বাজেট বাস্তবায়নের গতি কিছুটা বেড়েছে
Published: 27th, February 2025 GMT
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় মোট ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ৯৭ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা। পাঁচ মাসে সার্বিকভাবে বাজেট বাস্তবায়নের হার দাঁড়িয়েছে মোট বরাদ্দের ২৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে বাজেট বাস্তবায়ন হার ছিল ২০ দশমিক ৭৩। এর ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে ছিল ২২ দশমিক ২২ শতাংশ। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ প্রকাশিত প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে।
চলতি অর্থবছরে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের বাজেট দেয় ক্ষমতাচ্যুত আওমায়ী লীগ সরকার। অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ও সেই বাজেট অব্যাহত রয়েছে। বাজেটের বড় দুটি অংশ হচ্ছে উন্নয়ন বাজেট এবং অনুন্নয়ন বা পরিচালন বাজেট। অর্থ বিভাগের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে পরিচালন বা অনুন্নয়ন খাতে বাজেট বাস্তবায়নের হার ৩৩ দশমিক ৬ শতাংশ। টাকার অঙ্কে যা ১ লাখ ৭০ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ খাতে ব্যয় হয় ১ লাখ ২৪ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকা। চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ৫ লাখ ৬ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা। তবে এ সময়ে উন্নয়ন ব্যয় কমে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৮৩ শতাংশে। টাকার অঙ্কে যা ২৪ হাজার ৭৩৭ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ খাতে ব্যয় হয়েছিল ৩৩ হাজার ৭৬৮ কোটি টাকা। চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ২ লাখ ৮১ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি রোধে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির সঙ্গে সমন্বয় রেখে সরকারি ব্যয়েও সাশ্রয়ী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এরই সঙ্গে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে গ্রহণ করা প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বড় ধরনের কাটছাঁট হচ্ছে। অর্থবছরের শুরু থেকে আন্দোলন ও পরে আগস্টে ক্ষমতার পালাবদলকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির পাশাপাশি প্রশাসনে রদবদলের ধাক্কায় সরকারি উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে ধীরগতি বিরাজ করছে।
এমন পরিস্থিতিতে সার্বিকভাবে সরকারি ব্যয়ে সাশ্রয়ী পদক্ষেপ থাকলেও গত সরকারের নেওয়া অনিয়ন্ত্রিত ঋণের সুদ পরিশোধ ব্যয় ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। তা ছাড়া পরিচালন বাজেটে কাটছাঁটের খুব একটা সুযোগ থাকে না। আবার অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ব্যয় বাড়ায় পরিচালন বাজেটে ব্যয় কমানো সম্ভব হয়নি। তাই সার্বিক বাজেট বাস্তবায়ন কিছুটা বেড়েছে।
সুদ পরিশোধেই সরকারি ব্যয়ের ৩৬ শতাংশ
বাজেটের একক খাত হিসেবে সর্বোচ্চ ব্যয়ের খাত দাঁড়িয়েছে সুদ পরিশোধ। অর্থ বিভাগের প্রতিবেদন অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে সরকারি ব্যয়ের ৩৫ দশমিক ৯৬ শতাংশ অর্থাৎ ৭১ হাজার ২১৩ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে দেশি-বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে। এর মধ্যে দেশি ঋণের সুদ পরিশোধে ৬৩ হাজার ৬২৪ কোটি টাকা ও বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে ৭ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। গত অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে সুদ পরিশোধ বাবদ ব্যয় হয়েছিল ৪০ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা।
সুদ পরিশোধের এ ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি অর্থবছর শেষে শুধু সুদ পরিশোধেই প্রয়োজন হবে ১ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে আগের অর্থবছরের চেয়ে সরকারের ঋণের সুদ পরিশোধ বাবদ ব্যয় বাড়ে ২৪ দশমিক ৫ শতাংশ এবং প্রথমবারের মতো ঋণের সুদ পরিশোধ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে ১ লাখ ১৪ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকায় উন্নীত হয়; যা সরকারের মোট ব্যয়ের ২৮ শতাংশ।
পাঁচ মাসে পরিচালন বাজেটের আওতায় অন্যতম বড় খরচের খাত হচ্ছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা। এ খাতে ব্যয় হয়েছে ২৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ২৫ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা। এ ছাড়া অবসরপ্রাপ্তদের পেনশন বাবদ ব্যয় হয়েছে ৯ হাজার ৫৬৪ কোটি টাকা। এদিকে পাঁচ মাসে জ্বালানি, সারসহ বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি বাবদ ব্যয় হয়েছে ২৭ হাজার ৯৭৯ কোটি টাকা।
একই সময়ে পরিচালন বাজেটের আওতায় অন্য খাতগুলোর মধ্যে পাবলিক অর্ডার ও সেফটি খাতে ৩০ হাজার ৮৯৭ কোটি টাকা, শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে ১৯ হাজার ৩৩৫ কোটি, প্রতিরক্ষা ১০ হাজার ৫৩৮ কোটি, কৃষিতে ১২ হাজার ৭৫৩ কোটি, স্বাস্থ্যে ৪ হাজার ৯৪৬ কোটি এবং স্থানীয় সরকার খাতে ১ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বর দ দ র সরক র র ন নয়ন ব দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
সমঝোতায় বাধা যেখানে
ঢাকায় আসা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধি দল ফিরে গেছে। কিন্তু দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি মোকাবিলায় প্রতিশ্রুত ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড়ের সুরাহা হয়নি। বাংলাদেশ এই ঋণের তৃতীয় কিস্তি পেয়েছিল গত বছরের জুন মাসে। চতুর্থ কিস্তির ৬৪ কোটি ৫০ ডলার ছাড় হওয়ার কথা ছিল গত ফেব্রুয়ারি মাসে। সে প্রস্তাব ফেব্রুয়ারিতে আইএমএফের পর্ষদে ওঠেনি। পিছিয়ে চলে যায় মার্চে। ফলে দুই কিস্তির অর্থ একসঙ্গে ছাড়ের আলোচনা শুরু হয়। সে আলোচনা এখন ঢাকা হয়ে ওয়াশিংটনে পৌঁছাল।
আইএমএফ মিশন গত বৃহস্পতিবার ঢাকা ছাড়ার আগে বিবৃতিতে বলেছে, আলোচনা চলবে। পরবর্তী আলোচনা হবে এ মাসেই ওয়াশিংটনে সংস্থার বসন্তকালীন বৈঠকে। চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি মিলে মোট ১৩০ কোটি ডলার আপাতত ঝুলে থাকল।
কেন আইএমএফ মিশন এই অর্থ ছাড়ের আগে সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি, সে বিষয়ে তাদের বিবৃতিতে স্পষ্ট কিছু বলা হয়নি। শুধু বলা হয়েছে, আলোচনা চলবে। তবে মিশনপ্রধান প্রেস ব্রিফিংয়ে একটি ইঙ্গিত দিয়েছেন। তাঁর মতে, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার এখনই ভালো সময়। কেননা, বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে। ব্যাংক এবং খোলাবাজারের মধ্যে ডলারের দরের পার্থক্য কমে এসেছে।
বলা যায়, এবারের আলোচনা চূড়ান্ত রূপ নেয়নি এই বিনিময় হার নিয়ে মতানৈক্যে। বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে সময় নিতে চাচ্ছে। কিন্তু আইএমএফ চায় শিগগিরই। মিশনের সঙ্গে যারা আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন, তাদের কেউ কেউ জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক জুন পর্যন্ত সময় নিতে চাচ্ছে। এ মুহূর্তে পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দিলে ডলারের দর হঠাৎ বেড়ে যায় কিনা, তা নিয়ে উদ্বেগ আছে তাদের। আর ডলারের দর বাড়লে মূল্যস্ফীতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রেমিট্যান্স যেভাবে বাড়ছে, তাতে আগামী দুয়েক মাসের মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের আরেকটি উদ্বেগের জায়গা হলো, বাজারের ওপর ছেড়ে দিলে বৈদেশিক মুদ্রা থেকে বাড়তি মুনাফার আশায় ব্যাংকগুলোর মধ্যে সুযোগ নেওয়ার প্রবণতা তৈরি হতে পারে।
অন্যদিকে, বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের চলতি হিসাবে এখনও ঘাটতি আছে। সর্বশেষ হিসাবে, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮ মাসে ঘাটতি ছিল ১২৭ কোটি ডলার। রেমিট্যান্স ভালো থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্ক রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেললে এই ঘাটতি আরও বেড়ে যেতে পারে। এসব বিষয় মাথায় রেখে বাংলাদেশ ব্যাংক এখনই বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করতে চাচ্ছে না।
গত বছরের মে মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক আইএমএফের পরামর্শে বিনিময় হার নির্ধারণে ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতি চালু করে। এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যাংকগুলো ডলারের একটি আন্তঃব্যাংক দর নির্ধারণ করত। ক্রলিং পেগ পদ্ধতিতে বিনিময় হার একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে ওঠানামা করতে দেওয়া হয়। এতে একটি মধ্যবর্তী রেট থাকে, যা এখন এক ডলার সমান ১১৯ টাকা। এই দর এর চেয়ে আড়াই শতাংশ কমতে বা বাড়তে পারবে। সেই হিসাবে ডলারের দর এখন সর্বোচ্চ ১২২ টাকা হওয়ার কথা। আইএমএফের প্রস্তাব, বিনিময় হার ‘ক্রলিং পেগ’ থেকে ধীরে ধীরে বাজারভিত্তিক করা। এই প্রস্তাবের প্রায় এক বছর পেরিয়ে যাওয়ায় তারা এখন এ বিষয়ে তাগিদ দিচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বিনিময় হার এখন বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার পক্ষে। তাঁর মতে, এখন রেমিট্যান্স প্রবাহ অনেক ভালো। আমদানি তেমন বাড়ছে না। রপ্তানি খাত থেকে আগের চেয়ে বেশি অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা আসছে। এই পরিস্থিতিতে ডলার বাজারভিত্তিক করার সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। আর বাজারে যদি কেউ অনিয়মের মাধ্যমে বাড়তি সুবিধা নিতে চায়, তাহলে তা মনিটরিংয়ের মাধ্যমে সমাধান করতে হবে।
আইএমএফ মূলত চারটি বিষয়ের ওপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এগুলো হলো বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা, রাজস্ব খাতে সংস্কার, ভর্তুকি কমানো এবং আর্থিক খাত শক্তিশালী করা। নতুন ভর্তুকি কমানোর বিষয়ে সরকার রাজি। তবে আগের ভর্তুকির বকেয়া পরিশোধের চাপ থাকায় এ খাতে অর্থ খরচ কমেনি। পরিস্থিতি আইএমএফকে বোঝানো হয়েছে।
অন্যদিকে ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলার বিষয়ে কড়াকড়ি করায় লুকিয়ে থাকা খেলাপি ঋণ বেরিয়ে আসছে। এ কারণে খেলাপি ঋণের হার বেড়ে গেছে। আইএমএফ চায়, ২০২৬ সালে সরকারি ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের নিচে এবং বেসরকারি ব্যাংকের ৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা হোক। সরকারি ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ এখন ৪০ শতাংশের বেশি। বেসরকারি ব্যাংক খাতে ১৫ শতাংশের বেশি।
করের ক্ষেত্রে সংস্কার নাকি লক্ষ্যমাত্রা বড় বিষয়
২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে আইএমএফের সঙ্গে এ ঋণ কর্মসূচি শুরু হয়। মোট ঋণ দেওয়ার কথা ৪৭০ কোটি ডলার। এ পর্যন্ত তিনটি কিস্তিতে ছাড় হয়েছে ২৩০ কোটি ডলার। বাংলাদেশ গত ডিসেম্বরে আরও ৭৫ কোটি ডলার বাড়তি ঋণ চায়। আইএমএফ বাড়তি ঋণের বিষয়ে ইতিবাচক ইঙ্গিতও দিয়েছিল। আইএমএফের ঋণের অন্যতম শর্ত প্রতি অর্থবছরে কর-জিডিপি অনুপাত শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ বাড়াতে হবে। কিন্তু গত অর্থবছরে উল্টো এ অনুপাত কমে যায়।
কর আদায় বাড়াতে আইএমএফের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছাড় কমানোর শর্ত রয়েছে। এনবিআর এ ক্ষেত্রে কিছু উদ্যোগ গত চলতি অর্থবছরের বাজেটে নিয়েছে। আগামী বাজেটেও নেওয়ার অঙ্গীকার করেছে। অন্যদিকে কর নীতি এবং কর ব্যবস্থাপনা আলাদা করার সুপারিশ রয়েছে আইএমএফের। আইএমএফ মিশনের ঢাকায় অবস্থানকালে এ বিষয়ে অধ্যাদেশ অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ।
গত ডিসেম্বর পর্যন্ত কর আদায়ে আইএমএফের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা থেকে সরকার পিছিয়ে ছিল ৫২ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে মোট লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৫ লাখ কোটি টাকা, যা অর্জন সম্ভব নয়। জুলাই আন্দোলনের প্রভাব, যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানিতে বাড়তি শুল্ক থেকে রেহাই পেতে এবং এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রস্তুতি হিসেবে আমদানি শুল্ক কমানো ও সার্বিকভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যে ধীরগতি থাকায় এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হচ্ছে না। এসব পরিস্থিতি আইএমএফকে জানানো হয়েছে।
ড. জাহিদ হোসেন মনে করেন, করের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হওয়ার বাস্তব পরিস্থিতি রয়েছে। আইএমএফ যদি লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে অনড় অবস্থানে থাকে, তবে তা যুক্তিসংগত হবে না। অন্যদিকে রাজস্ব খাতে সংস্কার ঠিকমতো না এগোলে, সেই ক্ষেত্রে আইএমএফের তাগিদও যুক্তিসংগত। কেননা, রাজস্ব আয় বাড়াতে হলে প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে।
গত ৯ জানুয়ারি সরকার শতাধিক পণ্য ও সেবায় শুল্ককর বাড়ায়, যার মাধ্যমে চলতি অর্থবছরে ১২ হাজার কোটি টাকা বাড়তি রাজস্ব আদায় করার কথা ছিল। কিন্তু উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়ে এ সিদ্ধান্তে সমালোচনার মুখে পড়ে সরকার। এ কারণে কয়েক দিন পর বেশি কর আদায় হতে পারত, এমন ১০টি পণ্যসেবায় বাড়তি শুল্ককর প্রত্যাহার করা হয়।
ঋণ আটকে গেলে কী হবে
আইএমএফের ঋণের কিস্তি কোনো কারণে আটকে গেলে তার প্রভাব হবে বহুমুখী। কেননা, এটি শুধু অর্থের বিষয় নয়। আইএমএফের ঋণের সঙ্গে সার্বিক উন্নয়ন সহযোগিতা এবং দেশের ক্রেডিট রেটিংয়ের সম্পর্ক রয়েছে। এ বিষয়ে ড. জাহিদ হোসেন বলেন, আইএমএফ মিশন সমঝোতার ঘোষণা দেয়নি বলেই মনে করা উচিত হবে না যে, কিস্তি আটকে যেতে পারে। তবে সমঝোতা হলে ভালো হতো। এখন ওয়াশিংটনে কী আলোচনা হয়, তা দেখার বিষয়। তিনি মনে করেন, আইএমএফের ঋণ কোনো কারণে স্থগিত বা বাতিল হয়ে গেলে অন্য ঋণদাতা সংস্থাগুলোর ওপর তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ ছাড়া মুডিস, ফিচসহ আন্তর্জাতিক ক্রেডিট রেটিং সংস্থাগুলোর রিপোর্টেও এর প্রভাব পড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের করেসপন্ডিং ব্যাংকিংয়ে খরচ বেড়ে যেতে পারে।