ট্রাম্প কেন পেন্টাগনের নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইছেন
Published: 27th, February 2025 GMT
নিজের প্রথম মেয়াদে জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে তুমুল বিরোধে জড়িয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবার সে পথে হাঁটেননি। দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করার পরপরই পাকাপাকি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন।
আর তাতেই গত শুক্রবার পেন্টাগনের ওপর দিয়ে রীতিমতো বরখাস্তের ঝড় বয়ে গেছে।
ওই দিন রাতে ট্রাম্প মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগনের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা জেনারেল চার্লস ‘কিউ’ ব্রাউন জুনিয়রকে বরখাস্ত করেন। প্রেসিডেন্টের নির্দেশে সেদিনই সংস্থার আরও ৫ হাজার ৪০০ কর্মীকে ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
এর আগের কয়েক সপ্তাহে পেন্টাগনে যে অস্থিরতা চলছিল, ট্রাম্প এ গণছাঁটাইয়ের মাধ্যমে হয়তো এক রাতেই তা শান্ত করে প্রতিরক্ষা দপ্তরের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
সেদিন যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর প্রধান কর্মকর্তা অ্যাডমিরাল লিসা ফ্রানচেত্তিকেও চাকরিচ্যুত করা হয়। ট্রাম্পের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথও বলেছিলেন, তিনি বিমানবাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী ও নৌবাহিনীর শীর্ষ পদে পরিবর্তনের জন্য প্রার্থী খুঁজছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অভিযান পরিচালনার অনুমতি পেতে এ তিনজনের সই প্রয়োজন হয়।
পেন্টাগনের ওই কর্মকর্তাদের কেউই এ কারণে বরখাস্ত হননি যে যুদ্ধক্ষেত্রে তাঁরা দক্ষতার প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয়েছেন বা তাঁরা অবাধ্য। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীতে বৈচিত্র্য, সমতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মসূচিতে (ডিইআই) জেনারেল ব্রাউনের অতিরিক্ত মনোযোগের কথা আলাদা। হেগসেথ গত বছর প্রকাশিত তাঁর একটি বইয়ে বলেছেন, জেনারেল ব্রাউন ডিইআইয়ের প্রতি অতিরিক্ত মনোযোগী।
ট্রাম্প (নিজের পছন্দের ব্যক্তিদের দিয়ে) পেন্টাগন ঢেলে সাজাতে চাইছেন। এ কারণে সেটির ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টই পেন্টাগনের কমান্ডার ইন চিফ, তাই পদাধিকারবলে তাঁর সেই ক্ষমতা রয়েছে।
তবে জেনারেল ব্রাউন ও অ্যাডমিরাল ফ্রানচেত্তিকে চাকরিচ্যুত করা এ ইঙ্গিতই দিচ্ছে যে ট্রাম্পের কাছে গুরুত্বপূর্ণ এসব পদে থাকার মূল যোগ্যতা তাঁর প্রতি প্রশ্নাতীত আনুগত্য। অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে প্রেসিডেন্টের অবস্থান নিরপেক্ষ রাখতে তাঁরা কতটা ভালো পরামর্শ দিতে পারেন, সেটি পরে বিবেচ্য। অথচ প্রেসিডেন্টের শীর্ষ সামরিক উপদেষ্টা হিসেবে তাঁদের মূল কাজ হওয়ার কথা এটাই।
প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর ট্রাম্প দ্রুত নিজের চারপাশে জ্যেষ্ঠ জেনারেলদের ভিড় জমিয়ে ফেলেছিলেন। সেবার চার তারকাবিশিষ্ট অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল জন কেলি ছিলেন ট্রাম্পের দ্বিতীয় চিফ অব স্টাফস।
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর প্রতি ট্রাম্পের আগ্রহ অবশ্য নতুন নয়। শৈশব থেকেই তিনি সামরিক বাহিনীর প্রতি আসক্ত। তিনি নিউইয়র্কে সামরিক কায়দার একটি আবাসিক স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। তাঁর পছন্দের ব্যক্তিদের একজন জেনারেল জর্জ প্যাটন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে যুদ্ধক্ষেত্রে দারুণ আক্রমণাত্মক ছিলেন সাবেক এই মার্কিন কমান্ডার।
২০১৭ সালের জানুয়ারিতে শপথ গ্রহণের পর আরেক চার তারকাবিশিষ্ট অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল জেমস ম্যাটিসকে নিজের প্রথম প্রতিরক্ষামন্ত্রী করেছিলেন ট্রাম্প। তাঁর প্রশাসনের উচ্চপদে আরও বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তা দেখা গিয়েছিল।
কিন্তু জেনারেলদের সঙ্গে ট্রাম্পের গভীর আস্থার সম্পর্ক একসময় তিক্ততার দিকে চলে যায়। কারণ, প্রশাসনে থাকাকালে কেলি, ম্যাটিস বা ম্যাকমাস্টার (সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল) প্রত্যেকে কোনো না কোনোভাবে ট্রাম্পের ইচ্ছা অনুযায়ী চলেননি।
ট্রাম্পের সঙ্গে ম্যাকমাস্টারের বিরোধ হয় আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করা নিয়ে। ম্যাকমাস্টার আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার না করার পক্ষে ছিলেন। এমনকি তিনি দেশটিতে মার্কিন সেনা উপস্থিতি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন ট্রাম্পকে।
জেনারেল চার্লস কিউ ব্রাউন জুনিয়র আফ্রিকান বংশোদ্ভূত দ্বিতীয় মার্কিন নাগরিক, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের জয়েন্ট চিফ অব স্টাফের চেয়ারম্যান পদে নিযুক্ত হয়েছিলেন.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর মকর ত
এছাড়াও পড়ুন:
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তৈরি ‘মুজিব বর্ষ ১০০’ পঞ্জিকার এখন অস্তিত্বই নেই
‘মুজিব বর্ষ ১০০’ নামে একটি বিশেষ পঞ্জিকা যৌথভাবে তৈরি করেছিল শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ও কেন্দ্রীয় তহবিল। এতে ব্যয় করা হয়েছিল প্রায় তিন লাখ টাকা। মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে বানানো এই পঞ্জিকার প্রথম মাসের নাম ছিল ‘স্বাধীনতা’। আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন (১৭ মার্চ) ছিল এই মাসের প্রথম দিন। ইংরেজি ক্যালেন্ডারের মতো এটিরও গণনা করার কথা ছিল ৩৬৫ দিন ধরে। ২০২০ সালের ১৬ মার্চ পঞ্জিকাটির উদ্বোধন করেছিলেন তখনকার সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তবে পঞ্জিকাটি শেষ পর্যন্ত আর আলোর মুখ দেখেনি।
এই পঞ্জিকায় ১২টি মাস আছে। তবে কোনো অধিবর্ষ (ইংরেজি লিপইয়ার) নেই। ১২ মাসের নাম দেওয়া হয়েছিল—স্বাধীনতা, শপথ, বেতারযুদ্ধ, যুদ্ধ, শোক, কৌশলযুদ্ধ, আকাশযুদ্ধ, জেলহত্যা, বিজয়, ফিরে আসা, নবযাত্রা ও ভাষা। ২০২০ সালের ১৬ মার্চ শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন শ্রমসচিব কে এম আলী আজম পঞ্জিকাটির মোড়ক উন্মোচন করে গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, পঞ্জিকায় বেশ কিছু সংস্কার প্রয়োজন। সব অংশীজনের মতামত নিয়ে ক্যালেন্ডারটি চূড়ান্ত করে এরপর সরকারি সব দপ্তরে রাখার বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে।
মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে বানানো পঞ্জিকা