৮৩৪ জন জুলাই শহীদের পরিবার পাচ্ছে ৩০ লাখ টাকা, মাসিক ভাতা ২০ হাজার
Published: 27th, February 2025 GMT
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদেরা ‘জুলাই শহীদ’ এবং আহত ব্যক্তিরা ‘জুলাই যোদ্ধা’ নামে অভিহিত হবেন। ‘জুলাই শহীদ’ পরিবার এককালীন ৩০ লাখ টাকা এবং মাসে ২০ হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন। এ ছাড়া শহীদ পরিবারের সক্ষম সদস্যরা সরকারি ও আধা সরকারি চাকরিতে অগ্রাধিকার পাবেন। আর আহত ব্যক্তিরা তিন শ্রেণিতে আর্থিক, চিকিৎসা, পুনর্বাসনসহ অন্যান্য সুবিধা পাবেন।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে সরকারের এসব সিদ্ধান্তের কথা জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। পরে লিখিতভাবে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানানো হয়। ৯ ও ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়।
সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, ৮৩৪ জন জুলাই শহীদের তালিকা গেজেটে প্রকাশ করা হয়েছে। তাঁদের প্রতিটি পরিবার এককালীন টাকা হিসেবে চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ১০ লাখ টাকা এবং আসন্ন অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে বাকি ২০ লাখ টাকা পাবেন। আর প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন।
সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, জুলাই যোদ্ধাদের তিনটি চিকিৎসা শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে অতি গুরুতর আহত ব্যক্তিদের ‘এ’ শ্রেণিতে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এমন আহত ব্যক্তিদের সংখ্যা ৪৯৩। যাঁরা চিকিৎসার পরেও শারীরিক অসামর্থ্যের নিরিখে অন্যের সহায়তা ছাড়া জীবনযাপনে অক্ষম। এই শ্রেণির জুলাই যোদ্ধারা একেকজন এককালীন পাঁচ লাখ টাকা পাবেন। এর মধ্যে চলতি অর্থবছরে ব্যাংক চেকের মাধ্যমে দুই লাখ এবং আসন্ন অর্থবছরে তিন লাখ টাকা পাবেন। তাঁরা প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা ভাতা এবং বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে আজীবন চিকিৎসা পাবেন। এ ছাড়া মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশে দেশি-বিদেশি হাসপাতালে চিকিৎসা এবং কর্মসহায়ক প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন–সুবিধাও পাবেন। তাঁরা পরিচয়পত্রও পাবেন, যা দেখিয়ে সরকারের বিভিন্ন সুবিধা পাবেন।
জুলাই যোদ্ধাদের মধ্যে যাঁরা গুরুতর আহত, তাঁদের ‘বি’ শ্রেণিতে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এমন আহত ব্যক্তিদের সংখ্যা ৯০৮। তাঁরা পর্যাপ্ত চিকিৎসার পরেও শারীরিক অসামর্থ্যের নিরিখে অন্যের আংশিক সহায়তায় জীবনযাপনে সক্ষম হবেন বলে প্রতীয়মান হবেন। তাঁরা এককালীন তিন লাখ টাকা পাবেন। এর মধ্যে চলতি অর্থবছরে এক লাখ টাকা এবং আগামী অর্থবছরে দুই লাখ টাকা পাবেন। তাঁরা প্রতি মাসে ভাতা পাবেন ১৫ হাজার। কর্মসহায়ক প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সরকারি ও আধা সরকারি কর্মসংস্থান পাবেন। এ ছাড়া তাঁরা পরিচয়পত্রও পাবেন, যা দেখিয়ে সরকারের বিভিন্ন সুবিধা পাবেন।
আর আহত ব্যক্তিদের ‘সি’শ্রেণিতে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তাঁদের সংখ্যা ১০ হাজার ৬৪৮। চিকিৎসার পরে তাঁরা বর্তমানে সুস্থ। তাঁরা এককালীন এক লাখ টাকা এবং মাসে ১০ হাজার টাকা ভাতা পাবেন। এ ছাড়া তাঁরা পুনর্বাসন–সুবিধা পাবেন। আর পরিচয়পত্র দেখিয়ে সরকারের বিভিন্ন সুবিধা পাবেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, মেডিকেল বোর্ড এবং যাঁরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন, তার নিরিখে আহত ব্যক্তিদের এই শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে।
সংবাদ ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার, প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ২০ হ জ র ভ ক ত কর সরক র র একক ল ন চয়পত র পর ব র র আহত
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই-মার্চ মেয়াদে তৈরি পোশাক রপ্তানি ১০.৮৪% বেড়েছে
২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ মেয়াদে দেশভিত্তিক রপ্তানি তথ্য থেকে জানা গেছে, এই সময়ে ৩০ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ; যা পোশাক খাতের স্থিতিস্থাপকতা এবং সম্ভাবনার পরিচায়ক।
এই তথ্য দিয়ে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো-ইপিবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই সময়ে দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ১০ দশমিক ৮৪ শতাংশ; যা প্রশংসনীয় বলে বর্ণনা করা হচ্ছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউরোপীয় ইউনিয়ন-ইইউ এখনো বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের মোট রপ্তানির ৪৯ দশমিক ৮২ শতাংশই রপ্তানি হয় ইইউতে; যার মোট বাজার মূল্য ১৫ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার।
আরো পড়ুন:
ওয়ার্ল্ড এক্সপোতে বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন উদ্বোধন
ছুটি শেষে বেনাপোল স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি শুরু
এরপরে বাংলাদেশের জন্য বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। এই বাজারে মোট রপ্তানি হয়েছে ৫ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক; যা মোট রপ্তানির ১৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ। কানাডার মোট বাজার অংশ ছিল ৯৬৩ দশমিক ৮৫ মিলিয়ন ডলার। যুক্তরাজ্যের বাজারও গুরুত্বপূর্ণ ছিল, যার রপ্তানি মূল্য ৩ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার; যা মোট তৈরি পোশাক রপ্তানির ১১ দশমিক১০ শতাংশ ।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, প্রবৃদ্ধির দিক থেকে ইইউতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি বছরের পর বছর উল্লেখযোগ্যভাবে ১১ দশমিক ৩১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রে ১৭ দশমিক ২৩ শতাংশ এবং কানাডা ১৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে যুক্তরাজ্যে তৈরি পোশাক রপ্তানি ৪ দশমিক ১৪ শতাংশের একটি সামান্য প্রবৃদ্ধির হার প্রদর্শন করেছে।
ইইউর মধ্যে জার্মানি একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার হিসেবে দাঁড়িয়েছে, যেখানে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ ৩ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার, স্পেন ২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার, ফ্রান্স ১ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার, ইতালি ১ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলার, পোল্যান্ড ১ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলার এবং নেদারল্যান্ডস ১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার।
প্রবৃদ্ধির হার বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ছিল জার্মানি (১০ দশমিক ৭২ শতাংশ), ফ্রান্স (১০ দশমিক ৭৫ শতাংশ), নেদারল্যান্ডস (২৩ দশমিক ১৫ শতাংশ), পোল্যান্ড (১০ দশমিক ৩২ শতাংশ), ডেনমার্ক (১২ দশমিক ৮০ শতাংশ) এবং সুইডেনে (১৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ)।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতেও অপ্রচলিত বাজারে প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে; যা সামগ্রিকভাবে ৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যেখানে মোট রপ্তানি ৫ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা বাংলাদেশের মোট রপ্তানির ১৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ দখল করেছে।
এই বাজারগুলোর মধ্যে জাপান মোট ৯৬০ দশমিক ৪৫ মিলিয়ন ডলার আমদানি করে শীর্ষে রয়েছে। তারপরে অস্ট্রেলিয়া ৬৫৩ দশমিক ৬৪ মিলিয়ন ডলার এবং ভারত ৫৩৫ দশমিক ১৫ মিলিয়ন ডলার আমদানি করে।
তুরস্ক ও মেক্সিকোর মতো দেশগুলোতেও উল্লেখযোগ্য রপ্তানি হয়েছে। তুরস্কে ৩৫৭ দশমিক ২২ মিলিয়ন ডলার এবং মেক্সিকোতে ২৫১ দশমিক ২২ মিলিয়ন ডলার রপ্তানি হয়েছে।
ইপিবি রপ্তানি বৃদ্ধির এই ধারাকে ‘প্রশংসনীয়’ বর্ণনা করেছে।
সংস্থাটির তথ্যমতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ মেয়াদে ভারতে ২০ দশমিক ৪৫ শতাংশ, জাপানে ১০ দশমিক ০৬ শতাংশ, মেক্সিকোতে ২৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ এবং তুরস্কে ৩২ দশমিক ৫৪ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
ইপিবির প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এই মেয়াদে জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, তুরস্ক ও মেক্সিকোতে প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক থাকলেও রাশিয়া, কোরিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং মালয়েশিয়ায় রপ্তানি হ্রাস পেয়েছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া এবং কোরিয়ায় নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি এই বাজারগুলোতে আরো গুরুত্বসহকারে রপ্তানি বাজার দেখভাল করা দরকার বলে মনে করে ইপিবি।
নিটওয়্যার খাতে মোট ১১ দশমিক ২২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে ইপিবি। ওভেন সেক্টরেও ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে, যুক্তরাজ্যে প্রবৃদ্ধি ধীর হলেও অপ্রচলিত বাজারে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
রপ্তানির চলমান প্রবৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য হারে ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল; যা দেশের প্রধান বাজার হিসেবে অব্যাহত রয়েছে।
বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক ও বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং ডেনিম এক্সপার্ট লিমিটেডের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেলের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলেছে বাসস।
তিনি বলেছেন, “এটি আমাদের মোট রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে প্রধান ঐতিহ্যবাহী বাজারের তাৎপর্য প্রদর্শন করে।”
“অপ্রচলিত বাজারে মাঝারি প্রবৃদ্ধি; এই বিভাগে আরো গবেষণা এবং মনোযোগের গুরুত্বকে তুলে ধরে, কারণ এর যথেষ্ট প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে, যা ঐতিহ্যবাহী বাজারের ওপর নির্ভরতা ভারসাম্য বজায় রাখতেও সাহায্য করবে।”
মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, “স্থায়ী বৈশ্বিক বাণিজ্য উত্তেজনা ক্রমাগত বৈশ্বিক পরিবেশকে পুনর্গঠন করছে। এটি এমন সুযোগ তৈরি করছে, যার সুবিধা নিতে পারে বাংলাদেশ।”
ঢাকা/হাসান/রাসেল