বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে বন্ধ হওয়া ১৪টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের পাওনা পরিশোধে ৫২৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা প্রয়োজন হবে। আগামী ৯ মার্চ থেকে পাওনা পরিশোধ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন।

বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রম ও ব্যবসা পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা এ কথা বলেন।

উপদেষ্টা বলেন, ‘‘বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে ১৪টি ইউনিট বন্ধ করা হয়েছে। বন্ধ করেছে বেক্সিমকো অথরিটি। এ বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভা হয়েছে গতকাল। গতকাল ছিল অষ্টম মিটিং। এ মিটিংয়ে আমরা সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি।’’

তিনি বলেন, ‘‘আমি এবং আমরা কোনো শ্রমিকের বিরুদ্ধে নই। কোনো শ্রমিকের চাকরি যাক, এটা আমরা চাইনি। এখনো চাই না, ভবিষ্যতেও চাইবো না।’’

শ্রমিক-কর্মকর্তাদের পাওনা পরিশোধে কোনো ব্যাংকের কাছ থেকে টাকা পাওয়া যায়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘সব ব্যাংক প্রত্যাখ্যান করেছে যে স্যার আর টাকা দেওয়া যাবে না। সম্পূর্ণ হিসাব-নিকাশে যেটা এসেছে সেই টাকা আমরা জোগাড় করতে পেরেছি। ৫২৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকার প্রয়োজন হবে। সেই টাকার সংস্থান হয়েছে।’’

‘‘ইনশাআল্লাহ আগামী মাসের ৯ তারিখ (মার্চ) থেকে যার যার পাওনা পরিশোধ শুরু হবে। মধ্য রোজার আগেই যার যার পাওনা পেয়ে যাবেন।’’

একের পর এক কারখানা বন্ধ, বাড়ছে বেকারত্ব

বুধবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্ত তুলে ধরে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘‘সিদ্ধান্ত হয়েছে কারখানা পুরোপুরি বন্ধ থাকবে। এটা ইতোমধ্যে বন্ধ। ১৪টি প্রতিষ্ঠানে মোট শ্রমিক ৩১ হাজার ৬৬৯ জন এবং এক হাজার ৫৬৫ জন কর্মকর্তার পাওনা পরিশোধে ৫২৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা প্রয়োজন।’’

‘‘অর্থ বিভাগের ব্যয় খাত হতে ৩২৫ কোটি ৪৬ লাখ, আমার শ্রম মন্ত্রণালয় থেকে ঋণ হিসেবে দিচ্ছি ২০০ কোটি টাকা। পরবর্তীতে যখন প্রয়োজন হবে বাংলাদেশ ব্যাংক সেই টাকাটা রিপ্লেস করে দেবে।’’

শ্রম উপদেষ্টা বলেন, ‘এখন দুই পরাশক্তির মধ্যে টানাপড়েন চলছে। অতিসত্বর আমরা বিদেশের বিনিয়োগকারী পাবো, যারা এখানে বিনিয়োগ করবেন। কাজেই আপনারা হতাশ হওয়ার কথা কিন্তু হতাশ হবেন না। যারা থেকে যাবে তাদের কিছু না কিছু একটা গতি হবেই ইনশাআল্লাহ আশা করি।’’

বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের বন্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পর্কে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণের লক্ষ্যে একটি কমিটি করা হয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘‘এ কমিটির আহ্বায়ক প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়সংক্রান্ত বিশেষ দূত (উপদেষ্টা পদমর্যাদায়) লুৎফে সিদ্দিকী।’’

বেক্সিমকোর সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে উপদেষ্টা বলেন, ‘‘দয়া করে আপনারা এমন কিছু করবেন না, যে কারণে আমাদের কঠোর হতে হয়। আমরা কঠোর হতে চাই না। সঙ্গে আমি শ্রমিকদের অনুরোধ করবো, ওনারা যাতে পরিস্থিতিটা বোঝেন। আপনারা প্রত্যেকেই দেশপ্রেমিক। অনেকের সঙ্গে দেখা হয়েছে, অনেকের সঙ্গে দেখা হয়নি। যাদের সঙ্গে দেখা হয়নি, তাদের আমি সময়মতো ডাকবো। আপনার এমন কিছু করবেন না বা এমন কিছু করতে দেবেন না, যার কারণে আবার সমস্যার সৃষ্টি হয়।’’

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এনএইচ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইন ড স ট র য কর মকর ত উপদ ষ ট পর শ ধ ৪৬ ল খ আপন র

এছাড়াও পড়ুন:

তাইওয়ান ঘিরে চীনের সামরিক মহড়া

তাইওয়ানের উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব উপকূলে গতকাল মঙ্গলবার বড় ধরনের সামরিক মহড়া করেছে চীন। বিচ্ছিন্নতাবাদের বিরুদ্ধে কঠোর সতর্কীকরণ হিসেবে এ মহড়া চালানো হয়। একই সময় তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং তেকে ‘পরজীবী’ বলে অভিহিত করা হয়। চীনের এ মহড়ার জবাব দিতে তাইওয়ানের পক্ষ থেকে পাল্টা যুদ্ধজাহাজ পাঠানো হয়।

গত বছরেও তাইওয়ান ঘিরে বড় ধরনের সামরিক মহড়া চালিয়েছিল চীন; কিন্তু

এবার গত বছরের মতো আনুষ্ঠানিক নাম দিয়ে মহড়া করা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথের এশিয়া সফরের আগে ও লাইয়ের কথার জবাব দিতে এ মহড়া করেছে চীন। উল্লেখ্য, তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চীনের কট্টর সমালোচক হিসেবে পরিচিত।

সামরিক মহড়ার অংশ হিসেবে চীন যুদ্ধজাহাজের পাশাপাশি, বিমানবাহিনী ও স্থলবাহিনীর সমন্বয়ে মহড়া করে। এ মহড়ায় তাইওয়ানকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে ফেলার বিষয়টি যুক্ত ছিল। এ ছাড়া ভূমি ও সাগর থেকে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষার বিষয়টি যুক্ত করে বেইজিং। তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, চীনের শানডং এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার গ্রুপ সোমবার তাদের নজরদারি এলাকায় প্রবেশ করে। তাইওয়ানও পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে সামরিক বিমান ও জাহাজ মোতায়েন এবং ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা সক্রিয় করেছে।

তাইওয়ানকে নিজেদের ভূখণ্ড হিসেবে দাবি করে চীন। সম্প্রতি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তে চীনকে বিদেশি শত্রু শক্তি বলে আখ্যায়িত করেছে। এতে ক্ষুব্ধ হয় চীন।

সামরিক মহড়ার ঘোষণার সঙ্গে প্রকাশিত এক ভিডিওতে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টকে কার্টুন আকৃতির একটি পোকামাকড় হিসেবে দেখানো হয়েছে, যাকে চপস্টিক দিয়ে ধরে রাখা হয়েছে এবং নিচে জ্বলন্ত তাইওয়ান।

ভিডিওতে লেখা ছিল, তাইওয়ানকে বিষাক্ত করছে এই পরজীবী। পরজীবী দ্বীপটিকে ফাঁপা করে দিচ্ছে। পরজীবী নিজ ধ্বংসের পথ তৈরি করছে।

তাইওয়ান সরকার এই মহড়ার নিন্দা জানিয়েছে। প্রেসিডেন্টের কার্যালয় বলেছে, চীন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সমস্যা সৃষ্টিকারী। তাইওয়ান নিজেদের প্রতিরক্ষার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী। তাইওয়ান সরকার বেইজিংয়ের সার্বভৌমত্বের দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেছে,

কেবল দ্বীপের জনগণই তাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারে।

তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, চীনা কমিউনিস্ট পার্টি তাইওয়ান ও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে সামরিক তৎপরতা বাড়িয়েছে। তাইওয়ানের দুই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, ১০টির বেশি চীনা সামরিক জাহাজ তাইওয়ানের ২৪ নটিক্যাল মাইল (৪৪ কিলোমিটার)–সংলগ্ন অঞ্চলের কাছাকাছি চলে এসেছিল এবং তাইওয়ান প্রতিক্রিয়া জানাতে নিজস্ব যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়েছে।

তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা চীনা সামরিক বাহিনীর দ্বারা কোনো সরাসরি গুলিবর্ষণের ঘটনা শনাক্ত করতে পারেনি। তবে কমপক্ষে ৭১টি চীনা সামরিক বিমান এবং ১৩টি নৌবাহিনীর জাহাজ মহড়া করছে। মহড়া কখন শেষ হবে তা তারা জানে না।

তাইওয়ানের মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সান লি-ফ্যাং বলেছেন, তাইওয়ানের সশস্ত্র বাহিনী তাদের প্রস্তুতির স্তর বাড়িয়েছে যাতে চীন যুদ্ধের জন্য মহড়া এবং আমাদের ওপর হঠাৎ আক্রমণ চালাতে না পারে।

শীর্ষস্থানীয় তাইওয়ানের নিরাপত্তা কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, অভ্যন্তরীণ বিশ্লেষণ অনুযায়ী, চীন ওয়াশিংটনের সঙ্গে কোনো ‘পরিলক্ষিত সংঘর্ষ’ এড়াতে চায়। কারণ, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আসন্ন বাণিজ্য আলোচনার আগে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে চায় না।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই মহড়া জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং জাতীয় ঐক্য রক্ষার জন্য বৈধ এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ