কক্সবাজারের মহেশখালীতে অফিসে ফেরার পথে দুর্বৃত্তরা এনজিওকর্মীকে গুলি করে ও কুপিয়ে অন্তত আড়াই লাখ টাকা ছিনতাই করে নিয়ে গেছে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটার উপজেলার শাপলাপুর ইউনিয়নের জেমঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে আহত এনজিওকর্মীকে পথচারীরা উদ্ধার করে পাশের চকরিয়া উপজেলার বদরখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন।

আহত এনজিওকর্মীর নাম মোহাম্মদ কাউছার (৪৫)। তিনি ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার রামনগর এলাকার আবদুল আজিজ শেখের ছেলে। তিনি বর্তমানে বেসরকারি এনজিও সংস্থা রিকের মহেশখালীর শাপলাপুর ইউনিয়নের ব্যবস্থাপক পদে কর্মরত।

রিকের মহেশখালীর কালারমারছড়া ইউনিয়নের দায়িত্বরত ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আরশাদ আলী বলেন, আজ বিকেলে উপজেলার শাপলাপুর ইউনিয়নের জেমঘাট এলাকার তিনটি সমিতি থেকে কিস্তির অন্তত আড়াই লাখ টাকা আদায় করেন শাপলাপুর ইউনিয়নের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ কাউছার। পরে ওই টাকা নিয়ে মোটরসাইকেল করে অফিসে ফিরছিলেন তিনি। এ সময় জেমঘাট থেকে শাপলাপুর বাজারে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তরা তাঁকে লক্ষ্য করে একটি গুলি করে। একপর্যায়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁর হাতে ও পিঠে আঘাত করে আড়াই লাখ টাকা ছিনতাই করে নিয়ে যায়। পরে পথচারীরা আহত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে পাশের চকরিয়া উপজেলার বদরখালী জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যায়।

বদরখালী জেনারেল হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক চিকিৎসক রাকিবুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ওই এনজিওকর্মীর শরীরের বিভিন্ন স্থানে ৩০ থেকে ৪০টির মতো ছররা গুলির আঘাতে চিহ্ন দেখা গেছে। এ ছাড়া তাঁর হাতে ও পিঠে ধারালো অস্ত্রের আঘাতও আছে। তবে চিকিৎসা দেওয়ার পর এখন তিনি আশঙ্কামুক্ত। এরপরও উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হবে।

মুঠোফোনে জানতে চাইলে মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ কাইছার হামিদ বলেন, এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আটকের জন্য পুলিশ নানাভাবে চেষ্টা করছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপজ ল র ব যবস থ এনজ ও

এছাড়াও পড়ুন:

ঘোড়ার গাড়িতে ইমামের রাজকীয় বিদায়, পেনশন পেলেন ৯ লাখ টাকা

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে নতুন কহেলা জামে মসজিদের ইমাম ও খতীবকে তিন যুগ ইমামতি শেষে রাজকীয় সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, ইমামকে এককালীন পেনশন হিসেবে দেওয়া হয়েছে ৯ লাখ টাকা।

মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) দুপুরে উপজেলার উয়ার্শী ইউনিয়নের নতুন কহেলা এলাকায় গ্রামবাসীর উদ্যোগে এ সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়।

জানা গেছে, ১৯৯১ সালে মাওলানা মোহাম্মদ শাজাহান খান নতুন কহেলা জামে মসজিদে ইমাম ও খতিব হিসেবে নিযুক্ত হন। এরপর থেকে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দীর্ঘ ৩৪ বছর ইমামতি করেন তিনি। গ্রামের প্রতিটি মানুষের সাথে তার রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। প্রায় ২ হাজার শিক্ষার্থীকে তিনি কুরআন শিখিয়েছেন। তার শেষ বয়সে এলাকাবাসী ইমামকে সম্মানিত করতে সজ্জিত ঘোড়ার গাড়ি টমটমে করে বিদায় দিয়েছেন। এছাড়া ঘোড়ার গাড়ি বহরের সঙ্গী হয়েছে অর্ধশতাধিক মোটরসাইকেল। গ্রামবাসীরা হাত নেড়ে ইমামের কর্মজীবনের শেষ বিদায় জানান।

১৯৯১ সালে যুবক বয়সে ৬০০ টাকা বেতন পাওয়া ইমামের বিদায়কালে বেতন হয় ১৭ হাজার পাঁচশত টাকা। তিনি মির্জাপুর উপজেলার বানাইল ইউনিয়নের দেওড়া গ্রামের মৃত কুরবান আলীর ছেলে।

তিনি ঢাকার লালবাগের একটি স্বনামধন্য মাদ্রাসা থেকে মাওলানা পাস করেন। পরে তিনি এই মসজিদে ইমাম হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। তার মেধা ও যোগ্যতা অনুযায়ী সে সময়ে ৬০০ টাকা বেতন ধার্য করা হয়। দীর্ঘ ৩৪ বছরের ইমামতি পেশায় থাকাকালীন এলাকায় ব্যাপক সুনাম কুড়িয়েছেন। ফলে তার বিদায় বেলায় এককালীন পেনশন দেওয়া হয়েছে ৯ লাখ ৩ শত টাকা।

২০২৪ সালে গ্রামের পক্ষ থেকে এই ইমামকে ওমরাহ হজে পাঠানো হয়। এ ছাড়া, গ্রামের মানুষ নানা ধরনের উপহার দিয়ে বিদায় জানান। তার বিদায় সফরসঙ্গী হয়ে গ্রামের প্রায় ৩ শতাধিক মানুষ ৭ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ইমামের নিজ বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসেন। এমন বিদায় জানাতে পেরে খুশি স্থানীয় গ্রামবাসীরাও। এমন ব্যতিক্রমী বিদায়ে এলাকাবাসীর ভালোবাসার কাছে আবেগাপ্লুত হয়ে কেঁদে কৃতজ্ঞতা জানান ইমাম।

বিদায় সংবর্ধনা পাওয়া ইমাম মাওলানা মোহাম্মদ শাজাহান খান বলেন, আমি গ্রামের প্রায় দেড় হাজার মানুষের জানাজা পড়িয়েছি। ৬০০ জনকে কোরআন শিক্ষা দিয়েছি। আল্লাহর রহমতে আমি কাজগুলো করতে পেরেছি, এজন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। আমার বিদায়বেলায় এলাকার মানুষ এত বড় আয়োজন করেছে তার জন্য এলাকার মানুষের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।

নতুন কহেলা গ্রামের বাসিন্দা আবুল হাশেম খান বলেন, ইমান মাওলানা মোহাম্মদ শাজাহান খান তার চাকরি জীবনে গ্রামের মানুষের কাছে খুবই জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। এই ইমামের প্রতি যে গ্রামবাসীর ভালবাসা তা জনশ্রুতেই বুঝা যায়।

নতুন কহেলা জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি সেলিম খান বলেন, এমন বিদায় সমাজে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তিনি এলাকার মানুষের কাছে খুবই জনপ্রিয় ছিলেন। ইমামের পরবর্তী জীবন ভালো কাটতে সরকারি চাকুরীর মত পেনশন দেওয়া হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ