তখন রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের এক যুগ হয়ে গেছে। এ আন্দোলনে চট্টগ্রামের ভূমিকা গৌরবময়। ভাষাশহীদদের স্মরণে ১৯৬৫ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে বোয়ালখালী উপজেলার কধুরখীল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করেন কয়েক ছাত্র। তাদের কয়েকজনকে এ জন্য বিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃতও হতে হয়। এটিই দেশের বিদ্যালয় পর্যায়ে নির্মিত প্রথম শহীদ মিনার হিসেবে জানিয়েছেন কয়েকজন গবেষক। অথচ স্বাধীনতার ৫৪ বছর পেরিয়ে গেলেও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি মেলেনি এই ঘটনার। 
মহান একুশের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে প্রকাশিত এমএ বার্ণিকের লেখা ‘জেলায় জেলায় শহীদ মিনার’ গ্রন্থের ৮৯৭ নম্বর পৃষ্ঠায় কধুরখীল উচ্চ বিদ্যালয়ে নির্মিত শহীদ মিনারটিকে দেশের বিদ্যালয় পর্যায়ে নির্মিত প্রথম শহীদ মিনার হিসেবে উল্লেখ করা হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনারা এটি ভেঙে ফেলে। স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে শহীদ মিনারটি পুনর্নির্মাণ করা হয়। ঐতিহাসিক শহীদ মিনারে তিনটি ত্রিকোণাকৃতির স্তম্ভ রয়েছে, যেগুলো দেখতে পিরামিডের মতো। বেদির নিচে লেখা ‘শহীদ স্মৃতি অমর হোক’। 
কয়েকজন দুঃসাহসী শিক্ষার্থী হারিকেনের আলোয় গাছের গুঁড়ি, ইট, পাথর, সিমেন্ট দিয়ে নির্মাণ করেন ওই শহীদ মিনার। যদিও এটি নির্মাণের পরিকল্পনায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শিক্ষকরাও মানা করেছিলেন। তাদের আশঙ্কা ছিল, এটি নির্মিত হলে বন্ধ হয়ে যাবে অনুদান।
এই শহীদ মিনারের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি চেয়ে কয়েকবার বাংলা একাডেমির কাছে আবেদন করলেও মেলেনি ইতিবাচক সাড়া। এটি নির্মাণে নেতৃত্ব দানকারীদের অন্যতম নুরুল হুদা ও সৈয়দুল আলম মৃত্যুর আগে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেখে যাওয়া আকুতি জানিয়েও পারেননি। ২০২৩ সালের অক্টোবরে সৈয়দুল আলম ও ২০২২ সালের জানুয়ারিতে মারা যান নুরুল হুদা। এরও আগে মারা যান শহীদ মিনারটি তৈরির সময় বিদ্যালয়ে দপ্তরি পদে কর্মরত রঞ্জিত কুমার।
স্থানীয় বাসিন্দা অ্যাডভোকেট মো.

ফোরকান রাসেল বলেন, ‘বাপ-দাদাদের কাছ থেকে শহীদ মিনারটির কথা শুনে আসছি। স্বীকৃতির দাবিতে অনেককে মানববন্ধন করতেও দেখেছি। এটার স্বীকৃতি আমাদের প্রাণের দাবি।’
কধুরখীল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ বড়ুয়া বলেন, এটি নির্মাণে জড়িত অনেকেই সাক্ষ্য দিয়েছেন– দেশের বিদ্যালয়ে নির্মিত এটিই প্রথম শহীদ মিনার। বিভিন্ন বইয়েও এর উল্লেখ আছে। বাংলা একাডেমির কাছে স্বীকৃতির দাবি জানিয়ে লিখিত আবেদনও করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে সাড়া না পাওয়া দুর্ভাগ্যের।
বোয়ালখালী থেকে সম্প্রতি বদলি হওয়া ইউএনও হিমাদ্রী খীসা বলেন, ‘শহীদ মিনারটি কেবল বোয়ালখালী বা চট্টগ্রামবাসীর নয়; এটি সারাদেশের ঐতিহ্যের স্মারক। একাধিক ইউএনও স্বীকৃতির দাবিতে নানা মহলে চিঠি দেন বলে জেনেছি। স্থানীয় বাসিন্দারাও কর্মসূচিও পালন করেছেন। এখনও মেলেনি 
কাঙ্খিত  স্বীকৃতি।’

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

কুয়াকাটায় জলকেলিতে মাতলেন রাখাইন তরুণ-তরুণীরা

পবিত্র জলে গাঁ ভিজিয়ে পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় শুরু হয়েছে রাখাইনদের শত বছরের ঐতিহ্যবাহী সাংগ্রাই জলকেলি উৎসব।

শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে শ্রী মঙ্গল বৌদ্ধ বিহার সংলগ্ন রাখাইন মার্কেটে তিন দিনব্যাপী এ উৎসবের উদ্বোধন করেন কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রবিউল ইসলাম।  

অনুষ্ঠানের শুরুতে ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনের প্রতিবাদে এক মিনিট নিরবতা পালন করেন রাখাইন জনগোষ্ঠী। 

আরো পড়ুন:

বৈশাখে চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীদের উচ্ছ্বাস 

রঙে-আলোয় উজ্জ্বল বর্ষবরণ

বর্ষবরণের জলকেলি উৎসব উপলক্ষে নাচে-গানে মাতোয়ারা হয়ে ওঠেন রাখাইন তরুণ-তরুণীরা। পরে তারা মাঠের মধ্যে রাখা একটি নৌকার পানি একে অপরের শরীরে ছিটিয়ে জলকেলিতে মেতে ওঠেন।

অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা অং চো বলেন, “কক্সবাজার থেকে এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য এসেছি। নাচ, গান আর জলকেলি উৎসবে অংশগ্রহণ করেছি। দিনটি আমাদের দারুন কেটেছে। প্রতিবছর এ অনুষ্ঠানের ধারাবাহিকতা রক্ষা করার অনুরোধ জানাচ্ছি।” 

কেরানিপাড়ার রাখাইন তরুণী ম্যাসুয়েন বলেন, “বর্ষবরণ উপলক্ষে দিনভর নানা আয়োজন ছিল। এখানে সব অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছি। বিশেষ করে জলকেলির সঙ্গে নাচ আর গান দারুনভাবে উপভোগ করেছি। এমন আয়োজন করার জন্য উপজেলা প্রশাসনসহ সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।”

কলাপাড়ার ইউএনও রবিউল ইসলাম বলেন, “উপজেলা প্রশাসনের অর্থায়নে ও রাখাইনদের সহযোগিতায় তিন দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়েছে। রাখাইনদের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ধরে রাখার জন্য সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। এ অনুষ্ঠানের নিরাপত্তার জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশ, নৌ-পুলিশ ও থানা পুলিশের পাশাপাশি উপজেলা প্রশাসন তৎপর রয়েছে।”

পটুয়াখালী রাখাইন বুড্ডিস ওয়েলফেয়ার এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এমং তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন- সরকারি মোজাহার উদ্দিন অনার্স কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. ফাতেমা হেরেন, কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশ রিজিয়নের সহকারী পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান, মহিপুর থানার ওসি তরিকুল ইসলাম ও কুয়াকাটা পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান। 

ঢাকা/ইমরান/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভোলায় ইন্ট্রাকো কোম্পানির চারটি গাড়ি আটকে দিয়েছে ছাত্র-জনতা
  • ভোলায় ইন্ট্রাকোর ৪টি গাড়ি আটকে দিয়েছে ছাত্র-জনতা
  • প্রতিবন্ধী নারীর অনন্য পাঠশালা
  • ভোলায় গ্যাসভর্তি আরও তিনটি গাড়ি আটকে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ, উত্তেজনা
  • ইটনায় এবার খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির পরিবেশক নিয়োগে ‘ঘুষ চাওয়ার ফোনালাপ’ ফাঁস
  • অসদুপায় অবলম্বনে সহায়তায় কেন্দ্রের ২১ শিক্ষককে অব্যাহতি
  • কুয়াকাটায় জলকেলিতে মাতলেন রাখাইন তরুণ-তরুণীরা
  • পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি, দুই লাখ টাকা জরিমানা