আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে বাংলাদেশ: খলিলুর রহমান
Published: 27th, February 2025 GMT
মিয়ানমারের আরাকান আর্মির (এএ) সঙ্গে বাংলাদেশ যোগাযোগ রাখছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলি–সংক্রান্ত বিশেষ প্রতিনিধি খলিলুর রহমান। তিনি বলেন, দেশের সীমান্ত সুরক্ষা এবং রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের স্বার্থে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের প্রায় ৯০ শতাংশ দখল করে থাকা আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে ঢাকা।
রাজধানীর নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির (এনএসইউ) সিন্ডিকেট হলে রোহিঙ্গাদের বিষয়ে আয়োজিত এক আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় খলিলুর রহমান এ কথা বলেন। ‘রাখাইনের পরিস্থিতি এবং বাংলাদেশের ওপর এর প্রভাব’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্স (এসআইপিজি)।
এই প্রথম সরকারের জ্যেষ্ঠ কোনো কর্মকর্তা প্রকাশ্যে জানালেন, বাংলাদেশ আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। মিয়ানমারে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে জেনারেল মিন অং হ্লায়িং। এর পর থেকে দেশটিতে সহিংসতা শুরু হয়। রাখাইনে স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আরাকান আর্মি লড়াই করছে। বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের পুরো ২৭১ কিলোমিটার সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ করছে আরকান আর্মি।
খলিলুর রহমান বলেন, ‘যেদিন আরাকান আর্মি সীমান্তে তাদের পতাকা উত্তোলন করেছিল, সেদিনই বুঝতে পেরেছিলাম যে এটি একটি নতুন বিশ্ব। ফলে তাদের সঙ্গে যুক্ত হতে হবে।.
খলিলুর রহমান বলেন, মানবিক বিবেচনার বিষয়টিতে অগ্রাধিকার থাকলেও আরাকান আর্মিকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন মেনে চলতে হবে। পাশাপাশি দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে আরাকান আর্মিসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে উন্মুক্ত সংলাপ অব্যাহত রাখতে হবে।
বিশেষ বক্তা হিসেবে বক্তৃতা করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি উন্নয়নবিষয়ক বিশেষ সহকারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আবদুল হাফিজ। তিনি বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশের নিরাপত্তায় ঝুঁকি তৈরি করে আসছে। রাখাইনের বেশির ভাগ অংশই আরাকান আর্মির দখলে।
ফলে সীমান্তবর্তী এলাকায় হামলা, অস্ত্র চোরাচালান, মাদক পাচার, মানব পাচার এবং রোহিঙ্গাদের স্থানচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা অনেক গুণ বেড়েছে। তিনি বলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত কৌশলগত নীতি ও কূটনীতিই আমাদের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা এবং রাখাইন সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান নিশ্চিত করতে পারে।’
আলোচনায় মিয়ানমারে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মো. সুফিউর রহমান রাখাইনের পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করে বলেন, ইতিমধ্যে সাড়ে সাত লাখ মানুষ রাখাইন থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। রাখাইনে দরিদ্রতা উদ্বেগজনক পর্যায়ে উঠে গেছে। তিনি বিশ্বাস করেন যে বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থিতিশীল ভূমিকা পালন করতে পারে, প্রধানত মানবিক সহায়তা প্রদান এবং চট্টগ্রাম ও রাখাইনের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার মাধ্যমে।
এসআইপিজির পরিচালক অধ্যাপক শেখ তৌফিক এম হক বলেন, জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষায় বাংলাদেশকে কঠোর অবস্থান নিতে হবে এবং ধীরে ধীরে ও নীরবে প্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের ঢলও বন্ধ করতে হবে। বাংলাদেশকে তার নিরাপত্তার উদ্বেগ বিবেচনায় অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক লক্ষ্যগুলোর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে।
আলোচনায় আরও বক্তব্য দেন সেন্টার ফর বাংলাদেশ অ্যান্ড গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্সের (সিবিজিএ) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাসান মো. শামসুদ্দিন, আরাকান রোহিঙ্গা ন্যাশনাল অ্যালায়েন্সের (এআরএনএ) চেয়ার নুরুল ইসলাম, মিয়ানমারের বাইরে থেকে পরিচালিত জাতীয় ঐক্য সরকারের (এনইউজি) মানবাধিকার মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী অং কিয়াও মো প্রমুখ। সমাপনী বক্তব্য দেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য আবদুল হান্নান চৌধুরী।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র খ ইন র
এছাড়াও পড়ুন:
আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে বাংলাদেশ: খলিলুর রহমান
মিয়ানমারের আরাকান আর্মির (এএ) সঙ্গে বাংলাদেশ যোগাযোগ রাখছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলি–সংক্রান্ত বিশেষ প্রতিনিধি খলিলুর রহমান। তিনি বলেন, দেশের সীমান্ত সুরক্ষা এবং রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের স্বার্থে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের প্রায় ৯০ শতাংশ দখল করে থাকা আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে ঢাকা।
রাজধানীর নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির (এনএসইউ) সিন্ডিকেট হলে রোহিঙ্গাদের বিষয়ে আয়োজিত এক আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় খলিলুর রহমান এ কথা বলেন। ‘রাখাইনের পরিস্থিতি এবং বাংলাদেশের ওপর এর প্রভাব’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্স (এসআইপিজি)।
এই প্রথম সরকারের জ্যেষ্ঠ কোনো কর্মকর্তা প্রকাশ্যে জানালেন, বাংলাদেশ আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। মিয়ানমারে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে জেনারেল মিন অং হ্লায়িং। এর পর থেকে দেশটিতে সহিংসতা শুরু হয়। রাখাইনে স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আরাকান আর্মি লড়াই করছে। বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের পুরো ২৭১ কিলোমিটার সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ করছে আরকান আর্মি।
খলিলুর রহমান বলেন, ‘যেদিন আরাকান আর্মি সীমান্তে তাদের পতাকা উত্তোলন করেছিল, সেদিনই বুঝতে পেরেছিলাম যে এটি একটি নতুন বিশ্ব। ফলে তাদের সঙ্গে যুক্ত হতে হবে।...আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে আরাকান আর্মিকে একটি সংকেত পাঠানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’ তিনি বলেন, ‘এটি আমাদের সীমান্ত এবং আমাদের এটিকে রক্ষা করতে হবে, সুরক্ষিত করতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে যে আমরা অন্য প্রান্তে যে আছে, তার সঙ্গে সহযোগিতা করে কাজ করব। আমরা একটি নির্দিষ্ট স্তরে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি।’ খলিলুর রহমান জানান, আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগের আগে তিনি জাতিসংঘ মহাসচিবের মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষ দূত জুলি বিশপের সঙ্গে বৈঠক করেন।
খলিলুর রহমান বলেন, মানবিক বিবেচনার বিষয়টিতে অগ্রাধিকার থাকলেও আরাকান আর্মিকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন মেনে চলতে হবে। পাশাপাশি দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে আরাকান আর্মিসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে উন্মুক্ত সংলাপ অব্যাহত রাখতে হবে।
বিশেষ বক্তা হিসেবে বক্তৃতা করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি উন্নয়নবিষয়ক বিশেষ সহকারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আবদুল হাফিজ। তিনি বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশের নিরাপত্তায় ঝুঁকি তৈরি করে আসছে। রাখাইনের বেশির ভাগ অংশই আরাকান আর্মির দখলে।
ফলে সীমান্তবর্তী এলাকায় হামলা, অস্ত্র চোরাচালান, মাদক পাচার, মানব পাচার এবং রোহিঙ্গাদের স্থানচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা অনেক গুণ বেড়েছে। তিনি বলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত কৌশলগত নীতি ও কূটনীতিই আমাদের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা এবং রাখাইন সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান নিশ্চিত করতে পারে।’
আলোচনায় মিয়ানমারে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মো. সুফিউর রহমান রাখাইনের পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করে বলেন, ইতিমধ্যে সাড়ে সাত লাখ মানুষ রাখাইন থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। রাখাইনে দরিদ্রতা উদ্বেগজনক পর্যায়ে উঠে গেছে। তিনি বিশ্বাস করেন যে বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থিতিশীল ভূমিকা পালন করতে পারে, প্রধানত মানবিক সহায়তা প্রদান এবং চট্টগ্রাম ও রাখাইনের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার মাধ্যমে।
এসআইপিজির পরিচালক অধ্যাপক শেখ তৌফিক এম হক বলেন, জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষায় বাংলাদেশকে কঠোর অবস্থান নিতে হবে এবং ধীরে ধীরে ও নীরবে প্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের ঢলও বন্ধ করতে হবে। বাংলাদেশকে তার নিরাপত্তার উদ্বেগ বিবেচনায় অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক লক্ষ্যগুলোর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে।
আলোচনায় আরও বক্তব্য দেন সেন্টার ফর বাংলাদেশ অ্যান্ড গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্সের (সিবিজিএ) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাসান মো. শামসুদ্দিন, আরাকান রোহিঙ্গা ন্যাশনাল অ্যালায়েন্সের (এআরএনএ) চেয়ার নুরুল ইসলাম, মিয়ানমারের বাইরে থেকে পরিচালিত জাতীয় ঐক্য সরকারের (এনইউজি) মানবাধিকার মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী অং কিয়াও মো প্রমুখ। সমাপনী বক্তব্য দেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য আবদুল হান্নান চৌধুরী।