মালয়েশিয়ার পেনাং রাজ্যের আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে গত বছরের সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে পাসপোর্টের আবেদন জমা দিতে যান এক প্রবাসী বাংলাদেশি। সে সময় পেনাং অফিস পরিদর্শনে গিয়েছিলেন বাংলাদেশ হাইকমিশনের কাউন্সিলর (পাসপোর্ট ও ভিসা) মিয়া মোহাম্মাদ কেয়ামউদ্দিন। তিনি সেখানে পরিচয় যাচাই না করেই দালাল সন্দেহে ওই বাংলাদেশিকে মারধর করেন বলে অভিযোগ ওঠে। ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হলে দাবি ওঠে তাঁকে অপসারণ ও শাস্তির। তবে গত বছর ওই ঘটনার পরও কেয়ামউদ্দিন স্বপদে এখনও বহাল। 
শুধু সেবাপ্রত্যাশীদের হেনস্তা নয়, কেয়ামউদ্দিনের বিরুদ্ধে রয়েছে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ। টাকা না দিলে তাঁর দপ্তর থেকে পাসপোর্ট পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ করেছেন অনেক প্রবাসী। তাঁর দপ্তরে কয়েক বছর ধরে বিতরণের অপেক্ষায় রয়েছে ২৫ হাজারের বেশি পাসপোর্ট। কিন্তু অজানা কারণে তিনি পাসপোর্টগুলো ছাড়ছেন না। এমন বেশ কিছু অভিযোগ ওঠার পর হাইকমিশন থেকে কেয়ামউদ্দিনকে গত ২৩ অক্টোবর কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি জবাব দেননি। 
২০২১ সালের এপ্রিল থেকে কেয়ামউদ্দিন মালয়েশিয়ায় হাইকমিশনে কাউন্সিলর হিসেবে কর্মরত। সূত্র জানায়, কেয়ামউদ্দিনের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে হাইকমিশনের পাসপোর্ট অনুবিভাগে কর্মরত অফিস সহকারী মনজিল হোসেন রাতুল ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। রাতুলের বিভিন্ন অপকর্ম সম্পর্কে একটি অডিও ভাইরাল হলে তা হাইকমিশনের কাছে আসে। হাইকমিশন এসব অভিযোগের সত্যতা পেলে গত ২৬ সেপ্টেম্বর কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়। তবে এর কোনো জবাব দেননি রাতুল। সমকালের কাছে আসা রাতুলের এক অডিও বার্তায় শোনা যায়, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে হাইকমিশনের পাসপোর্ট অনুবিভাগের কার্যক্রম সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। অডিওতে রাতুল বলেন, ‘মালয়েশিয়ার এমবাসিতে পাসপোর্টের কাজের সঙ্গে জড়িত আছে প্রচুর লোক, তাদের রুটি-রোজগার এখান থেকেই হয়। এ ছাড়া অন্য কোনো কাজ নেই, ইনকামও নেই। এরা যে কোনো কাজের জন্য, যে কোনো সেকশনে থাকুন না কেন, তারা এনগেজড। আমার সঙ্গে দুইজন এনগেজড, মাসুমের সঙ্গে দুইজন হতে পারে, সাইদুলের সঙ্গে হতে পারে, এগুলো একটা রেওয়াজ।’
এক পর্যায়ে রাতুলকে বলতে শোনা গেছে, ‘আমার স্যারে (কাউন্সিলর, পাসপোর্ট অনুবিভাগ) কোনো দিন ১০ মিনিটও বসতে পারে না। ওই আইডিটা আমার কাছে থাকত এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট ডাইরেক্টর ছিল সে আইডিটাও আমার সহকর্মীর কাছে থাকত। মানে হের কথা হলো, সে ভিআইপি নিয়ে ব্যস্ত। কিন্তু রিনিউয়ের কাজ, অ্যাপ্রুভালের কাজ, এগুলো আমার অ্যাসিস্ট্যান্টরা করবে, এরা তো আমারই লোক। আমাগো চ্যানেলে সিন্ডিকেটের একটা সিস্টেম আছে।’
অভিযোগ আছে, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের আস্থাভাজন হিসেবে পাসপোর্ট অনুবিভাগে কেয়াম একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর ইশারায় রাতুল সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর একান্ত সচিব হারুণুর রশিদের ভাগনি জামাইকে নিয়ে আসেন মালয়েশিয়ায়। 
রাতুল অডিও বার্তায় দাবি করেন, তাঁর সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের অনেক মন্ত্রী-এমপিরও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। রাতুল বলেন, ‘আমারে হাইকমিশনারে যদি অর্ডার দেয়, আমি হাইকমিশনারকেও যে কোনো মুহূর্তে ফোন করাইতে পারি। স্যার জানে, দু-তিনটা মন্ত্রীর লগে আমার ফ্যামিলির মতো আর কি। বাহাউদ্দিন নাছিম, আসাদুজ্জামান আর আমাগো ওইডা বরিশালের। এরা আমাগো আত্মীয়স্বজনের মতো। স্যার সবই জানে।’
অভিযোগের সত্যতা জানতে মিয়া মোহাম্মাদ কেয়ামউদ্দিন ও রাতুলের হোয়াটসঅ্যাপে একাধিকবার এসএমএস ও কল করলেও তারা সাড়া দেননি। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক য় মউদ দ ন

এছাড়াও পড়ুন:

গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ শেষ, দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে সংশয়

ফিলিস্তিনের গাজায় প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে আগামীকাল শনিবার। তবে ইসরায়েলের অনাগ্রহে যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপের বিষয়ে এখন পর্যন্ত তেমন অগ্রগতি হয়নি। অবশ্য যুদ্ধবিরতি ও বন্দিবিনিময় চুক্তি অনুযায়ী দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতি নিয়ে সমঝোতা না হওয়া পর্যন্ত লড়াই বন্ধ থাকার কথা।

এদিকে প্রায় ৬০০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিয়েছে ইসরায়েল। গত বুধবার দিবাগত রাত থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত তাঁদের মুক্তি দেওয়া হয়। এসব বন্দীকে গত শনিবার মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হামাস অনুষ্ঠান করে ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ায় শেষ মুহূর্তে তাঁদের মুক্তি আটকে দিয়েছিল ইসরায়েল। বুধবার রাতে আরও চার ইসরায়েলি জিম্মির মরদেহ হস্তান্তর করেছে হামাস। এই ধাপেও ইসরায়েল ২৬ ফিলিস্তিনির মুক্তি দিতে গড়িমসি করছে বলে গাজার কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করেছে।

চুক্তি অনুযায়ী গত ১৯ জানুয়ারি থেকে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর এবং বন্দিবিনিময় শুরু হয়। যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের ৪২ দিনে ৩৮ ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। বিনিময়ে প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিয়েছে ইসরায়েল।

প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতি শেষ হতে যাচ্ছে আগামীকাল শনিবার। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতি শুরুর ১৬তম দিন থেকে দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু সে অনুযায়ী আলোচনা শুরু হয়নি। অবশ্য চুক্তি অনুযায়ী দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতি নিয়ে সমঝোতা না হওয়া পর্যন্ত প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতি চলতে থাকবে।

দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতি নিয়ে সমঝোতা হলে বাকি ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার কথা। এখনো ৫৯ জন ইসরায়েলি গাজায় বন্দী রয়েছেন, যাঁদের অর্ধেকের বেশি বেঁচে নেই বলে মনে করা হচ্ছে। ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি এবং মিসর-গাজা সীমান্তসহ সব এলাকা থেকে ইসরায়েলি সেনা পুরোপুরি প্রত্যাহার করে নেওয়ার কথা।

যুদ্ধে ফিরতে চায় ইসরায়েল

হামাস জানিয়েছে, দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা শুরু করতে তারা প্রস্তুত। তবে দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতির চেয়ে প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়িয়ে জিম্মিদের মুক্ত করতে চান ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। গাজায় আবার যুদ্ধ শুরু করতে সরকারের মিত্রদের থেকে তাঁর ওপর চাপ রয়েছে।

গতকাল নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার বৈঠক আহ্বান করেন নেতানিয়াহু। একটি সূত্র সিএনএনকে জানিয়েছে, ওই বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে ইসরায়েলি প্রতিনিধিদল দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখবে কি না এবং তাদের কোন বিষয়ে আলোচনার ক্ষমতা কতটুকু দেওয়া হবে।

পরে প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, ইসরায়েলি আলোচকদের যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা করতে আজ (বৃহস্পতিবার) মিসরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু।

গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার না করে প্রথম ধাপের মেয়াদ বাড়িয়ে বাকি জিম্মিদের মুক্ত করার ওপর জোর দিচ্ছেন নেতানিয়াহু। সংশ্লিষ্ট ইসরায়েলি একটি সূত্র সিএনএনকে বলেছে, প্রথম ধাপের মেয়াদ ‘যত দূর সম্ভব বাড়িয়ে’ এই লক্ষ্য অর্জন করতে চান তিনি।

দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতি নিয়ে সমঝোতা হলে গাজা ও মিসর সীমান্তবর্তী ‘ফিলাডেলফি করিডর’ থেকে ইসরায়েলের সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়ার কথা। গত বছরের মে মাসে এই করিডরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল ইসরায়েল। দেশটির সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কান-কে জ্বালানিমন্ত্রী এলি কোহেন বলেছেন, ফিলাডেলফি করিডর ছাড়বেন না ইসরায়েলি সেনারা।

এদিকে ইসরায়েল আবারও গাজায় যুদ্ধ শুরুর পরিকল্পনা করছে বলে অভিযোগ করেছেন হামাসের পলিটব্যুরো সদস্য বাসেম নাইম। আল-জাজিরাকে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা করতে রাজি হয়নি ইসরায়েল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ