বসন্ত আবহে মৌলভীবাজারের মাধবপুর লেকে পর্যটকের ঢল
Published: 27th, February 2025 GMT
মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের পাত্রখলা চা বাগানের মাধবপুর লেক পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে পরিচিত। রোজা শুরুর আগেই যেনো ভ্রমণপর্বটা শেষ করতে চাচ্ছেন ভ্রমণপিপাসুরা। তাই কয়েকদিন ধরেই এখানে ঢল নেমেছে পর্যটকদের।
প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট এই নয়নাভিরাম লেকটির আয়তন ৭.৯৮ একর। লেকটি সুউচ্চ পাহাড় ও চা বাগানের সবুজে ঘেরা।
মৌলভীবাজার জেলা শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার এবং শ্রীমঙ্গল থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই লেকটি ভ্রমণপিপাসুদের জন্য এক স্বপ্নের ঠিকানা। চারপাশের সবুজ চা বাগান, পাখির কিচিরমিচির, পাহাড়ের মাঝে স্বচ্ছ জলাধার সব মিলিয়ে মাধবপুর লেক প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এক অসাধারণ অভিজ্ঞতার জায়গা।
মৌলভীবাজারের মাধবপুর লেকে পর্যটকের ঢল
পর্যটন সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতিদিনই অসংখ্য পর্যটক এখানে আসছেন, বিশেষ করে এ বসন্ত মৌসুমে ভিড় বেড়েছে কয়েকগুণ। প্রতিবছর প্রায় লক্ষাধিক পর্যটক মাধবপুর লেকের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন।
দূরদুরান্ত থেকে আসা কয়েকজন পর্যটক জানান, রমজানের একমাস সিয়াম পালনে ব্যস্ত থাকায় ঘুরাফেরা অনেকটাই বন্ধ থাকবে। শুষ্ক মৌসুমটাও আর থাকবে না। তাই ভ্রমণের সময়টা বেছে নিয়েছেন বসন্তের এই স্নিগ্ধতায়। শহরের জীবন বন্দিশালার মতো। এখানে এসে মুক্ত প্রকৃতিতে নিঃশ্বাস নিতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি।
কথা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী রিফার আরা ইফতির সাথে। তিনি বলেন, “শহরে আমরা চার দেয়ালের ভিতরে বন্দিশালার মতো থাকি।”
মৌলভীবাজারের মাধবপুর লেকে পর্যটকের ঢল
আখাউড়া থেকে আসা জাহানারা বেগম বলেন, “মৌলভীবাজারের প্রাকৃতির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে এসেছি। এখানে এসে খুব ভালো লাগছে। নিরাপদে ঘুরাফেরা করছি। যোগাযোগ ব্যবস্থাও মোটামুটি ভালো। রমজান শুরু হলে ভ্রমণে আসা যাবেনা। আর প্রকৃতির এই অনুকুল পরিবেশ থাকবে না। তাই ভ্রমণ পর্বটা শেষ করে নিলাম।”
সিলেটের ফেঞ্জুগঞ্জ ফরিজা খাতুন গার্লস হাই স্কুলের শিক্ষার্থীরা শিক্ষা সফরে এসেছেন। ওই স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী বুশরার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, “আমরা প্রায় একশত শিক্ষার্থী এসেছি। সবুজ উচু টিলার ফাঁকে মাধবপুর লেকের অবস্থান। নান্দনিক এই দৃশ্য আমাদের দেখতে ভালো লেগেছে।”
মৌলভীবাজার পর্যটন সেবা সংস্থার সাবেক সভাপতি ও গ্র্যান্ড সেলিম রিসোর্টের মালিক সেলিম আহমেদ বলেন, “ফুরফুরে আবহাওয়া থাকায় মৌলভীবাজারে বিপুল সংখ্যক পর্যটকদের আগম ঘটেছে।”
ঢাকা/আজিজ/টিপু
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ম ধবপ র ল ক
এছাড়াও পড়ুন:
ঈদে পর্যটক বরণে প্রস্তুত কুয়াকাটা, নেই কাঙ্খিত অগ্রিম বুকিং
‘সাগরকন্যা’ খ্যাত পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে সারাবছরই দেশি-বিদেশি পর্যটকের আনাগোনা থাকে। তবে পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটিতে পর্যটকদের আনাগোনা একটু বেশি দেখা যায়। এই ঈদেও কুয়াকাটায় পর্যটকদের ঢল নামবে- এমনটাই প্রত্যাশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে, তবে প্রতি বছরের তুলনায় অগ্রিম বুকিং কম হওয়ায় হতাশ ব্যবসায়ীরা। পর্যটকদের উন্নত সেবা দিতে হোটেল মোটেল ও রিসোর্টগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে।
সরেজমিন দেখা যায়, প্রতিটি আবাসিক হোটেল ধোয়া-মোছা, সাজসজ্জাসহ পরিপাটি করে রাখা হয়েছে। রেস্তোরাঁগুলো ঐতিহ্যবাহী খাবার তৈরির পূর্ব প্রস্তুতি সেরেছে। একসময়ে অক্টোবর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত পর্যটন মৌসুম ধরা হলেও পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর পর্যটকে কম-বেশি ভরপুর ছিল থাকে কুয়াকাটা। তবে পুরো রমজান মাসে ৩০ কিলোমিটার সৈকতে একেবারেই ছিল পর্যটকশূন্য। মুক্ত সৈকতে বিচরণ করছে লাল কাঁকড়ার দল; আবার মাঝে মাঝে দেখা যায় পরিযায়ী পাখিদের ছোটাছুটি। ট্যুর অপারেটররা বলছেন, ঈদের পর যারা কুয়াকাটা ভ্রমণ করবেন, তারা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ‘আসল রূপ’ দেখতে পাবে।
কুয়াকাটায় রাত্রিযাপনের জন্য ছোট-বড় ২০০টির বেশি আবাসিক হোটেল রয়েছে, যার ধারণক্ষমতা প্রায় ৩০ হাজার। তবে লম্বা ছুটির দিনগুলোতে লাখো পর্যটকের আগমন ঘটে এখানে। ফলে কিছুটা সংকট হতে পারে রাত্রিযাপনের রুমগুলোতে। তবে গত কয়েক বছরের তুলনায় এই ঈদে ছুটি বেশি হওয়ায় ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা ছিল প্রতি বছরের চেয়ে পর্যটক বেশি হবে। কিন্তু অগ্রিম বুকিং পেলেও তা গত কয়েক বছরের চেয়ে কম। প্রতিবছর এমন সময়ে প্রায় ৭০-৮০ শতাংশ অগ্রিম বুকিং হয়ে যায় আর এ বছর গড়ে বুকিং মাত্র ৪০-৫০ শতাংশ; এমনটাই নিশ্চিত করেছেন কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইব্রাহিম ওয়াহিদ।
হোটেল সিকদার রিসোর্ট অ্যান্ড ভিলাসের এজিএম আল-আমিন আপন সমকালকে বলেন, ‘ঈদের পর আমরা ২০ শতাংশ ছাড় দিয়ে বুকিং নিয়েছি, যাতে পর্যটকরা কুয়াকাটার প্রতি বেশি আকৃষ্ট হন। এরই মধ্যে ৫০ শতাংশ কক্ষ আগাম ভাড়া হয়ে গেছে। আশা করছি, বাকি কক্ষ ঈদের পর বুকিং হয়ে যাবে, গত বছর এই সময়ে পরোপুরি বুকিং ছিল সেই তুলনায় কম। পর্যটকদের সেবার মান বাড়াতে ধোয়া-মোছাসহ নানা প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
সৈকতের আচার দোকানি রাসেল রুম্মান বলেন, ‘রমজানে পর্যটক না থাকায় বিক্রি ছিল না। প্রতি বছরই ঈদের পর খুব ভালো বিক্রি করি। তবে এ বছর আরও বেশি হবে বলে আশা রাখছি। কারণ, এখন দেশের সব জেলার সঙ্গে কুয়াকাটার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই সহজ। তাই এক মাস কোনো বিক্রি না হলেও আমরা চিন্তিত নই। কারণ, আশায় আছি, খুব ভালো পর্যটক আসবে কুয়াকাটায়।’
ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটা (টোয়াক) সেক্রেটারি জেনারেল জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘ঈদের ছুটিকে কেন্দ্র করে সপ্তাহজুড়ে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ হাজার পর্যটক আসার সম্ভাবনা আছে। তবে যারা অগ্রিম বুকিং দিয়ে কুয়াকাটায় এ সময়ে আসবেন, তারা সাশ্রয়ীভাবে ভ্রমণ করতে পারবেন।’
কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এম.এ মোতালেব শরীফ বলেন, ঈদকে ঘিরে অগ্রিম বুকিং পাচ্ছেন। তাই সব হোটেলকে নির্দেশ দেওয়া আছে, যাতে কেউ পর্যটকদের সঙ্গে প্রতারণা না করেন।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা রিজিয়নের সহকারী পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ঈদের ছুটিতে ব্যাপক পর্যটকদের সমাগম হবে। এটাকে মাথায় রেখে তারা কাজ শুরু করছেন। বিভিন্ন স্থানে টহল, হোটেল-রেস্তোরাঁয় তদারকিসহ সার্বিক বিষয়ে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমণে তারা সার্বক্ষণিক নিয়োজিত আছেন।