থানার ৫০০ গজ দূরে প্রবাসীর গাড়িতে হামলা করে ডাকাতি, সর্বস্ব লুট
Published: 27th, February 2025 GMT
দীর্ঘ ১৯ মাস পর কুয়েত থেকে দেশে আসেন নাইমুল ইসলাম। চট্টগ্রামের জোরারগঞ্জ থানার উত্তর সোনাপাহাড় গ্রামের এই প্রবাসী গতকাল বুধবার দিবাগত রাতে রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। পরে স্বজনদের সঙ্গে ভাড়া করা মাইক্রোবাসে চট্টগ্রামে বাড়িতে ফিরছিলেন। পথে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে তাঁর গাড়িতে হামলা করে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সর্বস্ব লুট করে নেয় ডাকাত দল।
আজ বৃহস্পতিবার ভোরে চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ফালগুনকরা মাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। যে স্থানে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে, সেখান থেকে মাত্র ৫০০ গজ দূরেই চৌদ্দগ্রাম থানা। কিন্তু ডাকাতদের হাত থেকে রক্ষা পাননি ওই প্রবাসী। ডাকাতেরা প্রবাসীকে বহন করা গাড়িও ভাঙচুর করেছে।
চৌদ্দগ্রাম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গুলজার আলম প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার খবর পাওয়ার পরপরই থানা ও হাইওয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। তবে এর আগেই ডাকাতেরা পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী প্রবাসী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আট থেকে ১০ জনকে আসামি করে থানায় একটি মামলা করেছেন। পুলিশ ঘটনায় জড়িত ডাকাতদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করার চেষ্টা করছে।
প্রবাসী নাইমুল ইসলাম জানান, ১৯ মাস পর গতকাল রাত ১১টায় কুয়েত থেকে বিমানে তিনি ঢাকায় নামেন। এরপর রাত পৌনে একটার দিকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভাড়া করা মাইক্রোবাসে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন। রাত দুইটার পর মেঘনা সেতু পার হয়ে একটি হোটেলে যাত্রাবিরতি দিয়ে আবার রওনা দেন। চৌদ্দগ্রামের ফালগুনকরা মাজার এলাকায় ভোরের দিকে পেছন থেকে একটি অজ্ঞাতনামা পিকআপ বাঁ দিক দিয়ে ঢুকে তাদের মাইক্রোবাসটিকে চাপা দেয়। মাইক্রোবাসের চালক গাড়ি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে মুখোশ পরা ৮ থেকে ১০ জনের ডাকাত দল ধারালো অস্ত্র নিয়ে মাইক্রোবাসের দরজা-জানালা ভাঙচুর করে। একপর্যায়ে অস্ত্রের মুখে তাঁকে, তাঁর বাবাকে ও এক স্বজনকে জিম্মি করে প্রবাস থেকে তিনটি কার্টনে আনা মালামাল, লাগেজে থাকা দুই ভরি স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা, কুয়েতি দিনার—সব লুট করে নিয়ে যায়। পরে তাঁর এক স্বজন জাতীয় জরুরি সেবা নম্বরে (৯৯৯) কল করলে হাইওয়ে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে আসে। পরে তাঁদের থানায় নেওয়া হয়।
নাইমুল ইসলাম আক্ষেপ করে বলেন, ‘প্রবাসে এত কষ্টে অর্থ উপার্জন করে মালামাল নিয়ে বাড়িতে ফিরছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো রকমে প্রাণটা নিয়ে শূন্য হাতে ঘরে ফিরতে হচ্ছে।’ প্রবাসীর বাবা আবুল খায়ের বলেন, ডাকাত দলে ৮ থেকে ১০ জন ছিল। তাদের সবার মুখোশ পরা ও হাতে ধারালো দেশি অস্ত্র ছিল। ডাকাতেরা পিকআপে ত্রিপল মোড়ানো অবস্থায় আসায় তাঁরা বিষয়টি আঁচ করতে পারেননি। মুহূর্তেই ছেলের কষ্টের উপার্জন সব লুট করে নিয়ে যায়।
মাইক্রোবাসের চালক শাহাদাত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ডাকাতেরা পিকআপে ত্রিপল মুড়িয়ে এসে ডান দিকে অতর্কিতভাবে ঢুকে মাইক্রোবাসে ধাক্কা দেয়। এতে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মহাসড়কের পাশে খাদে পড়ার উপক্রম হয়েছিল। তিনি অনেক কষ্টে গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ করেন। এরপর ডাকাতেরা পিকআপ থেকে নেমে গাড়িতে ভাঙচুর করে এবং অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সব মাল লুট করে নিয়ে যায়।
চৌদ্দগ্রামের মিয়ার বাজার হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসিম উদ্দিন বলেন, ৯৯৯-এর মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে পোঁছানোর আগেই ডাকাতেরা পালিয়ে যায়। তাঁরা মহাসড়ক ও আশপাশের এলাকায় থাকা সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে ডাকাতদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছেন। ইতিমধ্যে এ নিয়ে কাজ শুরু করেছে হাইওয়ে পুলিশ।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
তিন স্তরে কমছে ইন্টারনেটের দাম
নতুন তিনটি স্তরে ইন্টারনেটের মূল্য কমছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব।
সোমবার (২১ এপ্রিল) সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এ তথ্য জানান তিনি।
ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব লিখেছেন, “নতুন তিনটি স্তরে ইন্টারনেটের মূল্য কমছে। ফাইবার অ্যাট হোমের ম্যানেজমেন্ট নিশ্চিত করেছেন যে- আইটিসি পর্যায়ে ১০ শতাংশ, আইআইজি পর্যায়ে ১০ শতাংশ এবং এনটিটিএন বা ন্যাশনাল ট্রান্সমিশন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ মূল্য হ্রাস করবেন তারা। ”
এর আগে আইএসপি লাইসেন্স প্রাপ্ত কোম্পানিগুলোর অ্যাসোসিয়েশন থেকে পাঁচ এমবিপিএসের পরিবর্তে ৫০০ টাকায় ১০ এমবিপিএস ইন্টারনেট প্রদানের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে।
তারও আগে আন্তর্জাতিক গেটওয়ে পর্যায়ে বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি সকল আইআইজি এবং আইএসপি গ্রাহকদের জন্য ১০ শতাংশ এবং পাইকারি গ্রাহকদের জন্য অতিরিক্ত ১০ শতাংশসহ মোট ২০ শতাংশ দাম কমিয়েছে।
এ নিয়ে ইন্টারনেট লাইসেন্স রেজিমের মোট তিন থেকে চারটি স্তরে ইন্টারনেটের মূল্য কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাকি আছে শুধু মোবাইলসেবা দাতা ৩টি বেসরকারি কোম্পানির দাম কমানোর ঘোষণা। এরইমধ্যে সরকার মোবাইল কোম্পানিগুলোকে বিডব্লিউডিএম এবং ডার্ক ফাইবার সুবিধা দিয়েছে।
তিনি আরো লিখেছেন, “এমতাবস্থায় বেসরকারি মোবাইল কোম্পানিগুলোর ইন্টারনেটের দাম না কমানোর কোনো ধরনের যৌক্তিক কারণ কিংবা অজুহাত অবশিষ্ট থাকে না। সরকার মোবাইল সেবাদাতা কোম্পানিগুলোকে পলিসি সাপোর্ট দিয়েছে এবং সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় স্তরগুলোতে পাইকারি পর্যায়ে ইন্টারনেটের দামও কমিয়েছে। এখন তাদের জাতীয় উদ্যোগে শরিক হওয়ার পালা।”
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী জানিয়েছেন, মোবাইল ইন্টারনেটের দাম কমানোর পদক্ষেপে চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতিও সামান্য কিছুটা কমে আসবে বলে আশা করি।
ঈদুল ফিতরের দিন থেকে সরকারি মোবাইল সেবা দাতা কোম্পানি টেলিটক ১০ শতাংশ মূল্য ছাড়ের ঘোষণা দিয়েছিল। সরকার আশা করে অতি দ্রুতই তিনটি বেসরকারি মোবাইল কোম্পানি অত্যন্ত যৌক্তিকভাবে মোবাইল ইন্টারনেটের মূল্য পতনের ঘোষণা দেবে।
সরকার এখানে দুই ধরনের মূল্য ছাড় আশা করে- প্রথমত, মার্চ মাসে এসআরও অ্যাডজাস্টমেন্ট বাবদ মোবাইল কোম্পানিগুলো যে মূল্য বাড়িয়েছিল সেটা কমাবে। (সরকার শুল্ক বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়ে তা থেকে সরে এসেছে, কিন্তু সেই মতে বর্ধিত মূল্য কমায়নি মোবাইল কোম্পানিগুলো। )
দ্বিতীয়ত, আন্তর্জাতিক গেটওয়ে/আইটিসি, আইআইজি এবং ন্যাশনাল ট্রান্সমিশন পর্যায়ে যতটুকু পাইকারি দাম কমানো হয়েছে তার সমানুপাতিক হারে গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেটের দাম কমাবে। বাংলাদেশের মোবাইল ইন্টারনেটের মানে ব্যাপক প্রশ্ন রয়েছে। মানের তুলনায় দাম অনেক বেশি। এমতাবস্থায় গ্রাহকস্বার্থে যৌক্তিক পদক্ষেপ নিতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ঢাকা/হাসান/ইভা