জাতীয় ক‍্যানসার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের নাক, কান ও গলা রোগ বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মো. সালেহ উদ্দিন সাঈদ আজ ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে স্ত্রীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর ব্যাপকভাবে হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হওয়ার কথা তুলে ধরেছেন।

অধ্যাপক সালেহ উদ্দিন জানান, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ছাত্র ছিলেন তিনি। পড়াশোনা শেষ করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শামছুন্নাহার হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক ক্রীড়া সম্পাদক মমতাজ বেগমকে বিয়ে করেন। বিয়ের ২৩ বছর পর ২০১১ সালে তাঁদের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। বিবাহবিচ্ছেদের এক বছর পর সালেহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে যৌতুকের মামলা করেন মমতাজ বেগম। সেই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে জেল খেটেছেন তিনি।

শুধু যৌতুকের মামলা নয়, বিবাহবিচ্ছেদের পর মমতাজ বেগম ও তাঁর ভাই ফরিদ আহমেদ তাঁর বিরুদ্ধে চেক প্রত্যাখ্যানের মামলা করেন বলে জানান সালেহ উদ্দিন। তিনি অভিযোগ করেন, সর্বশেষ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় বিএনপি নেতা ও আন্দোলনকারীদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তাঁকে তুলে নিয়ে সাত দিন গুম করে রাখে।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকায় একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে এ কথা বলেন অধ্যাপক সালেহ উদ্দিন। তিনি বলেন, বিবাহবিচ্ছেদের পর চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে ‘দাল্লা মেডিকেল সেন্টার’ নামের প্রতিষ্ঠানটি জোর করে দখল করে নেন মমতাজ বেগম ও তাঁর ভাই ফরিদ আহমেদ। ফরিদ চট্টগ্রামের মাদারবাড়ি এলাকার একটি ওয়ার্ডের যুবলীগ নেতা।

সাবেক স্ত্রী ও তাঁর ভাই মিলে চেক প্রত্যাখ্যানের যে মামলা করেছিলেন, সেই মামলায় তাঁর সাজা হয়েছে বলে জানান সালেহ উদ্দিন। তিনি বলেন, মামলাটি এখন উচ্চ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

সাবেক স্ত্রীর বিরুদ্ধে সরকারি জমি দখলের অভিযোগ তুলে অধ্যাপক সালেহ উদ্দিন বলেন, মমতাজ বেগম তাঁর স্ত্রী থাকা অবস্থায় ২০০৫ সালে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে অবস্থিত মেসার্স এস.

জে.এন্ড.জি ফজলে এলাহী নামের সরকারি ভবন ভাড়া নিয়ে ‘দাল্লা মেডিকেল সেন্টার’ গড়ে তোলেন। বিবাহবিচ্ছেদের পর ওই সেন্টারের নাম বদলে সানওয়ে মেডিকেল সেন্টার দিয়ে জোর করে দখল করে নেন। পরে জালজালিয়াতির মাধ্যমে কাগজ তৈরি করে সরকারি ভবনটি মমতাজ বেগম তাঁর মায়ের নামে কেনা বলে দাবি করেন। গণপূর্ত বিভাগের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে ভবন ও জমির ভুয়া নামজারি করিয়ে খতিয়ানও তৈরি করে নেন তাঁরা। নতুন করে ভবনের নাম দেওয়া হয় ফাতেমা হাইটস।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক সালেহ উদ্দিন জানান, তাঁদের দুই সন্তান রয়েছে। তাঁর ছেলে বিয়ে করে অস্ট্রেলিয়ায় স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। মেয়েও সেখানে চাকরি করেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার ইকতেদার আহমেদ ও চিকিৎসক অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন। সংবাদ সম্মেলনে ইকতেদার আহমেদ বলেন, ‘বিচ্ছেদের পর যৌতুকের মামলা আইনগতভাবে সমর্থনযোগ্য নয়। তারপরও সেই মামলায় তাঁর সাজা হয়েছে। মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন রয়েছে। আশা করছি, তিনি সেখানে প্রতিকার পাবেন।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব চ ছ দ র পর আহম দ

এছাড়াও পড়ুন:

জীবনপাঠ ও মাটিগন্ধী গল্প

‘শ্যামলতার মৃত্যুশিথান’ গল্পের বই। লিখেছেন ইমতিয়ার শামীম। গল্পগুলোর কেন্দ্রে জীবন-বাস্তবতা, সামাজিক অবক্ষয়, লোভের আবর্ত এবং নীরবে হার মেনে নেওয়ার মতো বিষয়। গভীর পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি রয়েছে মাটি-সংশ্লিষ্টতা। আর রয়েছে নিজস্ব ভঙ্গিমা, যা একজন কথাসাহিত্যিকের সবচেয়ে বড় গুণ।

এই বইয়ের গল্পগুলোতে ফুটে উঠেছে লেখকের অসাধারণ জীবনবোধ। এসব গল্প কখনও সময়ের বয়ান হয়ে উঠেছে। সামাজিক নানা অসংগতি, অন্তরালের জীবন, বৈপরীত্য, রাজনীতি, অর্থনীতির নানা দিক ফুঠে উঠেছে।

বইটিতে সব মিলিয়ে গল্প রয়েছে সাতটি, যেগুলো ভিন্ন ভিন্ন উপজীব্যে বর্ণিত। ‘নির্মাণের প্রাকপর্ব’তে সাদামাটাভাবে জীবনের চিত্র ও অসংগতি উঠে এসেছে। বাবা ও ছেলের সম্পর্ক, জমি-জিরাত, আর্থিক বিষয় নিয়ে পারিবারিক চিত্র এটি। এখানে গল্পের কোনো মিলনাত্মক বা বিয়োগান্ত পরিণতি না থাকলেও ছোট ছোট ঘটনায় জীবন আঁকার চেষ্টা রয়েছে। এক শ্রেণির মানুষ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান তৈরি করে খ্যাতিমান হওয়ার চেষ্টায় থাকেন, এমন একটি বিষয়ও এ গল্পে পাওয়া যায়।

দ্বিতীয় গল্পটির শিরোনাম ‘যেমত আকাশমাটি, রক্তপ্রলাপ’। এটি জেনারেল এইচএম এরশাদের শাসনামলের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে রচিত। পড়লে সে সময়ের বাস্তবতা সম্পর্কে লেখকের বর্ণনা পাওয়া যায়। দেশের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দল নিয়ে কথাবার্তা রয়েছে এতে। সুবিধাবাদী রাজনীতিক, বামপন্থি যুবকের দুর্দশার চিত্র ফুটে উঠেছে গল্পের সূক্ষ্ম গাঁথুনিতে। ঘটনার বর্ণনা মিরাজ নামের চরিত্র দিয়ে শুরু এবং তাকে ঘিরে আবর্তিত হলেও সেখানে বামপন্থি যুবক রুহুলের উপাখ্যান পাঠকের কাছে দীর্ঘশ্বাস হয়ে ধরা দেয়। এহসানউল্লাহর শয়তানি ও মিরাজের বোনের এসিডে ঝলসে যাওয়া জীবন পাঠকের মনে কষ্ট সঞ্চার করে।

‘ঘাসওঠা মাঠে এক সবুজ বালক’ শিরোনামে গল্পে সোলায়মান নামে কিশোরের বৃত্তান্ত রয়েছে। সে ও তার পরিবারের কথা তুলে ধরার মাধ্যমে নতুন মাত্রায় চিত্রিত হয়েছে গ্রামের জীবন। সেখানে সমাজের নানা অসংগতি, ধর্মকে কেন্দ্র করে কুসংস্কার ও সংকীর্ণতা চিত্রিত হয়েছে, বিশেষ করে সোলায়মানের বাবা কোবাদ আলীর জীবনাচরণে। গ্রামের নারীর বঞ্চনাও সূক্ষ্ম তারে বেজে উঠেছে নিপুণ সুরে।
‘ভাতঘ্রাণ নাকে নিয়ে’ গল্পটি ঈমান আলী নামে একটি চরিত্র ঘিরে আবর্তিত। দিনমজুর ঈমানের জীবনের নানা বাস্তবতার ভেতর দিয়ে অতিদরিদ্র বা ছিন্নমূল শ্রেণির মানুষের জীবন-বাস্তবতা, প্রেম-কাম ও সংকট ফুটে উঠেছে। ঈমান এখানে প্রোটাগনিস্ট বা প্রধান চরিত্র হলেও ‘মিজার মা’ ভিন্ন এক আবহের সৃষ্টি করে। সব মিলিয়ে গল্পটিতে ভিন্ন এক সমাজের দৃশ্য রয়েছে।
গল্পের বর্ণনায় প্রকৃতির চিত্র আঁকার চেষ্টা সাবলীল। চিত্রকল্প সজীব হয়ে চোখের সামনে ধরা দেয়। উপাখ্যান পড়লে মনে হয়, আমাদের প্রতিবেশীদের মধ্যেই এসব ঘটছে। সূক্ষ্ম প্রকাশভঙ্গিতে কখনও অনেক গোপন ও গূঢ় সত্যও সহজ-স্বাভাবিক হয়ে উঠে এসেছে। সমাজকে আয়না দেখানোর চেষ্টা এগুলোতে বেশ স্পষ্ট। পুলিশ, জিআরপিসহ নিরাপত্তা বাহিনীর আচরণের নানা দিকেও রয়েছে আলোকপাত। লেখক মাটিসংলগ্ন ভাষার ব্যবহার করে গল্পের উপাখ্যান তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। সেখানে ধর্ম, সমাজ ও রাজনীতি উঠে এসেছে। কখনও পাওয়া গেছে ইতিহাসের খণ্ডচিত্র। কার্যত ‘শ্যামলতার মৃত্যুশিথান’ শেষ পর্যন্ত সমাজচিত্র হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে গেছে।
বইটিতে আরও রয়েছে ‘দ্রষ্টব্য গয়ালক্ষুধা’, ‘চাঁদকুয়াশার ভোর’ ও ‘নির্ভরতার দুঃখ’ শিরোনামের গল্প। এগুলোর চিত্রকল্প ও জুতসই উপমা বর্ণনাকে প্রাণবন্ত ও জোরালো করেছে।

শ্যামলতার মৃত্যুশিথান, ইমতিয়ার শামীম, প্রসিদ্ধ পাবলিশার্স, প্রচ্ছদ নির্ঝর নৈঃশব্দ্য, পৃষ্ঠা ১১২, মূল্য ৩০০ টাকা।

তুহিন তৌহিদ, জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, দৈনিক সমকাল

সম্পর্কিত নিবন্ধ