অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম সাড়ে ছয় মাসের মাথায় পদত্যাগ করলেন। তিনি ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে। জুলাই-আগস্টের আন্দোলনকারী ছাত্রনেতাদের নেতৃত্বে নতুন দল গঠিত হচ্ছে—এই খবর চাউর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নাহিদ ইসলামের পদত্যাগের বিষয়টিও সামনে আসে।

সরকারের সঙ্গে নীতিগত বিরোধের কারণে নয়, বরং নতুন দলের নেতৃত্ব দেওয়ার উদ্দেশ্যেই নাহিদ ইসলামের এই পদত্যাগ। মঙ্গলবার দুপুরের পর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় গিয়ে তিনি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। পরে তিনি পতাকাবিহীন গাড়িতে করে যমুনা ছাড়েন।

জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী ছাত্র-তরুণদের নেতৃত্ব যে দল শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে, নাহিদ ইসলাম সেই দলের প্রধান হবেন বলে জানা গেছে। রাজনীতিতে যুক্ত হতে ও একটি নতুন দলের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য মন্ত্রী পর্যায়ের পদ ছেড়ে দেওয়ার তাঁর এই সিদ্ধান্ত অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে থাকবে। আমরা তাঁর পদত্যাগের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই।

এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে গত বছর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ৮ আগস্ট গঠিত মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত সরকারে তিনজন ছাত্রনেতা যোগ দিয়েছিলেন। বাকি দুজন হলেন মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। নাহিদ ইসলামের পদত্যাগের পর প্রশ্ন এসেছে, তাঁরা কী করবেন? এই দুই উপদেষ্টা যদি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নতুন দলের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা বা দলের কার্যক্রমে কোনো ভূমিকা রাখেন, তাহলে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। তবে নতুন দল থেকে বিশ্বাসযোগ্যভাবে তাঁরা নিজেদের দূরে রাখতে পারলে সেই প্রশ্ন এড়ানো যাবে।

তবে দুই উপদেষ্টার ব্যক্তিগত ইচ্ছা-অনিচ্ছার বাইরে এর সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের ভাবমূর্তির বিষয়টিও রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ফলে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত কেউ সরকারে আছেন—এমন বাস্তবতা সরকারের নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলতে পারে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তিনটি নির্বাচনে জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। এই পটভূমিতে আগামী নির্বাচনটি এমন হতে হবে, যা নিয়ে কোনো প্রশ্ন ও বিতর্ক তৈরি না হয়।

প্রধান উপদেষ্টা বরাবর পদত্যাগপত্রে নাহিদ ইসলাম লিখেছেন, ‘নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যেও আপনার নেতৃত্বে দায়িত্ব পালনে সদা সচেষ্ট থেকেছি। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে আমার ছাত্র-জনতার কাতারে উপস্থিত থাকা উচিত মর্মে আমি মনে করি।’ গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষার জন্য এবং গণ-অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-জনতার শক্তিকে সংহত করতে সরকারে থাকার চেয়ে রাজপথে তাঁর ভূমিকা বেশি হবে বলে তিনি যে মন্তব্য করেছেন, সেটি প্রণিধানযোগ্য।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সংগঠিত রাজনৈতিক পালাবদলের পর মানুষের মধ্যে পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা ও প্রত্যাশা আরও তীব্র হয়েছে। জনগণ আর পুরোনো রাজনীতি দেখতে চায় না। ছাত্র-তরুণদের নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ সেই আকাঙ্ক্ষারই প্রতিফলন। নতুন দলের সামনে তাই চ্যালেঞ্জ অনেক।

আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী তরুণেরা বলেছেন, পুরোনো রাজনীতি জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছে। নতুন দল জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সংগতি রেখে পরিচালিত হোক, সেটাই প্রত্যাশিত। তবে দেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা এগিয়ে নিতে পুরোনো দলগুলোর অভিজ্ঞতা ও তরুণদের উদ্যমের সমন্বয় প্রয়োজন। নতুন দল তাদের নীতি, আদর্শ ও কর্মসূচির অভিনবত্বে রাজনীতিতে নতুনত্বের ছাপ রাখতে সক্ষম হবে আশা করি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ছ ত র জনত র ন হ দ ইসল ম র পদত য গ সরক র র উপদ ষ ট র জন ত

এছাড়াও পড়ুন:

ফ্যাসিবাদী শাসন আর ফিরিয়ে আনতে পারবে না কেউ: মজিবুর রহমান মঞ্জু

আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে হিংসা ও সন্ত্রাসের পুরোনো রাজনীতিকে জনগণ না বলে দিয়েছেন। হয়তো আরও কিছুদিন পুরোনো ধাঁচের রাজনীতির প্রভাব থাকবে। কিন্তু ধীরে ধীরে তরুণেরা নেতৃত্ব গ্রহণ করলে সেটা পেছনে পড়ে যাবে। কেউ চাইলেই আর এ দেশে ফ‍্যাসিবাদী শাসন ফিরিয়ে আনতে পারবে না।

আজ শনিবার সন্ধ্যায় ফেনী সদর উপজেলার শর্শদী ইউনিয়নের নিজ গ্রামের সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে এক গণ–ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মজিবুর রহমান এ কথা বলেন।

মজিবুর রহমান বলেন, যাঁরা একসময় মনে করেছিলেন, রাষ্ট্রক্ষমতা মানেই ইচ্ছেমতো মানুষকে শোষণ করার সুযোগ, সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি-দখলস্বত্বের মাধ্যমে অঢেল সম্পদ বানানোর লাইসেন্স, তাঁরা আজ হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করছেন, ক্ষমতার অপব‍্যবহারের পরিণাম কত ভয়াবহ। ইতিহাসে দুর্নীতিবাজ ও লুটেরাদের করুণ পরিণতির কথা লেখা থাকলেও ক্ষমতা পেলে সবাই সেটা ভুলে যায়। দুই বড় দলের হিংসা–হানাহানির কারণে নাগরিকেরা আজ ক্লান্ত। জনগণ এবার তাই গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এর অবসান ঘটানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন।

ফেনী প্রসঙ্গে এবি পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, ফেনীকে ‘সন্ত্রাসের জনপদ’–এর পরিবর্তে বাংলাদেশের মানুষের জন‍্য ‘অনুপ্রেরণা ও উপলব্ধির জনপদ’ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। অতীতের সব ঘটনার সুষ্ঠু ও ন‍্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারলে ফেনীতে প্রতিহিংসার রাজনীতি চিরতরে বন্ধ হবে। গডফাদারদের ইতিহাস ও তাঁদের পরিণতি ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যখন জানবে, তখন তারা উপলব্ধি করতে শিখবে। দল-মতনির্বিশেষে ফেনীর তরুণেরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে ফেনীর রাজনীতিবিদেরাও আর বিভেদের চর্চা করতে পারবেন না।

শর্শদী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও ফেনী জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি নুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ইফতার মাহফিলে বক্তব্য দেন ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তারেক ইকবাল, এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আজিজুর রহমান রিজভী, এবি পার্টির বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক প্রকৌশলী শাহ আলম, খেলাফত মজলিসের ফেনী জেলা সহসভাপতি মাওলানা ইসমাঈল হায়দার, যুবদল নেতা শাহগীর চৌধুরী প্রমুখ।

এবি পার্টি ফেনী জেলা কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক ফজলুল হকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত ইফতার মাহফিলে এবি পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক শাহ আলম, জেলা কমিটির আহ্বায়ক আহছান উল্যাহ, সিনিয়র যুগ্ন আহ্বায়ক আফলাতু বাকি, যুগ্ম সদস্যসচিব নজরুল ইসলাম কামরুল, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদাত সাজু, কোষাধক্ষ্য শাহ আলম শাহীন সুলতানি, সমাজকল্যাণ সম্পাদক এবি সিদ্দিক, প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক হাবীব মিয়াজী, পৌর শাখার আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফ্যাসিবাদী শাসন আর ফিরিয়ে আনতে পারবে না কেউ: মজিবুর রহমান মঞ্জু
  • ‘রাষ্ট্রশক্তি দিয়ে জনগণের শক্তি দমন করা যায় না’
  • ঈদে নিরাপত্তা হুমকি নেই: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি করছে অন্তর্বর্তী সরকার, বললেন রিজভী
  • ইউক্রেনে জাতিসংঘের নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রস্তাব পুতিনের
  • নির্বাচন সুষ্ঠু করেনি বলেই তো আন্দোলন হয়েছে: রিজভী
  • বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারের অঙ্গীকার মালদ্বীপের
  • রাজনীতির ‘নতুন বন্দোবস্ত’ দেখতে কেমন?
  • সিদ্ধিরগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্মদলের দোয়া ও ইফতার মাহফিল
  • সংস্কার ও নির্বাচন দুটিই যখন প্রয়োজন