ফরিদপুর জেলার সদর উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামে অবস্থিত পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের বাড়ি বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির এক অনন্য নিদর্শন। কুমার নদীর তীরে অবস্থিত এই বাড়িটি আজও কবির স্মৃতিকে ধারণ করে আছে।
বাড়ির চারটি পুরাতন টিনের ঘরে কবির ব্যবহৃত নানান জিনিসপত্র সংরক্ষিত আছে, যা দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত। এছাড়া বাড়ির চত্বরে কবির লেখা ও স্মৃতিচিহ্ন প্রদর্শন করা হয়েছে। নদীর পাশে বিস্তৃত স্থানজুড়ে দর্শনার্থীদের জন্য বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বাড়ির উত্তরে রাস্তার পাশে কবির কবরস্থান অবস্থিত। কবির পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের কবরও এখানে রয়েছে।
জসীম উদ্দীন ১৯০৩ সালের ১ জানুয়ারি ফরিদপুর জেলার তাম্বুলখানা গ্রামে মাতুলানায় জন্মগ্রহণ করেন। মোহাম্মাদ জমীর উদ্দীন মোল্লা তার পূর্ণ নাম হলেও তিনি জসীম উদ্দীন নামেই পরিচিত। তার বাবার বাড়ি ছিল একই জেলার গোবিন্দপুর গ্রামে। বাবার নাম আনসার উদ্দিন মোল্লা।
বাংলার পল্লী প্রকৃতি ও সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা জসীম উদ্দীন রচিত সাহিত্যের মূল উপজীব্য ছিল। পল্লী জীবনের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক তার কাব্যে স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।.
বাড়ির চারটি পুরাতন টিনের ঘরে কবির ব্যবহৃত নানান জিনিসপত্র সংরক্ষিত আছে, যা দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত।
১৯৩১ থেকে ১৯৩৭ পর্যন্ত, দীনেশচন্দ্র সেনের সাথে লোক সাহিত্য সংগ্রাহক হিসেবে জসীম উদ্দীন কাজ করেন। তিনি পূর্ব বঙ্গ গীতিকার একজন সংগ্রাহকও। তিনি ১০,০০০ এরও বেশি লোক সংগীত সংগ্রহ করেছেন, যার কিছু অংশ তার সংগীত সংকলন জারি গান এবং মুর্শিদা গান-এ স্থান পেয়েছে। তিনি বাংলা লোক সাহিত্যের বিশদ ব্যাখ্যা এবং দর্শন খণ্ড আকারেও লিখে গেছেন।
পল্লীকবি ১৯৩৩ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. দীনেশচন্দ্র সেনের অধীনে রামতনু লাহিড়ী গবেষণা সহকারী পদে যোগ দেন। এরপর ১৯৩৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন।
তিনি ১৪ মার্চ ১৯৭৬ সালে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তার শেষ ইচ্ছা অনুসারে তাকে ফরিদপুর জেলার অম্বিকাপুর গ্রামে তার দাদীর কবরের পাশে দাফন করা হয়।
গোবিন্দপুরে প্রতিবছর জানুয়ারি মাসে তার জন্মদিনকে স্মরণ করে জসীম মেলা নামে একটি পাক্ষিক উৎসব উদ্যাপন করা হয়।
জসীম উদ্দীন ছিলেন প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার অধিকারী এবং সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার একজন দৃঢ় সমর্থক। তিনি ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা।
চাইলেই ঝটিকা সফর করে আসতে পারেন কবির বাড়ি থেকে।
যাতায়াত ও থাকার ব্যবস্থা ঢাকা থেকে ফরিদপুর যাওয়ার জন্য বাস ও ট্রেন রয়েছে। গাবতলি বাস স্ট্যান্ড থেকে কমফোর্ট লাইন, রয়েল পরিবহন, সূর্যমুখী পরিবহণ, গোল্ডেন লাইন, আনন্দ পরিবহণ, সাউথ লাইন, আজমেরি এন্টারপ্রাইজসহ বিভিন্ন বাস পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুর যায়। বাসভাড়া ৪০০-৫০০ টাকা।
এছাড়া ঢাকা কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে সুন্দরবন এক্সপ্রেস, মধুমতি এক্সপ্রেস ও বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে ফরিদপুরে যাওয়া যায়। ট্রেনের ভাড়া ৩০৫ থেকে ৬৯৬ টাকা। ফরিদপুর শহর থেকে স্থানীয় যানবাহনে করে পল্লী কবির বাড়ি যাওয়া যায়।
ফরিদপুর শহরে থাকার জন্য হোটেল র্যাফেলস, জেকে ইন্টারন্যাশনাল, পদ্মা হোটেল ও হোটেল ঝিলভিউসহ বেশ কয়েকটি আবাসিক হোটেল রয়েছে।
পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের বাড়ি বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির এক অনন্য নিদর্শন হিসেবে আজও দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করে চলেছে। চাইলেই ঝটিকা সফর করে আসতে পারেন কবির বাড়ি থেকে।
ঢাকা/তামিম/এস
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
‘আমি আওয়াজ দিয়ে মরতে চাই’
গাজায় বসবাসকারী একজন তরুণ আলোকচিত্র সাংবাদিক হিসেবে ফাতিমা হাসোনা জানতে, মৃত্যু সবসময় তার দোরগোড়ায় কড়া নাড়ছে। যুদ্ধের গত ১৮ মাস ধরে তিনি বিমান হামলা, তার বাড়ি ধ্বংস, অবিরাম বাস্তুচ্যুতি এবং পরিবারের ১১ জন সদস্যের হত্যার কথাগুলো লিখেছেন। কিন্তু স্বজন, বাড়িঘর হারানোর পরেও তিনি চুপ হয়ে যাবেন না বলে জানিয়েছিলেন ফিলিস্তিনি এই সাংবাদিক।
ফাতিমা তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছিলেন, “যদি মরন আসেই তাহলে আমি উঁচু আওয়াজ দিয়ে মরতে চাই। আমি কেবল ব্রেকিং নিউজ বা কোনো দলের সংখ্যা হতে চাই না, আমি এমন একটি মৃত্যু চাই যা বিশ্ব শুনবে, এমন একটি প্রভাব যা সময়ের সাথে সাথে থাকবে এবং একটি চিরন্তন চিত্র যা সময় বা স্থান দিয়ে চাপা দেওয়া যাবে না।”
আর কয়েক দিন পরেই বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার কথা ছিল ২৫ বছর বয়সী ফাতিমার। বুধবার উত্তর গাজায় তার বাড়িতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হন ফাতিমা। তার পরিবারের দশজন সদস্য নিহত হয়েছেন এই হামলায়। নিহতদের মধ্যে মধ্যে তার গর্ভবতী বোনও ছিলেন।
ফাতিমাকে হত্যার চব্বিশ ঘন্টা আগে ঘোষণা করা হয়েছিল যে ইসরায়েলি আক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে গাজায় তারর জীবনকে কেন্দ্র করে একটি তথ্যচিত্র ফরাসি স্বাধীন চলচ্চিত্র উৎসবে প্রকাশ করা হবে।
ইরানি পরিচালক সেপিদেহ ফারসি নির্মিত ‘পুট ইওর সোল অন ইওর হ্যান্ড অ্যান্ড ওয়াক’ ছবিটিতে ফাতিমা ও ফারসির মধ্যে ভিডিও কথোপকথনের মাধ্যমে গাজার অগ্নিপরীক্ষা এবং ফিলিস্তিনিদের দৈনন্দিন জীবনের গল্প বলা হয়েছে।
ফাতিমা সেই তথ্যচিত্রে বলেছিলেন, “গাজা আমার চোখ... জ্বলন্ত ও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। আমি তার হাসি, তার কান্না, তার আশা এবং তার বিষণ্ণতার ছবি তুলেছিলাম।”
ফাতিমা সম্পর্কে ফারসি বলেন, “তিনি অনেক আলোকজ্জল, অনেক প্রতিভাবান ছিলেন। ছবিটি দেখলে আপনি বুঝতে পারবেন। কয়েক ঘন্টা আগে আমি তার সাথে কথা বলেছিলাম যে ছবিটি কানে আসছে এবং তাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম।”
ফ্রান্সে নির্বাসিত জীবনযাপনকারী ফারসি বলেন, ফাতিমাকে একজন ফটোসাংবাদিক হিসেবে তার বহুল প্রচারিত কাজের জন্য এবং সম্প্রতি তথ্যচিত্রে অংশগ্রহণের জন্য লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
সাম্প্রতিক ইতিহাসে গাজা সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে মারাত্মক সংঘাতময় স্থান। ২০২৩ সাল থেকে ১৭০ জনেরও বেশি সাংবাদিক ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছে।
ঢাকা/শাহেদ