আনসার বাহিনীকে শিগগির ভিন্নভাবে দেখা যাবে: আনসার মহাপরিচালক
Published: 27th, February 2025 GMT
আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ বলেন, নির্বাচন, দুর্যোগ ও উৎসবে সহায়তা করা ছাড়াও আনসার বাহিনীর আরও অনেক কিছু করার আছে। খুব শিগগির বাহিনীকে ভিন্নভাবে দেখা যাবে। বিগত ছয় মাসে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে দেশের প্রায় ১ লাখ তরুণকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর জেলা সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
মহাপরিচালক বলেন, আনসারের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর বেকারদের প্রশিক্ষিত করে আত্মনির্ভরশীল করার সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। আনসার শব্দের অর্থ সহায়তাকারী, এই নামের মূল্যায়ন করতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তার জায়গায় কাজ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ফিরোজ সরকার, পুলিশের রেঞ্জ ডিআইজি রেজাউল হক, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দার, বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মেহেদী হাসান চৌধুরী, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ও পুলিশ সুপার টিএম মোশাররফ হোসেন। আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর খুলনা রেঞ্জের উপমহাপরিচালক নূরুল হাসান ফরিদীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন খুলনা জেলা কমান্ড্যান্ট মিনহাজ আরেফিন।
এদিকে আজ রাজধানীর কাকরাইল আইডিইবি ভবনের কাউন্সিল হলে আনসার বাহিনীর ঢাকা জেলা সমাবেশে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফিদা মাহমুদ বলেন, দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় কোনো কিছু ঘটলে সবার আগে আনসার বাহিনী জানতে পারে। তাদের ফোর্স প্রতিটি গ্রামে, পাড়া-মহলায় রয়েছে। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আনসার বাহিনীর সদস্যদের ভূমিকা রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে আনসার সদস্যদের কোনো গাফিলতি থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা জেলা কমান্ড্যান্ট মোহাম্মদ মোস্তাক আহমদ, বাহিনীর ঢাকা রেঞ্জের উপমহাপরিচালক আশরাফুল আলম, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক আরিফ হোসেন, ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহরম আলী, ঢাকা জেলার অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুর রফিউল আলম ও ঢাকা মহানগর আনসারের পরিচালক নুরুল আলম।
অনুষ্ঠানে সেবামূলক কাজে বিশেষ অবদানের জন্য আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন অতিথিরা। এর আগে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে জেলা সমাবেশ উদ্বোধন করা হয়।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আনস র ব হ ন অন ষ ঠ ন
এছাড়াও পড়ুন:
জগৎ ও জীবনের রহস্য উন্মোচিত করে বই
বিশ্ব বই দিবস আজ । দিনটি ‘বিশ্ব গ্রন্থ ও গ্রন্থস্বত্ব দিবস’ নামেও পরিচিত। প্রতি বছর এ দিবসটি সারাবিশ্বের বইপ্রেমীরা বিশেষভাবে পালন করেন। বই পড়ার আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতার উদযাপন ও প্রচারণা চালানো হয় দিনটি ঘিরে। বইয়ের অতীত ও ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা প্রকাশ করেন অনেক পাঠক। জগৎ ও জীবনের রহস্য উন্মোচিত করে বই। চিত্তকে প্রশমিত করার শ্রেষ্ঠ মাধ্যমও বই। বইপ্রেমিকদের কাছে বই পরম ধন। বই বর্তমান ও অতীতের মেলবন্ধন হিসেবে কাজ করে। সাগরের তলদেশ, পাহাড়ের সুউচ্চ চূড়া কিছুই বইয়ের কাছে অগম্য নয়। জীবনের সুন্দর আর রঙিন সবকিছু ধরা দেয় বইয়ের মধ্যে। কিন্তু সেই বই নিয়ে আছে হাজারো গল্প, কল্প-কাহিনি।
বই দিবসের সূচনা
বই দিবস হিসেবে ২৩ এপ্রিলকে বেছে নেওয়ার কয়েকটি কারণ রয়েছে। সাহিত্য জগতের তিন কিংবদন্তি উইলিয়াম শেকসপিয়ার, মিগুয়েল ডি সারভান্তেস ও ইনকা গার্সিলাসো দে ভেগার প্রয়াণ দিবস ২৩ এপ্রিল। ১৯৯৫ সালে প্যারিসে ইউনেস্কোর সাধারণ অধিবেশনে এ দিনটিকে বই দিবস হিসেবে উদযাপনের জন্য বেছে নেওয়া হয়। এই তিন প্রয়াত সাহিত্যিকের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন এদিন বেছে নেওয়ার মূল কারণ।
বইয়ের ইতিহাস বিস্ময়কর
কেউ কেউ বলেন বইয়ের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। বড়জোর আছে একটা অতীত। এ কথা যতই বলা হচ্ছে বই ততই শিকড় গেড়ে, ডালপালা ছেড়ে বিকশিত হয়ে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আজকে বইয়ের রূপ একদিনে হয়নি। বইয়ের আজকের রঙিন ঝলমলে দৃষ্টিনন্দন বই হওয়ার পেছনে রয়েছে হাজার হাজার বছরের ইতিহাস। বইয়ের ইতিহাস এমন সমৃদ্ধ আর বিস্তৃত যে এর সামান্য কিছু বিষয়কে ছোঁয়া যাবে মাত্র। বইয়ের ইতিহাস বিস্ময়কর; যা আমাদের অনেকেরই অজানা। কালের গর্ভে যা হারিয়ে গেছে, তা আমাদের চিন্তাকে হার মানাবে।
প্রথম বইয়ের সন্ধান
১৯৮৪ সালে সিরিয়ার তেলবার্ক নামক জায়গায় দুটি মাটির ফলক পাওয়া যায়। গবেষকদের মতামত ওই ছোট দুটি ফলকই পৃথিবীর প্রথম বইয়ের দুটি পৃষ্ঠা। এটা দেখে মনে হয় এটা হিসাবের খাতার দুটি পাতা। একটিতে দশটি ছাগলের ইঙ্গিত, অন্যটিতে ১০টি ভেড়ার। এ লিপির অধিকারী ছিলেন সুমেরিয়ানরা। খ্রিষ্টের জন্মের চার হাজার বছর আগে। এটা বাগদাদ জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। পরে এ লিপি আরও উন্নত হয়; হয় আরও অর্থবহ। চিত্রাক্ষরের নান্দনিক সংস্করণ কিউনিফরম। এর জন্ম মেসোপটেমিয়ায়। হিসাব-নিকাশের গণ্ডি পেরিয়ে শিল্প, সাহিত্য, দর্শন, মহাকাব্য রচিত হতে থাকে এ লিপিতে। খ্রিষ্টপূর্ব দ্বাদশ শতকে আসিরিয়ায় প্রকাশ্য স্থানে জনসাধারণকে তথ্য অবহিত করার জন্য ৬৭ বর্গফুট মাপের মৃত্তিকা লিপি স্থাপন করা হয়। অশোকের শিলালিপি, তাম্র শাসন প্রভৃতির শুরু খ্রিষ্টীয় তৃতীয় শতক থেকে।
লিপির ইতিহাসও সুদীর্ঘ
বিশ্বময় কত না লিপি ছড়িয়ে আছে। অনেক লিপির পাঠোদ্ধার করা যায়নি এখনও। যেমন সুমেরিয়ান, মিনোয়াম, হরপ্পা লিপি ইত্যাদি। বইয়ের আদি পুরুষ তাহলে মাটির ফলক। মাটির ফলক, প্যাপিরাস, পার্সমেন্ট, অশোকের শিলালিপি, তাম্র শাসন প্রভৃতি আমাদের লেখালেখির ইতিহাসের শুরুর দিকে প্রধান ভূমিকা পালন করে। পার্সমেন্টে প্রথম বার্তা প্রেরণ করেন জুলিয়াস সিজার ২১৩ অব্দে। পার্সমেন্টে শুধু বার্তা প্রেরণ নয়, জ্ঞানবিজ্ঞানের চর্চাও হতো।
উপমহাদেশীয় প্রসঙ্গ
এ প্রসঙ্গে উপমহাদেশের কথা একটু বলা যায়। খ্রিষ্টপূর্ব ৫ম শতকে জৈন পুঁথি লেখা হতো পান পাতায়। তালপাতা, কলাপাতা, শালপাতা-উপমহাদেশে কিসে লেখা হয়নি। শিলালিপি ও তাম্রলিপির কথা আগেই বলেছি। সোনা-রুপা এমনকি হাতির দাঁতেও লেখা হয়েছে। ৫ম শতকে লেখা হয় পাণিনির ব্যাকরণ। তারপর এলো নতুন বিস্ময় কাগজ। কাগজ আবিষ্কার করে চীনারা। এটা খ্রিষ্টীয় প্রথম শতকের কথা। এ সময় হিমালয় অঞ্চলেও এক ধরনের কাগজ আবিষ্কার হয়। তখন শুরু হয় পুঁথির যুগ। পুঁথি লেখা হতো হাতে এবং এটা ছিল খুব কষ্টসাধ্য। সবচেয়ে বড় কথা– হাতে কতটাই আর লেখা সম্ভব ছিল। তারপরও পুঁথি চর্চার যে ইতিহাস আমরা পাই তাও বৈচিত্র্যময়। এ সময় বই সংগ্রহের ধরন ছিল অদ্ভুত।
পৃথিবীর সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার
আলেকজান্ডার প্রতিষ্ঠিত পৃথিবীর প্রাচীন ও সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার ছিল আলেকজান্দ্রিয়ায়। আলেকজান্দ্রিয়া বন্দর দিয়ে যত জাহাজ যাবে তাতে কোনো পাণ্ডুলিপি থাকলে বন্দরে জমা দিতে হবে। সেগুলো নকল করে ফিরতি পথে ফেরত দেওয়া হতো। আলেকজান্দ্রিয়ার পুঁথিশালায় ৫ লাখ পুঁথি ছিল। ভারতে নালন্দা তক্ষশিলা ও বিক্রমশিলায় পুঁথি চর্চা ছিল। আরব অঞ্চলেও ছিল বাগদাদ, কায়রো এবং অন্যত্র। তবে আলেকজান্দ্রিয়া ছিল অনন্য। এ প্রসঙ্গে এক পুঁথি প্রেমিকের কথা বলা যায়। দশম শতকে পারস্যের উজির আবুল কাশেম ইসমাইল যেখানে উটের পিঠে তাঁর ১ লাখ ৭০ হাজার পুঁথি নিয়ে যেতেন। উটগুলো বর্ণমালা অনুসারে চলত।
মোগল আমলের গ্রন্থাগার
উপমহাদেশে মোগল আমলে বেশ জ্ঞানচর্চা হতো। মোগল সম্রাট বাবর লিখেছিলেন বাবরনামা। বাবরের পুত্র হুমায়ুন গ্রন্থাগারের সিঁড়ি থেকে পড়ে মারা যান। নিরক্ষর আকবর হামজানামা নামক একখানা পুঁথি লিখিয়েছিলেন; যাতে ছবিই ছিল ১ হাজার ৪০০। বাদশার ব্যক্তিগত গ্রন্থাগারের পুঁথি ছিল ২৪ হাজার। সম্রাট শাহজাহান লিখেছিলেন বাদশানামা। ছাপাখানার আবিষ্কার বইয়ের ইতিহাস একেবারে বদলে দেয়। তবে ছাপাখানার আগেও ৮৬৮ খ্রিষ্টাব্দ বা তার আগে কাঠের বাক্সে ছবি আর অক্ষর খোদাই করে কাগজে ছাপ দিয়ে পৃথিবীর প্রথম গ্রন্থটি চীনারা বের করেন। নাম হিরকসূত্র। ১৯০৭ সালে এটা আবিষ্কৃত হয়। এখন এটা ব্রিটিশ মিউজিয়ামে আছে। লম্বায় ১৪ ফুট আর চওড়ায় দুই ফুট। এ বইটি ১ হাজার ১০০ বছর তার সৌষ্ঠব নিয়ে মরুভূমির গুহায় পড়ে ছিল। এটি খুঁজে বের করেন স্যার অরেলস্টাইন। বইয়ের প্রথমে দুই ফুট লম্বা ও ১ ফুট চওড়া পাতায় অপূর্ব একটি ছবি। চীনারা বইটি ব্রিটেনের কাছে ফেরত চাচ্ছে।
কালজয়ী তিনটি বই
ছাপার ইতিহাসে ১৪৫৬ সাল স্মরণীয়। ইয়োহানিস গুটেন বার্গ এ বছর বাইবেল ছেপে বিশ্বকে চমকে দেন। গুটেনবার্গ ধাতুর হরফ দিয়ে ছাপার কাজ শুরু করেন। গুটেনবার্গের বাইবেলের একটা কপি ১৯৯২ সালে ৫০ লাখ ডলারে একজন সুইস সংগ্রাহক কিনে নেন। ছাপার ক্ষেত্রে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বই ‘শেকসপিয়ারস ফাস্ট ফোলিও’। এটা ১৬২৩ সালে ছাপা হয়। আজ শেকসপিয়ারের যে ছবিটা বিশব্যাপী পরিচিত সেটা কান্নিক। মার্টিন ড্রোসহুটের আঁকা। ফাস্ট ফোলিওতে ছবিটা ছিল। বইটির সাইজ ১৩/৮। এক হাজার কপি ছাপা হয়েছিল। দাম ছিল এক পাউন্ড। এ বইটিও নিলামের জগতে সাড়া জাগানো। আলোচিত কালজয়ী তিনটি বইয়ের আবিষ্কারের কাহিনি বেশ চমকপ্রদ। হিরকসূত্র পাওয়া যায় গোবি মরুভূমির গুহায়, গুটেনবার্গের বাইবেলের শেষ কপিটা পাওয়া যায় ১৮৯৯ সালে শিশি বোতলের বাক্সের পেছনে। শেকসপিয়ারের ফাস্ট ফোলিও পাওয়া যায় ভেড়ার আস্তাবলে। এ প্রসঙ্গে বলা যায়, বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন চর্যাপদ আবিষ্কৃত হয় নেপালের রাজদরবার থেকে আর দ্বিতীয় নিদর্শন শ্রীকৃষ্ণকীর্তন পাওয়া গিয়েছিল গোয়াল ঘরে।
সৌন্দর্য ও উৎকর্ষতায় শিল্প
এক পুঁথি প্রেমিকের গল্প দিয়ে শেষ করি, একজন পুঁথি প্রেমিক তার একটি মূল্যবান পুঁথি কোনোভাবেই হাত ছাড়া করবেন না। কিন্তু একজন রাজার পুঁথিটি চাই-ই চাই। তিনি জোর করে পুঁথিটি ছিনিয়ে নেন। বইয়ের মালিকও কম যান না। তিনি বইয়ের শেষ পৃষ্ঠায় বিষ মিশিয়ে রেখেছিলেন। রাজা পড়তে পড়তে শেষ পৃষ্ঠায় গিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। আজ বই তার সৌন্দর্য ও উৎকর্ষতায় একটি শিল্প। কী চমৎকার তার অঙ্গ সৌষ্ঠব, কী আকর্ষণীয় ছাপা আর কত দ্রুতই না একটা বই তার পাঠকের কাছে চলে যায়। বইয়ের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাক। বই জয়ী হোক।
লেখক: সুহৃদ উপদেষ্টা ও সাবেক জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, রাজবাড়ী