রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় বিনিয়োগ থামিয়ে রেখেছেন ব্যবসায়ীরা
Published: 27th, February 2025 GMT
বাংলাদেশে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় বিদেশি বিনিয়োগ ও বাণিজ্যে প্রভাব ফেলছে। ফলে ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ থামিয়ে রেখেছেন বলে মনে করেন ঢাকায় নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়াং-সিক।
বৃহস্পতিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে ঢাকায় ওভারসিজ করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ওকাব) আয়োজিত মিট দ্য ওকাব অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
এক প্রশ্নের উত্তরে দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে রয়েছে। যখনই আমি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলি, সমস্যাটা দেখি, তাঁরা বিনিয়োগ থামিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন। দেখি কী হয়—অবস্থায় আছেন তাঁরা।’ তিনি বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা দুই দেশের জন্য সমস্যা তৈরি করছে। রাজনৈতিক বিষয়ের মীমাংসা হওয়া প্রয়োজন।
বাংলাদেশের মতো দক্ষিণ কোরিয়ায়ও রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রসঙ্গ টেনে এক প্রশ্নের উত্তরে পার্ক ইয়াং-সিক বলেন, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টকে অভিশংসন করা হয়েছে। অভিশংসন টিকবে কি টিকবে না, তা আদালতে রায়ের অপেক্ষায় আছে। তবে যথাযথ অভ্যন্তরীণ বন্দোবস্ত, বৈদেশিক বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ থাকার কারণে কোরিয়ার ক্ষেত্রে অত বেশি সমস্যা হবে না। একক পণ্যে নির্ভরতার ফলে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি অত বেশি না হওয়া এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থান কমার প্রেক্ষাপটে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশকে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের চেষ্টা চালানোর পরামর্শ দেন এই রাষ্ট্রদূত।
পার্ক ইয়াং-সিক বলেন, বঙ্গোপসাগর উপকূলে থাকা এবং নবম শীর্ষ ভোক্তা বাজার হওয়ায় বাংলাদেশে বিনিয়োগ আসবে বলে বিদেশিরা ‘লিপ সার্ভিস’ দেয়, সেটাতে অত মনোযোগ দেওয়ার দরকার নেই। বাংলাদেশ চীন ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আনার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত বলেন, ১৯৭৩ সালের পর থেকে কোরিয়ার ১১১টি কোম্পানি বাংলাদেশে ২৪০টি অবকাঠামো তৈরি করেছে। বিশেষ করে ২০১৬-২২ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়েছে ৫৪০ কোটি মার্কিন ডলারের প্রকল্প। অবকাঠামোর ক্ষেত্রে দক্ষিণ কোরিয়ার দেওয়া শূন্য দশমিক শূন্য ১ শতাংশ হারে সুদ এবং ৪০ বছর মেয়াদের ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন (ইডিসিএফ) ঋণ ব্যবহার করা যেতে পারে।
২০২৭ সাল পর্যন্ত ইডিসিএফের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে ৩০০ কোটি ডলার। জাপানের সরকারি ঋণের সুদহার ১ দশমিক ৩ থেকে ১ দশমিক ৭ শতাংশ, চীনের ২ শতাংশ এবং এডিবি–বিশ্বব্যাংকের সুদের হার ৫-৬ শতাংশ বলে উল্লেখ করেন কোরীয় রাষ্ট্রদূত।
বাংলাদেশের জন্য কোটা বাড়িয়েও প্রয়োজনীয় কর্মী না পাওয়ার কথা তুলে ধরে এক প্রশ্নের উত্তরে রাষ্ট্রদূত বলেন, ভাষাগত দক্ষতার অভাব এবং কাজের চুক্তি না মানার কারণে দক্ষিণ কোরিয়ায় কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশিরা অন্যান্য দেশের তুলনায় পিছিয়ে পড়েন।
‘মিট দ্য ওকাব’ অনুষ্ঠানে সংগঠনের সভাপতি নজরুল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক জুলহাস আলম বক্তব্য দেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন ত ক
এছাড়াও পড়ুন:
আরকান আর্মির হাতে জিম্মি থাকা ২৯ জেলেকে ফেরত আনল বিজিবি
মায়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির হাতে জিম্মি থাকা ২৯ জেলেকে ফেরত এনেছে টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (২ বিজিবি)। বৃহস্পতিবার বিকেলে শাহপরীরদ্বীপ সংলগ্ন নাফ নদীতে বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তের শূন্যরেখায় আরাকান আর্মি বিজিবির কাছে তাদের হাতে আটক ২৯ জন জেলে ও মাঝিমাল্লাকে হস্তান্তর করে। পরে বিজিবি তাদেরকে ট্রলারে করে টেকনাফ জেটি ঘাটে নিয়ে আসে।
ফেরত আসা জেলেদের মধ্যে ১৫ জন বাংলাদেশি নাগরিক। বাকি ১৪ জন এফডিএমএন সদস্য। ১৫ বাংলাদেশি নাগরিক হলেন- টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপের মৃত তৈয়বের ছেলে মোঃ হাসান (৩০), মোঃ সলিমুল্লার ছেলে মোঃ জাবেদ (১৮), কবির আহমেদের ছেলে মোঃ আঃ রহিম (১৭), মৃত আলমের ছেলে মোঃ হাসান (১৯), খুল্যা মিয়ার ছেলে মোঃ কালা মিয়া (৩৭), মোঃ সৈয়দ আলমের ছেলে মোঃ নুরুল আলম (৩৯), শামসুল আলমের ছেলে আব্দুর রহমান (১৯), সুলতান আহমেদের ছেলে মোঃ কালাম আহমেদ (২৯), ফয়জল করিমের ছেলে মোঃ লাইল্যা (১১), আব্দুল আমিনের ছেলে মোঃ কবির আহমেদ (৪৩), কবির আহমদের ছেলে মোহাম্মদ ইউনুছ (২৩), সোনামিয়ার ছেলে নুরুল ইসলাম (৩৪), রশিদ আহমেদের ছেলে মোঃ লুতফর রহমান (২৩), আব্দুল মান্নানের ছেলে রহিম উল্লাহ (২১) ও নূর মোহাম্মদের ছেলে মোঃ ফয়সাল।
১৪ জন এফডিএমএন সদস্য হলেন- ৮ নম্বর (ইস্ট) বালুখালী এফডিএমএন ক্যাম্পের নুর সালামের ছেলে ফারুক মাঝি, ২৫ নম্বর আলীখালী এফডিএমএন ক্যাম্পের ইকরামের ছেলে কেফায়েত উল্লাহ, ৭ নম্বর কুতুপালং এফডিএমএন ক্যাম্পের নাজির হোসেনের ছেলে মোঃ ইব্রাহিম, ১৩ নম্বর বালুখালী এফডিএমএন ক্যাম্পের দলিজানের ছেলে আব্দুল মোনাফ, হোছন আলীর ছেলে তৈয়ব আলী, মোঃ সালামের ছেলে সৈয়দ উল্লাহ মাঝি, নূর মোহাম্মদের ছেলে সৈয়দ আলম, নূর মোহাম্মদের ছেলে ইমাম হোসেন, থান্ডা মিয়ার ছেলে মোঃ হোছন আহমেদ, হোছন আহমেদের ছেলে নেজামুদ্দিন (৩০), নুর মোহাম্মদের ছেলে আমান উল্লাহ (৩২), সোনামিয়ার ছেলে নুর হোছন, মৃত আব্দুস সালামের ছেলে কবির আহম্মদ এবং মৃত মকবুল আহম্মদের ছেলে হামিদ হোসেন।
প্রসঙ্গত, গত ১১ ও ২০ ফেব্রুয়ারি টেকনাফের বিভিন্ন স্থান থেকে ৬টি ইঞ্জিনচালিত নৌকাযোগে জেলেরা মাছ ধরতে গিয়ে ভুলবশত মায়ানমারের জলসীমায় প্রবেশ করেন। এসময় মায়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি তাদের আটক করে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে জেলেদের পরিবারের অনুরোধে বিজিবি তৎপর হয়ে কূটনৈতিক যোগাযোগ স্থাপন করে এবং দীর্ঘ আলোচনার পর আজ জেলেদের মুক্ত করে দেশে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়।
ফেরত আসা জেলেদের তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তরের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।