বিদেশি ঋণ ছাড় কমছেই বাড়ছে শুধু পরিশোধ
Published: 27th, February 2025 GMT
উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও সংস্থার পক্ষ থেকে ঋণের অর্থ ছাড়ের পরিমাণ এবং নতুন ঋণের প্রতিশ্রুতি কমেছেই। অথচ আগে নেওয়া ঋণের সুদাসল পরিশোধের পরিমাণ বাড়ছেই। গত জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে বিদেশি ঋণের সুদাসল পরিশোধ বেড়েছে ৩১ শতাংশ। অন্যদিকে নতুন ঋণের প্রতিশ্রুতি কমেছে ৬৭ শতাংশ। এ ছাড়া উন্নয়ন সহযোগীদের পক্ষ থেকে অর্থ ছাড় কমেছে ১০ শতাংশের মতো।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত সাত মাসে ঋণের সুদাসল বাবদ ২৯ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২০ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ পরিশোধ বেড়েছে ৮ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা। অর্থবছরের সাত মাসে বিদেশি মুদ্রায় সুদাসল পরিশোধের পরিমাণ ২৪২ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ১৮৬ কোটি ডলারের কিছু কম।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখনকার ঋণদায় বর্তমান সরকারের সময়ের নয়। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার মধ্যে পরিণাম চিন্তা না করেই বড় অঙ্কের ঋণ
নেওয়া হয়। ঋণের একটি বড় অংশ রাজনৈতিক প্রকল্প, ঠিকাদারকে সুযোগ দেওয়ার প্রয়োজনে নেওয়া হয়। এ কারণে অন্তর্বর্তী সরকার চলমান সব প্রকল্প পর্যালোচনা করছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু প্রকল্প বাদ দেওয়া হয়েছে।
ইআরডির তথ্য বলছে, গত ছয় মাসে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে মাত্র ২৩৫ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৭১৭ কোটি ডলারেরও কিছু বেশি। অন্যদিকে গত সাত মাসে বিদেশি ঋণের অর্থ ছাড় হয়েছে ৩৯৪ কোটি ডলারের কিছু কম, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৪৪০ কোটি ডলারের মতো।
চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের গতি অত্যন্ত ধীর। অনেক ক্ষেত্রে এ কারণে উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিশ্রুত অর্থ ছাড় হচ্ছে না। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ আইএমইডির সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, অর্থবছরের গত সাত মাসে এডিপি বাস্তবায়নের হার মাত্র ২১ দশমিক ৫২ শতাংশ। গত ১৩ বছরের মধ্যে যা সবচেয়ে কম।
ইআরডির সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, চলতি অর্থবছর এডিপি বাস্তবায়নের সর্বনিম্ন রেকর্ড দাঁড়াতে পারে। অনেক কারণে এবার এ রকম হতে পারে। এর মধ্যে বিদেশি অর্থায়নের
বিভিন্ন প্রকল্পে
যেসব বিদেশি কর্মী, ঠিকাদার প্রতিনিধি ও পরামর্শক কাজ করতেন, তাদের বেশির ভাগ রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে বাংলাদেশ ছেড়ে যান। তাদের বড় একটা অংশ এখনও
ফেরেননি। এসব প্রকল্পের বাস্তবায়ন কার্যক্রম কার্যত স্থগিত রয়েছে। এ ছাড়া অন্তর্বর্তী
সরকার এডিপিভুক্ত সব প্রকল্প পর্যালোচনা করছে। কিছু প্রকল্প বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এসব কারণে এডিপির বড় একটা অংশই এবার অব্যয়িত থেকে যাবে।
প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি না থাকায় উন্নয়ন সহযোগীরা অর্থ ছাড়ও করছে না। এ
কারণেই অর্থ ছাড় এত কম দেখা যায়।
একই কারণে নতুন ঋণের প্রতিশ্রুতিও
বাড়াচ্ছে না তারা।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প রকল প পর শ ধ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
বাজেটে কোনো থোক বরাদ্দ প্রস্তাব করা যাবে না
আগামী ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের বাজেটে কোনো ধরনের থোক বরাদ্দের প্রস্তাব না করতে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাজেটে অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে সরকারের কৌশলগত উদ্দেশ্য অর্জনে সহায়ক হয়, এমন সুনির্দিষ্ট কার্যক্রমের বিপরীতে অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয়ের প্রাক্কলন এমনভাবে তৈরি করতে হবে, যেন তা মন্ত্রণালয় বা বিভাগ ও প্রতিষ্ঠানগুলোর বাজেট ব্যবস্থাপনা কমিটি থেকে অনুমোদিত ব্যয়সীমার মধ্যে সংকুলানযোগ্য হয়।
অর্থ বিভাগ, পরিকল্পনা কমিশন এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে অনুষ্ঠিত ত্রিপক্ষীয় সভায় আলোচনার ভিত্তিতে যে ব্যয়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে, ওই ব্যয়সীমাই সর্বোচ্চ বরাদ্দ এবং এ বরাদ্দ বাড়ানোর কোনো অবকাশ নেই।
সম্প্রতি অর্থ বিভাগ থেকে এক পরিপত্রের মাধ্যমে সব মন্ত্রণালয় বা বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে এমন নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পরিপত্রে মধ্যমেয়াদী বাজেট কাঠামো পদ্ধতির আওতাভুক্ত সব মন্ত্রণালয় বা বিভাগকে বাজেট প্রণয়নের দ্বিতীয় পর্যায়ে আগামী ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের বিস্তারিত বাজেট প্রাক্কলন এবং একইসঙ্গে পরবর্তী ২০২৬-২০২৭ ও ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরের প্রক্ষেপণ প্রণয়নের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অর্থ বিভাগ বলেছে, বাজেট প্রস্তাব আগামী ২৪ এপ্রিলের মধ্যে অর্থ বিভাগের বাজেট অনুবিভাগ (১ ও ২), পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগ, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠাতে হবে।
পরিপত্রে বলা হয়, সকল মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানসমূহ থেকে প্রণীত বাজেট কাঠামো এরইমধ্যে অর্থ বিভাগ, পরিকল্পনা কমিশন এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে অনুষ্ঠিত ত্রি-পক্ষীয় সভায় পর্যালোচনা করা হয়েছে এবং ওই সভার পর্যবেক্ষণের আলোকে একটি সম্মত বাজেট কাঠামো প্রণয়নের কাজ চলমান রয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ের বাজেট প্রণয়নে সকল মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে ত্রিপক্ষীয় (অর্থ বিভাগ-পরিকল্পনা কমিশন-সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগ ও প্রতিষ্ঠান) সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক রাজস্ব ও প্রাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা এবং ব্যয়সীমার আলোকে বিস্তারিত বাজেট প্রাক্কলন ও প্রক্ষেপণ প্রয়োজনে সংশোধন ও পুনর্নিধারণ করতে হবে।
পরিপত্রে বাজেট প্রাক্কলন ও প্রক্ষেপণের ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়, বিভাগগুলোকে চারটি নীতি অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে, মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে মধ্যমেয়াদী বাজেট কাঠামোতে বর্ণিত কৌশলগত উদ্দেশ্য, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা, ‘রি-স্ট্রাটেজিসিং দ্য ইকোনমি অ্যান্ড মবিলাইজিং রিসোর্সেস ফর ইক্যুয়িটেবল অ্যান্ড সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট’ বিষয়ক টাস্কফোর্স রিপোর্ট এবং মন্ত্রণালয়, বিভাগের নিজস্ব নীতিমালায় অন্তর্ভূক্ত সরকারের নীতি ও অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কার্যক্রম পরিচালনা এবং মধ্যমেয়াদী লক্ষ্যমাত্রাগুলো অর্জনে সক্ষম হয়;
বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে সরকারের মৌলিক নীতি নির্ধারণী দলিলগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দারিদ্র নিরসন, নারী ও শিশু উন্নয়ন, জলবায়ু অভিঘাত মোকাবিলায় সহায়ক কার্যক্রমে বরাদ্দ বাড়াতে সক্ষম হয় এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠী এবং নারী ও শিশু উন্নয়নে প্রদেয় সেবার মান ও পরিমাণ বাড়ে;
জিডিপি প্রবৃদ্ধির সঙ্গে পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয় বাড়ার সামঞ্জস্য রাখা, যাতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর বর্তমান কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা যায়;
মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমের কৌশলগত ব্যবস্থাপনা ও বাজেট বরাদ্দের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা।
পরিপত্রে বলা হয়েছে, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) প্রাক্কলন, প্রক্ষেপন প্রণয়নে ত্রিপক্ষীয় সভায় নির্ধারিত মানদণ্ডের ভিত্তিতে প্রকল্পওয়ারি বরাদ্দ পর্যালোচনা এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে পুনর্নিধারণ করা যাবে। তবে এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য প্রদত্ত মোট এডিপি ব্যয়সীমা কোনোভাবেই অতিক্রম করা যাবে না।
প্রদত্ত ব্যয়সীমার মধ্যে প্রকল্প সাহায্য (ডিপিএ/আরপিএ), নগদ বৈদেশিক মুদ্রা ইত্যাদি বাবদ ব্যয় অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। এক্ষেত্রে প্রকল্প সাহায্য, নগদ বৈদেশিক মুদ্রা ইত্যাদি ব্যয় বিবেচনা করে প্রকল্পের প্রাক্কলন বা প্রক্ষেপণ তৈরি করতে হবে। এ বাবদ ব্যয়সীমার অতিরিক্ত কোনো অর্থ বরাদ্দ প্রদান করা হবে না। এছাড়া, অননুমোদিত কোনো প্রকল্প বা স্কিমের জন্য কোনো বরাদ্দ প্রস্তাব করা যাবে না। অন্যদিকে অনুমোদিত সব প্রকল্পের জন্য প্রক্ষেপণে বরাদ্দ রাখতে হবে। আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এডিপি-তে নতুন প্রকল্প অন্তর্ভূক্তির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রস্তব পরীক্ষা করে প্রচলিত নিয়মে ব্যবস্থা নেবে পরিকল্পনা কমিশন।
সরকারি অনুদানে পরিচালিত স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলোর বরাদ্দ নির্ধারণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সংস্থার চলতি অর্থবছরের নিজস্ব আয় ও আয়ের উৎসসমূহ পর্যালোচনা করতে হবে। ত্রি-পক্ষীয় সভায় সম্মত প্রাক্কলিত ও প্রক্ষেপিত আয় সংশ্লিষ্ট অর্থবছরে দেখাতে হবে। নিজস্ব আয়ের অর্থ বাদ দিয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থার জন্য ব্যয়সীমা বা সরকারি অনুদানের পরিমাণ নির্ধারণ করে তার ভিত্তিতে বাজেট প্রাক্কলন ও প্রক্ষেপণ প্রণয়ন করতে হবে বলেও এতে উল্লেখ করা হয়।
ঢাকা/হাসনাত/ইভা