বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান মঙ্গলবার জাতীয় শহীদ সেনা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রদত্ত বক্তব্যে যেই উদ্বেগ ব্যক্ত করিয়াছেন, উহা আমলে লইবার বিকল্প নাই। সেনাবাহিনী প্রধানরূপে এই প্রকার বক্তব্য সাম্প্রতিককালে বিরল হইলেও সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সময়োচিত। বিশেষত যখন গণঅভ্যুত্থানের অংশীজন রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে দূরত্ব ও অনৈক্য ক্রমবর্ধমান, তখন সেনাবাহিনী প্রধানের সতর্কবার্তা নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি যথার্থই বলিয়াছেন, নিজেরা কর্দম নিক্ষেপ ও হানাহানিতে লিপ্ত থাকিলে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটিতে পারে। আমরা প্রত্যাশা করিব, সেনাবাহিনী প্রধানের বক্তব্যের অন্তর্নিহিত অর্থ সংশ্লিষ্টরা অনুধাবনে সক্ষম হইবেন।

সেনাবাহিনী প্রধান এমন সময়ে এই বক্তব্য দিয়াছেন, যখন দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি লইয়া বিলক্ষণ উদ্বেগ তৈয়ার হইয়াছে। গত কিছু দিবসে সংঘটিত বেশ কিছু চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনায় এমনকি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা লইয়াও প্রশ্ন উঠিয়াছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির নেপথ্যে রাজনৈতিক শক্তিগুলির পারস্পরিক দূরত্ব এবং বিভিন্ন পক্ষের হানাহানি, তৎসহিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মনোবলের ঘাটতির যেই বিষয় তিনি উল্লেখ করিয়াছেন, উহা প্রণিধানযোগ্য। তিনি পারস্পরিক বিষোদ্গার হইতেও বিরত থাকিবার যেই তাগিদ দিয়াছেন, উহার সহিত দ্বিমতের অবকাশ নাই। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এই প্রকার অবিমৃষ্যকারিতা যে কাহারও জন্য কল্যাণকর নহে, উহা বুঝিতে বিশেষজ্ঞ হইবার প্রয়োজন নাই। তবে তিনি নিশ্চিত করিয়াছেন, আইনশৃঙ্খলা লইয়া সেনাবাহিনী কাজ করিতেছে। সাম্প্রতিককালে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাও আইনশৃঙ্খলা লইয়া উদ্বিগ্ন না হইতে বলিয়াছেন। আমরা বিশ্বাস করি, সকল পক্ষ আন্তরিকতার সহিত তৎপর হইলে পরিস্থিতি সামলাইয়া উঠা সহজ হইবে। 

জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান তাঁহার বক্তব্যে অবাধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের যেই প্রয়োজনীয়তা ব্যক্ত করিয়াছেন, আমরা মনে করি উহা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। বলিবার অপেক্ষা রাখে না, ইহা অন্তর্বর্তী সরকারেরও অন্যতম অগ্রাধিকার। তবে নির্বাচনসহ অন্যান্য ব্যবস্থার সংস্কারে সরকার গঠিত কমিশন ইতোমধ্যে যেই প্রতিবেদন দিয়াছে, তাহার আলোকে ঐক্য কমিশনের কার্যক্রম আগাইয়া লইবার বিকল্প নাই। সংস্কার নিঃসন্দেহে দীর্ঘমেয়াদি বিষয়, যথায় অন্তর্বর্তী সরকার উহার সূচনা করিলে গণতান্ত্রিক সরকার আসিয়া পূর্ণাঙ্গ করিতে পারে। আমরা দেখিয়াছি, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাও রাজনৈতিক দলগুলির সহিত নির্বাচন লইয়া সংলাপ করিয়াছেন এবং ডিসেম্বরে সম্ভাব্য নির্বাচনের বিষয়টি নিশ্চিত করিয়াছেন। আমরা চাহিব ঘোষিত সময়ের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের সকল প্রক্রিয়া সরকার সম্পন্ন করিবে।

স্মরণে রাখিতে হইবে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কিংবা জাতীয় নির্বাচন– উভয় ক্ষেত্রেই জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নাই। উহাই এই মুহূর্তে জরুরি কর্তব্য। প্রধান উপদেষ্টা ড.

মুহাম্মদ ইউনূসও এই লক্ষ্যে কাজ করিবার প্রত্যয় বারংবার ব্যক্ত করিয়াছেন। সেনাবাহিনী প্রধানের বক্তব্যে উহা স্পষ্ট। এখন আমরা দেখিতে চাহিব, গণঅভ্যুত্থানের অংশীজন রাজনৈতিক দলগুলিও একই লক্ষ্যে অগ্রসর হইবে। আমরা বিশ্বাস করি, রাজনৈতিক ঐক্যের মাধ্যমে দেশের সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা সহজ হইবে। বিপরীতে রাজনৈতিক দলগুলি যদি স্বীয় স্বার্থ সিদ্ধির জন্য জাতিকে সংকটে ফেলিয়া দেয়, উহার পরিণতি মন্দ বৈ উত্তম হইবে না। আমরা মনে করি, ইহাই সেনাবাহিনী প্রধানের বক্তব্যের মূল সুর। তাঁহার স্পষ্টবাদিতাকে তির্যকভাবে দেখিবার অবকাশ নাই। সামাজিক, রাজনৈতিক ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে স্থিতিশীলতা আনয়নে দেশের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হওয়া যদ্রূপ জরুরি, তদ্রূপ গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্যও অনিবার্য অনুষঙ্গ। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ত কর য় ছ ন পর স থ ত উপদ ষ ট সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরকারের মতপার্থক্য স্পষ্ট হতে শুরু করেছে: মান্না

দেশে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মতপার্থক্য স্পষ্ট হতে শুরু করেছে বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

ফিলিস্তিনে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ বন্ধের দাবিতে সমাবেশের আয়োজন করে গণতন্ত্র মঞ্চ। সমাবেশে মঞ্চের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

সমাবেশ শেষ ফিলিস্তিনের গাজায় হত্যাযজ্ঞ বন্ধ এবং স্বাধীন ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠার দাবিতে প্রেসক্লাবের সামনে একটি বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।

এ সময় মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান গণহত্যা এবং ফিলিস্তিনিদের কষ্ট প্রকাশের ভাষা নেই। এই হত্যাযজ্ঞ এতটাই বর্বর, যা পৃথিবীর ইতিহাসে আর কোথাও হয়নি। আমরা এই বর্বরতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে শামিল হয়েছি। আমরা স্বাধীন ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে সংহতি জানাচ্ছি।’

মান্নার বক্তব্যে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিও উঠে আসে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের মতপার্থক্য স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। সংকট সমাধানে আমাদের শেষ পর্যন্ত গণতন্ত্রের কাছেই ফিরে যেতে হবে। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে হবে।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সিনিয়র সহসভাপতি তানিয়া রবের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক প্রমুখ বক্তব্য দেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে  
  • আ.লীগের মিছিল ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার
  • সরকারের সঙ্গে মতপার্থক্য স্পষ্ট হতে শুরু করেছে: মান্না 
  • ভোলাগঞ্জে বিজিবির সদস্যদের ওপর চড়াও অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনকারীরা
  • অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে ২ মাসে আড়াই হাজার গ্রেপ্তার
  • নির্বাচনের বিকল্প সংস্কার কেন, প্রশ্ন রিজভীর
  • রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরকারের মতপার্থক্য স্পষ্ট হতে শুরু করেছে: মান্না
  • উদ্ধারপ্রক্রিয়ায় এলাকাবাসীকে যুক্ত করুন
  • আইনের হাত বনাম নিজের হাত  
  • জুলাইয়ের মধ্যে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার চিন্তা ইসির