হবিগঞ্জের মাধবপুর ও চুনারুঘাট মধ্যবর্তী সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে পর্যটকদের আগমন বেড়ে যাওয়ায় সংরক্ষিত বনাঞ্চলটি লোকারণ্যে পরিণত হয়েছে। বনে প্রতিদিন হাজারো মানুষ প্রবেশ করায় বনের স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। সুষ্ঠু পরিকল্পনা না থাকায় মানুষের অবাধ প্রবেশ ও ব্যাপক বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডের কারণে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান যেন হাটে পরিণত হয়েছে।
২০০৫ সালে সাতছড়ি বনের ২৪৩ হেক্টর বনভূমিকে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করে সরকার। সাত ছড়ার সমন্বয়ে গঠিত বলে সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক বনকে সাতছড়ি বলা হয়। এ বনটি একটি সমৃদ্ধ বন হিসেবে পরিচিত। এই বনে চিত্রা উড়ন্ত টিকটিকি, মুখপোড়া হনুমান, উল্টোলেজি বানর, কালো ভালুক, উদয়ী পাকড়া বন্যকুকুর, মায়া হরিণ, এশিয়াটিক কালো ভালুক, মেছোবাঘসহ ২১ প্রজাতির উভচর প্রাণীর বসবাস। এ বনাঞ্চলে ৫০ প্রজাতির সরীসৃপ, ২০৩ প্রজাতির পাখি রয়েছে ও ২৪ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী রয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে বনে বিভিন্ন বন্যপ্রাণী ও সাপ অবমুক্ত করায় বনে এখন জীবের সংখ্যা বেড়েছে। 
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বনের জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে নানা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। এতে বন যেন এখন হাট-বাজারে পরিণত হয়েছে। বনের ভেতরে পিকনিক করতে আসা লোকজন ও পর্যটকরা প্লাস্টিক ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য ফেলে ভাগাড়ে পরিণত করেছে। লোকজন হইহুল্লোড় করার কারণে বনে বসবাসকারী জীবজন্তু এখন বন ছেড়ে পালিয়ে যাবার উপক্রম হয়েছে। বনের ছড়ায় পর্যটকদের সুবিধার্থে নির্মাণ করা হচ্ছে ২ কোটি টাকা ব্যয়ে বড় সেতু। 
মাধবপুরে পরিবেশবাদী এনজিও সংস্থা বাসার চেয়ারম্যান মুখলেছুর রহমান জানান, প্রাকৃতিক বনকে ধ্বংস করে পশুপাখির জন্য বনে লাগানো হয় ফলদ বাগান। বিদেশি অর্থ সহায়তায় টেকসই বন ও জীবিকা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বনের ভেতর ফলের গাছ রোপণ করা হয়। কিন্তু সঠিক পরিচর্যা ও অবহেলায় ফলদ বাগান প্রকল্প তেমন সফল নয়। 
বন বিভাগের সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় ও রেঞ্জ কর্মকর্তাদের ভাষ্য, বনের ভেতর লোকজন যত কম যাবে, তাতে পরিবেশ নীরব থাকবে। এতে বন তত সমৃদ্ধ হবে। বনের ভেতর বসবাসকারী জীববৈচিত্র্য নিরাপদে বেড়ে উঠার পরিবেশ পাবে। কিন্তু হয়েছে উল্টো। অপরিকল্পিতভাবে বন এলাকায় টিকিট কেটে দর্শনার্থী প্রবেশের সুযোগ তৈরি করে দেওয়ায় বনের ক্ষতি হচ্ছে। তারা বলেন, সরকার যে সিদ্ধান্ত নেন সে নির্দেশনামতো কাজ করতে হয়। জাতীয় উদ্যান ঘোষণার কারণে সাতছড়ির প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না।
স্থানীয় বনরক্ষীরা সাতছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ বলেন, পর্যটন মৌসুমে বিশেষত শীত ও বসন্ত ঋতুতে সাতছড়িতে মানুষের ভিড় খুব বেড়ে যায়। মানুষ বেশি আসার কারণে বনের জীববৈচিত্র্য ধরে রাখা এখন কঠিন। মানুষের প্রবেশ কীভাবে এটি নিয়ন্ত্রণ করা যায় এ বিষয়ে চিন্তা করছে বন বিভাগ। কারণ, দিন দিন বনে যে হারে লোকের প্রবেশ বাড়ছে, এটা বনের জন্য অশনিসংকেত।
মৌলভীবাজার প্রকৃতি সংরক্ষণ ও বন্যপ্রাণী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড.

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সাতছড়ি বন বাংলাদেশের মধ্যে চিরহরিৎ সমৃদ্ধ বন। এ বনের জীববৈচিত্র্য অত্যন্ত মূল্যবান। তাই সাতছড়ি বনকে সমৃদ্ধ করতে বন বিভাগ খুবই আন্তরিক। 
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বন র জ পর ব শ স তছড়

এছাড়াও পড়ুন:

কাল থেকে বন–পাহাড় দেখতে ছুটবেন পর্যটকেরা, যেভাবে প্রস্তুত হচ্ছে বান্দরবান

বান্দরবানে ঈদের টানা ছুটিতে আগামীকাল বুধবার থেকে হাজারো পর্যটকের ঢল নামবে বলে আশা করছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। প্রতিবছর ঈদের পরের দিন থেকে পর্যটকেরা ভ্রমণে আসেন শৈল শহরটিতে। এবারও সেভাবেই হোটেল-মোটেলে বুকিং হয়েছে। পর্যটকদের বরণে প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন হোটেল-রিসোর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জসীম উদ্দিন।

জেলা শহর ও শহরতলির আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র ও আবাসিক হোটেল-রিসোর্টগুলোয় গিয়ে দেখা গেছে, পর্যটকদের আগমন উপলক্ষে পরিচ্ছন্নতার কাজসহ নানা ধরনের প্রস্তুতি চলছে। আজ মঙ্গলবার থেকে কিছু পর্যটক আসতে শুরু করেছেন। পরিবহন সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, আজ সকাল থেকে দেবতাখুম, শৈলপ্রপাত, চিম্বুক ও নীলগিরিতে প্রায় দেড় শ গাড়ি নিয়ে পর্যটকেরা জেলা সদর থেকে বের হয়েছেন। আগামীকাল তিন থেকে চার গুণ বাড়তে পারে। আবাসিক হোটেলে-মোটেল ও অবকাশযাপনকেন্দ্রগুলোয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মব্যস্ততা বেড়েছে। পর্যটননির্ভর পরিবারগুলোও পর্যটকের আশায় ফলমূল, কোমরতাঁতের কাপড় ও বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী সংগ্রহ করে বিক্রির জন্য অপেক্ষা করছেন।

বান্দরবান-চিম্বুক সড়কের শৈলপ্রপাতের কোমরতাঁতের কাপড় বিক্রি করেন জুলি বম। তিনি জানান,পবিত্র রমজান মাসে পর্যটকের আগমন কম ছিল। আজ থেকে বিক্রি বেড়েছে। আগামীকাল আরও বাড়বে বলে আশা করছেন। মেঘলা পর্যটনকেন্দ্রের প্রবেশমুখের দোকানি মহিউদ্দিন বললেন, পানির বোতল, স্মারকপণ্য (হস্তশিল্পের সামগ্রী ), পাহাড়িদের ঐতিহ্যবাহী কাপড় ও জুমের বিন্নি ধানের চালের প্রতি পর্যটকদের আকর্ষণ বেশি। এ জন্য এসব পণ্য দোকানে রেখেছেন।

বাসস্টেশন এলাকার হিলভিউ হোটেলের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ পারভেজ জানালেন, চাঁদরাত থেকেই পর্যটকেরা হোটেল বুকিং দিতে শুরু করেছেন। তাঁদের হোটেলে প্রায় সব কক্ষের আগাম ভাড়া হয়েছে। তবে জরুরি প্রয়োজনের জন্য কয়েকটি কক্ষ খালি রাখা হয়েছে।

হোটেল-রিসোর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জসীম উদ্দিন জানান, জেলা শহর ও শহরতলিতে ৭৩টি এবং উপজেলা শহরে, বিশেষ করে লামা ও আলীকদমে আরও সমসংখ্যক হোটেল, মোটেল, অবকাশযাপনকেন্দ্র রয়েছে। এসব হোটেলে একসঙ্গে ছয় থেকে সাড়ে ছয় হাজার পর্যটকের আবাসনসুবিধা দেওয়া সম্ভব। এগুলোর কক্ষ ইতিমধ্যে আগাম ভাড়া হয়ে গেছে। আগামীকাল থেকে পর্যটক আসা শুরু হবে।

কোথায় ভ্রমণ করবেন

জেলা শহরে প্রবেশমুখে অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ মেঘলা পর্যটনকেন্দ্র। বৃক্ষরাজির সবুজে ঘেরা, নীলজলের হ্রদ ও ঝুলন্ত সেতুতে সময়টা কাটবে দারুণ। তারপর পড়ন্ত বিকেলে নীলাচলের পাহাড়চূড়ায় গিয়ে সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য দেখা যেতে পারে। জেলার শৈলপ্রপাতে গেলে একসঙ্গে দেখা যাবে ঝরনার সৌন্দর্য ও বম জনগোষ্ঠীর জীবনধারা। শৈলপ্রপাত থেকে পাহাড়ি সড়ক ধরে যেতে থাকলে চিম্বুক পাহাড় ও নীলগিরি পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে পাহাড়ি মানুষের জীবনের সরলতা ও পাহাড়ের উদারতা দেখা যাবে। তবে চিম্বুক ও নীলগিরি পাহাড়ে স্থানীয় চাঁদের গাড়িতে (ফোর হুইল জিপ) করে যাওয়াই নিরাপদ। কারণ সমতলের চালকেরা পাহাড়ি সড়কে যানবাহন চালাতে অভ্যস্ত নন। বাসস্টেশন এলাকায় চাঁদের গাড়ির ভাড়াও নির্ধারণ করে দেওয়া আছে। কারও নৌকাভ্রমণের শখ থাকলে জেলা শহরের ক্যচিংঘাটায় গেলে সহজে ভ্রমণসেবা পাওয়া যাবে।

পাহা্ড় থেকে দেখা বান্দরবানের শ্যামল নিসর্গ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঈদের ছুটিতে খাগড়াছড়িতে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়
  • সাতছড়ি উদ্যানে পর্যটকের ঢল 
  • পর্যটকে টইটম্বুর কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত
  • কাল থেকে বন–পাহাড় দেখতে ছুটবেন পর্যটকেরা, যেভাবে প্রস্তুত হচ্ছে বান্দরবান
  • ঈদের ছুটিতে মুখর কক্সবাজার সৈকত
  • প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক লুকানো রত্ন সুনামগঞ্জের লাকমাছড়া
  • ঈদ ভ্রমণে পর্যটকদের আকর্ষণ পাহাড় ও মেঘের স্বর্গরাজ্য বান্দরবান
  • ঈদের ছুটিতে পর্যটক বরণে প্রস্তুত রাঙামাটি 
  • খাগড়াছড়ির বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে পর্যটকদের ভিড়
  • ঈদের ছুটিতে সিলেটে ১০ লক্ষাধিক পর্যটক সমাগমের সম্ভাবনা