তথ্যপ্রযুক্তি খাত: পাবলিক সফটওয়্যার প্রকল্পের সমস্যার কারণ কী
Published: 27th, February 2025 GMT
গত নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে দেশের নাগরিকেরা অনলাইনে ভূমির নামজারির অ্যাপ্লিকেশনটি ব্যবহার করতে পারেননি। আমাদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে ও ভেন্ডর প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অন্য পোর্টালের সঙ্গে ইন্টিগ্রেশন এবং কিছু আপগ্রেডেশনের পর সিস্টেমটি ব্যবহারকারীদের লোড নিতে পারছিল না।
তথাকথিত ‘সার্ভার ডাউন’-এর সমস্যা কাটাতে লাগে দীর্ঘ সময়। এরপরও দেখা যায় অ্যাপ্লিকেশনটি স্থিতিশীল হচ্ছে না, বাগ (ত্রুটি) থেকে গেছে। অ্যাপ্লিকেশনটি ব্যবহার করতে গিয়ে ব্যবহারকারীরা নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়ছেন। এর চেয়ে বড় কথা, অপ্রয়োজনীয় (যে তথ্য সিস্টেমে ইতিমধ্যে আছে) এবং দুর্বোধ্য তথ্য চাওয়া হচ্ছে। কিন্তু এমন কেন হচ্ছে?
সংক্ষেপে বলা যায়, সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারক বা কর্তৃপক্ষ জনদুর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনায় না নিয়ে একটি জটিল সফটওয়্যার ডিজাইন অনুমোদন করেছে। পর্যাপ্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই অ্যাপ্লিকেশনটি জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। অ্যাপ্লিকেশনটি সাধারণ মানুষের জন্য সহজভাবে ব্যবহারের উপযোগী হয়নি। ওই সময় যাঁরা নামজারি করেছেন, তাঁরা ভূমি অফিসের কর্মচারী ও দালালদের কাছে যেতে বাধ্য হয়েছেন। এর ফলে গ্রাহকদের বাড়তি অর্থ খরচ করতে হয়েছে।
জনগণের ব্যবহারের জন্য তৈরি সফটওয়্যারের ক্ষেত্রে এ ধরনের অবহেলা নতুন কিছু না। জন্ম বা মৃত্যুনিবন্ধন–সংক্রান্ত সফটওয়্যার নিয়ে প্রচুর ভোগান্তি হয়েছে। এর মধ্যে ব্যতিক্রম বলা যায় ‘সুরক্ষা’ অ্যাপ্লিকেশনটি, যেটি কোভিড-১৯–সংক্রান্ত। এটি অত্যন্ত কম খরচে নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনা করা হয়েছে। এতে নিশ্চিতভাবেই দেশের কয়েক শ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে।
পাবলিক অফিসের অভ্যন্তরীণ কাজের অটোমেশনের জন্য নির্মিত অনেক সফটওয়্যারই এখন পর্যন্ত ব্যবহারযোগ্য হয়ে ওঠেনি, এমনকি ভবিষ্যতেও ব্যবহারযোগ্য হয়ে ওঠার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এ পটভূমিতেই নামজারি-সংক্রান্ত ঘটনাটি দিয়ে শুরু করা। দেখা যাচ্ছে, সরকারের নেতিবাচক হস্তক্ষেপ না থাকলেও (অন্তর্বর্তী সরকারের সময় যা নেই বলে অনুমিত) সফটওয়্যার ব্যবহারকারী হিসেবে জনগণের ভোগান্তি কমছে না।
এতে বোঝা যায়, এর প্রতিকার সহজ নয়; বিশেষত গতানুগতিক চিন্তাভাবনার মধ্য দিয়ে তো কোনোভাবেই নয়। এ লেখার পরবর্তী অংশে আমরা এর কারণ খুঁজব এবং প্রাসঙ্গিকভাবে পাবলিক সেক্টরে তথ্যপ্রযুক্তির যে দুরবস্থা, তার অন্তর্নিহিত কারণ, প্রতিকার ও উত্তরণ সম্পর্কে আমাদের মতামত উপস্থাপন করব।
প্রজেক্ট শুরুর আগেএকটি প্রজেক্ট শুরু হয় ডিটেইল প্রজেক্ট প্ল্যান (ডিপিপি) থেকে। এ সময় কাজের পরিধি ও ধাপগুলো চিহ্নিত করা, বাজেট ও সময় নির্ধারণ, সম্ভাব্যতা যাচাই ইত্যাদি কাজ করা হয়। পরবর্তী সময়ের সমস্যা, সংকট ও চ্যালেঞ্জগুলোর বীজ রোপিত হয় এ সময়। এ পর্যায়ে নির্মিতব্য সফটওয়্যারের উপাদানগুলো নির্ধারণ করতে হয়, তার ফিচারগুলো চিন্তা করে একটি বাস্তবসম্মত ব্যাপ্তিকাল ঠিক করতে হয় (বাংলাদেশি সফটওয়্যার কোম্পানিগুলোর সক্ষমতা বিবেচনা করে)।
কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে, অপ্রতুল বাজেটের কারণে ভেন্ডর প্রতিষ্ঠান পর্যাপ্ত মানসম্পন্ন লোকবল নিয়োগ করতে পারে না; আবার কোনো ক্ষেত্রে অতিরিক্ত বাজেট প্রদান করেও সঠিকভাবে তত্ত্বাবধায়ন ও পর্যবেক্ষণ না করার কারণে অর্থ অপচয়ের ঘটনাও ঘটেছে। আরেকটি বিষয় হলো, সফটওয়্যার ডেপ্লয় করার জন্য হার্ডওয়্যার অবকাঠামোর বাজেট সুচারুরূপে হিসাব করা। এসব ক্ষেত্রে অবকাঠামোর আকার ও বাজেট নির্ণয়ের জন্য প্রত্যাশিত ব্যবহারকারীর সংখ্যা, সফটওয়্যার আর্কিটেকচার ও অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করতে হয়, যা এত আগে বিস্তৃতভাবে চাহিদা না বুঝে নির্ভুলভাবে করা প্রায় অসম্ভব।
অধিকাংশ সরকারি অফিসে এ ধরনের কাজের জন্য অভিজ্ঞ জনবল নেই। ফলে তারা অনানুষ্ঠানিকভাবে কোনো ভেন্ডর প্রতিষ্ঠানের সাহায্য নেয়। সে ক্ষেত্রে অনেক সময়েই প্রজেক্টে তাদের কাজ দেওয়ার একধরনের দায়বদ্ধতা তৈরি হয়।
প্রজেক্ট শুরুর পরঅধিকাংশ সরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান কারিগরি কাজে অনভিজ্ঞ প্রশাসনিক পদের কোনো ব্যক্তি। সফটওয়্যার প্রজেক্ট পরিচালনার মতো দুরূহ এবং অত্যন্ত কারিগরি বিষয়গুলো অনুধাবন করে সরকারি ক্রয়প্রক্রিয়া অনুসরণ করে কার্যক্রম শুরু করা তাঁর বা তাঁদের জন্য প্রচণ্ড চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়ে। এর ফলে কাজ শুরু করতে দেরি হয় এবং মূল ডেভেলপমেন্টের জন্য প্রজেক্টের অল্প সময় অবশিষ্ট থাকে।
বহু ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের কাছ থেকেও সফটওয়্যারের বিস্তৃত ফাংশনাল এবং টেকনিক্যাল চাহিদাপত্র তৈরি করার মতো সাহায্য পান না। কারণ, তাঁদেরও সক্ষমতা সীমিত। তখন তাঁরা কোনো সফটওয়্যার কোম্পানির অনানুষ্ঠানিক সাহায্যের শরণাপন্ন হন। এতে টেন্ডারপ্রক্রিয়াটি পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে পড়ে। কখনো কখনো ব্যক্তিগত পরামর্শক নেওয়া হয়। বহু ক্ষেত্রে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদের অযোগ্য পরিচিত বা স্বজনদের এ কাজে নির্বাচন করা হয়।
বিগত সরকারের সময়ে এটুআই (অ্যাসপায়ার টু ইনোভেশন) বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কয়েক দিনের ক্যাম্প করে রিকোয়ারমেন্ট অ্যানালিসিস ওয়ার্কশপ আয়োজন করে এবং এর মাধ্যমে টেন্ডার তৈরির উদ্যোগ নেয়। এটাকে দাতব্য চিকিৎসা ক্যাম্পের সঙ্গে তুলনা করা যায়। জটিল কোনো সিস্টেমের চাহিদাপত্র তৈরি এভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি।
এরপরের চ্যালেঞ্জ হলো টেন্ডার যথার্থভাবে মূল্যায়ন করে যোগ্যতম ভেন্ডর নির্বাচন। সফটওয়্যার কেনার ক্ষেত্রে অংশগ্রহণকারী ভেন্ডরদের গুণগত মান ও আর্থিক প্রস্তাব বিবেচনায় নেওয়া হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে একটি কমিটির মাধ্যমে কাগজপত্র যাচাই করে যে মূল্যায়ন করা হয়, তাতে প্রকৃত সামর্থ্যের প্রতিফলন হয় না। একধরনের গড়পড়তা মূল্যায়ন করে আর্থিক প্রস্তাবকেই মূল নির্ধারক ধরা হয়।
সফটওয়্যার তৈরির মতো বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে এর পরিণতি হয় অত্যন্ত নেতিবাচক। ভেন্ডর প্রতিষ্ঠানের মুখ্য ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার নেওয়া ছাড়া ভালোভাবে মূল্যায়ন দুরূহ ব্যাপার। এ জন্য নির্বাচক দলের কারিগরি জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা হতে হবে উঁচু মানের, যা সচরাচর প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মধ্যে থাকে না।
অল্প কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠান দীর্ঘ মেয়াদে বেশ কিছু সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট কনসালট্যান্ট নিয়োগ দিয়ে নিজেদের তত্ত্বাবধানে সফটওয়্যার তৈরি করেছে। যেমন সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা প্রদানের জন্য ‘আইবিএএস’ এবং তথ্য ব্যবস্থাপনার ‘জেইএমএস’। উঁচু বেতনের অনেক পরামর্শক দীর্ঘদিন ধরে নিয়োজিত রাখায় এগুলোর খরচ পড়ে যায় অত্যধিক। লক্ষণীয় হলো, সরকারি কর্মকর্তারা নিজেদের কাজে ব্যয়বহুল সফটওয়্যার তৈরি করছেন; কিন্তু জনগণের জন্য সফটওয়্যারগুলোয় বাজেট বরাদ্দ থাকে অনেক কম।
ভেন্ডর নিয়োগের পর প্রথম কাজ হলো, তাদের তথ্য দিয়ে বিস্তৃতভাবে রিকোয়ারমেন্ট অ্যানালিসিসে সাহায্য করা। এ ক্ষেত্রে ব্যবহারকারী কর্তৃপক্ষ পর্যাপ্ত সময় না দেওয়ার ফলে অনেক ফাঁক থেকে যায় এবং পরে সফটওয়্যার তৈরির পর সময়সাধ্য পরিবর্তন করতে হয়। এর একটা সমাধান হতে পারে, টেন্ডার প্রস্তুতের সময় ভেন্ডরের দলে ডোমেইন এক্সপার্ট রাখার বাধ্যবাধকতা তৈরি করা। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে তা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
বাংলাদেশের পটভূমিতে অনেক ক্ষেত্রেই ভেন্ডর দলে ভালো, অভিজ্ঞ সিস্টেম অ্যানালিস্টের অভাব থাকায় প্রাপ্ত চাহিদা থেকে ভালো সিস্টেম ডিজাইন করা সম্ভব হয় না। ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানের কর্তব্য হলো নিয়মিতভাবে সিস্টেম ডিজাইন পরীক্ষা করে তার অনুমোদন দেওয়া। প্রচলিত চর্চা হলো, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট শেষে প্রদর্শনের সময় উচ্চপর্যায়ের কর্তাব্যক্তিরা সময়, বাজেট ও দেশের টেকনিক্যাল সক্ষমতা বিচারে প্রায় অসম্ভব কিছু দাবি করেন।
বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে এর প্রতিবাদ করার চল নেই। গুগল বা ফেসবুকে চমৎকার ফিচার দেখে ক্লায়েন্টরা যখন তা দাবি করেন, তাঁরা এটা বিবেচনা করেন না, এগুলো তৈরির জন্য কত মিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে, কত সময় ধরে ধীরে ধীরে তারা এ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট শুরু হলে নিবিড়ভাবে তা পর্যবেক্ষণ করা ও বিশেষজ্ঞদের দ্বারা নিয়মিতভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর ব্যবস্থাও অনেক ক্ষেত্রে থাকে না। একেবারে শেষে গিয়ে পরীক্ষা করার যে চল আছে, তাতে ভুল শোধরানোর খরচ ও সময় অনেক বেশি লেগে যায়। প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ব্যক্তিদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার অভিজ্ঞতা না থাকায় অনেক ভুল ধরা পড়ে না। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে দেরি হওয়ায় ভেন্ডরের বিল দিতে দেরি করার দৃষ্টান্তও আছে এ দেশে। আর বিশেষায়িত সিকিউরিটি ও ‘লোড টেস্ট’ বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত বিরল ঘটনা।
পূর্ণাঙ্গ ‘লোড টেস্টের’ অভাবেই জনগণের ব্যবহার্য সফটওয়্যারগুলোর ক্ষেত্রে ভোগান্তি সবচেয়ে বেশি। আধুনিক সফটওয়্যার ডেপ্লয়মেন্ট প্রযুক্তিতে উপযুক্ত জনবল–ঘাটতি আছে আমাদের দেশে। সরকারি অফিসে তাদের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে সচেতনতার খুবই অভাব। বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশে সরকারি সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে ভালো পারফরম্যান্স নিশ্চিত করতে হলে প্রস্তুতি ও পরিকল্পনার অভাব কাটিয়ে উঠতে হবে।
দীর্ঘমেয়াদি রক্ষণাবেক্ষণসফটওয়্যার এমন একটি বিষয় যে একটি দল তা তৈরির পর, অন্য আরেকটি দলের পক্ষে তা রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিমার্জন করা দুরূহ। বিশেষ করে আমাদের দেশে, যেখানে ডকুমেন্টেশনের মান খুব দুর্বল। ফলে একটি সফটওয়্যার তৈরি ও প্রাথমিক রক্ষণাবেক্ষণের সময় শেষে টেন্ডার দিয়ে নতুন ভেন্ডর নিয়োগ করে কাজ করা অনেক ক্ষেত্রে বাস্তবসম্মত হয় না। এর ফলে অনেক ক্ষেত্রে ‘ভেন্ডর লক-ইন’-এর শিকার হয়ে বিপুল অর্থ অপচয় হয়।
এর আদর্শ সমাধান ছিল নির্দিষ্ট সময় পর প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব জনবলের কাছে সফটওয়্যার হস্তান্তর করা। কিন্তু ভেন্ডরের অনিচ্ছা বা সরকারি প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ জনবলের অনাগ্রহ বা অদক্ষতার কারণে এমন দৃষ্টান্ত খুবই বিরল। কিছু ক্ষেত্রে ব্যক্তি পরামর্শক হিসেবে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ দিয়ে হস্তান্তর করার চেষ্টা করা হয়। এ ক্ষেত্রে খুব একটা সাফল্য দেখা যাচ্ছে না।
হাজার কোটি টাকার অপ্রয়োজনীয় ব্যয়তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বড় অপচয় ও দুর্নীতির উৎস হলো, বিশাল ব্যয়ে অপ্রয়োজনীয়, অনেক ক্ষেত্রে অব্যবহৃত বিদেশি প্রযুক্তি কেনা। উদাহরণ দেখা যাক। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অনলাইন ট্যাক্স রিটার্ন অ্যাপ্লিকেশন সম্পর্কে প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদন (‘২ কোটি টাকায় মিলল ৫১ কোটি টাকার সুফল’, ১১ জানুয়ারি ২০২২) থেকে জানা যায়, ৫১ কোটি টাকা খরচ করে ২০১৬ সালে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল, যা ২০১৯ সাল পর্যন্ত চলে। এ প্রকল্পের ভিয়েতনামি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কাজ বুঝিয়ে না দিয়ে চলে গেছে। এরপর আর কেউ অনলাইনে রিটার্ন জমা দিতে পারেননি।
মাত্র ২ কোটি টাকা খরচ করে দেশীয় প্রতিষ্ঠান দিয়ে ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে অনলাইনে নিবন্ধনসহ আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার ব্যবস্থা চালু করা হয়। সেই একই ভিয়েতনামি প্রতিষ্ঠান এখন পর্যন্ত ভ্যাটসংক্রান্ত সফটওয়্যারের রক্ষণাবেক্ষণ করে চলছে অপ্রচলিত প্রযুক্তি দিয়ে। অর্থাৎ ‘ভেন্ডর লক-ইন’ অবস্থা চলছে এবং অদূর ভবিষ্যতে এ থেকে বের হওয়ার কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।
অনেক ক্ষেত্রে অত্যধিক মূল্যে অফলপ্রসূ বিদেশি সফটওয়্যার কেনার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগীদের আরোপিত শর্তকে দায়ী করা হয়। প্রধানত, টেন্ডারে প্রাক্-যোগ্যতা হিসেবে সম্পূর্ণ অযৌক্তিকভাবে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে কয়েক মিলিয়ন ডলারের কাজের অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়, যা বাংলাদেশি কোনো কোম্পানির জন্য প্রায় অসম্ভব। অপ্রাসঙ্গিক এসব চাহিদা দেশি সফটওয়্যার কোম্পানিগুলোর জন্য বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
টাকার অঙ্কে আরও বড় ক্ষতি হয় উচ্চমূল্য ডেটাবেজ ও অপ্রয়োজনীয় হার্ডওয়্যার কেনায়। যথাযথ ডিজাইন করলে এ দুই খাতে বছরে হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা বেঁচে যেত বলে আমাদের ধারণা। পরিতাপের বিষয় হলো, ব্যয় সাশ্রয় হবে, এমন কিছু জানা ও সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের নীতিনির্ধারকদের খুব একটা আগ্রহ দেখা যায় না।
পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন নীতিমালামানসম্মত সেবার অভাব, অপচয়, দুর্নীতি—তথ্যপ্রযুক্তি খাতের এ সমস্যাগুলো মোকাবিলায় আমাদের একটি সুচিন্তিত তথ্যপ্রযুক্তি নীতিমালা প্রয়োজন, যা সব গুরুত্বপূর্ণ কারিগরি কাজে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে। এ খাতের প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল স্বভাবের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে ডিপিপি অনুসরণে কিছুটা শিথিলতা প্রয়োজন। যথাযথ ও অনিবার্য কারণ ছাড়া বিদেশি কোম্পানি সফটওয়্যার, উচ্চমূল্যের অপ্রয়োজনীয় ডেটাবেজ ও হার্ডওয়্যার কেনায় বিধিনিষেধ আরোপ করতে হবে। অন্য যে চ্যালেঞ্জগুলোর কথা এ লেখায় উল্লেখ করেছি, সেগুলো মোকাবিলার দিকনির্দেশনা থাকবে এই নীতিমালায়।
ডা.
লেখকেরা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সফটওয় য র ত র অ য প ল ক শনট সফটওয় য র ড সফটওয় য র ক সফটওয় য র র অন ক ক ষ ত র ড ভ লপম ন ট র জন য প র র ব যবহ র ন র জন য র র জন য সরক র র ব যবস থ জনগণ র পর ক ষ ড জ ইন ন পর য আম দ র সমস য র সময়
এছাড়াও পড়ুন:
ক্যানসারের চিকিৎসায় অর্থের অপচয় চান না, তাই স্ত্রীকে হত্যার পর আত্মহত্যা করলেন ব্যবসায়ী
ভারতের দিল্লির কাছে উত্তর প্রদেশের গাজিয়াবাদে এক আবাসন ব্যবসায়ী স্ত্রীকে গুলি করে হত্যা করেন এবং পরে আত্মহত্যা করেন। গতকাল বুধবার এ ঘটনা ঘটেছে।
কুলদীপ ত্যাগী (৪৬) নামের ওই ব্যবসায়ী একটি সুইসাইড নোট রেখে গেছেন। সেখানে তিনি লিখেছিলেন, তাঁর ক্যানসার ধরা পড়েছে। আর তিনি চান না, তাঁর চিকিৎসায় অর্থ অপচয় হোক। কারণ, সুস্থ হওয়াটা পুরোপুরি অনিশ্চিত।
ওই সুইসাইড নোটে আরও লেখা ছিল, তিনি স্ত্রী অনশু ত্যাগীকে হত্যা করেছেন। কারণ, তাঁরা একসঙ্গে থাকার শপথ করেছিলেন। এ দম্পতি দুই ছেলেসন্তান ও কুলদীপের বাবার (অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা) সঙ্গে বসবাস করতেন।
পুলিশের দেওয়া তথ্যমতে, কুলদীপ তাঁর স্ত্রীকে একটি লাইসেন্স করা রিভলভার দিয়ে গুলি করে হত্যা করেন এবং তারপর তিনি নিজেকে গুলি করে আত্মহত্যা করেন। গতকাল স্থানীয় সময় বেলা ১১টার দিকে রাজনগর এক্সটেনশনের রাধাকুঞ্জ সোসাইটিতে এ ঘটনা ঘটেছে।
ঘটনার সময় তাঁদের দুই ছেলে বাড়িতে ছিলেন। গুলির শব্দ শোনার পর তাঁরা দৌড়ে তাঁদের মা–বাবার কক্ষে যান। কুলদীপের মরদেহ মেঝেতে পাওয়া যায় এবং অনশুর মরদেহ বিছানায় ছিল। দুজনকে দ্রুত নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁদের মৃত ঘোষণা করেন।
ওই কক্ষে একটি সুইসাইড নোট পাওয়া যায়। নোটে লেখা ছিল: ‘আমি ক্যানসারে আক্রান্ত। আমার পরিবার তা জানে না। আমি চাই না চিকিৎসায় অর্থ অপচয় হোক। কারণ, বেঁচে থাকার সম্ভাবনা অনিশ্চিত। আমি আমার স্ত্রীকে নিয়ে যাচ্ছি। কারণ, আমরা চিরকাল একসঙ্গে থাকার শপথ নিয়েছিলাম। এটি আমার সিদ্ধান্ত। কেউ, বিশেষ করে আমার সন্তানেরা দায়ী নয়।’
পুলিশ রিভলবারটি জব্দ করেছে এবং মরদেহ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে।
জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা পুনম মিশ্র বলেন, ‘কুলদীপ ত্যাগী তাঁর স্ত্রীর এবং তারপর নিজের ওপর লাইসেন্স করা রিভলভার দিয়ে গুলি চালিয়েছেন। একটি সুইসাইড নোটে কুলদীপ ত্যাগী বলেছেন, তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত এবং তাঁর পরিবার তা জানে না। তিনি চান না তাঁর চিকিৎসায় অর্থ খরচ করা হোক। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তিনি স্ত্রী ও নিজেকে হত্যা করবেন। আমরা এই বিষয়টি তদন্ত করছি।’