নেত্রকোনা যাওয়ার জন্য চট্টগ্রামের বটতলী রেলস্টেশনে এসেছিলেন ফাতেমা আক্তার। সঙ্গে ৫ বছর বয়সী কন্যা ও ১৫ মাস বয়সী শিশুপুত্র। ট্রেন না পেয়ে বোয়ালখালীর বাড়িতে ফেরার উপায় খুঁজছিলেন তিনি। স্টেশনেই পরিচয় দুলাল মিয়া নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে। তিনি ওই নারীকে বোয়ালখালী পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে নগরের বাকলিয়ার একটি বাড়িতে নিয়ে যান। সেখান থেকে ফাতেমার অগোচরে তাঁর শিশুপুত্রকে নিয়ে পালিয়ে যান। ফাতেমা বুঝতে পারেন অপহরণ করা হয়েছে তাঁর সন্তানকে।

অপহরণের ৯ দিন পর ফাতেমার শিশুপুত্রকে উদ্ধার করেছে র‍্যাব। গতকাল বুধবার রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা হয় শিশুটিকে। এর আগে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে কিশোরগঞ্জ জেলার সদর থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুলাল মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। শিশুটি উদ্ধারের সময় গ্রেপ্তার করা হয় মোরশেদ মিয়া নামের আরও একজনকে। তিনি ওই শিশুকে দুলালের কাছ থেকে কিনেছিলেন বলে জানায় র‍্যাব।  

আজ বৃহস্পতিবার নগরের চান্দগাঁও এলাকায় র‍্যাব-৭–এর চান্দগাঁও ক্যাম্পে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অপহরণের বিস্তারিত তুলে ধরেন র‍্যাব-৭–এর অধিনায়ক লে.

কর্নেল মো. মাহবুব আলম। তিনি বলেন, দুলাল মিয়া এবং তাঁর পরিবার অপহরণকারী চক্রের সঙ্গে জড়িত। এর আগেও তিনি একটি শিশুকন্যা চুরি করে মামলার আসামি হয়েছেন। ওই মামলায় কিশোরগঞ্জ ভৈরব থানা কারাগারে আছেন তাঁর স্ত্রী রুনা বেগম।

লে. কর্নেল মো. মাহবুব আলম বলেন, ১৭ ফেব্রুয়ারি ভুক্তভোগী ফাতেমা আক্তার ৫ বছরের কন্যা ও ১৫ মাসের ছেলে রাব্বিকে নিয়ে বটতলী রেলওয়ে স্টেশনে যান। দুলাল মিয়া নামের একজনের সঙ্গে পরিচয়ের সুবাদে নেত্রকোনাগামী ট্রেনের সময়সূচি জানতে চান ফাতেমা। ট্রেন নেই জানালে দুলাল মিয়াকে বোয়ালখালীর বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার অনুরোধ করেন ওই নারী। দুলাল ওই নারীকে সন্তানসহ কোতোয়ালির বিভিন্ন এলাকায় ঘুরিয়ে রাতে বাকলিয়া থানার বাসুর কলোনি নামক জায়গায় একটি কক্ষ ভাড়া করে রাখেন। পরদিন ফাতেমার অগোচরে দুলাল মিয়া ১৫ মাসের শিশু রাব্বিকে নিয়ে পালিয়ে যান।  

মাহবুব আলম বলেন, এ ঘটনায় ফাতেমার স্বামী বাদী হয়ে ২৪ ফেব্রুয়ারি বাকলিয়া থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে র‍্যাব-১৪ এবং র‍্যাব-৭ যৌথ অভিযান চালিয়ে দুলালকে গ্রেপ্তার করে। প্রবাসী মোরশেদ মিয়ার কাছে এক লাখ টাকার বিনিময়ে অপহৃত শিশুটিকে বিক্রি করেন দুলাল। মোরশেদ পাঁচ কন্যাসন্তানের জনক। ছেলেসন্তানের আকাঙ্ক্ষায় তিনি অপহরণকারী চক্রের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। এ কারণে তাঁকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।  

গ্রেপ্তার মো. দুলাল মিয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল থানার শোলাবাড়ি এলাকার দুদু মিয়ার ছেলে এবং মোরশেদ মিয়া একই থানার শাখাইতি এলাকার ইজ্জত আলীর ছেলে। তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানায় লে. কর্নেল মো. মাহবুব আলম।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর ১৫ ম স এল ক য়

এছাড়াও পড়ুন:

জুয়েলার্স ব্যবসায়ীদের জানমালের নিরাপত্তা চাইলেন বাজুস নেতারা

সরকারের কাছে জুয়েলার্স ব্যবসায়ীদের জানমালের নিরাপত্তা চেয়েছেন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) নেতারা।

জুয়েলার্স সমিতির নেতারা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে দেশের জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও ব্যবসায়ীদের ওপর সরাসরি আক্রমণের ঘটনা বাড়ছে। পাশাপাশি জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের হত্যা, হত্যাচেষ্টা ও অপহরণ চেষ্টা তাঁদের জানমালের নিরাপত্তাহীনতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এমনকি বাসাবাড়িতেও জুয়েলারি ব্যবসায়ী ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা নিরাপদ বোধ করছে না। আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের ঘটনা বাড়তে পারে—এমন আশঙ্কা করছেন তাঁরা।

রাজধানীর মগবাজারে জুয়েলার্স সমিতির কার্যালয়ে আজ শুক্রবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সংগঠনের নেতারা। তাঁরা জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের জানমালের নিরাপত্তা প্রদানে সরকারের আরও সহযোগিতা চান।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জুয়েলার্স সমিতির সহসভাপতি মো. নিপনুল হাসান। আরও উপস্থিত ছিলেন জুয়েলার্স সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গুলজার আহমেদ, সহসভাপতি এম এ হান্নান আজাদ, সহসভাপতি মাসুদুর রহমান, জয়নাল আবেদীন, সমিত ঘোষ প্রমুখ। সমিতির পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানা যায়।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গত বুধবার (২৬ মার্চ) ভোর ৫টায় জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান অলংকার নিকেতনের কর্ণধার ও জুয়েলার্স সমিতির সহসভাপতি এমএ হান্নান আজাদের বাসায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয় ও ছদ্মবেশী ২৫-৩০ জনের একটি সংঘবদ্ধ ডাকাতদল হামলা চালায়। এ সময় তাঁর বাসা ভাঙচুর ও লুটপাট করে। এমনকি এম এ হান্নান আজাদকে অপহরণের চেষ্টা করে। চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি বাজুসের কার্যনির্বাহী সদস্য মো. ওয়াহিদুজ্জামান সুজনের ওপর ও তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলার চেষ্টা হয়, যা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ২৬ মার্চ পর্যন্ত প্রায় ২৩টি জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে ১১টি, আশুলিয়া সাভারে ১টি, মুন্সিগঞ্জে ১টি, খুলনায় ৪টি, কুমিল্লায় ১টি, পটুয়াখালীতে ২টি, ময়মনসিংহে ১টি, সিলেটে ১টি ও হবিগঞ্জে ১টি প্রতিষ্ঠানে চুরি ও ডাকাতি হয়। আশুলিয়া-সাভারে ডাকাতির সময় ডাকাতদের গুলিতে একজন জুয়েলারি ব্যবসায়ী নিহত হয়। বনশ্রীতে সোনা ছিনতাইয়ের ঘটনায় একজন জুয়েলারি ব্যবসায়ী গুরুতর আহত হয়েছেন। বিগত এক বছরে এই চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনায় দেশের ২৩টি জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান প্রায় ৪৪ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।

লিখিত বক্তব্যে রিপনুল হাসান বলেন, ‘জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় আছেন। এ জন্য জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানে সরকারের আলাদা দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সশস্ত্র প্রহরার পাশাপাশি রাজধানীসহ দেশের সব জেলার জুয়েলারি মার্কেটে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা দাবি জানাচ্ছি।’ এ ছাড়া জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই হওয়া অলংকার উদ্ধার এবং অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলন থেকে জুয়েলার্স সমিতির নেতারা অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা রোধে জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানের মালিকদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, প্রতিষ্ঠানের ভেতরে ও বাইরে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা নিশ্চিত, নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠান বন্ধ, এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সোনা পরিবহনে প্রয়োজনে পুলিশের সহায়তা নেওয়ার পরামর্শ দেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ক্ষোভ থেকে হা–মীমের কর্মকর্তাকে হত্যা: র‌্যাব
  • দুই বোনের ‘বটতলা’
  • বগুড়ায় অ্যালকাহল পানে ২ জনের মৃত্যু
  • বগুড়ায় দুজনের মৃত্যু, মদ পানের কারণে কিনা খতিয়ে দেখছেন চিকিৎসক
  • বগুড়ায় দুজনের মৃত্যু, মদ পানের কারণেই কিনা খতিয়ে দেখছেন চিকিৎসক
  • শরীয়তপুরে দুই ব্যবসায়ীকে অপহরণ: ৪ পুলিশ সদস্যসহ ৭ জনের নামে মামলা
  • মুক্তিপণ আদায়কালে গণপিটুনি, অপহরণকারী তিন পুলিশসহ গ্রেপ্তার ৪
  • শরীয়তপুরে ২ ব্যবসায়ীকে অপহরণ, পুলিশসহ আটক ৪
  • জুয়েলার্স ব্যবসায়ীদের জানমালের নিরাপত্তা চাইলেন বাজুস নেতারা
  • শরীয়তপুরে দুই ব্যবসায়ীকে অপহরণ, মুক্তিপণ নেওয়ার সময় পুলিশ সদস্যসহ চারজন আটক