ইসরায়েলি ৪ জিম্মির মরদেহ হস্তান্ত করলো হামাস
Published: 27th, February 2025 GMT
সানবিডি২৪ এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন
ইসরায়েল-হামাস গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম পর্যায়ে শেষ দফায় চার ইসরায়েলি জিম্মির মরদেহ হস্তান্তর করেছে হামাস। গভীররাতে হওয়া এই হস্তান্তরের বদলে কয়েকশত ফিলিস্তিনির মুক্তি আশা করছে তারা। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, চার জিম্মির দেহাবশেষ বহনকারী কফিন তারা বুঝে পেয়েছে।
প্রাথমিকভাবে, টিসাচি ইদান, ইতঝাক এলগারাত, ওহাদ ইয়াহালোমি, শ্লোমো মানতজুর নামে ওই চার মৃত জিম্মিকে শনাক্ত করেছে ইসরায়েল। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার সময় তারা নিজ বাড়ি থেকে অপহৃত হয়েছিলেন।
এই বিনিময়ের মধ্যস্থতা করেছে মিশর। চার জিম্মির মরদেহের বিনিময়ে ৬২০ জন ফিলিস্তিনি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার কথা ইসরায়েলের। এর মধ্য দিয়ে যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায়ে চূড়ান্ত বিনিময় সম্পন্ন হতে যাচ্ছে।
গত ১৯ জানুয়ারি কার্যকর হওয়া ভঙ্গুর এই চুক্তির প্রথম পর্যায় চলতি সপ্তাহেই শেষ হওয়ার কথা। তবে এখনও দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে অগ্রসর হওয়ার বিষয়ে কোনও প্রস্তাব পায়নি বলে জানিয়েছে হামাস।
এর আগে, গত শনিবার হামাস এক মঞ্চায়িত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ছয় ইসরায়েলিকে মুক্তি দেয়, কিন্তু ইসরায়েল তখন বন্দি মুক্তি দিতে অস্বীকৃতি জানায়।
প্রথম থেকেই জীবিত ও মৃত জিম্মিদের হস্তান্তরের আগে জনসম্মুখে তাদের নিয়ে আসছে হামাস। কিছুদিন আগে মরদেহ হস্তান্তর করার সময়ও কফিনগুলো জনসম্মুখে প্রদর্শন করে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন পক্ষ ওই ঘটনার কড়া সমালোচনা করেছিল।
চূড়ান্ত বিনিময়ের সময় আর কোনও রকম জনসম্মুখে হস্তান্তর বা আয়োজনের চেষ্টা করেনি হামাস।
নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, ইসরায়েলি সীমান্তে যথাযথ কর্তৃপক্ষ মরদেহগুলো শনাক্তের চেষ্টা করছে। এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেই কফিনগুলো স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
ইসরায়েলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চার জিম্মির মরদেহের ওপর ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পরে প্রকাশ করা হবে।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের মতে, প্রায় ৩০ জন বন্দি গাজায় নিহত হয়েছেন, যাদের কেউ হামাসের হাতে নিহত হয়েছেন, আবার কেউ ইসরায়েলের হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন।
এনজে
.উৎস: SunBD 24
কীওয়ার্ড: জ ম ম র মরদ হ ইসর য় ল প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
ছোঁয়াচে রোগের হাসপাতালে কেন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
যক্ষ্মা একটি ছোঁয়াচে রোগ। এই রোগের সংক্রমণ-ভয়াবহতার কথা চিন্তা করে ৬০ বছর আগে শহর থেকে কিছুটা দূরে সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাটে স্থাপন করা হয় ১০০ শয্যার বক্ষব্যাধি হাসপাতাল। তখন সেখানে জনবসতি ছিল কম, প্রাকৃতিক পরিবেশ ছিল নিরিবিলি। ২৮ দশমিক ২৯ একর জমিতে প্রতিষ্ঠিত হাসপাতাল এলাকায় ছিল পর্যাপ্ত আলো-বাতাস, ছিল পুকুর, গাছগাছালি। পরে বক্ষব্যাধি হাসপাতালের জায়গায় স্থাপন করা হয়েছে দুই প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজ (বিআইটিআইডি), ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনো (আইএইচটি)। এতে করে বক্ষব্যাধি হাসপাতালের আয়তন সংকুচিত হয়েছে, নিরিবিলি পরিবেশ বিঘ্নিত হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, জনসম্পৃক্ততা বাড়ায় বক্ষব্যাধি হাসপাতালের সেবা ও চিকিৎসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তার ওপর বক্ষব্যাধি হাসপাতালের জায়গায় স্থাপিত হচ্ছে চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। বক্ষব্যাধি হাসপাতাল মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ তলাবিশিষ্ট ভবনে স্থানান্তর করার কথা। ২০১৮ সালে হাসপাতালের সমস্ত স্থাপনাসহ খালি জমি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়কে হস্তান্তর করা হয়। এতে বক্ষব্যাধি হাসপাতালের সেবা ও চিকিৎসা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনসম্পৃক্ত স্থানে যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসায় ব্যাঘাত ঘটতে পারে। যক্ষ্মা রোগীদের জন্য উন্মুক্ত পরিবেশ বাধ্যতামূলক।
এ ব্যাপারে বক্ষব্যাধি হাসপাতালের চিকিৎসক তত্ত্বাবধায়ক ডা. এসএম নুরুল করিম বলেন, ‘যক্ষ্মা ছোঁয়াচে রোগ। বর্তমানে যক্ষ্মা রোগীদের মধ্যে এমডিআর ও এক্সডিআরের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যাচ্ছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি। এসব রোগীর যক্ষ্মা সাধারণ ওষুধে ভালো হয় না। হাসপাতালে ভর্তি রেখে বিশেষ পদ্ধতিতে চিকিৎসা দিতে হয়। রোগীদের জন্য খোলামেলা পরিবেশ দরকার।’
বর্তমানে বক্ষব্যাধি হাসপাতালের অধীনে আছে মাত্র সাত একর জমি। খালি জায়গা আছে ৯ একর। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত ৬০ বছরে বারবার সংকুচিত হয়েছে বক্ষব্যাধি হাসপাতালের পরিধি। ফলে যক্ষ্মা রোগীর যে পরিবেশে চিকিৎসা পাওয়ার কথা সেটা পাবেন না বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত ফৌজদারহাট বক্ষব্যাধি হাসপাতালে সাধারণ যক্ষ্মা, এমবিআর যক্ষ্মা, প্রিএক্সডিআর যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসা দেওয়া হয়।
জানা যায়, ফৌজদারহাট বক্ষব্যাধি হাসপাতালের জায়গায় চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ১০ তলা ভবন তৈরির কথা রয়েছে। বর্তমানে স্থাপিত তিনতলা ভবনে চলছে মেডিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম।
সরেজমিন দেখা গেছে, হাসপাতালে আন্তঃবিভাগ প্রায় প্রতিদিন রোগীতে ভর্তি থাকে। ভবনের নিচতলায় পুরুষ ও দ্বিতীয় তলায় নারী রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। গত সপ্তাহে ৩৫ জন যক্ষ্মা রোগী ভর্তি ছিলেন। হাসপাতালে পর্যাপ্ত চিকিৎসক, নার্স ও অন্য জনবল কর্মরত রয়েছেন।
যক্ষ্মা রোগীদের কফ পরীক্ষা অতি গুরুত্বপূর্ণ। হাসপাতালে রয়েছে জিন এক্সপার্ট নামের কফ পরীক্ষার আধুনিক মেশিন। হাসপাতালে ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন ও অডিও মেট্রিক মেশিনও রয়েছে।
২০২৪ সালে ৫৮৯ জন, ২০২৩ সালে ৭২০ জন, ২০২২ সালে ৫৯৫ জন যক্ষ্মা রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এসব রোগী এমডিআর ও এক্সডিআরে আক্রান্ত। তাদের হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। চট্টগ্রাম বিভাগের দূর-দূরান্ত থেকেও রোগীরা এ হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিচ্ছেন। প্রতিদিন ৫০-৬০ জন রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেন।
জানা যায়, বক্ষব্যাধি হাসপাতাল স্থানান্তর করা হবে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ তলা বিশিষ্ট ভবনে। হাসপাতাল স্থানান্তর নিয়ে যক্ষ্মা রোগীর অভিভাবকরা ক্ষুব্ধ। আর স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, জনসম্পৃক্ত স্থানে যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসায় ব্যাঘাত ঘটতে পারে। যক্ষা রোগীদের জন্য উন্মুক্ত পরিবেশ বাধ্যতামূলক। তাই যক্ষ্মা রোগী ও তাদের স্বজনদের দাবি করছে চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় যেন অন্য কোন স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়।
বক্ষব্যাধি হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক এবং ব্যক্ষব্যাধি ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. দিদারুল আলম বলেন, ‘যেসব রোগী ছয় মাসেও চিকিৎসায় ভালো হয় না, তাদের হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হয়। যক্ষ্মা শতভাগ নিরাময়যোগ্য রোগ। এই রোগীদের চিকিৎসা নিরিবিলি ও জনসম্পৃক্ত নয় এমন হাসপাতালে হওয়া দরকার।
এদিকে, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে বক্ষব্যাধি হাসপাতালের চিকিৎসা। প্রায় ৬০ বছর আগে নির্মিত হাসপাতাল ভবন ৭ বছর আগে ব্যবহার অনুপযোগী ঘোষণা করে গণপূর্ত বিভাগ। কিন্তু বিকল্প ব্যবস্থা গড়ে না উঠায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে চিকিৎসা সেবা। গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালটির বিভিন্ন অবকাঠামো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়লেও নতুন স্থাপনা নির্মাণে কোনো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। ভূমিকম্প হলে স্থাপনা ধসে পড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।