গাজীপুর নগরের সারাব এলাকার বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের টেক্সটাইলস অ্যান্ড অ্যাপারেলস বিভাগের ১৪টি কারখানা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া আগামীকাল শুক্রবার থেকে এসব কারখানার সব শ্রমিককে ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

গতকাল বুধবার প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।

এতে বলা হয়েছে, গাজীপুরে অবস্থিত বেক্সিমকো লিমিটেড (ইয়ার্ন ইউনিট-১ ব্যতিত) ও এর সংশ্লিষ্ট অন্য ১৩টি প্রতিষ্ঠানসহ মোট ১৪টি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সব কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকদের বিশেষ অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে, কারখানায় কোনো কাজ না থাকার কারণে গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর এবং ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ (সর্বশেষ সংশোধিত ২০১৮) অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট ধারা মোতাবেক কারখানাগুলোতে লে-অফ ঘোষণা করা হয়। কোনোভাবেই কাজের সংস্থান না থাকায় কারখানাগুলো ১৬ (৭) ধারা এবং তদনুযায়ী ২০ (৩) ধারা মোতাবেক কারখানাগুলোর শ্রমিকদের ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ছাঁটাই করা হলো। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানগুলোর সব কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হলো। ছাঁটাই করা সব শ্রমিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আইন ও বিধি অনুযায়ী সব পাওনা পরিশোধ করা হবে। এসব প্রাপ্য পাওনা আগামী ৯ মার্চ থেকে পর্যায়ক্রমে পরিশোধ করা হবে।

এদিকে নিয়মিত বেতন-ভাতা দিতে না পারায় বেক্সিমকো গ্রুপের একাধিক কারখানায় শ্রম অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিকদের মাসিক বেতন ৬০ কোটি টাকা আর কর্মকর্তাদের বেতন ১৫ কোটি টাকা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ব্যাংক কোম্পানি আইনের দুটি ধারা শিথিল করে জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে বেক্সিমকোর কারখানার বেতন-ভাতার জন্য ঋণের ব্যবস্থা করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

তবে এসব কারখানা এলাকায় আপাতত কোনো শ্রমিক অসন্তোষ নেই বলে জানিয়েছেন গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশ সুপার এ কে এম জহিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, শ্রমিকেরা শান্তিপূর্ণ অবস্থানে আছেন। সেখানে অতিরিক্ত পুলিশও মোতায়েন রয়েছে।
সম্প্রতি হাইকোর্টে এক রিটের শুনানিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ১৬টি ব্যাংক ও ৭টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বেক্সিমকোর ৭৮টি প্রতিষ্ঠানের দায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে প্রায় ৩২ হাজার কোটি টাকা।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সালমান এফ রহমান গ্রেপ্তার হন। অনেক ব্যাংকের সঙ্গে বেক্সিমকোর লেনদেন থাকলেও শুধু জনতা ব্যাংকে ঋণপত্র খোলা হতো। ওই ব্যাংকে প্রতিষ্ঠানটির ২৩ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে বড় অংশই এখন খেলাপি। গ্রুপটির ঋণ একক ঋণগ্রহীতার সীমাও অতিক্রম করায় বেক্সিমকোর নতুন করে ব্যাংকঋণ নেওয়ার পথও বন্ধ হয়ে যায়।

গত ১৫ ডিসেম্বর শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বেক্সিমকোর শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রম ও ব্যবসায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের কমিটির সভার সিদ্ধান্তের পর বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ১৬টি কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। বন্ধের কারণ হিসেবে সরকার জানায়, কারখানাগুলোতে অর্ডার না থাকা ও ব্যাংকে ঋণখেলাপি থাকায় প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা সম্ভব হচ্ছে না।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

দীর্ঘদিন আত্মগোপনে, চাঁদরাতে বাড়িতে গিয়ে গণপিটুনির শিকার স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে ছিলেন আত্মগোপনে। কিন্তু পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করার জন্য গ্রামের বাড়িতে আসেন। গ্রামের বাড়িতে এসেই স্থানীয়দের হাতে গণপিটুনির শিকার হলেন এক স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা।

রোববার রাতে ওই স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকে গণপিটুনি দেয় স্থানীয়রা। পরে তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় স্থানীয় একটি প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করালে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে প্রেরণ করেন।

গণপিটুনির শিকার স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার নাম মো. জসিম উদ্দিন জিসান (৩৬)। তিনি সাতকানিয়া উপজেলার কেঁওচিয়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের কান্তার পাড়ার আহমদ নবীর ছেলে। এ ছাড়াও তিনি উত্তর সাতকানিয়া সাংগঠনিক উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন।

জানা যায়, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মো. জসিম উদ্দিন জিসান আত্মগোপনে থাকলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব ছিলেন। তিনি বিভিন্ন সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আওয়ামী লীগের পক্ষে ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিপক্ষে পোস্ট দিতেন। ফলে স্থানীয়রা তার ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। সর্বশেষ রোববার ঈদ উদযাপনের জন্য তিনি গ্রামের বাড়িতে আসেন। তার আসার খবর পেয়ে স্থানীয়রা তাকে আটক করে গণপিটুনি দেয়। 

বর্তমানে তিনি গুরুতর আহত অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন।

আরও জানা যায়, গত বছরের ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমর্থনে উপজেলার কেরানিহাট চত্বরে মিছিল করেছিল ছাত্র-জনতা। সেদিন ছাত্র-জনতার মিছিলে হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় কেঁওচিয়া ইউনিয়নের জনার কেঁওচিয়া গ্রামের গুরা মিয়া বাড়ির মৃত ছিদ্দিকুর রহমানের ছেলে মো. তসলিম বাদী হয়ে সাতকানিয়া থানায় একটি মামলা করেন। এ মামলায় জিসান ৫৮ নম্বর এজহারভুক্ত আসামি।

সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহেদুল ইসলাম জানান, ৫ আগষ্টের পর থেকে জিসান ঘরে ছিল না। চাঁদ রাতে পরিবারের সদস্যদের জামা-কাপড় দিতে গেলে এলাকার লোকজন তাকে ধরে পিটুনি দেয়। খবর পেয়ে আমিসহ পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে গেলে তার স্বজনরা চিকিৎসার জন্য তাকে চমেক হাসপাতালে নিয়ে যায় বলে জেনেছি। এ ঘটনায় কেউ অভিযোগ বা মামলা করলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ