বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ বৃহস্পতিবারের পূর্বঘোষিত বিক্ষোভ কর্মসূচি স্থগিত করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।

আজ দুপুরের দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক এম জে এইচ মঞ্জু নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে এই তথ্য জানান।

এম জে এইচ মঞ্জু তাঁর পোস্টে লিখেছেন, ‘জাতীয় স্বার্থে সবাইকে ধৈর্য ধারণ করার অনুরোধ। সুযোগ সন্ধানীদের তৎপরতা সবার কল্পনাতীত! দেশের ও জনগণের সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আজকের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি স্থগিত করা হলো।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়কদের উদ্যোগে গতকাল বুধবার গঠিত হয় নতুন ছাত্রসংগঠন ‘বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে সংবাদ সম্মেলন করে গতকাল বুধবার এই ছাত্রসংগঠনের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি স্লোগান, বিক্ষোভ, ধস্তাধস্তি এবং পরে অন্তত দুই দফা মারামারির ঘটনা ঘটে।

বিক্ষোভকারীরা ছিলেন বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তাঁরা নতুন ছাত্রসংগঠনের কমিটিতে তাঁদের ‘সঠিক প্রতিনিধিত্ব’ দাবি করেন। তাঁরা বলছিলেন, কমিটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।

গতকাল সন্ধ্যার পর পরিস্থিতি শান্ত হয়। রাতে বাংলামোটরে সড়ক অবরোধ করেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। তাঁরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তাঁদের ওপর হামলার সুষ্ঠু বিচার না হলে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেন। রাত পৌনে ৯টার দিকে শুরু করে ঘণ্টাখানেক তাঁদের সড়ক অবরোধের কারণে যানজট তৈরি হয়। রাত ১১টার দিকে সড়ক ছেড়ে দিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রূপায়ণ ট্রেড সেন্টারের সামনে রাস্তার পাশে অবস্থান নেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক এম জে এইচ মঞ্জু গতকাল প্রথম আলোকে বলেছিলেন, হামলায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাঁরা হামলাকারীদের বিচার চান। হামলার বিচারের দাবিতে আজ বৃহস্পতিবার বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হবে। এতে হামলাকারীদের বিষয়ে কোনো সুরাহা না হলে ২৮ ফেব্রুয়ারি ‘ঢাকা ব্লকেড’ (অবরোধ) করা হবে।

তবে আজ দুপুরের দিকে এম জে এইচ মঞ্জু ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে পূর্বঘোষিত বিক্ষোভের কর্মসূচি স্থগিত করার কথা জানালেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন ব সরক র গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

‘বাইচ্চান্তরে লইয়া বড়া ও হান্দেশ খাইমু, ইলাই আমরার ঈদ’

দলা পাকানো চালের গুঁড়া চ্যাপটা করে ছোট ছোট বড়া বানানোর পর সেগুলো কড়াইয়ে দিচ্ছিলেন লাভলী বেগম (২৫)। চুলায় খড়ের আগুন কমে আসছিল বারবার। মাথা নিচু করে চুলার নিচ দিকে ফুঁ দিতে দিতে ধোঁয়ায় নাস্তানাবুদ অবস্থা। কুলায় যে পরিমাণ চালের গুঁড়া, তাতে ২০ থেকে ৩০টা বড়া হবে।

ঈদের আয়োজন বলতে কি শুধু এই কয়টি বড়া? লাভলী বলেন, ‘মাইয়ে (মা) কিছু গুড় আনছিলা। গুড়ের হান্দেশ (সন্দেশ) করছি। আর কিতা করমু। সকালে বাইচ্চান্তরে লইয়া বড়া ও হান্দেশ খাইমু। ইলাই আমরার ঈদ।’ কথা শেষের সঙ্গে সঙ্গে লাভলী বেগমের একটা দীর্ঘশ্বাস যেন হাওরের বাতাসে মিশে গেল। তাঁর পাশে তখন পাখির ছানার মতো বসা দুই সন্তান সাহানা (৫) ও আবির (৩)। তাদের চোখ কড়াইয়ে, তেলের ওপর ভাসতে থাকা বড়ার দিকে।

লাভলী বেগমের বাড়ি সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার দেখার হাওরপারের কান্দাহাটি গ্রামে। গতকাল রোববার পড়ন্ত বিকেলে ওই গ্রামে গিয়ে কথা হয় লাভলী ও তাঁর পরিবারের অন্যদের সঙ্গে। এর আগে গত বছরের জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে বন্যার সময় ওই গ্রামের যাওয়ার পর প্রথম দেখা হয়েছিল। বন্যা সব শেষ করে দিয়ে গেছে তাঁদের। হাওরের ঢেউয়ে তখন ঘরটি ভেঙে পড়ে।

লাভলী তিন সন্তান নিয়ে মা সবুরা বেগমের সংসারে আছেন। বাবা নেই; নেই মানে অন্য আরেকজনকে বিয়ে করে চলে গেছেন বহু আগে। লাভলীরও একই অবস্থা, স্বামী আরেকটা বিয়ে করে আলাদা থাকেন। এখন সবুরার আটজনের সংসার। ছেলে জহুরুল ইসলামের (২০) স্ত্রী ও এক মেয়ে আছে। এই সংসার মূলত সবুরা বেগম ও ছেলে জহুরুল ইসলামের শ্রম-ঘামে চলে। সবুরা, জহুরুল দুজনই শ্রমিক। যখন যে কাজ পান, সেটাই করেন, কিন্তু অভাব যায় না।

ঘরের চুলায় তেলের বড়া ভাজছেন লাভলী বেগম। সুনামগঞ্জের দেখার হাওরপারের কান্দিগাঁও গ্রাম থেকে গতকাল রোববার বিকেলে

সম্পর্কিত নিবন্ধ