বাংলাদেশের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ খেলতে নামবে পাকিস্তান। বাংলাদেশেরও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি যাত্রা শেষ হবে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে। ম্যাচটি বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ার জোর সম্ভাবনা রয়েছে। 

তবে বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচটি মাঠে গড়ালে একাদশে তিন পরিবর্তন এনে শুরু করতে পারে স্বাগতিক পাকিস্তান। পাকিস্তানের সংবাদ মাধ্যমের মতে, বাদ পড়তে পারেন ওপেনার ও সাবেক অধিনায়ক বাবর আজম। একাদশের বাইরে থাকতে পারেন তার ওপেনিং সঙ্গী ইমাম উল হকও।

পাকিস্তানের পেস আক্রমণের ভরসা ছিলেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। মিডল অর্ডারে হুমকি হওয়ার কথা ছিল হারিস রউফের। কিন্তু তারা দু’জনই বল হাতে সেরাটা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। এই দু’জনের একজন একাদশের বাইরে চলে যেতে পারেন। হারিস রউফের জায়গায় একাদশে ঢুকতে পারেন মোহাম্মদ হাসনাইন। 

বাংলাদেশ সর্বশেষ নিউজিল্যান্ড ম্যাচের একাদশ নিয়ে খেলবে নাকি পরিবর্তন আনবে তা বোঝা দুষ্কর। তবে দুই অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিকুর রহিমের একজনকে বিশ্রাম দিয়ে টপ অর্ডার ব্যাটার সৌম্য সরকারকে ফেরানো হতে পারে একাদশে। 

কিউইদের বিপক্ষে সৌম্যকে বসিয়ে মাহমুদউল্লাহকে খেলানো হয়েছিল। রাওয়ালপিন্ডির ব্যাটিং বান্ধব উইকেটে টপ অর্ডার ব্যাটার বসিয়ে মিডল অর্ডার ব্যাটার খেলানোর পক্ষে শক্ত যুক্তি দাঁড় করানো কঠিন। 

বাংলাদেশের সম্ভাব্য একাদশ: সৌম্য সরকার, তানজিদ তামিম, নাজমুল শান্ত, মেহেদী মিরাজ, তাওহীদ হৃদয়, মাহমুদউল্লাহ, জাকের আলী, রিশাদ হোসেন, তাসকিন আহমেদ, নাহিদ হাসান, মুস্তাফিজুর রহমান।   

পাকিস্তানের সম্ভাব্য একাদশ: উসমান খান, কামরান ঘুলাম, সৌদ শাকিল, মোহাম্মদ রিজওয়ান, সালমান আঘা, তায়িব তাহির, খুশদিল শাহ, শাহিন আফ্রিদি, নাসিম শাহ, আবরার আহমেদ, মোহাম্মদ হাসনাইন।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

ভবদহে জলাবদ্ধতায় আবাদ হয়নি ৮ হাজার হেক্টর জমি 

যশোরের অভয়নগর উপজেলার ডহর মশিয়াহাটি গ্রামের কৃষক নিখিল বৈরাগীর বিলে জমি আছে আড়াই বিঘা। ওই জমির দুই বিঘা পড়েছে বিল বোকড়ে। ১০ কাঠা জমি পড়েছে বিল কেদারিয়ায়। ১০ বছর ধরে বিল দুটি জলাবদ্ধ। এ সময় বিলের তিন ফসলি ওই জমি থেকে তিনি কোনো ফসল পাননি। 

গত বছর বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় তিনি সেচযন্ত্র দিয়ে পানি সেচে দুই বিঘা জমিতে বোরোর আবাদ করেছিলেন। এবারও সেচে ওই জমিতে বোরো ধান চাষ করতে পারবেন বলে নিখিলের মনে আশা জেগেছিল। কিন্তু শেষ সময়ে এসে জমি থেকে পানি না নামায় এবার ধানের একটি চারাও লাগাতে পারেননি তিনি। নিখিল বৈরাগী বলেন, ‘জমিতে এখনো বুকসমান পানি। জমিতে বোরো চাষ করতে পারলাম না।’ 

যশোরের ভবদহ অঞ্চলের বেশির ভাগ বিলে কোথাও কোমরসমান আবার কোথাও বুকসমান পানি। নিখিল বৈরাগীর মতো ভবদহ অঞ্চলের বেশির ভাগ কৃষক এবার বিলের জমিতে বোরো ধানের চাষ করতে পারেননি। 

জেলার অভয়নগর, মনিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলা এবং খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার অংশবিশেষ ভবদহ অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। ভবদহ অঞ্চলে অন্তত ৫২টি ছোট-বড় বিল আছে। মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদ-নদীর জোয়ার–ভাটার সঙ্গে এসব বিলের পানি ওঠানামা করে। কিন্তু পলি পড়ায় নদীগুলো নাব্যতা হারিয়েছে। ফলে এসব নদ–নদী দিয়ে এখন ঠিকমতো পানিনিষ্কাশন হয় না। এই অবস্থায় ১৩ থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর টানা বর্ষণে ভবদহের ৩৩৮ দশমিক ২৭৬ বর্গকিলোমিটার এলাকা বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যায়। অতিবৃষ্টিতে এলাকার বিলগুলো প্লাবিত হয়। বিল উপচে পানি ঢোকে বিলসংলগ্ন গ্রামগুলোতে। ভারী বৃষ্টিপাতে অভয়নগর, মনিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলার ২৩৬টি গ্রামে পানি ঢুকে পড়ে। এসব গ্রামের বেশির ভাগ ঘরবাড়ি, ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট এবং মাছের ঘের পানিতে প্লাবিত হয়। পান্দিবন্দী হয়ে পড়েন প্রায় দেড় লাখ মানুষ। দুর্ভোগে পড়েন পানিবন্দী মানুষ। এরপর ভবদহে শ্রী ও হরি নদ–নদীতে মাটি কাটার যন্ত্র দিয়ে পাইলট (পরীক্ষামূলক) চ্যানেল কাটার কাজ শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। একপর্যায়ে বাড়িঘর থেকে পানি নেমে যায়। এখনো এই অঞ্চলের বেশির ভাগ বিল পানিতে তলিয়ে রয়েছে। 

কৃষি-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ডিসেম্বর থেকে শুরু করে এপ্রিল পর্যন্ত বোরো মৌসুম। বোরোর বীজতলা তৈরির সময় ১৫ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত। বোরো ধানের চারা রোপণের সময় ১ থেকে ৩১ জানুয়ারি নাবিতে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ধানের চারা রোপণ করা হয়। 

অভয়নগর, মনিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা তিনটির ভবদহ অঞ্চলে কৃষক আছেন প্রায় ৫০ হাজার। ওই অঞ্চলে ২৪ হাজার ৯০৪ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হতো। এর মধ্যে অভয়নগরে ৭ হাজার ৪০০ হেক্টর, কেশবপুরে ৫ হাজার ৪০০ হেক্টর ও মনিরামপুরে ১২ হাজার ১০৪ হেক্টর। এবার ১৬ হাজার ৬৫৭ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। জলাবদ্ধতায় এবার উপজেলার তিনটির ৮ হাজার ২৪৭ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়নি। এর মধ্যে অভয়নগরে ১ হাজার ৪৩০ হেক্টর, কেশবপুরে ২ হাজার ৫৭৮ হেক্টর ও মনিরামপুরে ৪ হাজার ২৩৯ হেক্টর জমি রয়েছে। 

ভবদহ অঞ্চলের অন্তত ১০টি বিল এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, বিলগুলো ভরে আছে পানিতে। বিল বোকড়, বিল কেদারিয়া, বিল কপালিয়া, বিল গান্ধীমারী, বিল গজালমারী ও বিল পায়রায় শুধু পানি আর পানি। বিলের কোথাও কোনো ধানখেত নেই। 

মনিরামপুরের হাটগাছা গ্রামের কৃষক শুভংকর বৈরাগী বলেন, ‘গান্ধীমারী বিলে আমার তিন বিঘা জমি আছে। গত বছর পানি সেচে তিন বিঘা জমিতে বোরোর চাষ করেছিলাম। এবার এখনো জমিতে চার থেকে পাঁচ-সাত ফুট পানি। পানি সেচে বোরো ধান করতে পারিনি। কী যে হবে এবার!’ 

বিলগুলো ভরে আছে পানিতে। বিল বোকড়, বিল কেদারিয়া, বিল কপালিয়া, বিল গান্ধীমারী, বিল গজালমারী ও বিল পায়রায় শুধু পানি আর পানি। বিলের কোথাও কোনো ধানখেত নেই। 

ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, ‘কৃষি অফিস ভবদহ অঞ্চলের কৃষিজমি এবং জলাবদ্ধ কৃষিজমির যে তথ্য দিয়েছে, তা অগ্রহণযোগ্য এবং বিভ্রান্তিকর। সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল পানি সরিয়ে জলাবদ্ধ ভবদহ অঞ্চলে বোরো চাষ করার। নদী জরুরি খনন করে এবং বাধা অপসারণ স্লুইসগেটের গেটগুলো খুলে দিলে ওপরের অংশের পানি নেমে যেত। বিলে বোরো ধান হতো। কিন্তু পাউবো সেটা করেনি। পাউবো কেবল ভবদহে ফসল ফলিয়ে দেওয়ার সরকারি প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করেনি, সরকারি সিদ্ধান্তকেও বানচাল করেছে। ভবদহের বেশির ভাগ জমিতে যে এবার বোরো চাষ হলো না, এর জন্য পাউবো দায়ী।’ 

পাউবোর যশোর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জি বলেন, ভবদহ এলাকার পানিনিষ্কাশনের জন্য এক্সকাভেটর দিয়ে হরি নদের ১৪ দশমিক ১২ কিলোমিটার পাইলট চ্যানেল কাটার কাজ শেষ হয়েছে। খনন চলছে। ভবদহ ২১-ভেন্ট স্লুইসগেটের ওপর ১৪টি এবং ৯-ভেন্ট স্লুইসগেটের ওপর পাঁচটি সেচযন্ত্র দিয়ে সেচ কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। ভবদহ অঞ্চল থেকে ৪ দশমিক ৪ ফুট পানি নেমেছে। কয়েকটি বড় বিল ছাড়া অবশিষ্ট বিলগুলোতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ