শেখ হাসিনার পতন ঘটানো গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের নতুন রাজনৈতিক দলে প্রধান সমন্বয়কারী পদ সৃষ্টি করে সমঝোতার চেষ্টা চলছে। এ টানাপোড়েনের মধ্যেই গতকাল বুধবার মারামারিতে আত্মপ্রকাশ করেছে গণঅভ্যুত্থানের সমন্বয়কদের নতুন ছাত্র সংগঠন ‘বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ’। নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একচেটিয়া প্রাধান্যে বিক্ষোভ করেন গণঅভ্যুত্থানে প্রতিরোধ গড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

ছাত্র সংগঠনের মতো তরুণদের রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব নিয়েও চলছে বিরোধ। এতে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক দুই নেতা নতুন দলে যোগ না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তাদেরসহ বিক্ষুব্ধদের ফেরানোর চেষ্টা করছেন দলের নেতৃত্ব নিতে যাওয়া সদ্য সাবেক উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।

আগামীকাল শুক্রবার বিকেল ৩টায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে বড় জমায়েতের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করতে যাওয়া নতুন দলের আহ্বায়ক হতে যাচ্ছেন নাহিদ; সদস্য সচিব হতে পারেন আখতার হোসেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক দুই সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলমকে মুখ্য সংগঠক ও মুখপাত্র করার কথা রয়েছে।

সপ্তাহখানেক ধরেই শোনা যাচ্ছিল, সদস্য সচিব পদে জাতীয় নাগরিক কমিটির (জানাক) আহ্বায়ক মুহাম্মদ নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীকে চাচ্ছিলেন তাঁর অনুসারীরা। এতে সমর্থন রয়েছে উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের। একই পদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের সাবেক সভাপতি আলী আহসান জুনায়েদকে চেয়েছিলেন তাঁর অনুসারীরা। গত সোমবার পর্যন্ত আলোচনা ছিল, সব পক্ষের মধ্যে সমঝোতার জন্য জুনায়েদ জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক এবং নাসীরুদ্দীন জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব হবেন।

তবে গতকাল বুধবার জানাক সূত্র জানায়, প্রধান সমন্বয়কারী পদ সৃষ্টি করা হচ্ছে। আহ্বায়ক এবং সদস্য সচিবের পরই হবে এই পদের মর্যাদা। নাসীরুদ্দীন হবেন প্রধান সমন্বয়কারী। যদিও তিনি তা নিশ্চিত করেননি। জানাকের মুখপাত্র সামান্তা শারমিন সমকালকে বলেন, প্রধান সমন্বয়কারী পদের বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। কে পদে আসবেন, তা ঠিক হয়নি। আহ্বায়ক, সদস্য সচিব, মুখপাত্র, মুখ্য সংগঠকসহ অন্যান্য পদে কারা আসবেন, তাও চূড়ান্ত নয়। শুক্রবার দলের আত্মপ্রকাশের আগে সব ঠিক হবে।

গতকাল রাজধানীর বাংলামটরে জানাক কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সভায় সিদ্ধান্ত হয়, এই সংগঠন আর রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করবে না; প্ল্যাটফর্ম হিসেবে থাকবে। আহ্বায়ক, সদস্য সচিব, মুখপাত্র ও মুখ্য সমন্বয়ক ছাড়া বাকি সব পদ বিলুপ্ত হবে। সবাই সদস্য হিসেবে গণ্য হবেন।

ঢাবি শিবিরের সাবেক দুই সভাপতি থাকছেন না

সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামে প্ল্যাটফর্ম গড়ে গত ১ জুলাই আন্দোলনে নামে। হাসিনা সরকারের নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সাধারণ মানুষও রাজপথে নামেন। আন্দোলন গণঅভ্যুত্থানে রূপ নিলে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনের পতন হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ছাত্রশক্তির নেতারা সামনের সারিতে থাকলেও শিবির, ছাত্র অধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন বাম সংগঠনের নেতাও ছিলেন।

রাজনৈতিক দল গড়তে ৮ সেপ্টেম্বর গঠন করা জানাকেও ছাত্রশক্তি, ছাত্রশিবির, ছাত্র অধিকার পরিষদ এবং কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও বাম সংগঠন থেকে আসা নেতা রয়েছেন। সবাই নিজ বলয় থেকে নতুন শীর্ষ নেতৃত্বে জায়গা করার চেষ্টা করছেন।

এ নিয়ে নতুন বিরোধ থেকে গণঅভ্যুত্থানের কৃতিত্ব নিয়ে সপ্তাহ দুই আগে বিরোধে জড়ান ছাত্রশক্তি ও শিবিরের সাবেক নেতারা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরস্পরের বিরুদ্ধে লেখেন। অতীতে শিবির-সংশ্লিষ্টতার কারণে নতুন দলের শীর্ষ নেতৃত্বে আনা হচ্ছে না বলে অভিযোগ তোলেন শিবিরের সাবেক নেতারা। একে আওয়ামী লীগ আমলের শিবির ট্যাগ দিয়ে নিপীড়নের ধারাবাহিকতা বলে ভাষ্য তাদের। এর ‘প্রতিবাদে’ জানাক ছেড়েছেন সাবেক শিবির নেতা আরেফিন মুহাম্মদ।

জুনায়েদ এবং ঢাবি শিবিরের আরেক সাবেক সভাপতি রাফে সালমান রিফাত চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে গত সোমবার দেশটিতে গেছেন। অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতা হিসেবে তাদের চীন সফর নিয়ে প্রশ্ন তোলে জানাক। সোমবার মধ্যরাতে বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, এ সফরের সঙ্গে জানাকের সম্পর্ক নেই। সংগঠনে থাকা সাবেক শিবির নেতারা সমকালকে জানান, এ বিজ্ঞপ্তির কারণে সমঝোতার সব সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়।

জুনায়েদ ও রিফাত ফেসবুক পোস্টে জানান, নতুন দলে তারা থাকছেন না। জুনায়েদ লেখেন, না থাকার বিষয়টি সপ্তাহখানেক আগেই জানিয়েছিলাম নেতাদের। বৃহত্তর ঐক্যের স্বার্থে ও জাতির নজর নতুন দলের ওপর নিবদ্ধ রাখতে নীরবতা বেছে নিয়েছিলাম। তবে চারপাশের গুঞ্জন থামছে না। তাই স্পষ্ট করে রাখছি। দুঃখজনক বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়ার পরও ট্যাগিং ও ট্যাবুর রাজনীতি থেকে মুক্ত হয়ে নতুন ধারার রাজনীতি এই দলের মাধ্যমে শুরু হোক, এই প্রত্যাশাই করি। 

রাফে সালমান লেখেন, দলে না থাকলেও আমার রাজনৈতিক পথচলা থেমে থাকবে না। অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে নতুন রাজনৈতিক সম্ভাবনার যে জোয়ার তৈরি হয়েছিল, তাতে শর্ট টার্মে খুব ভালো কিছু পাওয়ার প্রত্যাশা রাখি না আপাতত। 

জানাক সূত্র জানিয়েছে, শিবিরের নেতাকর্মীর বড় অংশই জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দেন না। ‘ইনক্লুসিভ’ রাজনীতির কথা বলায় জানাক এই সাবেক শিবির নেতাদের পছন্দের জায়গা হয়ে উঠেছিল। কিন্তু জুনায়েদ ও রাফে সালমানের এই নেতৃত্বে জায়গা না হওয়ায় শিবিরের সাবেক নেতাকর্মী নতুন দলে আর আসতে চাইবেন না। 

যদিও সাবেক কয়েকজন শিবির নেতা নতুন দলে থাকছেন। একাধিক নেতা সমকালকে বলেন, জুনায়েদ গত রোববার নাহিদ ইসলামকে জানান, শিবির ‘ট্যাগ’ দিয়ে নেতৃত্ব থেকে দূরে রাখার কারণে নতুন দলে থাকবেন না। জুনায়েদ এ সিদ্ধান্ত নিলেও নাহিদ গতকাল পর্যন্ত সব পক্ষকে নতুন দলে রাখার চেষ্টা করছেন বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। বিদেশে থাকায় জুনায়েদ ও রিফাতের সঙ্গে কথা বলতে পারেনি সমকাল।

অভ্যুত্থানে সর্বাত্মক ভূমিকা রাখা কওমি মাদ্রাসার সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদেরও নতুন দলের নেতৃত্বে আনা হচ্ছে না বলে এই বলয়ের নেতারা অভিযোগ করছেন। তাদের ভাষ্য, শীর্ষ নেতৃত্ব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে। কওমি ছাত্র পরিষদ থেকে আসা জানাকের যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফ মাহাদি সমকালকে বলেন, অভ্যুত্থানের সব অংশীজনের অংশগ্রহণের পথ উন্মুক্ত থাকতে হবে। নইলে দল ইনক্লুসিভ কিনা– এ প্রশ্ন থাকবে।

মারামারিতে আত্মপ্রকাশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের

বিক্ষোভ, মারামারিতে গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন থেকে আত্মপ্রকাশ করেছে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ। সংগঠনটির স্লোগান ‘শিক্ষা, ঐক্য, মুক্তি’। তিন ঘণ্টার নাটকীয়তার পর কেন্দ্রীয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আংশিক আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়।

কেন্দ্রীয় কমিটিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার আহ্বায়ক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদ আহসান সদস্য সচিব হয়েছেন। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের তাহমীদ আল মুদাসসির মুখ্য সংগঠক এবং আশরেফা খাতুন মুখপাত্রের দায়িত্ব পেয়েছেন। সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম। সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব পদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রিফাত রশীদ মনোনীত হয়েছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটিতে আব্দুল কাদের আহ্বায়ক ও মহির আলম সদস্য সচিবের দায়িত্ব পেয়েছেন। সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক লিমন মাহমুদ হাসান, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব আল আমিন সরকার, মুখ্য সংগঠক হাসিব আল ইসলাম এবং মুখপাত্র হয়েছেন রাফিয়া রেহনুমা হৃদি।

ছাত্র সংগঠন ঘোষণার কথা ছিল গত ২২ ফেব্রুয়ারি। পদ নিয়ে সমঝোতা না হওয়ায় তা চার দিন পেছায়। তবে শেষ সময়েও সমঝোতা হচ্ছিল না। গত মঙ্গলবার রাতে কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ চার পদ ঠিক করা হয়। নারী নেতাদের আপত্তিতে রিফাত রশীদকে রাখা হয়নি। 

সূত্র জানায়, এ নিয়ে বিরোধের সূত্রপাত হয়। বিকেল ৩টায় মধুর ক্যান্টিনের সামনে ছাত্র সংগঠনের আত্মপ্রকাশের প্রস্তুতির সময় উত্তরা এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল শিক্ষার্থী ‘ঢাবির সিন্ডিকেট ভেঙে দাও, সিন্ডিকেটের কমিটি মানি না, মানবো না, ঢাবির কালো হাত ভেঙে দাও, বৈষম্য মানি না’ স্লোগানে মিছিল করেন।

মিছিলকারীদের একজন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের যুগ্ম আহ্বায়ক ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্রী শাহজাদী ফারহানা সমকালকে বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউকে রাখা হয়নি। আমরা অন্তত রিফাত রশীদকে চেয়েছিলাম। এ বৈষম্য মেনে নেব না।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা মহানগরের যুগ্ম আহ্বায়ক পরিচয়ে নাহিদ হক নামে একজন বলেন, রিফাত রশীদকে মাইনাস করা হচ্ছে। এর প্রতিবাদ জানাই।

একই সময়ে ছাত্র সংগঠনের নতুন নেতাদের সমর্থকরা ‘শিক্ষা ঐক্য মুক্তি’ স্লোগান দিতে থাকেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে বাইরে সংবাদ সম্মেলন করতে না পেরে মধুর ক্যান্টিনের ভেতরে ছাত্র সংগঠনের আত্মপ্রকাশের অনুষ্ঠান শুরু করা হয়। হট্টগোলের মধ্যে আবু বাকের মজুমদার কমিটি ঘোষণা করেন। এর পর তারা বের হয়ে মিছিল নিয়ে লেকচার থিয়েটার ভবন হয়ে সামনে গেলে মল চত্বরে দু’পক্ষে মারামারি শুরু হয়। এতে আহত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্র মিশু আলী ও আকিবুল হাসান হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। অন্যদিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক ছাত্রীর আহতের খবর পাওয়া গেছে।

মধুর ক্যান্টিনের সামনে ধাক্কাধাক্কির মধ্যে অজ্ঞান হয়ে পড়েন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ছাত্রী নাফসিন মেহেনাজ আজরিন। পরে সন্ধ্যায় বারডেম হাসপাতালের সামনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেন, ঢাবির একজন কনুই দিয়ে বুকে আঘাত করলে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। আমরা এ সংগঠন মানি না।

এ সময় ফারাবী নামে একজন সমন্বয়ক পরিচয়ে বলেন, ঢাবির সিন্ডিকেটের এই কেন্দ্রীয় কমিটিকে আমরা অবাঞ্ছিত ঘোষণা করছি। যতক্ষণ পর্যন্ত তারা ভুল স্বীকার করে কমিটি পুনর্গঠন না করবে, ততক্ষণ তাদের সঙ্গে আমরা নেই। জাহিদ হাসান জেমস নামে আরেকজন বলেন, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশীদারিত্বের জন্য এসেছি। কিন্তু আমাদের ওপর হামলা করে চারজনকে আহত করা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন সমন্বয়ক নাম না প্রকাশের শর্তে সমকালকে বলেন, রিফাত রশীদ উত্তরা এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উস্কে দিয়ে ঝামেলা করেছেন। এ বিষয়ে রিফাত রশীদের বক্তব্য জানতে পারেনি সমকাল। 

ছাত্র সংসদের আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, বিক্ষোভকারীরা কমিটি ঘোষণা হওয়ার আগেই বৈষম্যের অভিযোগ তুলে স্লোগান দিচ্ছিল। এতে বোঝা যায়, তাদের অন্য উদ্দেশ্য আছে। যৌক্তিক দাবি থাকলে আলোচনা করে তা সমাধান করব।

এদিকে নতুন ছাত্র সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আব্দুল কাদের ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, মারামারির ঘটনায় তিনি দুঃখিত এবং লজ্জিত।

রাতে ছাত্রদলের নেতারা আহতদের দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। অন্যদিকে রাতে রাজধানীর বাংলামটর রূপায়ণ টাওয়ারের সামনের সড়ক অবরোধ করেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে কারওয়ান বাজার থেকে শাহবাগ অভিমুখী সড়কে ঘণ্টাখানেক যান চলাচল বন্ধ ছিল। পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক এম জে এইচ মঞ্জু সাংবাদিকদের জানান, হামলার বিচার দাবিতে বৃহস্পতিবার বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হবে। তাতেও সুরাহা না হলে ২৮ ফেব্রুয়ারি ‘ঢাকা ব্লকেড’ করা হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ছ ত র স গঠন র গণঅভ য ত থ ন র র জন ত দল র ন ত র জন ত ক ব সরক র সমঝ ত র হয় ছ ন র স মন গতক ল করছ ন সমক ল ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

গণপরিষদের বদলে সংস্কার বাস্তবায়নে সময়সীমা

সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন সামনে  এনেছে– সংসদ নির্বাচন আয়োজনের আগে কি একটি সাংবিধানিক গণপরিষদ প্রয়োজন? অনেক গণপরিষদপন্থির মতে, নিয়মিত নির্বাচনী রাজনীতির আগে রাষ্ট্র ও সংবিধানের মৌলিক রূপান্তর অপরিহার্য। তবে সমালোচকেরা এতে একটি কূটাভাস খুঁজে পান– যদি বর্তমান সরকার ইতোমধ্যে অসাধারণ গণতান্ত্রিক বৈধতা অর্জন করে থাকে, তাহলে সাংবিধানিক সংস্কারের জন্য আলাদা ম্যান্ডেটের প্রয়োজনীয়তা কি অপ্রাসঙ্গিক নয়? এই প্রশ্নটি ‘বৈধতা’ ধারণাকে ঘিরে একটি গভীরতর বিশ্লেষণের দ্বার উন্মোচন করে।

গণপরিষদপন্থিদের মতে, ইউনূস সরকারকে ‘অনির্বাচিত’ হিসেবে আখ্যায়িত করা অনুচিত। তাদের দাবি, এই সরকার একটি কর্তৃত্ববাদী শাসনের পতন ঘটিয়ে একটি বিস্তৃত গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসে। জনগণের রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত এই বৈধতা একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক ম্যান্ডেটের প্রতিফলন, যা প্রচলিত নির্বাচনী ব্যবস্থায় অর্জিত যেকোনো ম্যান্ডেটের চেয়ে অধিক গ্রহণযোগ্য ও বলিষ্ঠ।
এই দৃষ্টিভঙ্গির একটি সুস্পষ্ট ঐতিহাসিক ভিত্তিও রয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবৈষম্য-পরবর্তী সময়ে, তিউনিসিয়ায় গণঅভ্যুত্থানের পরে এবং নেপালে রাজতন্ত্রের পতনের পর নির্বাচন ছাড়াই সরকার বৈধতা লাভ করেছে। এসব ক্ষেত্রে রাজনৈতিক শৃঙ্খলা গঠিত হয়েছে কেবল নির্বাচনী চক্রের মাধ্যমে নয়, বরং একটি সামষ্টিক বিপর্যয় এবং নতুন রাষ্ট্র বিনির্মাণের সদিচ্ছা থেকে।

তবে এই বৈধতাকে স্বীকৃতি দিলেও, সাংবিধানিক গণপরিষদের দাবি কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করে। যদি বর্তমান সরকারের গণভিত্তি সাম্প্রতিককালের যেকোনো নির্বাচিত সরকারের তুলনায় অধিক শক্তিশালী হয়, তাহলে নতুন করে কোনো নির্বাচনী প্রক্রিয়া ছাড়া তাদের ওপর সংবিধান সংস্কারের দায়িত্ব অর্পণ করাটা কি যুক্তিসংগত নয়?
অনেকের কাছে এটি এক ধরনের বৈপরীত্য বলে প্রতিভাত হতে পারে– একদিকে শ্রেয়তর বৈধতার দাবি, অন্যদিকে সেই বৈধতা প্রমাণে একটি নতুন প্রক্রিয়াগত কাঠামোর প্রয়োজনীয়তা। তবে গণতান্ত্রিক ও প্রক্রিয়াগত বৈধতার মধ্যে পার্থক্য বিবেচনায় আনলে এ আপাত বিরোধ সহজে প্রশমিত হতে পারে।

গণতান্ত্রিক বৈধতা একটি অন্তর্বর্তী সরকারকে শাসনের নৈতিক ও রাজনৈতিক অধিকার প্রদান করে, বিশেষত গণঅভ্যুত্থানের মতো ব্যতিক্রমী প্রেক্ষাপটে। তবে সংবিধান পুনর্লিখনের মতো মৌলিক সংস্কার কেবল নৈতিক বৈধতার ভিত্তিতে সম্ভব নয়; এর জন্য প্রয়োজন স্বচ্ছতা, অংশগ্রহণ এবং রাজনৈতিক পরিসরের সর্বস্তরের সম্মতি। এখানে পদ্ধতিগত বৈধতার গুরুত্ব স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এটি নিশ্চিত করে যে গণপরিষদপন্থি সমর্থক থেকে শুরু করে সমালোচক পর্যন্ত সমাজের সকল অংশ একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারে, যার মাধ্যমে সকলের জন্য প্রযোজ্য শাসনব্যবস্থার ভিত্তি নির্ধারিত হয়।
এই প্রেক্ষাপটে, সাংবিধানিক গণপরিষদের দাবি বর্তমান সরকারের বৈধতাকে অস্বীকার নয়; বরং সেটিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার একটি সচেতন ও গণতান্ত্রিক প্রয়াস। এটি সেই প্রবণতার প্রকাশ, যেখানে গণঅভ্যুত্থানের অসাধারণ শক্তিকে অংশগ্রহণমূলক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি স্থায়ী রাজনৈতিক কাঠামোয় রূপান্তর করার চেষ্টা করা হয়। সমালোচকেরা যাকে বৈপরীত্য হিসেবে দেখেন, তা গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে এক সূক্ষ্ম ভারসাম্য হিসেবে প্রতিভাত হয়– একদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের কর্তৃত্বকে স্বীকৃতি, অন্যদিকে নিশ্চিত করা যে সাংবিধানিক পরিবর্তন একটি সম্মিলিত মালিকানার ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত।
তা সত্ত্বেও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন থেকে যায়– একটি নির্বাচিত সরকার কি একযোগে নিয়মিত শাসনকার্য পরিচালনাকারী কর্তৃপক্ষ এবং সাংবিধানিক গণপরিষদের ভূমিকা পালন করতে পারে? বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে এর উত্তর হতে পারে স্পষ্টভাবে সদর্থক, যদি প্রক্রিয়াটি সুস্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত, সর্বজনীনভাবে গ্রহণযোগ্য এবং স্বচ্ছভাবে তদারকযোগ্য হয়।

এই উদ্দেশ্যে জাতীয় নির্বাচনের আগে একটি জাতীয় রাজনৈতিক সমঝোতায় পৌঁছানো হতে পারে একটি বাস্তবসম্মত পথ। সংবিধান সংস্কার কমিশনসহ অন্যান্য কমিশনের প্রস্তাবগুলো যদি বিএনপি ও অন্যান্য প্রধান রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বিস্তৃত আলোচনার মাধ্যমে এবং ব্যাপক সম্মতির ভিত্তিতে চূড়ান্ত করা যায়, তবে পরবর্তী নির্বাচিত সরকারকে নির্দিষ্ট একটি সময়সীমার মধ্যে–ধরা যাক ছয় থেকে বারো মাস–এই সংস্কারগুলো বাস্তবায়নের জন্য একটি স্পষ্ট ম্যান্ডেট দেওয়া সম্ভব। এ ক্ষেত্রে সরকারের গণতান্ত্রিক বৈধতা কেবল নির্বাচনী বিজয়ের ওপর নয়, বরং এই সংস্কার রোডম্যাপ বাস্তবায়নের প্রতিও নির্ভর করবে। যদি সরকার এই লক্ষ্যপূরণে ব্যর্থ হয়, তাহলে তার নৈতিক ও রাজনৈতিক কর্তৃত্ব যথার্থভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হবে, এবং সে পরিস্থিতিতে সরকারের পদত্যাগ অনিবার্য হয়ে উঠবে।

যদি এই জাতীয় রাজনৈতিক সমঝোতা প্রকাশ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয় এবং প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের দ্বারা অনুমোদিত হয়, তবে তা একটি নৈতিকভাবে বাধ্যবাধকতামূলক চুক্তি হিসেবে কার্যকর হতে পারে। যদিও এটি কোনো সাংবিধানিক ধারার মতো আইনগতভাবে প্রয়োগযোগ্য নয়, তবুও এটি জনমত, গণমাধ্যমের স্বচ্ছতা এবং প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি থেকেও কার্যকর শক্তি অর্জন করতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে এই সমঝোতার ভিত্তিতে গৃহীত সংস্কার ও নির্ধারিত বাস্তবায়ন সময়সীমা নিয়ে স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করতে পারে। একটি স্বাধীন তদারকি সংস্থা এই পুরো প্রক্রিয়ার অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করবে এবং নিয়মিত প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে। এর মাধ্যমে সরকারকে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য করা যাবে এবং গণসার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার পথ আরও সুদৃঢ় হবে।

এ প্রক্রিয়াকে বলা যেতে পারে শর্তসাপেক্ষ বৈধতার মডেল– যেখানে একটি নির্বাচিত সরকারের কর্তৃত্ব কেবল ব্যালট বাক্সে অর্জিত বিজয় থেকে নয়, বরং পূর্বঘোষিত সংস্কার এজেন্ডার কার্যকর বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতির ওপরও নির্ভরশীল। এই মডেল কল্পনাপ্রসূত বা অভিনব কোনোটি নয়। দক্ষিণ আফ্রিকা, তিউনিসিয়া এবং নেপাল প্রত্যেকেই তাদের রাজনৈতিক রূপান্তরের সময় এ ধরনের কাঠামোর বিভিন্ন রূপ গ্রহণ করেছিল। এসব উদাহরণ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে বৈধতা কেবল কারা নির্বাচনে জয়ী হয়েছে, তা দিয়ে নির্ধারিত হয় না; বরং নির্বাচনের পর তারা কী করার ম্যান্ডেট নিয়ে এসেছে, সেটিও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
আজকের বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, শর্তসাপেক্ষ বৈধতা একটি বাস্তবসম্মত পথ নির্দেশ করে, যা ভুল বিকল্পের ফাঁদ এড়িয়ে চলে। এটি যেমন সংস্কারের নামে নির্বাচন বিলম্বিত করে না, তেমনি সংস্কার ম্যান্ডেট ছাড়া তড়িঘড়ি করে নির্বাচনের দিকেও ধাবিত হয় না। এটি একদিকে জনগণের পরিবর্তনের আহ্বানে সাড়া দেয়, অন্যদিকে গণতন্ত্রে ‘গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া’ বলতে সাধারণত যা বোঝানো হয়, তার প্রতিও পূর্ণ শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে।

এই প্রেক্ষাপটে, শর্তসাপেক্ষ বৈধতা কেবল একটি কৌশল নয়, বরং একটি বাস্তবভিত্তিক গণতান্ত্রিক সমাধান, যা একদিকে গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে সম্মান জানায়, অন্যদিকে সংস্কারকে সামষ্টিক সম্মতির ভিত্তিতে প্রোথিত করে। এর শক্তি নিহিত ‘নির্বাচন বনাম সংস্কার’ এই ক্লান্তিকর দ্বৈততার সুস্পষ্ট প্রত্যাখ্যানে। বাংলাদেশের প্রয়োজন উভয়ই– একটি নির্বাচন, যা জনগণের কণ্ঠকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবে; এবং এমন একটি সংস্কার প্রক্রিয়া, যা নিশ্চিত করবে এই কণ্ঠ আর কখনও স্তব্ধ করা যাবে না। এই প্রেক্ষাপটে, একটি নির্বাচিত সরকারের শর্তসাপেক্ষ বৈধতা হতে পারে সেই কার্যকর ও গ্রহণযোগ্য পথ, যা বহুল আলোচিত সাংবিধানিক গণপরিষদকে অপ্রাসঙ্গিক করে তুলতে সক্ষম।

ড. কাজী এ এস এম নুরুল হুদা: সহযোগী অধ্যাপক, দর্শন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়,
 huda@du.ac.bd।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাই আন্দোলনকে ‘তথাকথিত’ বলায় ঢাবি ছাত্রদল সভাপতির দুঃখপ্রকাশ
  • ঐক্য-অনৈক্যের রাজনীতি ও ক্ষমতার ভারসাম্য
  • সিদ্ধিরগঞ্জে মহাসড়কে বৈষম্য বিরোধী ও এনসিপির বিক্ষোভ 
  • প্রাইম এশিয়া শিক্ষার্থী হত্যা, ছাত্রদল মিডিয়া ট্রায়ালে লিপ্ত হয়েছে: উমামা ফাতেমা  
  • প্রয়োজন বহুপক্ষীয় সক্রিয়তা
  • অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভেবে রাজনীতিকদের কী লাভ?
  • যশোরে আত্মগোপনে থাকা আ’লীগ নেতাদের বাড়িতে পুলিশের অভিযান
  • গণপরিষদের বদলে সংস্কার বাস্তবায়নে সময়সীমা
  • যারা নির্বাচনের কথা বলে তারা লুটেরা ও মাফিয়া শ্রেণি: ফরহাদ মজহার