বেক্সিমকোর শ্রমিকদের পাওনা শোধ শুরু ৯ মার্চ, সরকারের খরচ ৫২৫ কোটি টাকা
Published: 27th, February 2025 GMT
আগামী ৯ মার্চ থেকে বেক্সিমকো গ্রুপের লে অফ করা প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ শুরু হবে। এ পাওনা পরিশোধে সরকারকে খরচ করতে হবে ৫২৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।
আজ বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন এ তথ্য জানান। আগামীকাল থেকে বেক্সিমকো শিল্প পার্কের ১৪টি প্রতিষ্ঠান পুরোপুরি বন্ধ ঘোষণা করা হবে বলে জানান তিনি।
শ্রম উপদেষ্টা জানান, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ ৩২৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা, আর শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কেন্দ্রীয় তহবিলের বিভিন্ন হিসাব থেকে দেওয়া হবে ২০০ কোটি টাকা।
বেক্সিমকো গ্রুপের পাওনাদারদের মধ্যে শ্রমিক রয়েছেন ৩১ হাজার ৬৭৯ জন। আর কর্মচারী হচ্ছেন ১ হাজার ৫৬৫ জন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, বেক্সিমকো শিল্প পার্কের প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়ে পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী এই ছয় সদস্যবিশিষ্ট কমিটির নেতৃত্ব দেবেন। এ কমিটিতে সদস্য হিসেবে থাকবেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), বাংলাদেশ ব্যাংক ও অ্যাটর্নি জেনারেলের প্রতিনিধিসহ বেক্সিমকো লিমিটেডের রিসিভার। কমিটির সদস্যসচিব হিসেবে কাজ করবেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান।
শ্রম উপদেষ্টা জানান, আগামীকাল শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বেক্সিমকো শিল্প পার্কের ১৪টি প্রতিষ্ঠান পুরোপুরি বন্ধ ঘোষণা করা হবে। ৯ মার্চ থেকে বেক্সিমকো লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা পরিশোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
শ্রম উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন আরও বলেন, বেক্সিমকো শিল্প পার্কের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ২০০৮-২০২৪ পর্যন্ত জনতা ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ প্রদানের জন্য দায়ী ও জড়িত কর্মকর্তা, ব্যাংকের বোর্ড সদস্য, কোম্পানি বোর্ড সদস্য, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনসহ (বিএসইসি) সংশ্লিষ্ট অন্য সবার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সাখাওয়াত হোসেন আরও বলেন, ঋণ প্রদানের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা যেন দেশের বাইরে যেতে না পারেন, সে জন্য নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হবে।
বেক্সিমকো গ্রুপের অন্যতম কর্ণধার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি বিনিয়োগ ও শিল্পবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান গত ১৩ আগস্ট থেকে কারাগারে রয়েছেন। ২৯ আগস্ট সালমান এফ রহমান, তাঁর ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান, পুত্রবধূ শাজরেহ রহমানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
বেক্সিমকো গ্রুপের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বিক্রি করে শ্রমিকদের পাওনা মেটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। পরে শেয়ার বিক্রিতে জটিলতা দেখা দেওয়ায় সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করার সিদ্ধান্ত হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট সরক র র ব যবস থ পর শ ধ সদস য রহম ন
এছাড়াও পড়ুন:
নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকাভুক্তির নীতিমালা প্রণয়নে কমিটি গঠন
দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বা তালিকাভুক্ত হতে চাওয়া কোম্পানিগুলোর নিরীক্ষা সম্পন্ন করা যোগ্য নিরীক্ষক ও নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকাভুক্তির জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করার নির্দেশ দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
এরই ধরাবাহিকতায় দুই সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে, যাদের অতিরিক্ত আরো ত্রিশ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আরো পড়ুন:
ডিএসইতে সাপ্তাহিক দাম কমার শীর্ষে মেঘনা পেট্রোলিয়াম
ডিএসইতে সাপ্তাহিক দাম বাড়ার শীর্ষে জিল বাংলা সুগার মিলস
সম্প্রতি এই বিষয়ে দুই সদস্যের একটি কমিটি গঠন করার নির্দেশনা জারি করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
বিএসইসির চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘প্যানেল অব অডিটরস অ্যান্ড অডিট ফার্মস তালিকাভুক্তির জন্য নীতিমালা’-এর বিদ্যমান খসড়ায় প্রয়োজনীয় সংশোধন এবং ‘আইপিওর জন্য উপযুক্ত এবং যথাযথ তালিকাভুক্তির মানদণ্ড’-সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের সুপারিশ অনুসারে নীতিমালা পুনর্নির্মাণ করতে বলা হয়েছে।
তাই কমিশন দুই সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেছে। কমিটির দায়িত্ব পালন করবেন বিএসইসির প্রধান হিসাব রক্ষক কামরুল আনাম খান এবং বিএসইসির সহকারী পরিচালক তন্ময় কুমার ঘোষ।
কমিশন এই কমিটির প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য অতিরিক্ত ত্রিশ কার্যদিবস বৃদ্ধি করেছে। আদেশের অন্যান্য শর্তাবলি অপরিবর্তিত থাকবে। এই আদেশ যথাযথ অনুমোদনের সঙ্গে জারি করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি অথবা কোনো কোম্পানি যখন তালিকাভুক্ত হতে চায়, তখন বিএসইসির নির্দিষ্ট তালিকা থেকে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তার আর্থিক প্রতিবেদন নিরীক্ষা করতে হয়। এর বাইরে অন্য কোনো নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে নিরীক্ষা করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। ইতোমধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তিতে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও রুলসেরে নতুন বিধিমালার খসড়া প্রস্তাব অনুমোদন করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। বর্তমানে অংশীজনদের সঙ্গে আইপিও আইনের মতামত নিয়ে আলোচনা চলমান রয়েছে। তাই এই আইনের সঙ্গে যোগ্য নিরীক্ষক বা নিরীক্ষা ফার্মের নতুন তালিকা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত তালিকা কার্যকর হলে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও আইপিও প্রক্রিয়ায় আর্থিক প্রতিবেদন নিরীক্ষার মান আরো উন্নত হবে। এতে করে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে এবং বাজারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা সহজ হবে।
বিএসইসি জানিয়েছে, কমিটির প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময়সীমা আরো ৩০ কর্মদিবস বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে এ আদেশের অন্যান্য শর্তাবলি অপরিবর্তিত থাকবে। যথাযথ অনুমোদন সাপেক্ষেই এ নির্দেশনা জারি করা হয়েছে বলেও কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
বাজার-সংশ্লিষ্টদের মতে, নিরীক্ষক ও নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি স্পষ্ট ও মানসম্মত তালিকা প্রণয়ন হলে আর্থিক অনিয়ম কমবে এবং করপোরেট গভর্ন্যান্স জোরদার হবে। ফলে দীর্ঘমেয়াদে দেশের পুঁজিবাজার আরো শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ঢাকা/এনটি/রাসেল