দুই যমজ ভাই নাহিদুল ইসলাম ও মাহিদুল ইসলাম। দেখতে হুবহু এক রকম। দুজনকে আলাদা করে চেনা মুশকিল। কম্পিউটার প্রোগ্রামার হওয়ার ইচ্ছা তাঁদের। সে কারণে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পর দৈনিক ১৫ ঘণ্টার মতো লেখাপড়া করেছেন তাঁরা। একসঙ্গে দুই ভাই প্রস্তুতি নিয়ে ফলও পেয়েছেন। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ভর্তি পরীক্ষায় নজরকাড়া সাফল্য তাঁদের। মেধাতালিকায় প্রথম দিকেই রয়েছে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের দুই ভাইয়ের নাম।

নাহিদুল ও মাহিদুল চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের মধ্যম সোনাপাহাড় এলাকার জসিম উদ্দিনের ছেলে। বুয়েটের এবারের ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় নাহিদুল ইসলাম ৫২তম ও মাহিদুল ইসলাম ১০১তম স্থান অধিকার করেছেন।

দুই ভাইয়ের এই ফলাফলে ঘরে রীতিমতো ঈদের খুশি। তাঁদের বাবা জসিম উদ্দিন বলেন, পড়াশোনা আর ক্রিকেট দুটোতেই ছিল তাঁর যমজ দুই সন্তানের সমান আগ্রহ। ছেলেদের ক্রিকেট প্রতিভা দেখে উচ্চশিক্ষা না ক্রিকেট, কোন পথে এগিয়ে নেবেন, এমন দোটানায় পড়েছিলেন তিনি। জসিম নিজেও ক্রীড়া সংগঠক। তাই ছেলেদের খেলাধুলায় উৎসাহ দিয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ দুই ছেলে প্রোগ্রামার হওয়ার স্বপ্ন দেখা শুরু করল। একসঙ্গে দুই ভাইয়ের পড়াশোনা চলতে লাগল। কঠোর পরিশ্রম আর রাতদিন পড়াশোনায় ধরা দিল সাফল্য।

জসিম উদ্দিন দুলাল জানান, নাহিদুল ও মাহিদুল ছাড়াও সাজনিন সোয়াত নামের তাঁর সাত বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। সন্তানদের মধ্যে নাহিদুল সবার বড়। ওদের মা ফারিয়া সুলতানার হাতেই সন্তানদের হাতেখড়ি। তাঁর দুই ছেলে ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় বেশ মনোযোগী। মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ জেবি শিশুকাননে ওদের লেখাপড়া শুরু। এরপর ওখানকারই জিবি উচ্চবিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পাস করে ওরা। এসএসসির পর নাহিদুল চট্টগ্রামের সরকারি সিটি কলেজ ও মাহিদুল সরকারি হাজী মোহাম্মদ মহসিন কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়। জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি সব পর্যায়েই ওরা দুজন এ প্লাস পেয়েছে। সরকারি, বেসরকারি শিক্ষা বৃত্তিও পেয়েছে দুজন।

জসিম উদ্দিন আরও বলেন, ‘ছোটবেলায় দুই ছেলে ছিল খুব ক্রিকেটপাগল। আমি নিজেও মিরসরাই স্পোর্টিং ক্লাব নামে এলাকায় একটি ফুটবল একাডেমি চালাতাম। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় ক্রিকেট প্রতিভা দেখে ভেবেছিলাম খেলাধুলায় থিতু করব ওদের। পরে পথ বদলে পড়াশোনায় মনোযোগী হয় ওরা। এসএসসির পর থেকেই প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন দানা বাঁধে ওদের মনে। সেই লক্ষ্যেই পড়াশোনা করে ওরা এবার বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকার প্রথম দিকে স্থান পেয়েছে। দুই ভাই বন্ধুর মতো। পড়াশোনাসহ সবকিছুতেই একে অন্যের সহযোগী।’

জসিম উদ্দিন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন বলে ব্যস্ত থাকতে হয় পেশাগত কাজে। তাই ছেলেদের সাফল্যের পেছনে স্ত্রী ফারিয়া সুলতানাকে কৃতিত্ব দিতে চান তিনি।

বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় ১ হাজার ৩০৫ জনের মধ্যে ৫২তম হয়েছেন এই যমজ দুই ভাইয়ের মধ্যে বড়জন নাহিদুল ইসলাম। এমন চমকপ্রদ ফলের বিষয়ে জানতে চাইলে নাহিদুল বলেন, ‘এসএসসি পাস করার পর থেকেই কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করে প্রোগ্রামার হওয়ার ইচ্ছা ছিল আমাদের দুই ভাইয়ের। আর এ বিষয়ে পড়াশোনার জন্য বুয়েট ছিল আমাদের প্রথম পছন্দ। সেই লক্ষ্যেই একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি উচ্চমাধ্যমিকের প্রথম বর্ষ থেকেই বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করি আমরা। এইচএসসি পরীক্ষার পর থেকে দৈনিক ১৫-১৬ ঘণ্টা পড়াশোনা করেছি আমরা। বাবা-মা আর শিক্ষকেরা পড়াশোনায় সব সময় সহযোগিতা করেছেন আমাদের। এখন স্বপ্ন বুয়েটের পাট চুকিয়ে প্রোগ্রামিংয়ে উচ্চতর পড়াশোনা করা।’

বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় ১০১তম স্থান অধিকার করা মাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বুয়েটে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়ার সুযোগ পেয়ে আমাদের বড় একটি স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। আমরা দুই ভাই একই বিষয়ে পড়াশোনা করায় ভর্তি পরীক্ষার জন্য নানাভাবে একজন আরেকজনের সহযোগিতা পেয়েছি। এখন সামনের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বুয়েটের পড়াশোনার পর্ব শেষ করা। এরপর বিদেশের কোনো ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রোগ্রামিং বিষয়ে উচ্চশিক্ষা নিতে চাই আমরা।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হ দ ল ইসল ম পর ক ষ র পর ক ষ য ম রসর ই আম দ র প রথম সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

হামাগুড়ি দিয়ে কেন্দ্রে এসে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে ইউনুস

এসএসসি পরীক্ষাকেন্দ্রের সামনে পরীক্ষার্থীদের ভিড়। ইউনিফর্ম পরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলাদাভাবে চোখে পড়ছিল শারীরিক প্রতিবন্ধী এক কিশোরকে। একটি ইজিবাইক থেকে নামার পর কিশোরটি হামাগুড়ি দিয়ে প্রবেশ করে কেন্দ্রে। গায়ের ইউনিফর্ম দেখে বোঝা যায় সেও পরীক্ষার্থীদের একজন।

গত বৃহস্পতিবার সকালে কক্সবাজারের টেকনাফ এজাহার সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় এসএসসি পরীক্ষাকেন্দ্রে গিয়ে দেখা মেলে মো. ইউনুস নামের এই কিশোরের। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অধীনে টেকনাফ মডেল পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে ইউনুস। কক্সবাজারের টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়ার বাসিন্দা আবদুস শুক্কুর ও নুরুজ্জামান দম্পতির সন্তান সে। চার ভাই, দুই বোনের মধ্যে সে পঞ্চম।

পরীক্ষা শেষে শিক্ষার্থী মো. ইউনুসের সঙ্গে কথা হয়। সে বলে, ‘আল্লাহ আমাকে যেভাবে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, তাতে আমি সন্তুষ্ট। বর্ষাকালে স্কুলে যাওয়া-আসা করতে খুবই কষ্ট হতো। সহপাঠী বন্ধুরা সাহায্য করত নানা সময়। ক্লাসে গিয়ে বসার সময়ও বন্ধুরা আমাকে পছন্দমতো জায়গায় বসতে দিত। আমি লেখাপড়া করে ভালো একজন ব্যবসায়ী হতে চাই।’ সে আরও বলে, ‘আমার বাবা নৈশপ্রহরীর চাকরি করেন। আটজনের সংসার বাবার একার রোজগারে চলে। সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিরা এগিয়ে আসলে অবশ্যই আমার শিক্ষার এই যাত্রা অব্যাহত থাকবে।’

ইউনুসের মা নুরুজ্জামান বলেন, জন্মগতভাবে ইউনুস প্রতিবন্ধী। দুই হাঁটুর পাশাপাশি দুই হাতের ওপর ভর করে সে চলাফেরা করে। জালিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পাস করে ষষ্ঠ শ্রেণিতে টেকনাফ মডেল পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। লেখাপড়ার প্রতি তার আগ্রহ থাকায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ দিয়েছে। সে প্রতিনিয়ত লেখাপড়া করে যাচ্ছে।

শুধু ইউনুস নয়, আবদুল হামিদ নামের আরও এক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছে এজাহার সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে। বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ওই পরীক্ষার্থী ইউনুসের খালাতো ভাই। কেন্দ্রের সচিব ও এজাহার সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সাব্বির আহমদ বলেন, দুই প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীই দুটি কক্ষে অন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসে পরীক্ষা দিচ্ছে। কেন্দ্রের পরিদর্শকসহ সবাই তাদের প্রতি খেয়াল রাখছেন।

কেন্দ্রের পরিদর্শক সৈয়দা তাহমিনা খানম বলেন, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। তারা ভালোভাবেই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে। খাতা জমা দেওয়ার সময় রোল নম্বর ঠিকমতো লিখেছে কি না, যাচাই-বাছাই করা হয়।

মো. ইউনুস ও আবদুল হামিদের বিষয়ে টেকনাফ পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মনিরুজ্জামান বলেন, ‘ইউনুস ও হামিদ পরস্পর খালাতো ভাই। দুজন শিক্ষার্থী খুবই ভদ্র। তাদের পড়াশোনা দেখে অন্যরা অনুপ্রাণিত হবে, এমনটা আশা করি।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • টাঙ্গাইলে এসিল্যান্ডের বিরুদ্ধে কেন্দ্রসচিবকে লাঞ্ছিতের অভিযোগ
  • বন্ধুর মোটরসাইকেলে ঘুরতে গিয়ে লাশ হয়ে বাড়ি ফিরল এসএসসি পরীক্ষার্থী
  • বিরামপুরে মোটরসাইকেলে পিক-আপের ধাক্কা, এসএসসি পরীক্ষার্থী নিহত  
  • ঘরে ঝুলছিল এসএসসি পরীক্ষার্থীর মরদেহ
  • ডেমরায় এক এসএসসি পরীক্ষার্থীর ‘অস্বাভাবিক’ মৃত্যু
  • সরকারি প্রতিষ্ঠানে ৬৪ পদে নিয়োগ, বেতনের সঙ্গে নানা সুবিধা
  • শরীয়তপুরে এসএসসি পরীক্ষার্থীকে উত্ত্যক্ত, ২ যুবককে কারাদণ্ড
  • হামাগুড়ি দিয়ে কেন্দ্রে এসে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে ইউনুস
  • মেয়েকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদে বাবা খুন: প্রধান আসামি ও এক সহযোগী গ্রেপ্তার
  • বিভিন্ন স্থানে কারিগরি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ চলছে