২৬ বছরের সংগীত সফরে প্রথমবারের মতো একক কনসার্ট করতে যাচ্ছে দেশের আলোচিত ব্যান্ড অর্থহীন। একটি, দুটি নয় একক কনসার্টের সিরিজ করতে যাচ্ছে রক ঘরানার এ ব্যান্ড। ‘অর্থহীন ২০৭৭: আ সাইবারপাঙ্ক ওডিসি’ শিরোনামে এ কনসার্টের প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হবে ২৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর গুলশান-তেজগাঁও লিংক রোডের আলোকি মিলনায়তনে। এ আয়োজন করছে গেট সেট রক ও অ্যাসেন বাজ।
আয়োজকরা জানান, জনপ্রিয় ভিডিও গেম সাইবারপাঙ্ক ২০৭৭-এর আদলে কনসার্টটি সাজানো হচ্ছে। ২৮ তারিখ বিকেল ৪টায় দর্শকের জন্য মিলনায়তনের গেট খুলে দেওয়া হবে। কনসার্ট শুরু হবে সন্ধ্যা ৬টায়। চলবে রাত ১০টা পর্যন্ত। নির্দিষ্ট মূল্যের টিকিট কেটে দর্শক এ আয়োজন উপভোগ করতে পারবেন।
এদিকে মজার একটি ভিডিওর মাধ্যমে এ কনসার্টের ঘোষণা দিয়েছেন অর্থহীন ব্যান্ডের সদস্যরা। ভিডিওতে দেখা গেছে, অর্থহীনের তিন সদস্য এক জায়গায় বসে আছেন। তাদের মধ্যমণি ব্যান্ডের কণ্ঠশিল্পী ও বেইজ গিটারিস্ট সুমন একটি ঘোষণা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। এরপর সুমন দর্শক-শ্রোতাদের উদ্দেশে বলা শুরু করলেন, ‘হ্যালো এভরিওয়ান, আজকে আমরা আপনাদের সামনে এসেছি বড় একটা অ্যানাউন্সমেন্ট দিতে। ইউএলএ আমরা সব অ্যানাউন্সমেন্ট দেওয়ার আগে এ কথাটাই বলি। কিন্তু আজকের অ্যানাউন্সমেন্টটা একটি ভিন্নধর্মী; সেটা হচ্ছে, এ মাসের ফেব্রুয়ারির ২৮ তারিখ আইফোন সিক্সটিন-ই রিলিজ হতে যাচ্ছে।’
সুমনের মুখে এ কথা শোনার পর পাশে বসে থাকা অর্থহীনের দুই সদস্য একটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছেন। ব্যান্ডের ড্রামার মার্ক ডন তখন কানে কানে এসে বলেন, ‘সুমন ভাই, এটা তো আমাদের শোয়ের প্রমোশনাল ভিডিও। সুমন তখন জানাতে চাইলেন, ‘আইফোন না কি যেন কালকে তাইতে কী কইলো।’ মার্ক তখন বললেন, ‘আইফোন ওটা তো অ্যাপল বের করছে, আমরা তো অর্থহীন।’
এ কথা শোনার পর সুমন হেসে ফেলে ক্যামেরা কাট কারতে বললেন। ক্যামেরাম্যানকে এও জানালের, এই অংশটুকু যেন ভিডিওতে না রাখা হয়। পাশে থাকা এহতেশামকে ও বললেন, ‘আসল কথাটা মনে করাইয়া দিবা না।’
শুনে হেসে ফেলেন এহতেশামও। এরপরই সুমনের পক্ষ থেকে আসে আসল ঘোষণা। জানান, প্রথমবারের মতো অর্থহীন একক কনসার্ট করতে যাচ্ছে। যার শিরোনাম ‘অর্থহীন ২০৭৭: আ সাইবারপাঙ্ক ওডিসি’। এত বছরের সংগীত সফরে এই প্রথম তারা এককভাবে কোনো আয়োজনে অংশ নিচ্ছে, যেটি হতে যাচ্ছে তাদের একটি সিরিজ কনসার্ট। ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে ধারাবাহিকভাবে এই আয়োজন হবে।
এই সিরিজ কনসার্টের প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হবে ২৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর গুলশান-তেজগাঁও লিংক রোডের আলোকি মিলনায়তনে। ঢাকার বাইরে এবং পুনরায় এ সিরিজের বাকি কনসার্টগুলোর ঘোষণাও নির্দিষ্ট সময়ে দেওয়া হবে বলে জানান অর্থহীন ব্যান্ডের শিল্পী ও বেজবাবাখ্যাত গিটারিস্ট সুমন।
প্রসঙ্গত, ‘ফিনিক্সের ডায়েরি ১’ প্রকাশের পর এবার ‘ফিনিক্সের ডায়েরি ২’ অ্যালবাম আয়োজন শুরু করেছেন অর্থহীন সদস্যরা। নতুন লাইনআপের পাশাপাশি অ্যালবামের কাজ অনেকটা গুছিয়ে এনেছে ব্যান্ডটি। বর্তমানে ব্যান্ডে আছেন বেজ গিটারিস্ট সুমন, ড্রামার মার্ক ডন ও লিড গিটারিস্ট এহতেশাম আলী মঈন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: কনস র ট কনস র ট র প রথম সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
ঢেকে রাখা সেই মুক্তিযুদ্ধের ম্যুরালে শেখ মুজিবের স্মৃতিচিহ্ন ভেঙে ফেলা হলো
লালমনিরহাট শহরের শিশুপার্ক সংলগ্ন মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিমঞ্চে স্থাপিত ম্যুরালের কিছু অংশ ভেঙে ফেলেছে জেলা প্রশাসন। ২৬ মার্চ জেলা প্রশাসন ওই ম্যুরালটি কাপড় দিয়ে ঢেকে অনুষ্ঠান পরিচালনা করে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখালেখি ও গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। কাপড় দিয়ে ম্যুরাল ঢেকে দেওয়ার ঘটনায় মুখোমুখি অবস্থান নেয় জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম পার না হতেই রোববার জেলা প্রশাসন মুক্তিযুদ্বের স্মৃতিচিহ্ন ম্যুরাল ভাঙার কাজে হাত দেয়।
এর আগে শনিবার দুপুুরে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি মঞ্চে দু’টি পক্ষ একই সময়ে সংবাদ সম্মেলনের ডাক দিলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দুপুর সাড়ে ১১টায় ওই এলাকায় সংবাদ সম্মেলন করলেও জাতীয় নাগরিক পার্টি করতে পারেননি।
মুক্তিযুদ্ব স্মৃতি মঞ্চে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লালমনিরহাট শাখার প্রধান সমন্বয়ক হামিদুর রহমান ম্যুরাল অপসারণ ও শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরাতে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেন। এ সময় তিনি দাবি করে বলেন, ‘এই ম্যুরালটি স্বাধীন বাংলাদেশের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস বহন করে না। বাকশাল প্রতিষ্ঠাকারী স্বৈরাচার শেখ মুজিবুর রহমানকে অতিরঞ্জিত উপস্থাপন ও ইতিহাস বিকৃতি করায় এর আগেও ১৬ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসন ম্যুরালটি ঢেকে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেছিল। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫২, ৭১ এর সকল সত্য ইতিহাস অক্ষুণ্ণ রেখে অতিরঞ্জিত অংশ ও স্বৈরাচারের চিহ্ন ঢেকে দেওয়ার নির্দেশনা ছিল। কিন্তু ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট তা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে পুরো দেয়াল ঢেকে দেয়, যা অনাকাঙ্খিত। কিছু স্বৈরাচারের দোসর তাদের ব্যক্তিগত আক্রোশ, স্বার্থ উদ্ধার ও বর্তমান সরকারের কার্যক্রমকে বিতর্কিত করতে জেলা প্রশাসনের কার্যক্রমকে ভুলভাবে প্রচার করতে থাকে এবং বিদ্বেষবশত মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। ম্যুরাল ঢেকে দেওয়ার বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন অবগত ছিল না, তাঁরা এমন কোনো দাবিও করে নাই। স্বৈরাচারের সকল চিহ্ন ও ম্যুরাল অপসারণ ছাত্রজনতার দাবি ও গণআকাঙ্খা।’
সংবাদ সম্মেলন শেষে জেলা মুক্তিযোদ্ধা দলের মুক্তিযোদ্ধারা স্মৃতিসৌধ এলাকায় যান। সেখানে জেলা মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি হাফিজুর রহমান হাফিজ জানান, ম্যুরালের মধ্যেই বৈষম্য রয়েছে। স্বাধীনতা যুদ্ধে শেখ মুজিবুর রহমানে যেমন অবদান রয়েছে তেমনি স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানেরও অবদান রয়েছে। অথচ ম্যুরালে জিয়াউর রহমানের কোনো স্মৃতিচিহ্ন নেই। এটা বৈষম্য। এই ম্যুরাল রাখা ঠিক নয়।
শনিবার জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) রাসেল আহমেদ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে গেলে তোপের মুখে পড়েন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা তাঁকে ঘিরে ধরেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এই ম্যুরালে ৫২ ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকার গঠন, চরমপত্র পাঠ, ৭১ এর গণহত্যা, বিজয় উল্লাসে মুক্তিযোদ্ধা, সাতজন বীরশ্রেষ্ঠ ও পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের স্মৃতিচিহ্ন ঢেকে দিয়ে চরম ধৃষ্ঠতা দেখিয়েছেন জেলা প্রশাসন। পরে তাঁরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ওপর দায় চাপিয়েছেন। ৭১ ও ২৪কে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে জাতিকে বিভাজিত করে আওয়ামী এজেন্ডা বাস্তবায়নের ষড়যন্ত্র চলছে। মহান মুক্তিযুদ্ধ ও ৭১ এর অস্তিত্ব ধরে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বাদ দিয়ে অন্যগুলোর সঙ্গে আমাদের কোনো মতানৈক্য নেই।
২৬ মার্চ বুধবার সকালে সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) পক্ষ থেকে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধে শ্রদ্বাঞ্জলি দিতে গেলে কাপড় দিয়ে মুরাল ঢেকে রাখার বিষয়টি চোখে পড়ে। সনাক সদস্যরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে ফিরে যান। পরে লালমনিরহাট রেলওয়ে শহীদ স্মৃতিসৌধে শ্রদ্বাঞ্জলি দেন তাঁরা। গত ১৬ ডিসেম্বরও একই রকম ঘটনা ঘটায় জেলা প্রশাসন। ১৪০ ফুট দীর্ঘ ওই ম্যুরালে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ, মুজিবনগর সরকার গঠন, চরমপত্র পাঠ, উদিত সূর্য, ৭১ এর গণহত্যা, মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক এম এ জি ওসমানি, সাতজন বীরশ্রেষ্ঠ ও পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণের স্মৃতিচিহ্ন রয়েছে।
এ ব্যাপারে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দারের বক্তব্য জানতে তাঁর ফোনে মেসেজ এবং ফোন দিলে কোনো সাড়া মেলেনি।