চালু হচ্ছে থার্ড টার্মিনাল, আগ্রহ বাড়ছে আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্সগুলোর
Published: 27th, February 2025 GMT
চলতি বছরের শেষ দিকে চালু হচ্ছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল। বর্তমানে বিমানবন্দরটি ৮০ লাখ মানুষকে সেবা দিচ্ছে। টার্মিনালটি চালু হলে যাত্রী সেবার সক্ষমতা দাঁড়াবে ১ কোটি ২০ লাখ। বাড়বে ফ্লাইট চলাচল। এদিকে থার্ড টার্মিনাল চালু হওয়াকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ হয়ে ফ্লাইট পরিচালনার আগ্রহ বাড়ছে আন্তর্জাতিক উড়োজাহাজ সংস্থাগুলো।
বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা জানান, থার্ড টার্মিনাল চালুর বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে চুক্তির প্রক্রিয়া চলছে। এছাড়া টার্মিনাল চালু হওয়াকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ থেকে ফ্লাইট পরিচালনা করার আগ্রহ বাড়ছে আন্তর্জাতিক উড়োজাহাজ সংস্থাগুলোর। যারা ইতোমধ্যে বাংলাদেশ থেকে ফ্লাইট পরিচালনা করছে, তারা অতিরিক্ত ফ্রিকোয়েন্সির আবেদন করছে। আর অন্যান্যরা আবেদন করছে ফ্লাইট চালুর। এরই মধ্যে ইথুপিয়া এয়ারলাইন্স স্বল্প পরিসরে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে আরও বেশ কয়েকটি।
এ বিষয়ে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল মো.
তিনি বলেন, এ টার্মিনাল চালু হওয়াকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে ঢাকা থেকে ফ্লাইট পরিচালন করার আগ্রহ বাড়ছে আন্তর্জাতিক উড়োজাহাজ সংস্থাগুলোর। এছাড়া শিগগির চালু হচ্ছে ঢাকা–করাচি সরাসরি ফ্লাইট। এ রুটে ফ্লাইট পরিচালনার জন্য আবেদন করেছে ফ্লাই জিন্নাহ নামে পাকিস্তানের বেসরকারি একটি এয়ারলাইন্স। তাদের অনুমোদনও দেওয়া হয়েছে।
সূত্রে জানা যায়, সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার পর চালু হতে যাচ্ছে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা ঢাকা–করাচি রুটও। দুই দেশের ব্যবসায়িকসহ বিভিন্ন সম্পর্ক জোরদার করতে দীর্ঘ সাত বছর পর এ রুটে ফের সরাসরি ফ্লাইট চালুর প্রস্তুতি চলছে।
এর আগে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স ঢাকা–করাচি ফ্লাইট পরিচালনা করলেও এবার ফ্লাইট পরিচালনায় ফ্রিকোয়েন্সি চেয়েছে ‘ফ্লাই জিন্নাহ’ নামে পাকিস্তানের একটি বেসরকারি উড়োজাহাজ সংস্থা। বেবিচক তাদের অনুমোদনও দিয়েছে।
বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মো. কামরুল ইসলাম সমকালকে জানান, বর্তমান শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে ৩৮ এয়ারলাইন্স। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান সংস্থা ছাড়াও ৩টি বেসরকারি এয়ারলাইন্স রয়েছে। প্রতিদিন বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের ১৫০টি ফ্লাইট উড্ডয়ন-অবতরণ করে। এ সময় বিমানবন্দর থেকে আন্তর্জাতিক রুটে ৩০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন।
তিনি বলেন, প্রতিদিন আভ্যন্তরীণ রুটে ১৪০টির অধিক ফ্লাইট পরিচালনা করছে রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান ছাড়াও ইউএস বাংলা, নভোএয়ার ও এয়ার অ্যাস্ট্রাসহ দেশীয় ৩টি বেসরকারি এয়ারলাইন্স। প্রতিদিন আভ্যন্তরীণ রুটে অন্তত ৩৫ হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন।
কামরুল ইসলাম আরও বলেন, বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালকে কেন্দ্র বিভিন্ন গন্তব্যে সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনার আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে আসছে বিদেশি নামি-দামি বিভিন্ন এয়ারলাইন্স। এতে করে একদিকে যেমন রাজস্ব আয় বাড়ছে বেবিচকের, অন্যদিকে উন্নত যাত্রীসেবায় দক্ষ জনবলও গড়ে উঠছে বিমানবন্দরে।
বেসরকারি ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সর মহাব্যবস্থাপক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম সমকালকে জানান, দীর্ঘ কয়েক বছর বন্ধ থাকা ঢাকা–করাচি রুটে সরাসরি ফ্লাইট চালুর পরিকল্পনার বিষয়টি উন্নত করবে দুই দেশের এভিয়েশন খাত। এ ছাড়া দুই দেশের মধ্যে উন্নত হবে সম্পর্ক। ভবিষ্যতে এ রুটে ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনা রয়েছে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সেরও।
থার্ড টার্মিনালের সুযোগ–সুবিধা নিয়ে বেবিচকের প্রধান প্রকৌশলী মো. হাবিবুর রহমান সমকালকে বলেন, আধুনিক সুযোগ-সুবিধায় এ টার্মিনালে থাকছে ২৪টি বোর্ডিং ব্রিজ। তবে প্রকল্পের প্রথম ধাপে চালু করা হবে ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ। বহির্গমনের জন্য রাখা হবে ১১৫টি চেক-ইন কাউন্টার। এর মধ্যে থাকবে ১৫টি সেলফ সার্ভিস চেক-ইন কাউন্টার। ১০টি স্বয়ংক্রিয় পাসপোর্ট কন্ট্রোল কাউন্টারসহ ডিপারচার ইমিগ্রেশন কাউন্টার থাকবে ৬৬টি। আগমনীর ক্ষেত্রে ৫টি স্বয়ংক্রিয় চেক-ইন কাউন্টারসহ মোট ৫৯টি পাসপোর্ট ও ১৯টি চেক-ইন অ্যারাইভাল কাউন্টার। ১৬টি আগমনী ব্যাগেজ বেল্ট। অতিরিক্ত ওজনের ব্যাগেজের জন্য থাকবে চারটি পৃথক বেল্ট।
টার্মিনালের সঙ্গে থাকবে মাল্টিলেভেল কার পার্কিং ভবন। এতে ১ হাজার ৪৪টি গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে। ভবনের অভ্যন্তরে দক্ষিণ পাশে সর্বাধুনিক সুবিধা সম্পন্ন ভিভিআইপি স্পেস থাকবে। ভবনের সঙ্গে ভূ-গর্ভস্থ সুড়ঙ্গ পথ ও উড়ালসেতু নির্মাণ হবে। এর মাধ্যমে মেট্রোরেল ও ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সংযোগ থাকবে। এ ছাড়া থাকছে আন্তর্জাতিক মানের অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা।
প্রসঙ্গত, শাহজালাল বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের নির্মাণ শুরু হয় ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে। এর আগে ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায়।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ফ ল ইট চ শ হজ ল ল ব সরক র চ ক ইন দ র কর ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
বিশ্বের সবচেয়ে বড় ডিজিটাল ক্যামেরা ধারণ করবে মহাবিশ্বের ভিডিও
নতুন ভেরা রুবিন অবজারভেটরিতে মহাবিশ্বের টাইম-ল্যাপস রেকর্ড করতে বিশ্বের বৃহত্তম ডিজিটাল ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। একটি গাড়ির আকারের লার্জ সিনপটিক সার্ভে টেলিস্কোপ (এলএসএসটি) ক্যামেরাটি সম্প্রতি ভেরা সি রুবিন অবজারভেটরিতে বসানো হয়েছে। এটি এখন পর্যন্ত নির্মিত সবচেয়ে বড় ডিজিটাল ক্যামেরা। আগামী এক দশক ধরে দক্ষিণ গোলার্ধের আকাশের বিশদ ছবি তুলতে ব্যবহার করা হবে এই ক্যামেরা।
যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব এনার্জি অফিস অব সায়েন্সের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক হ্যারিয়েট কুং জানান, টেলিস্কোপে এলএসএসটি ক্যামেরা ইনস্টল করার ঘটনাটি বিজ্ঞান এবং প্রকৌশলের জন্য বেশ চমকপ্রদ ঘটনা। টেলিস্কোপটি ইউএস ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন ও ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব এনার্জি অফিস অব সায়েন্সে অর্থায়নে তৈরি করা হয়েছে। টেলিস্কোপের নামকরণ করা হয়েছে ডক্টর ভেরা সি রুবিনের নামে। এই আমেরিকান জ্যোতির্বিজ্ঞানী ডার্ক ম্যাটার নিয়ে গবেষণার জন্য আলোচিত। তিনি তাঁর সহকর্মী কেন্ট ফোর্ডের সঙ্গে অসংখ্য ছায়াপথ নিয়ে কাজ করেছেন। তাঁদের গবেষণায় দেখা যায়, বাইরের প্রান্তের নক্ষত্র কেন্দ্রের কাছাকাছি থাকা তারার মতোই দ্রুতগতিতে চলেছে। এটি অস্বাভাবিক ছিল, কারণ নিউটনীয় পদার্থবিজ্ঞান ও কেপলারের গ্রহের গতির নিয়ম অনুসারে মহাকর্ষীয় সিস্টেমের কেন্দ্র থেকে দূরে থাকা বস্তু দুর্বল মহাকর্ষীয় টানের কারণে আরও ধীরে ধীরে প্রদক্ষিণ করার কথা।
রুবিন টেলিস্কোপ অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে ডার্ক এনার্জি ও ডার্ক ম্যাটার অনুসন্ধান করবে। অত্যাধুনিক মিরর ডিজাইন, অত্যন্ত সংবেদনশীল ক্যামেরার কারণে টেলিস্কোপটি দ্রুত জরিপ করা ও উন্নত কম্পিউটিং অবকাঠামোর মাধ্যমে দ্রুত কাজ করতে পারে। কয়েক রাত ধরে এটি সমগ্র আকাশ জরিপ করবে। একটি আলট্রা-ওয়াইড ও হাই-ডেফিনিশনের মহাবিশ্বের টাইম-ল্যাপস রেকর্ড তৈরি করবে। প্রতিটি ছবি এত বড় হবে যে তা প্রদর্শনের জন্য ৪০০টি হাই-ডেফিনিশন টিভি পর্দার প্রয়োজন হবে। টেলিস্কোপের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, এই অনন্য রেকর্ড ধরা ভিডিও রাতের আকাশকে জীবন্ত করে তুলবে। নতুন আবিষ্কারের সুযোগ করে দেবে। গ্রহাণু, ধূমকেতু, স্পন্দিত নক্ষত্র ও সুপারনোভা বিস্ফোরণের তথ্য জানাবে।
এই এলএসএসটি ক্যামেরাকে একটি ইঞ্জিনিয়ারিং বিস্ময় বলা হচ্ছে। এটির ইনস্টলেশন বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। রুবিন অবজারভেটরির মেকানিক্যাল গ্রুপ লিড ফ্রেডি মুওজ বলেন, সিমোনি টেলিস্কোপে এই ক্যামেরা মাউন্ট করা একটি চ্যালেঞ্জের কাজ ছিল। আমাদের টিমওয়ার্কের মাধ্যমে নির্ভুলতার সঙ্গে কাজটি সম্পন্ন হয়েছে। আগামী কয়েক সপ্তাহে এই ক্যামেরা পরীক্ষা করা হবে।
সূত্র: স্পেস ডটকম