামুখী আলোচনার মধ্যে রাজধানী ঢাকায় বড় আয়োজনে এ বর্ধিত সভা হলো। বিএনপির প্রায় সাড়ে তিন হাজার নেতার মিলনমেলায় পরিণত হয় এ সভা। প্রায় ছয় বছর পর অনুষ্ঠিত দুই পর্বে বর্ধিত সভার উদ্বোধন করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। রাতে সমাপনী বক্তৃতাও দেন তিনি। লন্ডনে চিকিৎসাধীন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। তাঁরা দুজনই ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তৃতা করেন। স্বাগত বক্তব্য দেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পরে প্রতিনিধিদের নিয়ে কর্ম–অধিবেশন হয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে খালেদা জিয়া প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন ন্যূনতম সংস্কার সম্পন্ন করে দ্রুত গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের প্রত্যাশিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফেরার। তারেক রহমান নির্বাচনের জন্য ‘বিএনপিকে প্রস্তুত’ করতে নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

‘ব্যক্তি নয়, দলকে প্রস্তুত করুন’

জাতীয় নির্বাচনের জন্য ‘বিএনপিকে প্রস্তুত’ করতে নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, ‘মাফিয়া প্রধানের পালানোর পর দেশে বর্তমানে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে এসেছে। জাতীয় নির্বাচনের সময় হয়তো ঘনিয়ে আসছে। তাই দলকে কোনো ব্যক্তি নয়, বরং দলকে এ ব্যাপারে (নির্বাচন) ধীরে ধীরে প্রস্তুত করুন। সর্বস্তরের নেতা-কর্মী-সমর্থক-শুভাকাঙ্ক্ষীর প্রতি আমার আহ্বান, আপনারা শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকুন, যেকোনো মূল্যে ঐক্যকে ধরে রাখুন।’

তারেক রহমান বলেন, ‘আমি গণতন্ত্রকামী দেশবাসীর উদ্দেশে একটি বার্তা দিয়ে বলতে চাই, বিএনপি শুধু আপনাদের ভোটের অধিকার পুনরুদ্ধারই নয়, আপনাদের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে চায়। আপনাদের সমর্থন পেলে বিএনপি এমন একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়, যে সরকার আপনাদের কাছে তথা দেশবাসীর কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবে। আমি বিএনপির পক্ষ থেকে সকলের সহযোগিতা, সমর্থন চাই।’ তিনি বলেন, রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার জন্য জনগণের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের কোনো বিকল্প নেই। এই ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার পূর্বশর্ত হলো প্রত্যেক নাগরিকের ভোট প্রয়োগের অধিকার বাস্তবায়ন।

নির্বাচন নিয়ে কোনো কোনো উপদেষ্টার বক্তব্য নিয়ে সংশয়ের কথা জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘বিভিন্ন সময় নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য জনমনে ইতিবাচক ধারণা পোষণ করলেও জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কোনো কোনো উপদেষ্টার বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য-মন্তব্য গণতন্ত্রকামী জনগণের জন্য হতাশার কারণ হয়ে উঠেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি বিএনপিসহ গণতন্ত্রের পক্ষের সব রাজনৈতিক দলের নিঃশর্ত সমর্থন থাকলেও সরকার এখনো তাদের কর্মপরিকল্পনায় অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে পারছে না।

‘স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন’

তারেক রহমান বলেন, সারা দেশে খুন-হত্যা-ধর্ষণ-চুরি-ছিনতাই-রাহাজানি বেড়েই চলেছে। বাজার সিন্ডিকেটের কবলে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণহীন। সরকার এখনো দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। সরকার যেখানে বাজার পরিস্থিতি কিংবা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করতে পারছে না, সেখানে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের নামে কেন দেশের পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করতে চাইছে—এটি জনগণের কাছে বোধগম্য নয়। তিনি বলেন, গণতন্ত্রকামী জনগণ মনে করেন স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে সেটি হবে সারা দেশে পলাতক স্বৈরাচারের দোসরদের পুনর্বাসনের একটি প্রক্রিয়া, যা সরাসরি গণ-অভ্যুত্থান আকাঙ্ক্ষার বিরোধী। গণহত্যাকারী, টাকা পাচারকারী, মাফিয়া চক্রকে পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার এই ফাঁদে বিএনপি পা দেবে না। তিনি স্থানীয় সরকার নির্বাচনের পরিকল্পনা থেকে অন্তর্বর্তী সরকারকে সরে আসার আহ্বান জানান।

‘সব নতুন দলকে স্বাগত জানাই’

তারেক রহমান বলেন, বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী বিএনপি সব নতুন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনকে স্বাগত জানায়। তবে নির্বাচনের মাধ্যমে গ্রহণ কিংবা বর্জনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে জনগণ। সুতরাং প্রতিটি দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সবার আগে নির্বাচন কমিশনকে প্রস্তুত রাখতে হবে। তিনি নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আরও সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানান।

ক্ষমতায় গেলে গণহত্যাকারীদের বিচার এবং ৩১ দফা সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার আশ্বাস দেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, বিএনপির ৩১ দফা হচ্ছে একটি বৈষম্যহীন মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সনদ। তবে এই ৩১ দফাই শেষ কথা নয়। সময়ের প্রয়োজনে রাষ্ট্র, সরকার, রাজনীতি ও রাজনৈতিক দলের সংস্কারের জন্য এই ৩১ দফাতে সংযোজন-বিয়োজনের সুযোগ রয়েছে। এই ৩১ দফার সঙ্গে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার প্রস্তাবে খুব বেশি ইস্যুতে মৌলিক বিরোধ নেই।

‘কিছু ব্যক্তি জনগণকে বিভ্রান্ত করছে’

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম গুম কমিশনের প্রতিবেদনের উল্লেখ করে বলেন, ‘আমরা বলি ৭৫০ জন, কিন্তু গুম হয়েছে প্রায় ১৭০০ জন, যেটা বাংলাদেশের মানুষ অতীতে কখনো দেখেনি। হত্যার শিকার হয়েছেন ২ হাজার ২৮৯ জন, বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার ২ হাজারের ওপর। এই পরিসংখ্যান এ জন্যই উল্লেখ করছি যে জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য কী পরিমাণ ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে একটি লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টিকে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা ফ্যাসিবাদকে তাড়িয়েছি, শেখ হাসিনাকে তাড়িয়েছি। আমরা এখন অপেক্ষা করছি, দেশকে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্বপ্নের আধুনিক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশে রূপান্তর করার। কিন্তু সেই গণতন্ত্রকে বিঘ্নিত করার জন্য ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা বিদেশ থেকে চেষ্টা করছেন, বাইরে থেকেও চেষ্টা করা হচ্ছে, একই সঙ্গে দেশের অভ্যন্তর থেকেও কিছু কিছু ব্যক্তি-গোষ্ঠী ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘৫ আগস্টের পরিবর্তন ও ফ্যাসিস্ট হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর মানুষ আশা করেছিল দেশের অবস্থার পরিবর্তন হবে। অতি দ্রুত দেশের জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়া হবে, গণতন্ত্রের চর্চা হবে এবং জনগণ তার প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারবে। কিন্তু আমরা দুঃখের সঙ্গে দেখছি, এখন পর্যন্ত সেই লক্ষ্যে সুস্পষ্ট নির্দেশনা পাচ্ছি না।’

১৫ বছরের লড়াইকে বাস্তবে রূপ দিতে নেতা-কর্মীদের ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে বলেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘আমরা নিশ্চয়ই এমন কিছু কাজ করব না, যা দলের সুনামকে ক্ষুণ্ন করবে এবং আমাদের যাত্রাকে ব্যাহত করবে।’

‘সামনে কঠিন সময়’

সভায় উপস্থিত একাধিক সূত্র জানিয়েছে, দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পৌর ও উপজেলার নেতারা বক্তব্য দেন। সন্ধ্যার পর থেকে জেলা ও মহানগর ও কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য দেন। স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সালাউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।

বিভিন্ন দল বিএনপির বদনাম করছে উল্লেখ করে মির্জা আব্বাস দলীয় নেতাদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমরা সেই সুযোগ কেন দেব? অপকর্ম কিছু হচ্ছে। এখান থেকে গিয়ে দয়া করে সেখান (অপকর্ম) থেকে দূরে থাকবেন।’

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপির জনপ্রিয়তা নষ্টের অনেক ষড়যন্ত্র হচ্ছে। সামনে কঠিন সময় আসবে। যদিও প্রতিপক্ষ কেউ বিএনপির সমকক্ষ নয়। তবে পুরোনো ধাঁচে চললে বিএনপির জনপ্রিয়তা ধরে রাখা যাবে না।

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ষড়যন্ত্র চলমান, দৃশ্যমান নয়। দৃশ্যমান হলে মোকাবিলা সহজ হবে। এক–এগারো থেকে ষড়যন্ত্র শুরু। কারও পাতানো ফাঁদে পা না দিয়ে নিজেদের কৌশলে এগোতে হবে।

সদ্য কারামুক্ত বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সালাম পিন্টু বলেন, ‘আমাদের মধ্যে কেন অনৈক্য থাকবে? আমাদের মধ্যে চরিত্রের অনেক ত্রুটি দেখা দিয়েছে। আমরা কেন চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত হব? সব ভুল–ত্রুটি সংশোধন করে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’

যুগ্ম মহাসচিব হাবিব–উন–নবী খান বলেন, ‘মৌসুমি পাখি, বসন্তের কোকিল নিয়ে বেশি কথা হবে বলে আশা করেছিলাম। এই সুযোগ আমাদের মধ্য দিয়েই পাচ্ছে। আমাদের চরিত্র মজবুত করতে হবে।’ এ সময় তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘দখল এবং চাঁদাবাজি কি হচ্ছে না?’ তখন উপস্থিত অনেকে ‘হচ্ছে’ বলে জবাব দেন। এরপর তিনি বলেন, ‘আগামীতে বিপর্যয় হলে এই একটা কারণই যথেষ্ট।’

কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির সদস্যসচিব সোহেল হোসাইন বলেন, বিএনপি নিয়ে বেশি অপপ্রচার করছে জামায়াত। তৃণমূলের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে জামায়াতের অপপ্রচার রুখে দিতে হবে।

খুলনা মহানগর বিএনপির নেতা নুরুল ইসলাম বলেন, একটি গুপ্ত সংগঠন সারা দেশে মব সৃষ্টি করছে, অরাজকতা করছে, বিএনপিকে নিয়ে গুজব সৃষ্টি করছে। দলটি বিগত ১৬ বছর বিএনপির সঙ্গে থেকে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন করলেও এখন তারা সুবিধাজনক সময়ে আওয়ামী লীগের দোসরদের প্রতিষ্ঠা করছে, ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আঁতাত করছে।

জামালপুর জেলা বিএনপির নেতা জহিরুল ইসলাম বলেন, ৫ আগস্টের পর অনেকে নব্য বিএনপি হয়েছে। তাদের জন্যই বিএনপির এই বেহাল দশা। মসজিদ ও মাদ্রাসার কমিটি নিয়েও ঝগড়া হয়, এগুলো থেকে সরে আসতে হবে।

পীরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল ইসলাম বলেন, ‘দলে অন্তর্দ্বন্দ্ব চলছে। সুতরাং আপনি (ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) নিজস্ব সেল ও জরিপের মাধ্যমে মনোনয়ন দেবেন।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সদস্যসচিব সিরাজুল ইসলাম বলেন, স্বৈরাচারের পতন হলেও দোসরেরা প্রশাসনে বসে আছে। বিএনপি ক্ষমতায় চলে এসেছে ভাবলে হবে না। বিএনপির বিরুদ্ধে সব দল মিলে ষড়যন্ত্র করছে। তাই ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

বর্ধিত সভা উপলক্ষে এলডি-সংলগ্ন মাঠে প্যান্ডেল তৈরি করা হয়। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহ উদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান ও হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত ছিলেন স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন। সভার শুরুতে প্রয়াত নেতা এবং বরেণ্য ব্যক্তিদের স্মরণ করে শোকপ্রস্তাব উপস্থাপন করেন জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

সভা সঞ্চালনা করেন যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন ও কোষাধ্যক্ষ রশিদুজ্জামান মিল্লাত। সভায় আমন্ত্রিতদের ফুল দিয়ে বরণ করেন স্বেচ্ছাসেবীরা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন ত র ক রহম ন ব এনপ র স র ল ইসল ম ব এনপ র ভ ষড়যন ত র গণতন ত র পর স থ ত র জন ত ক ক ষমত য় আপন দ র জনগণ র ন বল ন আম দ র অন ষ ঠ র র জন র জন য সদস য সরক র উপস থ ফখর ল

এছাড়াও পড়ুন:

ঐক্যই স্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্রের চাবি

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান মঙ্গলবার জাতীয় শহীদ সেনা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রদত্ত বক্তব্যে যেই উদ্বেগ ব্যক্ত করিয়াছেন, উহা আমলে লইবার বিকল্প নাই। সেনাবাহিনী প্রধানরূপে এই প্রকার বক্তব্য সাম্প্রতিককালে বিরল হইলেও সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সময়োচিত। বিশেষত যখন গণঅভ্যুত্থানের অংশীজন রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে দূরত্ব ও অনৈক্য ক্রমবর্ধমান, তখন সেনাবাহিনী প্রধানের সতর্কবার্তা নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি যথার্থই বলিয়াছেন, নিজেরা কর্দম নিক্ষেপ ও হানাহানিতে লিপ্ত থাকিলে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটিতে পারে। আমরা প্রত্যাশা করিব, সেনাবাহিনী প্রধানের বক্তব্যের অন্তর্নিহিত অর্থ সংশ্লিষ্টরা অনুধাবনে সক্ষম হইবেন।

সেনাবাহিনী প্রধান এমন সময়ে এই বক্তব্য দিয়াছেন, যখন দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি লইয়া বিলক্ষণ উদ্বেগ তৈয়ার হইয়াছে। গত কিছু দিবসে সংঘটিত বেশ কিছু চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনায় এমনকি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা লইয়াও প্রশ্ন উঠিয়াছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির নেপথ্যে রাজনৈতিক শক্তিগুলির পারস্পরিক দূরত্ব এবং বিভিন্ন পক্ষের হানাহানি, তৎসহিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মনোবলের ঘাটতির যেই বিষয় তিনি উল্লেখ করিয়াছেন, উহা প্রণিধানযোগ্য। তিনি পারস্পরিক বিষোদ্গার হইতেও বিরত থাকিবার যেই তাগিদ দিয়াছেন, উহার সহিত দ্বিমতের অবকাশ নাই। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এই প্রকার অবিমৃষ্যকারিতা যে কাহারও জন্য কল্যাণকর নহে, উহা বুঝিতে বিশেষজ্ঞ হইবার প্রয়োজন নাই। তবে তিনি নিশ্চিত করিয়াছেন, আইনশৃঙ্খলা লইয়া সেনাবাহিনী কাজ করিতেছে। সাম্প্রতিককালে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাও আইনশৃঙ্খলা লইয়া উদ্বিগ্ন না হইতে বলিয়াছেন। আমরা বিশ্বাস করি, সকল পক্ষ আন্তরিকতার সহিত তৎপর হইলে পরিস্থিতি সামলাইয়া উঠা সহজ হইবে। 

জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান তাঁহার বক্তব্যে অবাধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের যেই প্রয়োজনীয়তা ব্যক্ত করিয়াছেন, আমরা মনে করি উহা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। বলিবার অপেক্ষা রাখে না, ইহা অন্তর্বর্তী সরকারেরও অন্যতম অগ্রাধিকার। তবে নির্বাচনসহ অন্যান্য ব্যবস্থার সংস্কারে সরকার গঠিত কমিশন ইতোমধ্যে যেই প্রতিবেদন দিয়াছে, তাহার আলোকে ঐক্য কমিশনের কার্যক্রম আগাইয়া লইবার বিকল্প নাই। সংস্কার নিঃসন্দেহে দীর্ঘমেয়াদি বিষয়, যথায় অন্তর্বর্তী সরকার উহার সূচনা করিলে গণতান্ত্রিক সরকার আসিয়া পূর্ণাঙ্গ করিতে পারে। আমরা দেখিয়াছি, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাও রাজনৈতিক দলগুলির সহিত নির্বাচন লইয়া সংলাপ করিয়াছেন এবং ডিসেম্বরে সম্ভাব্য নির্বাচনের বিষয়টি নিশ্চিত করিয়াছেন। আমরা চাহিব ঘোষিত সময়ের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের সকল প্রক্রিয়া সরকার সম্পন্ন করিবে।

স্মরণে রাখিতে হইবে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কিংবা জাতীয় নির্বাচন– উভয় ক্ষেত্রেই জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নাই। উহাই এই মুহূর্তে জরুরি কর্তব্য। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও এই লক্ষ্যে কাজ করিবার প্রত্যয় বারংবার ব্যক্ত করিয়াছেন। সেনাবাহিনী প্রধানের বক্তব্যে উহা স্পষ্ট। এখন আমরা দেখিতে চাহিব, গণঅভ্যুত্থানের অংশীজন রাজনৈতিক দলগুলিও একই লক্ষ্যে অগ্রসর হইবে। আমরা বিশ্বাস করি, রাজনৈতিক ঐক্যের মাধ্যমে দেশের সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা সহজ হইবে। বিপরীতে রাজনৈতিক দলগুলি যদি স্বীয় স্বার্থ সিদ্ধির জন্য জাতিকে সংকটে ফেলিয়া দেয়, উহার পরিণতি মন্দ বৈ উত্তম হইবে না। আমরা মনে করি, ইহাই সেনাবাহিনী প্রধানের বক্তব্যের মূল সুর। তাঁহার স্পষ্টবাদিতাকে তির্যকভাবে দেখিবার অবকাশ নাই। সামাজিক, রাজনৈতিক ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে স্থিতিশীলতা আনয়নে দেশের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হওয়া যদ্রূপ জরুরি, তদ্রূপ গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্যও অনিবার্য অনুষঙ্গ। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঐক্যই স্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্রের চাবি
  • গণতন্ত্র সূচকে এবার সবচেয়ে খারাপ করেছে বাংলাদেশ
  • বিএনপির বর্ধিত সভায় ঐক্যের ডাক, ভোটের জোর প্রস্তুতিতে চোখ
  • কিছু কিছু ব্যক্তি–গোষ্ঠী ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে: মির্জা ফখরুল
  • অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে জনমনে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে: তারেক রহমান
  • অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে ইতিমধ্যে জনমনে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে: তারেক রহমান
  • নির্বাচন নিয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা পাচ্ছি না: মির্জা ফখরুল
  • সরকার এখনও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি: তারেক রহমান
  • নির্বাচন নিয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা পাচ্ছি না: মির্জা ফখরুল