লিবিয়ায় নির্যাতনে তরুণের মৃত্যু, লাশ নৌকায় পাঠানো হয় ইতালি
Published: 27th, February 2025 GMT
মাদারীপুরের তরুণ সাইদুল ব্যাপারী (২৩) ইতালিতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে দালাল ধরেন। দালালের সঙ্গে চুক্তি ছিল, যেভাবেই হোক বাংলাদেশ থেকে ইতালিতে পৌঁছে দেবেন। শেষ পর্যন্ত সাইদুলকে জীবিত নয়, দালালের নির্যাতনে মারা যাওয়ার পরে মৃত অবস্থায় নৌকায় ইতালি পাঠানো হয়েছে।
নিহত সাইদুল মাদারীপুর সদর উপজেলার কুনিয়া ইউনিয়নের খাটোপাড়া গ্রামের শহিদুল ব্যাপারীর ছেলে। সাইদুলের মৃত্যুর বিষয়টি তাঁর পরিবারের সদস্যরা আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন। তবে মরদেহের কোনো সন্ধান জানতে পারেননি তাঁরা।
স্বজন ও এলাকাবাসী সূত্র জানায়, উন্নত জীবনের আশায় গত বছরের আগস্টের শুরুতে স্থানীয় দালাল শিপন খানের প্রলোভনে পড়ে বাংলাদেশ ছাড়েন সাইদুল। তাঁকে ঢাকা থেকে সরাসরি দুবাই নেওয়া হয়। দুবাই শহরে কয়েক দিন রাখার পরে সাইদুলকে নেওয়া হয় লিবিয়ায়। লিবিয়ার বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পরেই সেখানে মাফিয়া (দালাল চক্র) সাইদুলকে জিম্মি করে একটি বন্দিশালায় আটকে রেখে নির্মম নির্যাতন চালায়। প্রায় এক সপ্তাহ পরে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণের মাধ্যমে সাইদুলকে মুক্ত করে তাঁর পরিবার। এরপর বাংলাদেশি এক দালালের মাধ্যমে সাইদুলের পরিবার আরও ১৬ লাখ টাকায় ‘বডি কন্ট্রাক্ট’ করেন। চুক্তিতে বলা হয়, যেভাবেই হোক সাইদুলকে ইতালিতে পৌঁছে দেওয়া হবে। তবে মাফিয়াদের নির্যাতন সইতে না পেরে ১৪ ফেব্রুয়ারি লিবিয়ার একটি বন্দিশালায় মারা যান সাইদুল। পরে ১৫ ফেব্রুয়ারি মরদেহ ট্রলারে করে অন্য অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সঙ্গে ইতালিতে পাঠানো হয়। ফোনে সাইদুলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে তাঁর পরিবার বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অন্য অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁদের মাধ্যমে ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে সাইদুলের পরিবার জানতে পারে সাইদুল ইতালি পৌঁছানোর আগেই মারা গেছেন। তাঁর লাশ দালালেরা নৌকায় করে অন্য অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সঙ্গে ইতালিতে পাঠিয়ে দিয়েছে।
নিহতের স্বজনদের আহাজারি.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র পর ব র
এছাড়াও পড়ুন:
গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ শেষ, দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে সংশয়
ফিলিস্তিনের গাজায় প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে আগামীকাল শনিবার। তবে ইসরায়েলের অনাগ্রহে যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপের বিষয়ে এখন পর্যন্ত তেমন অগ্রগতি হয়নি। অবশ্য যুদ্ধবিরতি ও বন্দিবিনিময় চুক্তি অনুযায়ী দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতি নিয়ে সমঝোতা না হওয়া পর্যন্ত লড়াই বন্ধ থাকার কথা।
এদিকে প্রায় ৬০০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিয়েছে ইসরায়েল। গত বুধবার দিবাগত রাত থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত তাঁদের মুক্তি দেওয়া হয়। এসব বন্দীকে গত শনিবার মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হামাস অনুষ্ঠান করে ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ায় শেষ মুহূর্তে তাঁদের মুক্তি আটকে দিয়েছিল ইসরায়েল। বুধবার রাতে আরও চার ইসরায়েলি জিম্মির মরদেহ হস্তান্তর করেছে হামাস। এই ধাপেও ইসরায়েল ২৬ ফিলিস্তিনির মুক্তি দিতে গড়িমসি করছে বলে গাজার কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করেছে।
চুক্তি অনুযায়ী গত ১৯ জানুয়ারি থেকে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর এবং বন্দিবিনিময় শুরু হয়। যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের ৪২ দিনে ৩৮ ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। বিনিময়ে প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিয়েছে ইসরায়েল।
প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতি শেষ হতে যাচ্ছে আগামীকাল শনিবার। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতি শুরুর ১৬তম দিন থেকে দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু সে অনুযায়ী আলোচনা শুরু হয়নি। অবশ্য চুক্তি অনুযায়ী দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতি নিয়ে সমঝোতা না হওয়া পর্যন্ত প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতি চলতে থাকবে।
দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতি নিয়ে সমঝোতা হলে বাকি ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার কথা। এখনো ৫৯ জন ইসরায়েলি গাজায় বন্দী রয়েছেন, যাঁদের অর্ধেকের বেশি বেঁচে নেই বলে মনে করা হচ্ছে। ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি এবং মিসর-গাজা সীমান্তসহ সব এলাকা থেকে ইসরায়েলি সেনা পুরোপুরি প্রত্যাহার করে নেওয়ার কথা।
যুদ্ধে ফিরতে চায় ইসরায়েলহামাস জানিয়েছে, দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা শুরু করতে তারা প্রস্তুত। তবে দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতির চেয়ে প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়িয়ে জিম্মিদের মুক্ত করতে চান ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। গাজায় আবার যুদ্ধ শুরু করতে সরকারের মিত্রদের থেকে তাঁর ওপর চাপ রয়েছে।
গতকাল নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার বৈঠক আহ্বান করেন নেতানিয়াহু। একটি সূত্র সিএনএনকে জানিয়েছে, ওই বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে ইসরায়েলি প্রতিনিধিদল দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখবে কি না এবং তাদের কোন বিষয়ে আলোচনার ক্ষমতা কতটুকু দেওয়া হবে।
পরে প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, ইসরায়েলি আলোচকদের যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা করতে আজ (বৃহস্পতিবার) মিসরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু।
গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার না করে প্রথম ধাপের মেয়াদ বাড়িয়ে বাকি জিম্মিদের মুক্ত করার ওপর জোর দিচ্ছেন নেতানিয়াহু। সংশ্লিষ্ট ইসরায়েলি একটি সূত্র সিএনএনকে বলেছে, প্রথম ধাপের মেয়াদ ‘যত দূর সম্ভব বাড়িয়ে’ এই লক্ষ্য অর্জন করতে চান তিনি।
দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতি নিয়ে সমঝোতা হলে গাজা ও মিসর সীমান্তবর্তী ‘ফিলাডেলফি করিডর’ থেকে ইসরায়েলের সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়ার কথা। গত বছরের মে মাসে এই করিডরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল ইসরায়েল। দেশটির সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কান-কে জ্বালানিমন্ত্রী এলি কোহেন বলেছেন, ফিলাডেলফি করিডর ছাড়বেন না ইসরায়েলি সেনারা।
এদিকে ইসরায়েল আবারও গাজায় যুদ্ধ শুরুর পরিকল্পনা করছে বলে অভিযোগ করেছেন হামাসের পলিটব্যুরো সদস্য বাসেম নাইম। আল-জাজিরাকে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা করতে রাজি হয়নি ইসরায়েল।