চট্টগ্রামে শিশু অপহরণ: চক্রের হোতাসহ গ্রেপ্তার ২
Published: 27th, February 2025 GMT
চট্টগ্রাম মহানগরীর বাকলিয়া থানা এলাকা থেকে রাব্বি নামের এক বছর বয়সী শিশু অপহরণ ও বিক্রি করে দেওয়ার ঘটনার ৭ দিন পর অপহৃত শিশু উদ্ধার এবং অপহরণ চক্রের মূল হোতাসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৭।
বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নগরীর চান্দগাঁওয়ে র্যাব-৭ এর সিপিসি-৩ মিডিয়া সেন্টারে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে.
প্রেস ব্রিফিংয়ে র্যাব-৭ অধিনায়ক জানান, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ফাতেমা আক্তার নামের এক নারী তার ৫ বছর বয়সী কন্যা ও ১ বছর ৩ মাস বয়সী শিশু পুত্র রাব্বীকে নিয়ে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে আসেন। সেখানে জনৈক দুলাল নামে এক ব্যক্তি সাথে তার পরিচিত হয়। পরিচয়ের সুবাদে ফাতেমা আক্তার দুলাল মিয়াকে নেত্রকোনা ট্রেনের সময় সংক্রান্তে জিজ্ঞাসা করলে দুলাল মিয়া জানায় আজকে নেত্রকোণাগামী কোন ট্রেন নাই।
ভুক্তভোগী ফাতেমা আক্তার দুলাল মিয়াকে চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী এলাকায় তাদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করলে দুলাল মিয়া ভুক্তভোগী ফাতেমা আক্তার এবং তার সন্তানদের নিয়ে চট্টগ্রাম মহানগরীর কোতোয়ালী থানা এলাকার বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি করতে থাকে।
এর এক পর্যায়ে দুলাল মিয়া ভুক্তভোগী ফাতেমা আক্তারকে বিভিন্ন কৌশলে চট্টগ্রাম মহানগরীর বাকলিয়া থানাধীন বাসুর কলোনীতে নিয়ে যায় এবং সেখানে একটি রুম ভাড়া করে অবস্থান করে। পরবর্তীতে ১৯ ফেব্রুয়ারি ভুক্তভোগী ফাতেমা আক্তার সকালের নাস্তা খেয়ে বাথরুমে যায়। সেই সুযোগে দুলাল মিয়া ভুক্তভোগী ফাতেমা আক্তার এর ১ বছর ৩ মাসের শিশু বাচ্চা নিয়ে পালিয়ে যায়।
এই ঘটনায় ফাতেমা আক্তারের স্বামী বাদী হয়ে চট্টগ্রাম মহানগরীর বাকলিয়া থানায় মো. দুলাল মিয়াকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা ও অভিযোগ পেয়ে র্যাব-৭, শিশু অপহরণকারীকে ধরতে এবং অপহৃত শিশু উদ্ধারে গোয়েন্দা নজরদারী শুরু করে।
নজরদারীর এক পর্যায়ে র্যাব গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, আসামী মো. দুলাল মিয়া কিশোরগঞ্জ জেলার সদর থানা এলাকায় অবস্থান করছে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বিকালে র্যাব-৭ ও র্যাব-১৪ ময়মনসিংহ এবং র্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা এর যৌথ আভিযানিক দল বর্ণিত এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আসামী মো. দুলাল মিয়া (৪৮)কে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।
গ্রেপ্তারের পর দুলাল মিয়া প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, সে ব্রাহ্মবাড়িয়ায় তাদের পরিচিত এক প্রবাসী দম্পতির কাছে ১ লাখ টাকার বিনিমিয়ে অপহৃত শিশুটিকে বিক্রয় করে দিয়েছে।
পরবর্তীতে র্যাব বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) ভোরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল থানাধীন এলাকা হতে অপহৃত শিশুটিকে উদ্ধার করে এবং ঘটনায় জড়িত আসামি মোরশেদ মিয়াকে গ্রেপ্তার করে।
র্যাব জানিয়েছে, গ্রেপ্তারকৃত আসামি মো. দুলালের বিরুদ্ধে কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব থানায় চুরি সংক্রান্তে একটি মামলা রয়েছে। এছাড়াও, মো. দুলাল মিয়া আড়াই বছর বয়সী শিশু সারা মনিকে অপহরণের মামলায় অভিযুক্ত এক নম্বর আসামি। উক্ত মামলায় সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে মো. দুলাল মিয়ার স্ত্রী রুনা বেগম বর্তমানে কিশোরগঞ্জ ভৈরব থানা কারাগারে রয়েছে।
উল্লেখ্য, অভিযুক্ত আসামি মো. দুলাল মিয়ার মোবাইলে শিশু বিক্রি সংক্রান্ত বিভিন্ন ব্যক্তির সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে কথোপকথনের তথ্য পাওয়া গেছে। দুলাল মিয়া এবং তার পরিবার এক ভয়ঙ্কর সক্রিয় অপহরণ চক্র পরিচালনা করে বলে র্যাব জানিয়েছে। এই চক্রের অন্যান্য সদস্যদের দ্রুত গ্রেপ্তার করতে র্যাব চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
গ্রেপ্তার অপর আসামি মোরশেদ মিয়া জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, সে ১৭ বছর প্রবাসে ছিল। তার পাঁচটি কন্যা সন্তান রয়েছে। মূলত, পুত্র সন্তানের আকাঙ্খায় সে এই অপহরণ চক্রের সাথে যোগাসাজশে প্ররোচনা দিয়ে শিশু বাচ্চাটিকে ক্রয় করে। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন আছে।
ঢাকা/রেজাউল/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গ র প ত র কর অপহ ত শ শ
এছাড়াও পড়ুন:
দুজনকে অপহরণের পর ২৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি
কক্সবাজারের টেকনাফের জাহাজপুরা এলাকার দুই বাসিন্দাকে অপহরণের পর ২৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে দুজনের পরিবারের সদস্যদের কাছে মুঠোফোনে অপহরণকারীরা মুক্তিপণ দাবি করেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
অপহৃত দুজন হলে—জাহাজপুরা এলাকার আবছার আহমদের ছেলে আহমদ উল্লাহ (৪৮) ও আবদুস সালামের ছেলে জসিম উদ্দিন (১৮)। গতকাল সকালে স্থানীয় পাহাড়ি এলাকায় গরু চরাতে গেলে অস্ত্রের মুখে দুজনকে অপহরণ করা হয় হয় বলে জানা গেছে।
অপহৃতদের পরিবারের সদস্যদের বরাতে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, মুখোশধারী সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের মুখে দুজনকে অপহরণ করে পাহাড়ের গহিনে নিয়ে গেছেন। স্থানীয় অনেক বাসিন্দা সেটি দেখেছেন। গতকাল রাত ১০টার দিকে দুজনের পরিবারের কাছে মুঠোফোনে মুক্তিপণ দাবি করা হয়। অপহৃত আহমদ উল্লাহর জন্য ২০ লাখ টাকা এবং জসিমের জন্য ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ চেয়েছেন অপহরণকারীরা। মুক্তিপণের টাকা না দিলে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে।
ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম আরও বলেন, এ ধরনের অপহরণের ঘটনা টেকনাফে প্রায়ই ঘটছে। অস্ত্রের মুখে মানুষকে জিম্মি করে অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায় করে আসছে একটি চক্র। সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে সন্ত্রাসীদের ধরতে পাহাড়ে অভিযান পরিচালনার জন্য স্থানীয় বাসিন্দারাও দীর্ঘদিন দাবি জানিয়ে আসছেন।
জানতে চাইলে স্থানীয় বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের পরিদর্শক শুভ রঞ্জন শাহ প্রথম আলোকে বলেন, অপহরণের বিষয়ে ভুক্তভোগীদের পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে খবর পেয়ে পাহাড়ি এলাকাটিতে অভিযান চলছে।
কক্সবাজার জেলা পুলিশ ও ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের তথ্য বলছে, গত ১৪ মাসে টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে ২২৬ জনকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। একই সময়ে পার্শ্ববর্তী উখিয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৮৭ জনকে অপহরণ করা হয়।