দলের এক বিধায়ককে ‘চোর’ বললেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস দলের সংসদ সদস্য মহুয়া মৈত্র। তিনি বললেন, ওই বিধায়কের জন্য দল কালিমালিপ্ত হয়েছে। রাজ্য সরকার পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। ওই বিধায়ক একাই চোর নয়, চোর তাঁর বউ, ছেলে, এমনকি ওর চৌদ্দগোষ্ঠী।

ঘটনার স্থল পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগর লোকসভা আসনের পলাশীপাড়া বিধানসভা কেন্দ্রের বার্নিয়া এলাকা। এই পলাশীপাড়ার বিধায়ক হলেন তৃণমূল নেতা ও এই রাজ্যের সাবেক প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তরের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য। তিনি এই রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতির আশ্রয় নিলে ২০২২ সালের ১১ অক্টোবর গ্রেপ্তার হন ভারতের এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেট বা ইডির হাতে। জেলে যান তিনি। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি কলকাতা হাইকোর্ট থেকে জামিনে মুক্তি পান। সেই মানিক ভট্টাচার্যের বিধানসভা এলাকার বার্নিয়ায় গতকাল তৃণমূলের সভায় যোগ দেন এই এলাকার অর্থাৎ কৃষ্ণনগর লোকসভা আসনের তৃণমূল সংসদ সদস্য মহুয়া মৈত্র।

সেই কর্মিসভায় যোগ দিয়ে মহুয়া মৈত্র একহাত নেন মানিক ভট্টাচার্যকে।

মহুয়া বলেন, তিনি আজ বাধ্য হচ্ছেন দলের নেতার বিরুদ্ধে বিষোদগার করতে। ওই একজনের জন্য দল কালিমালিপ্ত হয়েছিল। রাজ্য সরকার পড়ার উপক্রম হয়েছিল।

গতকাল মহুয়া মৈত্র বলেন, ‘আগে আমি এমন ভাষায় কারও বিরুদ্ধে কথা বলিনি। আজ বাধ্য হচ্ছি বলতে। যাঁর জন্য দল কালিমালিপ্ত হয়েছে, যার জন্য সরকার পড়ার উপক্রম হয়েছে, আজ অবধি মামলা চলছে, এফআইআর হয়েছে, চার্জশিট হয়েছে, আজ ভোটের আগে তারা এলাকায় ঢুকবে মিটিং করবে! আমাদের তাই মেনে নিতে হবে? আমরা কি মরে গেছি?’

মহুয়া বলেন, ‘ওরা ছিঁচকে চোর নয়, পকেটমার নয়—ওর বউ চোর, ছেলে চোর, চৌদ্দগোষ্ঠী চোর।’

মহুয়া মৈত্র ২০২৩ সালে অর্থের বিনিময়ে প্রশ্ন করার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়ে লোকসভা থেকে ২০২৩ সালের ৮ ডিসেম্বর বহিষ্কৃত হন। আবার কৃষ্ণনগর লোকসভা আসনের মধ্যে থাকা ৬টি বিধানসভা আসনের তৃণমূল বিধায়করা এর আগে এই মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলেছিলেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য ল কসভ আসন র

এছাড়াও পড়ুন:

মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার নামে প্রতারণার ফাঁদ

ফরিদপুর সদর উপজেলায় একটি পরিবারের বিরুদ্ধে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার নামে অভিনব প্রতারণার ফাঁদ তৈরি করে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। কয়েক বছর ধরে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার নামে ওয়াজ মাহফিল আয়োজন করে প্রবাসীসহ বিশিষ্টজনদের কাছ থেকে অর্থ ওঠানো হলেও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠায় কোনো বাস্তব উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়। প্রস্তাবিত মাদ্রাসার জন্য এখনও এক ছটাক জমিও কেনা হয়নি, এমনকি কোনো ব্যাংক হিসাব নম্বরও খোলা হয়নি। শুধু মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার কথা বলে টাকা তোলার একটি কার্যক্রমই দৃশ্যমান! 

মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার নামে অভিনব প্রতারণার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা হলেন ফরিদপুর সদর উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের পরমানন্দপুর বাজার এলাকার বাসিন্দা মীর ইন্তাজ আলী ও তাঁর তিন ছেলে মো. ইব্রাহীম আলী, ইয়ামিন আলী ও ইয়াসিন আলী। যে মাদ্রাসার কথা বলে অর্থ সংগ্রহ করা হয়, সে প্রতিষ্ঠানের নাম ‘দারুল কুরআন মীর ইন্তাজ আলী মাদ্রাসা’। সরেজমিন ওই মাদ্রাসার কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

স্থানীয় বাসিন্দা ও ইন্তাজ আলীর ভাতিজা মো. মিজানুর রহমান মিজান জানান, প্রস্তাবিত মাদ্রাসাটির নামে ২০২১ সাল থেকে তাদের এই অভিনব প্রতারণা শুরু হয়। মাদ্রাসার কথা বলে এ পর্যন্ত চারটি ওয়াজ মাহফিল করা হয়েছে। মুফতি আমির হামজাও এখানে এসে ওয়াজ করেছেন। প্রতি ওয়াজেই মাহফিলের মাঠ থেকে মাদ্রাসার নামে লাখ লাখ টাকা ওঠানো হয়েছে। এমনকি প্রবাসীদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে। 

কল্পিত মাদ্রাসার নামে গত কয়েক বছরে প্রায় কোটি টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে। অথচ ইন্তাজ আলী বা তাঁর ছেলেরা মাদ্রাসার নামে তোলা অর্থের বিষয়ে কারও কাছেই হিসাব দেননি। মাদ্রাসার জন্য এক ছটাক জমিও কেনেননি। 

ইন্তাজ আলীর প্রতিবেশী ও কৃষ্ণনগর ইউনিয়ন ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মাসুদ মোল্লা বলেন, ইন্তাজ আলী ও তাঁর ছেলেরা একটি প্রস্তাবিত মাদ্রাসার নাম দিয়ে প্রতিবছর ওয়াজ মাহফিল করেন। তাদের বক্তব্য ছিল, এভাবে অর্থ সংগ্রহ করে মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করবেন। তারা প্রতিবছর অর্থ সংগ্রহ করেন কিন্তু মাদ্রাসার জন্য কিছু করেন না। 

স্থানীয় বাসিন্দা ও সাবেক ইউপি সদস্য মো. মিলু বলেন, ওই মাদ্রাসার দৃশ্যমান কোনো কিছুই খুঁজে পাওয়া যাবে না। এমনকি প্রতিষ্ঠানের নামে কোনো  ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই। কোনো কিছুই নেই। 

অভিযোগ অস্বীকার করে মীর ইন্তাজ আলী বলেন, ইসলামের অগ্রগতির জন্য তিনি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছেন। তবে মাদ্রাসার নামে কোনো অর্থ সংগ্রহ করা হয়নি।

ইন্তাজ আলীর ছেলে ইয়ামিন আলীর ভাষ্য, এটি একটি প্রস্তাবিত মাদ্রাসা। এ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা হতেও পারে আবার নাও হতে পারে। ইন্তাজ আলীর আরেক ছেলে প্রস্তাবিত মাদ্রাসাটির প্রতিষ্ঠাতা ইব্রাহীম আলী বলেন, মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করা হবে। অর্থ সংগ্রহ ও আত্মসাতের বিষয়টি মিথ্যা বলে দাবি করেন তিনি। 

কৃষ্ণনগর ইউপি চেয়ারম্যান এ.কে.এম বাশারুল আলম বাদশা বলেন, মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার নামে ওই পরিবার প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে। এলাকাবাসীর কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে তারা নিজেরা কোটিপতি হচ্ছে। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে তাদের কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যে, মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা না করে আর কোনো ওয়াজ মাহফিল তারা আয়োজন করতে পারবেন না। 

এ বিষয়ে ফরিদপুর সদর উপজেলা ইউএনও ইশরাত জাহান বলেন, এখনও তাঁর কাছে এ বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ দেননি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার নামে প্রতারণার ফাঁদ