ঢাকা ও গাজীপুরে অভিযান চালিয়ে ২২ ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার: র্যাব
Published: 27th, February 2025 GMT
ঢাকা ও গাজীপুরে গতকাল বুধবার রাতে পৃথক অভিযান চালিয়ে ২২ জন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করেছে বলে জানিয়েছে র্যাব। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে ১৫টি ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন রাজু (২৯), মো. রাশেদ (৪৮), মো. হৃদয় (২৩), মো. রনি (২৬), মো. নুরুজ্জামান (৩৬), সিফাত হোসেন (১৯) ও মো. রায়হান (১৮), মো.
আজ বৃহস্পতিবার র্যাব-১০–এর পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে সারা দেশে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি বেড়েছে। এ অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে র্যাব–১০ নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে কিছু দুষ্কৃতকারী, স্বার্থান্বেষী মহল হামলা ও নাশকতার মাধ্যমে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এসব অপরাধ দমনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে র্যাব-১০–এর আভিযানিক দল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করছে।
এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল রাত ৯টা থেকে দিবাগত রাত একটা পর্যন্ত র্যাব-১০–এর লালবাগ ক্যাম্পের একটি আভিযানিক দল পুরান ঢাকার লালবাগ সেকশন এলাকাসহ আশপাশে অভিযান চালায়। এ সময় তাঁরা সাত ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করেন। তাঁদের কাছ থেকে ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত তিনটি সুইচ গিয়ার ও চারটি ছুরি জব্দ করা হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র্যাব কর্মকর্তাদের বলেছেন, গ্রেপ্তার আসামিরা কিছুদিন ধরে লালবাগসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় পথচারীদের ধারালো চাকুর ভয় দেখিয়ে টাকাপয়সা, স্বর্ণালংকার, মুঠোফোনসহ সম্পদ ছিনতাই করে আসছিল।
র্যাব-১–এর অপর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে র্যাব-১–এর গোয়েন্দা অনুসন্ধানে রাজধানীর বিমানবন্দর, বনানী, রূপগঞ্জ, আবদুল্লাহপুর, টঙ্গী এবং গাজীপুরে ছিনতাইকারী, অজ্ঞান পার্টি ও কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা বেড়েছে বলে তথ্য পাওয়া যায়। ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল, গাড়িতে করে টাকাপয়সা, মুঠোফোন ও স্বর্ণালংকার ছিনতাই করে জনজীবন অতিষ্ঠ করে তুলছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে র্যাব-১ গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে এবং রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত সংঘবদ্ধ চক্রকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়।
র্যাবের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গতকাল দিবাগত রাত পৌনে ১২টার দিকে র্যাব-১–এর আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে ঢাকা ও গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্রের কতিপয় সক্রিয় সদস্য ছিনতাই করার জন্য অবস্থান করছে। ওই তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-১–এর কয়েকটি আভিযানিক দল গুলশানের মাদানী অ্যাভিনিউ এলাকা থেকে গাজীপুর সদর থানার চতরবাজার এলাকা এবং বিমানবন্দর থানার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পূর্ব পাশে ফুটওভার ব্রিজসংলগ্ন পাকা রাস্তার ওপর পৃথক বিশেষ অভিযান চালিয়ে ছিনতাইকারী দলের নেতা ইমনসহ (২৪) ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত একটি সুইচ গিয়ার চাকু, ছয়টি ফোল্ডিং চাকু ও একটি খুর উদ্ধার করা হয়।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ব ভ ন ন এল ক য গ র প ত র কর য ব ১ এর য ব ১০
এছাড়াও পড়ুন:
ছিনতাইকারী হলেই কি পিটিয়ে মারা যাবে
বেশ কিছু ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সেগুলোতে ছিনতাইয়ের অভিযোগে ধরা পড়া ব্যক্তিদের নির্মমভাবে পেটানোর দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। প্রচুর মানুষ এতে উল্লাস করছেন এবং মারধরে অংশগ্রহণকারী মানুষের সংখ্যাও সেখানে কম নয়। সেসব ভিডিওর নিচে যেসব মন্তব্য আছে তাতেও প্রচুর মানুষের উল্লাস লক্ষণীয়। অর্থাৎ, একটা বড় অংশের মানুষ এই ঘটনায় খুশি এবং তাঁরা মনে করেন ছিনতাইকারীদের এভাবেই শাস্তি দেওয়া উচিত। এটাই ‘উচিত’ বিচার।
এর আগে কয়েক দিন ধরে রাজধানীসহ সারা দেশে ছিনতাই ও ডাকাতির ভিডিও আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখতে পেয়েছি। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে মানুষ ভীষণ উদ্বিগ্ন। সারা দেশে এমন ভয়ের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে নারীরা সন্ধ্যার পর পারতপক্ষে ঘর থেকে বের হতে চাইছেন না।
যদিও আমাদের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের থেকে অনেক উন্নত হয়েছে এবং এটা আরও উন্নত হতে থাকবে।’ হয়তো তাঁর কথাই ঠিক। মানুষের উদ্বিগ্ন হওয়ারও হয়তো কারণ নেই। কিন্তু বাস্তবতা হলো মানুষ এই কথা অবাস্তব বলে ধরে নিয়ে তাঁর ওপর আস্থা রাখতে পারছে না। মানুষ ঠিকই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। কদিন আগে চলন্ত বাসে তিন ঘণ্টা ধরে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে।
কিশোরগঞ্জের ভৈরবের অদূরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ভুয়া পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে ডাকাতি হয়েছে। এমনকি গাজীপুর জেলায় প্রকাশ্যে ২০–২৫ জন মানুষ রামদা নিয়ে বাজারে স্লোগান দিতে দিতে চাঁদাবাজি করছে, এমন দৃশ্যও দেখা যাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এসব প্রকাশ্য চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা আমরা জানি না। ফলে, উদ্বেগ কমছে না।
এরপরও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা যখন দাবি করেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ‘আগের চেয়ে উন্নতি হয়েছে’ তখন আর কীই-বা বলার থাকতে পারে! যদিও ‘গত ছয় মাসে ডাকাতি ও দস্যুতার ঘটনায় মামলা হয়েছে ১ হাজার ১৪৫টি, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি।’ (‘অপরাধীরা বেপরোয়া, আতঙ্কে মানুষ’, প্রথম আলো, ২৫ ফেব্রুয়ারি) এই পরিসংখ্যান পুলিশের।
আমরা জানি, ঝামেলার ভয়ে ছোটখাটো চুরি-ছিনতাইয়ের অভিযোগ জানাতে সাধারণ লোক অনেক সময় থানায় যায় না। তাই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির প্রকৃত চিত্রটি এর চেয়ে অনেক খারাপ হওয়ারই কথা।
এর আগে আওয়ামী লীগ সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার জন্য বিএনপিকে দায়ী করত, সেই ধারাবাহিকতায় আমাদের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাও খারাপ পরিস্থিতির জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করেছেন। অনেকেই দেশে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইতে পারে সেটা অস্বাভাবিকও নয়। নানা লোকের নানা স্বার্থ থাকবে। কিন্তু স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাজই হলো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ঠিক রাখা। কাউকে দোষ দিয়ে নিজের দায়মুক্তির সুযোগ নেই এখানে।
আরও পড়ুনবাস ডাকাতিতে পড়ার অভিজ্ঞতা ও কিছু সমাধান২০ ঘণ্টা আগেস্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা রাত তিনটায় সংবাদ সম্মেলন ডেকে সাধারণ মানুষকে বোঝাতে চেয়েছেন, তাঁরা শুধু দিনেই কাজ করেন না, রাতেও কাজ করেন। কিন্তু মানুষ ‘কাজ’ দেখার চেয়ে কাজের ফলাফল দেখতে বেশি আগ্রহী। আমাদের দেশে দায়িত্বপ্রাপ্তরা সাধারণত নিজেদের কাজ নিয়ে সর্বদা খুশি থাকেন, দায় নেওয়ার সংস্কৃতি এখানে গড়ে ওঠেনি। ফলে এসব গালভরা কথার চর্চাই যে চলতে থাকবে ভবিষ্যতে—এমনটা মনে করাই সংগত। যাহোক, দেশের মানুষ এ মুহূর্তে নিরাপত্তা নিয়ে ভীষণ শঙ্কায় আছে, এটা হলো বাস্তবতা।
এমন বাস্তবতায় মানুষের মধ্যে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। জায়গায় জায়গায় ‘মব’ তৈরি হয় এবং ‘গণপিটুনির’ মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ে সাধারণ মানুষ। তখন দেখা যায় অনেক নিরীহ মানুষও আক্রান্ত হন। ২০১৯ সালের ১৮ থেকে ২০ জুলাই ছেলেধরা সন্দেহে তিনজন পিটিয়ে হত্যা করা হয়। তার মধ্যে রাজধানীর বাড্ডায় তাসলিমা বেগম রেনু (৪০) নামের এক নারীকেও পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। তখনো দেশের মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাসংকট তৈরি হয়েছিল এবং সারা দেশে ছেলেধরা আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল। এবারের আতঙ্কের নাম ‘ছিনতাইকারী’।
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দেশের পুলিশের দুর্বলতার সুযোগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়ে—এটা সত্য। কিন্তু প্রায় সাত মাস পার হওয়ার পরও পরিস্থিতি ঠিক না হওয়াটা কোনো কাজের কথা নয়। ৫ আগস্টের পর থানা থেকে লুট হওয়া সব অস্ত্র উদ্ধার করা যায়নি। এই বিপুল পরিমাণ অস্ত্র নিয়ে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড জড়িত হচ্ছে অপরাধীরা। পুলিশের উচিত হবে এই অস্ত্র উদ্ধারে গুরুত্ব দেওয়া। থানা লুট করে কারা অস্ত্র নিয়েছে, সেটা বের করতে তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্য নিতে হবে। এতসংখ্যক অস্ত্র অপরাধীদের হাতে রেখে দেশে স্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করা কঠিন হবে।
সে ক্ষেত্রে পুলিশ যেন ঠিকঠাক কাজ করে, আইনের ফাঁক গলে যাতে প্রকৃত অপরাধীরা ছাড়া পেতে না পারে, আমাদের সেই ব্যবস্থা করতে হবে। পুলিশের জবাবদিহি নিশ্চিত করার পাশাপাশি আইনকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। সেটাই হবে টেকসই ব্যবস্থা। সেটা না করে রাস্তায় ছিনতাইকারীদের পিটিয়ে মেরে ফেলা কোনো সমাধান হতে পারে না।আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর যখন মানুষের আস্থা কমে যায়, তখনই দেশে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি হয়। এমন অবস্থার সুযোগ নিয়ে শত্রুতার জেরে রাস্তায় ‘মব’ তৈরি করা সহজ হয় এবং অনেকেই সেই সুযোগ নেন।
প্রশ্ন হলো—ছিনতাইকারী বা অপরাধী হলেই কি এভাবে মেরে ফেলা যাবে অথবা পেটানো যাবে? এককথায় এর উত্তর—‘না’। কোনো অবস্থাতেই সাধারণ মানুষ আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারে না। এটা সম্পূর্ণ বেআইনি। বিচারের জন্য দেশে নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ আছে। আইন প্রয়োগ করার জন্যও সংস্থা আছে। কাজগুলো তাদের। কোনোভাবেই সাধারণ মানুষের নয়। অপরাধী ধরা পড়লে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দিতে হবে, কোনো অবস্থাতেই পেটানো বা পিটিয়ে মেরে ফেলা যাবে না।
অনেকেই হয়তো বলবেন পুলিশ ঘুষ খেয়ে অপরাধীদের ছেড়ে দেয়। আইনের ফাঁকফোকর গলে বাইরে এসে অপরাধীরা আবার একই অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। কথাগুলো অনেক ক্ষেত্রেই সত্য।
সে ক্ষেত্রে পুলিশ যেন ঠিকঠাক কাজ করে, আইনের ফাঁক গলে যাতে প্রকৃত অপরাধীরা ছাড়া পেতে না পারে, আমাদের সেই ব্যবস্থা করতে হবে। পুলিশের জবাবদিহি নিশ্চিত করার পাশাপাশি আইনকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। সেটাই হবে টেকসই ব্যবস্থা। সেটা না করে রাস্তায় ছিনতাইকারীদের পিটিয়ে মেরে ফেলা কোনো সমাধান হতে পারে না। সভ্য রাষ্ট্র হতে হলে আগে নিজেদের সভ্য হতে হবে। আত্মরক্ষার জন্য যতটুকু বল প্রয়োগ করা উচিত ততটুকু করা মানুষের অধিকার। কিন্তু অপরাধীদের বেঁধে প্রকাশ্যে পিটিয়ে মেরে ফেলা বা মব তৈরি করা বন্ধ করতে হবে।
মেহেদি রাসেল কবি ও প্রাবন্ধিক
[email protected]