ইসরায়েলের হামলায় পশ্চিম তীরে ৫ সপ্তাহে ৫০ ফিলিস্তিনি নিহত: জাতিসংঘ
Published: 27th, February 2025 GMT
ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর অঞ্চলে গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে সেনা অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। এ অভিযানে অঞ্চলটিতে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন অন্তত ৫০ জন এবং বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ৪০ হাজার ফিলিস্তিনি।
বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টেফান ডুজারিক এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, আনরোয়া (ইউ এন রিলিফ এজেন্সি ফর প্যালেস্টাইনিয়ান রেফিউজিস) মহাপরিচালক ফিলিপ ল্যাজারিনি’র একটি বক্তব্য আজ আমি আপনাদের জানাচ্ছি। সম্প্রতি তিনি আমাদের জানিয়েছেন, গত ৫ সপ্তাহ ধরে পশ্চিম তীরে অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী এবং এ অভিযানে এ পর্যন্ত অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছেন এবং বাস্তুচ্যুত হয়েছেন আরও ৪০ হাজার ফিলিস্তিনি। এছাড়া পশ্চিমতীরের অনেক সরকারি স্থাপনা, বাড়িঘর, রাস্তাঘাট বুলডোজার দিয়ে ধ্বংসও করা হয়েছে।
জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র বলেন, যে ৪০ হাজার ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, তাদের একটি বড় অংশই থাকতেন শরণার্থী শিবিরে। গত ৫ সপ্তাহে কয়েকটি শরণার্থী শিবির ধ্বংস করেছে আইডিএফ। মঙ্গলবার নাবালুস শহরে টানা ১৪ ঘণ্টা ধরে অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েলি সেনারা। আমরা এখনও জানি না সেখানে কতজন নিহত বা আহত হয়েছেন। কারণ, এখনও নাবালুসের সমস্ত চেকপয়েন্ট বন্ধ রেখেছে আইডিএফ।
ইসরায়েলের সরকার এবং আইডিএফের উদ্দেশে ডুজারিক বলেন, আমরা আগেও বলেছি, আবারও বলছি— মানুষের জীবন রক্ষা করা সবচেয়ে জরুরি এবং নিতান্ত প্রয়োজন না হলে কখনও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করা ন্যায্য নয়।
২০২৩ সালে গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলের ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালানোর পর গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে আইডিএফ। একই সময় পশ্চিম তীরেও শুরু হয় অভিযান, তবে তা গাজার মতো ব্যাপক আকারের ছিল না।
কিন্তু তারপরও ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে গত ১৫ মাসে পশ্চিম তীরে নিহত হয়েছেন ৯২৩ জন ফিলিস্তিনি এবং আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৭ হাজার জন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল ইসর য় ল র ত হয় ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
সড়কে রক্তের দাগ
ঈদের সময় সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে যায়। দুর্ঘটনায় প্রাণহানি সংক্রান্ত সংবাদপত্রের সাম্প্রতিক খবরগুলো বড় বেদনার। স্বাভাবিক সময়েই অনেক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। শহীদ রওশনের মায়ের চোখের পানি এখনও শুকায়নি। ২০১৮ সালের সেই জুলাইয়ের সকালে তিনি তাঁর ছেলেকে স্কুলে পাঠিয়েছিলেন স্বপ্ন নিয়ে। ফিরে পেয়েছিলেন রক্তাক্ত দেহ। একটি বেপরোয়া বাসের চাকায় শুধু একটি প্রাণই নয়, একটি পরিবারের সব স্বপ্ন চূর্ণ হয়ে গিয়েছিল।
প্রতিদিন বাংলাদেশের সড়কে গড়ে ২২ জন প্রাণ হারান। প্রতিটি মৃত্যুর পেছনে রয়েছে একটি পরিবারের অশ্রু আর অপূরণীয় ক্ষতি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে, গত দশকে আমরা হারিয়েছি ৭৫ হাজার প্রাণ, যা একটি ছোট শহরের জনসংখ্যার সমান।
আমাদের সড়কগুলো যেন মৃত্যুর মিছিল চলার উন্মুক্ত প্রান্তর। প্রতি ১০০টি গাড়ির মধ্যে ৩৫টি মেয়াদোত্তীর্ণ। ৪০ শতাংশ চালক বিনা লাইসেন্সে গাড়ি চালায়। এর পেছনে রয়েছে জটিল নেটওয়ার্ক– দুর্নীতি, অদক্ষতা। সর্বোপরি আমাদের সামাজিক অবক্ষয়।
২০১৮ সালের ছাত্র আন্দোলন ছিল এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে এক জোরালো প্রতিবাদ। কিন্তু ছয় বছর পর আমরা কতটুকু এগিয়েছি? ডিজিটাল লাইসেন্সিং সিস্টেম চালু হয়েছে, কিন্তু অনেক আবেদনকারী এখনও
দালালের কারণে হয়রানির শিকার। আইন হয়েছে, কিন্তু প্রয়োগ দুর্বল।
আমাদের সমস্যা শুধু প্রযুক্তিগত নয়। এটি মূলত সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয়। প্রতিটি সড়ক দুর্ঘটনার পেছনে রয়েছে সামাজিক অবক্ষয়ের ছাপ। আমরা যেখানে দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন করছি, সেখানে আমাদের মানবিক মূল্যবোধ পিছিয়ে পড়ছে।
সরকারের নতুন উদ্যোগগুলোকে স্বাগত জানাই। পাশাপাশি আমাদের প্রয়োজন সামাজিক বিবেককে জাগ্রত করা। প্রত্যেক চালক যেন বুঝতে পারে, তার হাতে শুধু স্টিয়ারিং নয়, অসংখ্য প্রাণের দায়িত্বও রয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার গুরুত্বপূর্ণ। লাইসেন্স প্রদান থেকে শুরু করে গাড়ি পরিদর্শন– সর্বক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। সমন্বিত পরিকল্পনা নিতে হবে। শুধু সড়ক নয়, আমাদের প্রয়োজন একটি সমন্বিত যানবাহন ব্যবস্থা, যেখানে প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপত্তা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাবে।
২০১৮ সালের সেই নিরাপদ সড়ক আন্দোলন আমাদের দেখিয়েছিল– পরিবর্তন সম্ভব। আজ আমাদের প্রয়োজন সেই চেতনাকে আবার জাগিয়ে তোলা। প্রতিটি প্রাণ অমূল্য, প্রতিটি দুর্ঘটনা অপ্রয়োজনীয়। রওশনের মায়ের মতো চোখের জল যেন আর কোনো মাকে ফেলতে না হয়। সড়কগুলো যেন আর না হয় কবরস্থান। এটি শুধু একটি স্বপ্ন নয়, অধিকার। আসুন,সবাই মিলে গড়ে তুলি এমন এক বাংলাদেশ, যেখানে সড়ক দুর্ঘটনা হবে অতীতে ঘটে যাওয়া করুণ ইতিহাস, যা বর্তমানে নেই।
মো. রাইসুল ইসলাম: স্বেচ্ছাসেবক, চট্টগ্রাম