বিরোধীদের আপত্তি অগ্রাহ্য করেই ভারতে ওয়াক্ফ বিল পেশ হচ্ছে
Published: 27th, February 2025 GMT
বিরোধীদের ওজর–আপত্তি ও তাঁদের আনা কোনো সংশোধনী গ্রহণ না করেই বিজেপির নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার ওয়াক্ফ (সংশোধনী) বিল পেশ করতে চলেছে। সংসদের বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্বে তা পেশ করা হবে। খসড়া বিলে সরকারপক্ষের আনা ১৪টি সংশোধনী কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অনুমোদন পেয়েছে।
এই বিল পাস হয়ে গেলে দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা ওয়াক্ফ সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনায় সরকারের ভূমিকা থাকবে। গত বছরের আগস্টে এই বিল সংসদে পেশ করা হয়েছিল। বিরোধীরা তখনই আপত্তি জানিয়ে বলেছিলেন, বিলটি অসাংবিধানিক ও মুসলমানদের ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের শামিল।
বিরোধীদের আপত্তির মুখে আরও আলোচনার জন্য সরকার বিলটি যুগ্ম সংসদীয় কমিটির (জেপিসি) কাছে পাঠায়। বিজেপি সাংসদ জগদম্বিকা পাল সেই কমিটির নেতা মনোনীত হয়েছিলেন। জেপিসির বৈঠকে সরকারপক্ষ থেকে ২৩টি ও বিরোধীদের পক্ষে ৪৪টি সংশোধনী জমা পড়েছিল। আলোচনার পর ভোটাভুটিতে (জেপিসিতে সরকারপক্ষের সদস্যসংখ্যা সব সময় বেশি থাকে) বিরোধীদের সব সংশোধনী খারিজ হয়ে যায়। সরকারপক্ষের সংশোধনীগুলো থেকে ১৪টি গৃহীত হয়। মন্ত্রিসভা সেগুলোই অনুমোদন করেছে।
জেপিসির প্রতিবেদনটি বাজেট অধিবেশনের প্রথম দফায় গত ১৩ ফেব্রুয়ারি সংসদে পেশ করা হয়েছিল। রাজ্যসভার বিরোধী নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে তখন অভিযোগ করেছিলেন, বিরোধীদের আপত্তিগুলো বা ‘নোট অব ডিসেন্ট’ প্রতিবেদনে রাখা হয়নি। সংসদীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু অবশ্য সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন।
সংসদের বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হচ্ছে ১০ মার্চ। চলবে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত। ওই সময় বিলটি সংসদের উভয় কক্ষে পাস হলে ও রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পেলে ওয়াক্ফ আইনের নতুন নাম হবে ‘ইউনাইটেড ওয়াক্ফ ম্যানেজমেন্ট, এমপাওয়ারমেন্ট, ইফিশিয়েন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যাক্ট’।
মন্ত্রিসভা অনুমোদিত সরকারপক্ষের সংশোধনীগুলোতে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় ও রাজ্য পর্যায়ে ওয়াক্ফ বোর্ডে দুজন করে নারী সদস্য রাখতে হবে। মুসলিমদের মধ্যে অনগ্রসর সম্প্রদায়ের একজন সদস্য রাখতে হবে রাজ্য ওয়াক্ফ বোর্ডে। ওয়াক্ফ সম্পত্তির নিবন্ধন হবে অনলাইন মারফত। ওয়াক্ফ সম্পত্তি থেকে প্রাপ্ত আয়ের একটা অংশ বিধবা ও বিবাহবিচ্ছিন্ন নারী এবং অনাথদের জন্য খরচ করতে হবে। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য স্তরে ওয়াক্ফ বোর্ডে একজন করে অমুসলিম প্রতিনিধি রাখা যাবে।
ওয়াক্ফ সম্পত্তির অর্থ সেসব স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি, যা দান করে দেওয়া হয়েছে। এই বোর্ড গোটা দেশে ৯ দশমিক ৪০ লাখ একরজুড়ে ৮ দশমিক ৭০ লাখ সম্পত্তি নিয়ন্ত্রণ করে, যার আনুমানিক দাম ১ দশমিক ২০ লাখ কোটি রুপি। ওয়াক্ফ বোর্ডের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় বেআইনিভাবে জমি দখল ও ক্ষমতার অপপ্রয়োগের অভিযোগ উঠেছে। গত দুই বছরে দেশের বিভিন্ন হাইকোর্টে ওয়াক্ফসংক্রান্ত ১২০টি আবেদন জমা পড়ে। এরপর কেন্দ্রীয় সরকার আইন সংশোধনে উদ্যোগী হয়।
বিরোধীদের আপত্তির অন্য অনেক কারণের মধ্যে একটি হলো—অন্য ধর্মাবলম্বীদের নিয়ন্ত্রক বোর্ডে যখন ভিন্নধর্মাবলম্বীদের কোনো স্থান নেই, তখন ওয়াক্ফ বোর্ডে অমুসলিমকে রাখার সিদ্ধান্ত কেন? মুসলমান সমাজের দাবি, এই বিল আইন হলে তা অসাংবিধানিক বলে গণ্য হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব র ধ দ র আপত ত সরক রপক ষ র মন ত র অন ম দ প শ কর সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
জামায়াতে ইসলামীর ব্যানারে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিন
হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশে জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘আপনারা প্রস্তুতি গ্রহণ করুন। নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে জামায়াতে ইসলামীর ব্যানারে নির্বাচনে অংশ নেবেন। জামায়াতের ব্যানারে নির্বাচনে অংশ নিলে আপনাদের স্বাগত জানানো হবে।’
বুধবার রাজধানীর ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার উদ্যোগে ভিন্নধর্মাবলম্বীদের নিয়ে প্রীতি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথাগুলো বলেন শফিকুর রহমান। ভিন্নধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমরা আপনাদের ভালোবাসা চাই। অতীতে যাঁরা নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশ ছেড়েছেন, তাঁদেরকেও আমরা ফিরিয়ে আনতে চাই।’
ধর্ম ও পেশার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা পরিচয়কে বৈষম্য উল্লেখ করে জামায়াতের আমির বলেন, ‘এই সামাজিক পার্থক্যকে আমরা ঘৃণা করি। জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় গেলে ভিন্নধর্মাবলম্বীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাকে পবিত্র দায়িত্ব হিসেবে নেবে। আমরা ওই সংস্কৃতির বিকাশ চাই, যেখানে কোনো মন্দির, চার্চ ও মঠ পাহারা দিতে হবে না।’
যেকোনো ‘মবের’ বিরুদ্ধে জামায়াতের অবস্থান উল্লেখ করে দলটির আমির বলেন, ‘সম্প্রতি দেশে কিছু ভাঙচুরের ঘটনার বিরোধিতা করায় অনেকে আমার বিরুদ্ধে খেপে যান। কিন্তু আমি কোনো মবের পক্ষে নই। কেউ অপরাধী হলে তার জন্য আইন ও আদালত আছে। সেখানে তার বিচার হবে।’
প্রীতি সমাবেশে বিভিন্ন ধর্মের সদস্যরা নিজেদের দাবি তুলে ধরেন। জামায়াতের পক্ষ থেকে উত্থাপিত দাবি যাচাই–বাছাই করে বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন শফিকুর রহমান।
জামায়াতে ইসলামীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা বলেন, ‘আমাদের প্রাণের আট দফা দাবি জামায়াতে ইসলামী তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে সংযোজন করবে, সেই প্রত্যাশা রাখছি। আমরা ৫৩ বছর ধরে বঞ্চিত। যত বঞ্চনা কিংবা নির্যাতন হয়েছে, আমরা কোনো ঘটনার বিচার পাইনি। আপনারা সেই বিচার নিশ্চিত করুন।’
হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক বলেন, ‘১৯৭১ সালে আমরা হিন্দুদের ওপর সংঘটিত সকল নির্যাতন ভুলে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সেটা হয়নি। বাংলাদেশে হিন্দুরা ধর্মের দিক দিয়ে হলেও সংখ্যায় কম। ফলে আমরা শঙ্কায় থাকি।’
সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কাছে সেই ১৯৫৪ সাল থেকে জিম্মি হয়েছিলাম। এবার আমরা সেই জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পেয়েছি। তাই সংসদে আমরা নিজেরা নিজেদের কথা বলতে চাই।’
জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির মো. নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি আবদুল মান্নান। প্রীতি সমাবেশ সঞ্চালনা করেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য শফিকুল ইসলাম মাসুদ।
সমাবেশে অংশ নেন একুশে পদকপ্রাপ্ত অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর, সিদ্ধেশ্বরী সর্বজনীন পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি নিবাস চন্দ্র মাঝি, বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের সহসভাপতি বদন্ত স্বরুপানন্দ ভিক্ষু, ইমানুয়েল ব্যাপ্টিস্ট চার্চের পাস্তর তপন রায়, হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব সভাপতি দিনবন্ধু রায়, শুভাশীষ বিশ্বাস, লিটন কোমল বড়ুয়াসহ প্রমুখ।