Samakal:
2025-02-27@21:28:26 GMT

পদাবলি

Published: 27th, February 2025 GMT

পদাবলি

বনসাই উঠোন এবং প্রান্তরের বৃক্ষ
আমিনুল ইসলাম 

বিজ্ঞাপিত উঠোনে জমে ওঠা বনসাইয়ের মেলায়
গজফিতা আর কাঁচিহাতে উচ্চকণ্ঠ বাদামি বামন: 
আরে ভাই, বলছি– বৃক্ষের বাহুল্য ঠেকাও! অতএব 
বিদেশি কুকুরের মতো জাগ্রত সব শাণিত সন্দেহ!
উঠোনের একপাশে বৃক্ষবিষয়ক সেমিনারে
বনসাই বন্দনায় প্রগল্ভ ববকাট গদ্য উপস্থাপক:
আহা, একেই বলে প্রাতিস্বিক শিল্পীর সুচারু সংযম!

ঠিক দূরে নয়– তবু দূরে– ক্ষীণজল নদীটির পাড়ে
লালনসংগীতের মতন বেড়ে উঠেছে একটি পুষ্টপ্রাণ বৃক্ষ,
জলস্নাত হাওয়ায় থেকে থেকে নেচে ওঠে তার স্বতঃস্ফূর্ত
সবুজের সচ্ছলতা; তার শাখায় বসে– কখনো ছায়ায় 
দাঁড়িয়ে– স্কুল সহপাঠিনীর মতো কোরাসে উচ্ছল 
দোয়েল কোয়েল পাপিয়া এবং বেনেবউ; বনসাই-
ব্যাপারী সম্পাদিত বৃক্ষের তালিকায় তার নাম নেই।

কিন্তু সুবহ সাদেকের উদ্ভাসিত আঁধারে,– উপকূলীয় 
হাওয়া তারই মাথায় ঢালে সুন্দরবনের ঝড়রোধী আশীর্বাদ!

 

আসল মন্ত্রের ঠিকানা
আরিফ মঈনুদ্দীন

কলসের ভেতরে কী আছে
আমার জানার আগেই কে যেন এসে
            মুখ বন্ধ করে দিয়ে গেছে
মন্ত্রের একটি পাঠ লুকিয়ে রেখেছে
               একান্ত গোপন স্থানে

চেষ্টাচরিত্রের শেষ-অবশেষ
শক্তির সুঠাম কাঠামোয় আগলে ধরেও
                     কূলকিনারা হয়নি
রাজ্যময় ঘোষণায় তুলি দেওয়া কপাট খোলার কিচ্ছা
মুখ থুবড়ে পড়ে আছে আঙিনায়—কিছুতেই কিছু
হচ্ছে না জেনেও আবার চেষ্টা—আবার কসরত

কে খুলবে কলসের আঁটানো কঠিন মুখ
                          মন্ত্র তার কাছে
সত্য এবং ন্যায়ের আদি পাঠ মহাবিশ্বের প্রারম্ভ থেকে
                 আজ অবধি পরম আধুনিক যার কাছে
‘সত্য’ই মন্ত্র—সত্যের যাবতীয় কলা
হৃদয়ই গোপন ঠিকানা—মানে না সে ছলাকলা।
 

 

না-স্বীকারীর স্বীকারোক্তি
সুদেব চক্রবর্তী

হেমলকের পেয়ালা হাতে নিয়ে 
ত্রিমাত্রিক ভার্সনে হাসতে হাসতে বলব– নেই।

রিরংসার জলে ধোয়া এইসব শস্যক্ষেত্রে
অনুপ্রবেশকারীরা দেখুক মূলোৎপাটিত দ্রাবিড়ের 
                 অক্ষত স্পর্ধা
উন্নতজানু হয়ে বলতেই থাকব– নেই, ছিল না।

আলো হোক বিপ্রতীপ
পাখিশূন্যতায় ভরে যাক শিশুসকাল
টিকটিকির ডাকে মাটি টুসকানো পিতামহী
তেড়ে আসুক ছি ছি পোকা নিয়ে
ন্যাওটা উঠোনের কীলকলিপি মুছে
কারফিউ বিছিয়ে দিক ককেসীয় সেমেটিক মিথ্যাচাষিরা

লোভ আর ভয় বেচে ডলার কামানো তোমাদের শৃগালসভ্যতায় 
আমার টোটেম সারমেয়– ছুড়ে দিলাম পুরবিনাশী ঘেউ– নেই, নেই;
                           কোনোকালেই ছিল না।


 

সরল অন্ধকার
উম্মে হাবিবা

চিঠির মতো সুন্দর এ সকাল
রোদে গলে পড়ছে মুহুরী নদী
রাতভর কেউ তাকে জাগিয়ে
রেখেছে যুদ্ধ বন্ধের গল্প বলে
অস্ত্রের মুখে চুমু খেয়ে ট্রিগার
চাপলে নিশানা ভুল হবার নয়
তবু অক্ষত বুকে বেঁচে ফেরে
শত্রুকে বহনকারী কালো অশ্ব
পাহাড়ের সমতলের সকলের
সকল অপরাধ একা করেছে
কি দুঃসহ দুর্বিনীত ফেরার সে
ছদ্মনাম ব্যবহার করে লুকিয়ে
আছে গ্রামের সরল অন্ধকারে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: মন ত র

এছাড়াও পড়ুন:

গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কমিটি প্রত্যাখ্যান বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একাংশের

অভ্যুত্থানের প্লাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্রসংগঠন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কমিটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিপত্যের অভিযোগ তুলে কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদও জানান। তবে তারা আলোচনার পথ খোলা রেখেছেন বলে জানান। 

বৃহস্পতিবার রাতে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান তারা।

এর আগে বিকেলে মধুর ক্যান্টিনে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়া হয়। সেখানে বুধবারের সংঘর্ষের ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়। সেই কমিটিকেও বিক্ষোভ থেকে প্রত্যাখ্যান করা হয়। পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে বেসরকারি ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের নাঈম আবেদীনকে সিনিয়র সংগঠক করা হয়েছে। তাকে তদন্ত কমিটিতে রাখা হয়েছে। এ ছাড়াও পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৩০ জন কমিটিতে স্থান পেয়েছেন। 

বিক্ষোভে এশিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের ছাত্র মাহাদী জাহিন বলেন, ১৭ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হল ছেড়ে গেলে আমরা গুলির সামনে দাঁড়িয়েছি। রামপুরা বাড্ডায় শত লাশ পড়লেও কখনও রাজপথ ছাড়িনি। অথচ প্রাইভেটকে উপেক্ষা করে নতুন রাজনৈতিক সংগঠনের ঘোষণা আসে মধুর ক্যান্টিন থেকে, সেখানে সরকার পতনের কিছুই হয়নি। যেখানে সরকার পতন আন্দোলনের কিছুই হয়নি। মধুর ক্যান্টিন থেকে ঢাবি কেন্দ্রীক যে দল আসবে সে দলের কবর ঢাবিতেই রচিত হবে। একাত্তর কারো বাপের না, চব্বিশ ঢাবির না। 

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ছাত্র মাসরুফ আহসান বলেন, শেখ হাসিনা ঢাকা ইউনিভার্সিটিকে সেন্ট্রালাইজ করে পুরো বাংলাদেশের ছাত্রসমাজকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করেছে। সেই বৈষম্য স্বৈরাচারী মনোভাব তাদের থেকে যায়নি। নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনে কলেজ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রাইভেটের শিক্ষার্থীরা নেমে এসেছিল। তার ধারাবাহিকতায় প্রাইভেট চব্বিশের আন্দোলনে পুরো বিজয় ছিনিয়ে এনেছে। ১৬ তারিখে ঢাকা ইউনিভার্সিটির স্বেচ্ছায় অর্ধেক পোলাপান পালিয়ে গেছে। ঢাবি সিন্ডিকেট জনগণের বিরুদ্ধে গিয়ে স্বার্থ হাসিল করতে পারবে না। আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়ব।

তিনি বলেন, ঢাকা ইউনিভার্সিটির তারা যে মব করেছে, তারা আবার নিজেরা কমিটি করেছে। এই কমিটি আমরা মানি না। যারা এমন বৈষম্য করে, তাদের সঙ্গে আমরা থাকবো না।

ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির শাহেল শেখ সেলিম বলেন, মধুর ক্যান্টিনে যা হইছে অভ্যুত্থানের পরে বড় ন্যাক্কারজনক ঘটনা। এমন কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখলে একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ হবে না। যারা যারা প্রাইভেটের নাম ধরে ডিউর কাছে লেজুড়বৃত্তি রাজনীতি করেন, আমরা কঠোরভাবে বলি আমরা তাদেরকেও অবাঞ্ছিত করব। আমরা রাজুতে শাহবাগ যাচ্ছি না। আপনারা বসুন্ধরা আসেন, উত্তরা বিএনএস যাত্রাবাড়ীর বিপ্লবীদের বাদ দিয়ে কমিটি আমরা মানি না, এটা আমরা প্রত্যাখ্যান করলাম।

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া এ শিক্ষার্থী আরও বলেন, হামলার ব্যাপারে তাদেরকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। তারা যদি বাংলাদেশে সর্বজনীন দল গঠন করে, সংস্কার চায়-দেশে পরিবর্তন চায়, লেজুড়বৃত্তিক দল থেকে মুক্তি চায় তাহলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে বসতে হবে। তারা যদি ঐক্য ভঙ্গ করে তাহলে আমাদের ধরে নিতে হবে বিপ্লব শেষ হয়নি। সর্বজনীন দল করতে চাইলে প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি কেন্দ্রীয় কমিটিতে নিশ্চিত করে সবাইকে সমান অধিকার দিয়ে তারপর সার্বজনীন রাজনীতিতে নামতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে তারা ‘ঢাবির দালালেরা হুশিয়ার সাবধান, দালালের কালো হাত গুড়িয়ে দাও, ঢাবির কালো হাত জ্বালিয়ে দাও পুড়িয়ে দাও’—ইত্যাদি স্লোগান দেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ