রমজান মাসে সপ্তম আকাশের লওহে মাহফুজ থেকে দুনিয়ার আকাশে বায়তুল ইজ্জতে পবিত্র কোরআন একবারে নাজিল হয়। সেখান থেকে আবার রমজান মাসে অল্প অল্প করে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি নাজিল হতে শুরু করে। কোরআন নাজিলের দুটি স্তরই রমজান মাসকে ধন্য করেছে। শুধু আল কোরআনই নয়, বরং হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর সহিফা, তাওরাত, যাবুর, ইঞ্জিলসহ সব ঐশীগ্রন্থ রমজান মাসে অবতীর্ণ হয়েছে বলে তাবরানি বর্ণিত একটি সহি হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে (সহি আল-জামে)।
এ মাসে মানুষের হেদায়াত ও আলোকবর্তিকা যেমন নাজিল হয়েছে, তেমনি আল্লাহর রহমত হিসেবে এসেছে সিয়াম। তাই এ দুই নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করতে বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করা উচিত। প্রতিবছর রমজান মাসে হজরত জিব্রাইল (আ.
পবিত্র কোরআনের অংশবিশেষ পাঠ ব্যতীত প্রধান ইবাদত নামাজও আদায় হয় না। এ জন্যই সহিভাবে পবিত্র কোরআন শিক্ষা করা সবার জন্য অত্যন্ত জরুরি। কমপক্ষে নামাজ পড়তে যতটুকু প্রয়োজন, ততটুকু শেখা ফরজে আইন। যে ব্যক্তি যত বেশি কোরআনের ধারক-বাহক হবেন, তাঁর সম্মান তত বেশি হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোরআনওয়ালাই আল্লাহওয়ালা এবং আল্লাহর খাস পরিবারভুক্ত।’ ‘যে অন্তরে কোরআন নেই, তা যেন পরিত্যক্ত বিরান ভূমি।’
কোরআন মজিদ দুনিয়ার সর্বাধিক পঠিত, সর্বাধিক ভাষায় অনূদিত ও সর্বাধিকসংখ্যক প্রকাশিত গ্রন্থ। যারা কোরআন তেলাওয়াত, চর্চা ও অনুশীলন করবে না, তাদের বিরুদ্ধে রোজ কিয়ামতে আল্লাহ তায়ালার আদালতে মহানবী (সা.) অভিযোগ করবেন। তিনি বলবেন, ‘হে আমার রব! এই লোকেরা কোরআন পরিত্যাগ করেছিল (সুরা ফুরকান, আয়াত: ৩০)।’
কোরআন শিক্ষা করা ফরজ; শিখে ভুলে গেলে মারাত্মক গুনাহ হয়; অশুদ্ধ বা ভুল পাঠ করলে কঠিন পাপের কারণ হতে পারে। তাই কোরআন সহি ও শুদ্ধভাবে শেখা ও তেলাওয়াত করা জরুরি। যারা পড়তে জানেন না, তাদের শিখতে হবে। যারা শিখে ভুলে গেছেন, তাদের পুনরায় পড়তে হবে। যারা ভুল পড়েন, তাদের সহিভাবে পড়া শিখতে হবে।
রমজান মাস ব্যতীত বছরের ১১ মাসে কোরআন তেলাওয়াতে ১টি হরফ পাঠ করলে ১০টি নেকি; আর পবিত্র কোরআন নাজিলের মাসে রমজানুল মোবারকে ১টি হরফ তেলাওয়াতের বদলে ৭০ নেকি পাওয়া যায়। রমজানুল মোবারক হলো মুসলিম উম্মাহর জন্য সুপার অফার। যে যত বেশি কোরআন তেলাওয়াত করবে, সে তত বেশি আল্লাহর নৈকট্য লাভ করবে। তাই সহি ও শুদ্ধভাবে কোরআন তেলাওয়াতে আমরা আরও বেশি মনোযোগী হবো ইনশাআল্লাহ।
অনেক সময় দেখা যায়, কোনো কোনো কোম্পানি বিশেষ পণ্যের অফার বা ডিসকাউন্ট দিয়ে বিক্রি করে এর সময় বেঁধে দিয়ে। মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় হাবিব মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর উম্মতকে তাঁর নৈকট্য লাভের জন্য বিশেষ অফার দিয়েছেন। তা হলো রমজানুল মোবারক। রমজান মাসেই রয়েছে এমন এক রাত, যা হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম।
উল্লেখ্য, পূর্বেকার নবী-রাসুল (আ.)-এর উম্মতরা দীর্ঘ হায়াত পেতেন। কিন্তু উম্মতে মুহাম্মদী সাধারণত ৭০-৮০ বছর হায়াত পান। উম্মতে মুহাম্মদীর আয়ু যেহেতু খুবই স্বল্প, তাই মহান আল্লাহ দয়া করে তাদের জন্য কোরআন নাজিলের এ মাসের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর উপহার দিয়েছেন। যে রাতের একটি নেক আমল হাজারটি নেক আমলের চেয়ে উত্তম। তাই আমরা যদি স্বাভাবিক ইবাদত-বন্দেগির পাশাপাশি হায়াতে জিন্দেগিতে পাওয়া সব রমজান মাসে এবং কদরের রাতে ফরজ ইবাদতের পাশাপাশি অন্যান্য নফল ইবাদত যেমন– কোরআন তেলাওয়াত, জিকির- আসকার, কবর জিয়ারত ও দান- খয়রাত বেশি বেশি করতে পারি, তাহলে অল্প আয়ুতেও অনেক বেশি নেকি অর্জন করা সম্ভব।
ড. মো. শাহজাহান কবীর: বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ, ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ঢাকা
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: রমজ ন ম স ক রআন ন র জন য আল ল হ
এছাড়াও পড়ুন:
দক্ষিণ চট্টগ্রামসহ দেশের শতাধিক গ্রামে ঈদুল ফিতর উদ্যাপিত
দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় আজ রোববার পবিত্র ঈদুল ফিতর উদ্যাপিত হচ্ছে। সাতকানিয়া উপজেলার মির্জাখীল দরবার শরিফের অনুসারীরা হানাফি মাজহাবের নিয়ম অনুসরণ করে ঈদ উদ্যাপন করেন। এ দরবার শরিফের অনুসারীরা হানাফি মাজহাব মতে, বিশ্বের যেকোনো দেশে চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে ২০০ বছর ধরে এভাবে ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা ও চান্দ্রমাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত সব ধর্মীয় অনুশাসন পালন করে আসছেন।
দরবারের সূত্র জানায়, মির্জাখীল দরবার শরিফের খানকাহ মাঠে সকাল ৯টার সময় ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। হজরত শাহ জাহাঁগীর শেখুল আরেফীন (ক.), হজরত শাহ জাহাঁগীর ফখরুল আরেফীন (ক.), হজরত শাহ জাহাঁগীর শমসুল আরেফীন (ক.)–এর পদাঙ্ক অনুসরণ করে বর্তমান সাজ্জাদানশীন হজরত শাহ জাহাঁগীর তাজুল আরেফীন (ক.)–এর তত্ত্বাবধানে তাঁর জানশিন (উত্তরাধিকারী) হজরত ইমামুল আরেফীন মাওলানা মুহাম্মদ মকছুদুর রহমান ঈদের নামাজে ইমামতি করেন।
এদিকে সকাল ৯টার সময় আনোয়ারা উপজেলার তৈলারদ্বীপ গ্রামে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। একই সময়ে বাঁশখালী উপজেলার কালীপুরে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।