সড়ক দুর্ঘটনায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সমাজতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী রেহেনা আক্তার তানিয়া নিহতের যথাযথ বিচার এবং নিরাপদ সড়কের দাবিতে মানববন্ধন করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে সমাজতত্ত্ব বিভাগের পক্ষ থেকে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে বিভাগের শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। 

এ সময় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ‘আমার বোন মরলো কেন, প্রশাসন জবাই চাই’, ‘সড়ক সড়ক সড়ক চাই, নিরাপদ সড়ক চাই’, ‘বিচার চাই বিচার চাই, বোন হত্যার বিচার চাই’, ‘আমার বোন কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস, জাস্টিস জাস্টিস’, ‘আমার বোন ঘুমায়, প্রশাসন ঝিমায়’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

মানববন্ধনে সমাজতত্ত্ব বিভাগের ৫৫তম ব্যাচের তনজিহা বিনতে কবির বলেন, “আজ আমরা অনেক শোকাহত। তানিয়া আপুর সব সম্ভাবনা এক নিমিষেই শেষ হয়ে গেল। এটি কোন স্বাভাবিক মৃত্যু নয়। এর দায় রাষ্ট্রের। অধিকাংশ ড্রাইভারদের নেই কোন লাইসেন্স। তাদের মধ্যে থাকে আগে যাওয়ার প্রতিযোগিতা। তার মৃত্যুর সুষ্ঠু বিচার করতে হবে। আমাদের মূল দাবি, তানিয়া আপুর পরে যেন আর কারো রাস্তায় প্রাণ দিতে না হয়।”

তানিয়ার সহপাঠী ইসমিতা আক্তার বলেন, “আমি বিভাগে ৬ বছর সিআর ছিলাম। তার সঙ্গে আমার খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। গত একটি অনুষ্ঠানে তিনি আমাদের সাথে ছিলেন। তার ছবি-ভিডিওগুলো এখন শুধুই স্মৃতি। এভাবে একজন সহপাঠীকে হারানোই আমরা ভীষণ মর্মাহত।”

বিভাগের অধ্যাপক আনোয়ার হোসাইন চৌধুরী বলেন, “গত ১৮ তারিখে তানিয়াসহ আমরা একসঙ্গে মাস্টার্সের বিদায় অনুষ্ঠানে কেক কেটেছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তিনি এখন আমাদের মাঝে নেই। দুর্ঘটনা ঘটার ওই রাস্তায় কোন ডিভাইডার নেই। রাস্তাটিতে এ পর্যন্ত ২২ জন প্রাণ হারিয়েছে। বেশিরভাগ ড্রাইভারদের লাইসেন্সও নেই।”

তিনি বলেন, “তানিয়ার মৃত্যুর জন্য প্রশাসনকে দায় নিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রশাসন থেকে তার পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা করতে হবে। এরপরে যেন আর কোন তানিয়াকে এভাবে প্রাণ হারাতে না হয়।”

বিভাগের অধ্যাপক কণক আব্দুল ওহাব বলেন, “হৃদয় তরুয়া ও ফরহাদের জীবন যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তানিয়ার জীবনও তেমন গুরুত্বপূর্ণ। তানিয়ার মতো শতশত মানুষ এভাবে রাস্তায় নিহত হচ্ছে। কিন্তু এ নিয়ে রাষ্ট্রের কোন মাথা ব্যথা নেই। ঘর থেকে বের হয়ে আবার ঘরে ফিরতে পারব কি না, তার নিশ্চয়তা নেই।”

তিনি বলেন, “হাটহাজারী থেকে অক্সিজেনের রাস্তায় প্রচুর যানজট। সরু এ রাস্তায় অনেকগুলো দোকান বসানো। মানুষের কাজই যেন রাস্তায় যাওয়া, আর প্রাণ হারিয়ে আসা। এরপরে হয়তো পরিবর্তন হবে, কিন্তু তানিয়ার জীবন আর ফিরে আসবে না।”

মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে তারা শহীদ মিনার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কার্যালয়ের সামনে সমবেত হন। এ সময় তারা প্রক্টর বরাবর চার দফা দাবি পেশ করেন।

এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড.

তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ বলেন, “প্রক্টর হিসেবে ব্যক্তিগতভাবে শোকবার্তা প্রকাশ করা হয়েছে। সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করার জন্য যথাসাধ্য যেখানে যাওয়া দরকার, এটা আমি নিশ্চিত করব।”

তিনি বলেন, “ক্ষতিপূরণের জন্য হায়ার অথোরিটির সঙ্গে দ্রুত কথা বলে এটি নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হবে। নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতের জন্য ফটিকছড়ি প্রশাসনের সঙ্গে দ্রুত কথা বলব।

এর আগে, মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) ফটিকছড়ি উপজেলার নাজিরহাটের আজম সড়কে চট্টগ্রামগামী টেম্পুর সঙ্গে বিবিরহাটগামী সিএনজির সংঘর্ষ হয়। এতে সিএনজিতে থাকা তিনজন সড়কে ছিটকে পড়েন। স্থানীয়দের সহায়তায় গুরুতর আহতাবস্থায় তাদের উদ্ধার করে ফটিকছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক রেহানা আক্তার তানিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন।

এছাড়া, আহতদের মধ্যে পারভেজ নামে এক যুবকের শরীর থেকে হাতের কব্জি আলাদা হয়ে যায়। তাকে উপজেলা কমপ্লেক্স থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে (চমেক) নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকেও মৃত ঘোষণা করেন। আহত যাত্রী অঞ্জনা দাস নামে এক নারী গুরুতর আহতাবস্থায় চমেকে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

ঢাকা/মিজান/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

সারা দেশে সব কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের মহাসমাবেশ আজ 

ছয় দফা দাবিতে আজ রোববার সারা দেশে মহাসমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ। সব কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে এ সমাবেশ হবে।

গতকাল শনিবার সকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সামনে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। মানববন্ধন শেষে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের মূল ফটকের নামফলক লাল কাপড়ে ঢেকে দেন আন্দোলনকারীরা। গতকাল তাঁদের কর্মসূচি ছিল ‘রাইজ ইন রেড’। কর্মসূচি পালনকালে আন্দোলনকারীরা ‘মামা থেকে মাস্টার, মামাবাড়ির আবদার’, ‘এক হও এক হও, পলিটেকনিক এক হও’, ‘ষড়যন্ত্রের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘কুমিল্লায় হামলা কেন, প্রশাসন জবাব দাও’ এমন বিভিন্ন স্লোগান দেন।

কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি মাসফিক ইসলাম মানববন্ধনে বলেন, আগামীকাল (রোববার) মহাসমাবেশের মাধ্যমে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা ছয় দফা দাবি বাস্তবায়নে চূড়ান্ত সময়সীমা ঘোষণা করবেন।

গত বুধবার ছয় দফা দাবিতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা সড়ক, মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। সড়ক আটকে রাখায় তীব্র যানজটে পড়ে দিনভর ভোগান্তি পোহাতে হয় সাধারণ মানুষকে। পরে তাঁরা সারা দেশে বৃহস্পতিবার ‘রেল ব্লকেড’ বা রেলপথ অবরোধ করার ঘোষণা দেন। পরে অবশ্য রেল ব্লকেড কর্মসূচি শিথিল করা হয়।

বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে অতিরিক্ত সচিব (কারিগরি অনুবিভাগ) রেহানা ইয়াছমিনের বৈঠক হয়, কিন্তু তাতে শিক্ষার্থীরা সন্তুষ্ট হননি। এ অবস্থায় তাঁরা আন্দোলনের কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

প্রসঙ্গত, পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবির মধ্যে প্রথমটি হলো, জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের ৩০ শতাংশ পদোন্নতি কোটা বাতিল করতে হবে। এ ছাড়া জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদোন্নতির রায় বাতিল, ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদবি পরিবর্তন, মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চাকরিচ্যুত, ২০২১ সালে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের নিয়োগ বাতিল এবং সেই বিতর্কিত নিয়োগবিধি অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে।

ঢাকার বাইরে বিক্ষোভ সমাবেশ

গাজীপুরে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় শহরের শিববাড়ী মোড়ে শিমুলতলী-শিববাড়ী সড়ক অবরোধ করে তাঁরা এ কর্মসূচি করেন। সকাল ১০টার দিকে গাজীপুরে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট) ফটক থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন নগরের বিভিন্ন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শিববাড়ী মোড়ে পৌঁছালে তাঁরা সড়কে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সমাবেশ শেষ করে তাঁরা ফিরে যান।

কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ফরিদপুর শহরের বায়তুল আমান এলাকায় অবস্থিত ফরিদপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে‌ কর্মসূচি পালিত হয়। ফরিদপুর সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের প্রধান ফটকের সামনে রাস্তায় মানববন্ধন পালন করা হয় ও মানববন্ধন–পরবর্তী প্রতিষ্ঠানের মূল ফটক অনির্দিষ্টকালের জন্য লাল কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়।

গতকাল বেলা একটার দিকে বরিশাল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে নগরের চৌমাথা এলাকায় এসে জড়ো হন। সেখান ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেন তাঁরা। মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগান, ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে দাবির পক্ষে অবস্থান নেন। এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমরা দাবি আদায় না করে রাজপথ ছাড়ব না।’ বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে তাঁরা বলেন, ‘আমরা এই হামলাকারীদের বিচার চাই।’

[প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার নিজস্ব প্রতিবেদকপ্রতিনিধিরা]

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ট্রাইব্যুনালে ছয় দাবিতে স্মারকলিপি মায়ের ডাকের
  • দুদ‌কের সাম‌নে জিএম কাদেরকে গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন
  • ৫ দাবিতে শেকৃবি শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন
  • বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে গাজীপুরে শ্রমিকদের বিক্ষোভ
  • হাসপাতাল চালুর দাবিতে সুনামগঞ্জে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ
  • আমরা আর কত অপেক্ষা করব, প্রশ্ন গুম হওয়া বাবার সন্তানের
  • গুম-খুনে জড়িতদের বিচারের দাবিতে ‘মায়ের ডাক’র মানববন্ধন
  • পদ্মার বালু উত্তোলন ঘিরে নড়িয়ায় বিএনপির দুই পক্ষ মুখোমুখি
  • সারা দেশে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের মহাসমাবেশ আজ
  • সারা দেশে সব কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের মহাসমাবেশ আজ