বিচার বিভাগ সংস্কারে গণমাধ্যমকে সোচ্চার ভূমিকা রাখার আহবান জানিয়ে বক্তারা বলেছেন, স্বাধীন বিচার বিভাগই পারে সংবিধানে থাকা জনগণের মৌলিক অধিকারসমূহ নিশ্চিত করতে। তাই এই লক্ষ্য অর্জনে বিচার বিভাগকে অযাচিত হস্তক্ষেপ থেকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। পাশাপাশি বিচার বিভাগের সংশ্লিষ্টদেরও যুক্তিসঙ্গত ও জবাবদিহিতার মধ্যে থাকতে হবে। এজন্য বিচার বিভাগের কাঠামোগত সংস্কার জরুরি।

আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট (নিমকো) মিলনায়তনে সুপ্রিম কোর্টে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীদের সংগঠন ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের সদস্যদের জন্য আয়োজিত কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন। সুইডিশ অ্যাম্বাসি, ইউএনডিপি ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সার্বিক সহযোগিতায় নিমকো আইনবিষয়ক সাংবাদিকদের দক্ষতা উন্নয়নে এই কর্মশালার আয়োজন করে। কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব।

উদ্বোধনী অধিবেশনে তিনি বলেন, সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করতে বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগের হস্তক্ষেপমুক্ত হতে হবে। সম্প্রতি প্রধান বিচারপতি স্বাধীন বিচার বিভাগের রূপরেখা ঘোষণা করেছেন, তা শুধু আশার আলোই নয় বরং এটি এমন এক বিচারব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে; যেখানে জনগণের চাহিদাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। বিচার বিভাগীয় সংস্কারে এই রূপরেখা বাস্তবায়নে ল’ রিপোর্টার্স ফোরামসহ গণমাধ্যমের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও সমর্থনও প্রয়োজন।

তিনি আরও বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হলো সেই মূল ভিত্তি, যা সরকারের তিনটি অঙ্গের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিত করে এবং আইনের শাসনকে সুরক্ষিত রাখে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইউএনডিপি-বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফ্যান লেলার বলেন, বিচার বিভাগ সংস্কারের জন্য প্রধান বিচারপতি একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করেছেন। বিভিন্নমাধ্যমে এটি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনও একটি সুপারিশ দিয়েছে। এগুলো নিয়ে মানুষের মধ্যে আলোচনা হওয়া দরকার।

অপর বিশেষ অতিথি সুইডেন দূতাবাসের হেড অব মিশন মারিয়া স্ট্রাইডসম্যান বলেন, বিচার বিভাগ সংস্কার প্রক্রিয়া বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি রোডম্যাপ। এতে বিচারকদের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, নিয়োগ ও দুর্নীতি হ্রাস করা, মামলার দীর্ঘসূত্রিতা কমিয়ে আনার বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই রোডম্যাপ বাস্তবায়নের জন্য বিচার বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সবার মতামত নেওয়া হচ্ছে। তবে সাধারণ মানুষের কাছে এসব রোডম্যাপের গুরুত্ব তখনই বোঝা যাবে, যখন তারা নিজেদের বাস্তব সমস্যার সমাধান দেখতে পাবে।

তিনি আরও বলেন, সাধারণ মানুষের জন্য বিচারব্যবস্থা তখনই কার্যকর হবে, যখন তারা আদালতে গিয়ে তাদের নথিপত্র হারিয়ে যাবে না, বিচার প্রক্রিয়া সহজতর হবে এবং তারা সমতার ভিত্তিতে ন্যায়বিচার পাবে। এজন্য সাংবাদিক, সামাজিক প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব এবং সাধারণ মানুষকে এই সংস্কার প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে হবে, যাতে সবার জন্য আইনের শাসন নিশ্চিত করা যায়।

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানার সভাপতিত্বে দিনব্যাপী কর্মশালার পৃথক অধিবেশনে আরও বক্তব্য রাখেন সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল অফিসার মো.

মোয়াজ্জেম হোসাইন, নিমকোর পরিচালক ড. মো. মারুফ নাওয়াজ, ডেফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক ড. কাবিল খান ও ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক আলী মাশরাফ। কর্মশালা সঞ্চালনা করেন জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের সহকারী পরিচালক তানজিম তামান্না।

কর্মশালায় এলআরএফের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাসান জাবেদ ও সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মিশনসহ এলআরএফের প্রায় ৪০ জন গণমাধ্যমকর্মী অংশগ্রহণ করেন। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন ইউএনডিপি বাংলাদেশের সহকারী আবাসিক প্রতিনিধি আনোয়ারুল হক, ইউএনডিপি বাংলাদেশের হেড অব কমিউনিকেশনস আব্দুল কাইয়ুম এবং নিমকো‘র পরিচালক মারুফ হোসেন, উপপরিচালক তানিয়া খান প্রমুখ।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আইন ন শ চ ত কর ইউএনড প র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

অনির্দিষ্টকালের জন্য সংস্কার চায় না জনগণ: মির্জা ফখরুল

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, অতি অল্প সময়ে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করাই বর্তমান সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ হওয়া উচিত। জনগণ নির্বাচিত সরকার চায়, যেখানে প্রতিনিধিরা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। কারণ, সব সংগ্রাম হয়েছে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য। তাই, নির্বাচনের কথা বলছে বিএনপি। জনগণ অনির্দিষ্টকালের জন্য সংস্কার চায় না।

আজ শনিবার বিকেলে বাড্ডায় মহানগর বিএনপির এক অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। রাজধানীর বাড্ডার মাদানি সড়কে বেরাইদা ঈদগাহ মাঠে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের উদ্যোগে নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঈদ উপহার বিতরণ উপলক্ষ্যে এই অনুষ্ঠান হয়।

ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে দেশে-বিদেশে ষড়যন্ত্র হচ্ছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত শেষ হয়নি। সব ষড়যন্ত্র-চক্রান্তকে ব্যর্থ করে দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করবই, করব।

হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমার ভোট আমি দেবো, যাকে খুশি তাকেই দেবো- এই অবস্থার মধ্য দিয়ে আমরা নির্বাচনটা চাই। আমরা এখনো বলছি, আমরা এখনো রাস্তায় নামি নাই। আমরা সাধারণ মানুষের কাছে যাচ্ছি ঈদ, ইফতার সামগ্রী নিয়ে, তাদের সুখ-দুখে তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়াচ্ছি। কিন্তু আমাদের স্বার্থে যদি, জনগণের স্বার্থে যদি কোনো বিঘ্ন সৃষ্টি করা হয়; তাহলে বিএনপি আবার মাঠে নামবে। মাঠে নেমে দাবি আদায় করে নিতে জানে বিএনপি। এজন্য আমাদেরকে প্রস্তুত থাকতে হবে।

দেশে বিদেশে ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, খুব পরিস্কার কথা। যে যেখানেই থাকেন, সেই ইউনাইটেড স্টেটে থাকেন, ফ্রান্সে থাকেন আর আমেরিকায় থাকেন আর সেখান থেকে মানুষকে উত্তেজিত করবার চেষ্টা করেন, বিভাজন সৃষ্টি করবার চেষ্টা করেন। আমরা মানুষের সঙ্গে আছি, আমরা মানুষের সঙ্গে থেকে রাজনীতি করছি। সুতরাং আমাদেরকে কেউ বিপথে পরিচালিত করতে পারবে না, বাংলাদেশের মানুষকেও কেউ বিপথে পরিচালিত করতে পারবে না।

ভারত-পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য কারোই পক্ষে আমরা নই উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, পরিস্কার কথা। আমরা ভারত, পাকিস্তান, আমেরিকা, ইংল্যান্ডের পক্ষেও নই। আমরা বাংলাদেশের পক্ষে। আমাদের নেতা তারেক রহমান খুব পরিস্কার করে বলেছেন, সবার আগে বাংলাদেশ, আমরা বাংলাদেশি।

মির্জা ফখরুল বলেন, শেখ হাসিনাবিরোধী দলের নেতাকর্মীদের জেলে নিয়েছিলো। ২০ হাজারের মতো নেতাকর্মীকে হত্যা করেছিল। প্রায় ১৭ শ’ নেতাকর্মীকে গুম করছিলো। ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা-গায়েবি মামলা দিয়েছিলো। পৃথিবীর গণতান্ত্রিক ইতিহাসে এই ধরনের নজির খুব কম। সেই একটা অবস্থা আমরা পার হয়ে এসেছি। আল্লাহ তাআলার অলৌকিক শক্তির মাধ্যমে তিনি হঠাৎ করে একদিন হাসিনাকে যেন গুম করে দিলেন। হাসিনা গুম হয়ে গেছে আল্লাহতাআলার নির্দেশে। যে অত্যাচার-নির্যাতন তিনি মানুষের ওপরে করেছেন; সেখান থেকে আপাতত মুক্তি পেয়ে একটা মুক্ত পরিবেশে একটা জায়গায় আমরা এসে দাঁড়িয়েছি।

মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক তহিরুল ইসলাম তুহিন সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হক, বিএনপির ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীবিষয়ক সম্পাদক এমএ কাইয়ুম বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে মহানগর উত্তরের যুগ্ম আহ্বায়ক এসএম জাহাঙ্গীর, আখতার হোসেন, আলফাজ উদ্দিন, এজিএম শামসুল হক, গাজী রেজাউনুল হোসেন রিয়াজ প্রমুখ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঈদের দিন ঐক্যের ডাক দিলেন ইস্তাম্বুলের মেয়র
  • খুলনায় কোথায় কখন ঈদের জামাত
  • ফ্যাসিবাদী শাসন আর ফিরিয়ে আনতে পারবে না কেউ: মজিবুর রহমান মঞ্জু
  • অনির্দিষ্টকালের জন্য সংস্কার চায় না জনগণ: মির্জা ফখরুল
  • ‘রাষ্ট্রশক্তি দিয়ে জনগণের শক্তি দমন করা যায় না’
  • ঈদে নিরাপত্তা হুমকি নেই: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি করছে অন্তর্বর্তী সরকার, বললেন রিজভী
  • ইউক্রেনে জাতিসংঘের নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রস্তাব পুতিনের
  • নির্বাচন সুষ্ঠু করেনি বলেই তো আন্দোলন হয়েছে: রিজভী
  • বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারের অঙ্গীকার মালদ্বীপের