নিয়োগ এবং পদোন্নতিতে অনিয়মসহ নানা অভিযোগে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক দুই উপাচার্যসহ ১৩ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। এর মধ্যে প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন এবং প্রফেসর মো. ফায়েকুজ্জামান আওয়ামী লীগের আমলে উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেন। 

ইতোমধ্যে তদন্ত অনুসন্ধানের জন্য চার সদস্যের একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করেছে দুদক। আগামী ৫ মার্চের মধ্যে সকল তথ্য চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে খুবি প্রশাসনকে। 

বিষয়টি নিশ্চিত করে খুলনা দুদকের উপ-পরিচালক এবং অনুসন্ধান টিমের টিম লিডার মো.

আবদুল ওয়াদুদ জানান, বিভিন্ন অভিযোগের অনুসন্ধানের জন্য খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক দুই উপাচার্যসহ একাধিক কর্মকর্তার আর্থিক দুনীতি ও নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয়ে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। একটি অনুসন্ধান টিমও গঠন করা হয়েছে। বিষয়টি লিখিতভাবে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্যকে জানানো হয়েছে। 

সাবেক উপাচার্য প্রফেসর মোহাম্মদ ফায়েকুজ্জামান গোপালগঞ্জের বাসিন্দা এবং তিনি আওয়ামী লীগের আমলে ২০১২ সালের ১ নভেম্বর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য এবং পরে ২০১৩ সালের ১০ জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত দুই মেয়াদে উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেন। 

এছাড়া সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন বাগেরহাটের বাসিন্দা। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মোজাম্মেল হোসেনের ছেলে। তিনি ২০২১ সালের ২৫ মে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান। তবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর গত ২০ আগস্ট পদত্যাগ করেন। 

খুলনার দুদক সূত্র জানায়, খুবির সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন এবং সাবেক উপাচার্য প্রফেসর মোহাম্মদ ফায়েকুজ্জামানসহ ১৩ কর্মকর্তাদের বিভিন্ন নথি চেয়ে বর্তমান উপাচার্যের নিকট বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) চিঠি দিয়েছে খুলনা দুদকের উপ-পরিচালক এবং অনুসন্ধান টিমের টিম লিডার মো. আবদুল ওয়াদুদ। 

সাবেক এই দুই উপচার্যের আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত, পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তা/কর্মচারীদের তালিকা, নিয়োগ বোর্ডের সদস্যদের তালিকা, নিয়োগ কমিটির সভার কার্যবিবরণীসহ নিয়োগ ও পদোন্নতির নথির সত্যায়িক ছায়ালিপি অনুসন্ধান করা হবে। পাশাপাশি সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেনের আমলে নিষ্পত্তিকৃত বিভাগীয় মামলার তথ্যদি ও রেকর্ডপত্র, ইউজিসি এবং মন্ত্রণালয় কর্তৃক যে সকল অডিট সম্পন্ন হয়েছে তার প্রতিবেদন এবং উক্ত সময়ের কোন অডিট আপত্তি থাকলে অডিট আপত্তি এবং তার জবাবও তদন্ত করা হবে। 

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিতে যোগদান সংক্রান্ত আবেদনপত্র, নিয়োগপত্র, যোগদানপত্র, পদোন্নতির আদেশ এবং জাতীয় পরিচয়পত্র চেয়ে ১৩ জন কর্মকর্তার তথ্য অনুসন্ধান করা হবে। 

এরা হলেন পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) মো. মুজিবুর রহমান, আইআইএসএসসিই’র প্রিন্সিপাল সায়েন্টিক অফিসার সঞ্জয় সাহা, পরিবহন পুলের উপ-প্রধান প্রকৌশলী মো. শাহ নওরোজ, এস্টেট শাখার উপ-রেজিস্ট্রার কৃষ্ণপদ দাস, উপ-প্রধান প্রকৌশলী সামিউল ইসলাম, ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী এস এম মনিরুজ্জামান, কেন্দ্রীয় গবেষণাগারের ইন্সট্রুমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার নাজমুল হাসিব, পরিবহন পুলের সহকারী রেজিস্ট্রার মো. মঈনুল ইসলাম, সংস্থাপন-৩ শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার এস এম হুমায়ুন কবির, লিগ্যাল সেলের উপ-রেজিস্ট্রার হাওলাদার আলমগীর হাদী, মেডিকেল সেন্টারের সিনিয়র নার্স শ্যামলী সুলতানা, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণে সিস্টেম এনালিস্ট আসিফ রুবায়েত হোসেন, বাংলা ডিসিপ্লিনের শিক্ষক এবং কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ যাচাই বাছাই কমিটির সভাপতি প্রফেসর ড. রুবেল আনসার। 

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, “ইতিমধ্যে দুদক থেকে আমাদের কাছে তথ্য চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে দুইজন সাবেক উপাচার্যসহ ১৩ জনের তথ্য চাওয়া হয়েছে। আগামী ৫ মার্চের মধ্যে তথ্য দিতে বলা হয়েছে।” 

উল্লেখ্য, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ডিসিপ্লিনে (বিভাগ) ওয়ালিউল হাসনাত নামের একজন অধ্যাপকের নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়েছিল। সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামানকে এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) তদন্ত করলেও বিষয়টির চূড়ান্ত কোন সুরাহা হয়নি।

ঢাকা/নুরুজ্জামান/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কর মকর ত র আমল তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

রাঙামাটি কারাগারে কারাবন্দিদের ঈদ উদযাপন

ঈদের দিন পরিবারের সঙ্গে আনন্দ উদযাপনের সুযোগ সবার থাকে না; বিশেষ করে কারাগারে বন্দিদের। বিষয়টি ভেবে বন্দিদের জন্য বিশেষ আয়োজন করেছে রাঙামাটি কারা কর্তৃপক্ষ। কারাবন্দিরা যেন ঈদে নিজেদের মধ্যে আনন্দ ভাগ করে নিতে পারেন সেজন্য ঈদের বিশেষ নামাজ, উন্নতমানের খাবার পরিবেশনের পাশাপাশি স্বজনদের সঙ্গে দেখা করার ব্যবস্থা রেখেছেন কারা কর্তৃপক্ষ।  

কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, সকাল সাড়ে আটটায় কারাবন্দিরা কারাগারের মধ্যেই আদায় করছেন ঈদের নামাজ। এরপর সবাই একসঙ্গে বসে ঈদের সেমাই খেয়েছেন। বন্দিদের জন্য  দুপুর ও রাতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের খাবারের আয়োজন। 

ঈদের এই বিশেষ দিনে বন্দিরা যাতে পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে পারে এ জন্য কারা কর্তৃপক্ষ স্বজনদের সুযোগ দিয়েছেন। যারা দেখা করতে এসেছেন তাদের ফুল ও মিষ্টি দিয়ে বরণ করে নিয়েছেন। এমন আয়োজনে খুশি স্বজনরাও।

কারাবন্দির সাথে দেখা করতে আসা স্বজন নূর মোহাম্মদ জানান, খুব সুন্দর আয়োজন করেছে এবার জেল কর্তৃপক্ষ। গত বছরও আমি এসেছিলাম আত্মীয়র সাথে দেখা করতে, কিন্তু এবারের আয়োজন ভিন্ন মনে হয়েছে। তারা আমাদের ফুল ও মিষ্টি দিয়ে বরণ করেছে। আমি আত্মীয়র সাথে কথা বলেছি, তিনি জানিয়েছেন জেলের পরিবেশ ভালো, সবাই মিলে ঈদের নামাজ শেষে সেমাই খেয়েছেন। দুপুর ও রাতে ভালো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কারাগারে এ ধরনের পরিবেশ সত্যি খুব  ভালো লাগছে।

রাঙামাটি কারাগারের জেল সুপার দিদারুল আলম বলেন, ‘‘স্বজনহীন কারাবন্দিদের মাঝে আনন্দ ছড়িয়ে দিতে কারা কর্তৃপক্ষ এমন আয়োজন করেছে। আমরা চাই জেলের বিষয়ে মানুষের গতানুগতিক যে ধারণা, সেটা পরিবর্তন হোক।’’

ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কারাবন্দি ও স্বজনদের নিয়ে ভিন্ন কিছু আয়োজনের নির্দেশনা দিয়েছেন বলেই এমন আয়োজন সম্ভব হয়েছে বলে জানান দিদারুল আলম। 

শংকর//

সম্পর্কিত নিবন্ধ