জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার বিজয়ী নির্মাতা জাহিদুর রহিম অঞ্জনের মরদেহ দেশে এসেছে। আজ বৃহস্পতিবার আজিমপুর কবরস্থানে মায়ের কবরের পাশে শেষ শয্যায় শায়িত হবেন প্রয়াত এই নির্মাতা।
গত সোমবার রাত সাড়ে আটটায় ভারতের বেঙ্গালুরুতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী এই পরিচালক। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬১ বছর। লিভারের জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি। বেঙ্গালুরুতে অঞ্জনের চিকিৎসা শুরু হলে অঞ্জনের শরীরে একটি অস্ত্রোপচারও হয়।
এরপর থেকে তাঁর শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে শুরু করে। সব চেষ্টা ব্যর্থ করে তিনি চিরবিদায় নেন। বুধবার সন্ধ্যায় প্রয়াত নির্মাতার মরদেহ দেশে আনা হয়। সেখান থেকে বোন তন্নির বাসা ইস্কাটনে নিয়ে যাওয়া হয়। রাতে স্থানীয় মসজিদে গোসল শেষে প্রথম জানাজা হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন নির্মাতা আকরাম খান, সুরকার ও গীতিকার প্রিন্স মাহমুদসহ অনেকে। জানাজা শেষে তাঁর মরদেহ রাখা হয় লাশবাহী বিশেষ অ্যাম্বুলেন্সে।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে অঞ্জনের মরদেহ তাঁর কর্মস্থল স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে শ্রদ্ধা জানানোর পর জানাজা হবে। এরপর জোহরের নামাজের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদে আরেকটি জানাজা হওয়ার কথা রয়েছে। সেখান থেকে শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে নেওয়া হবে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য। শেষে নেওয়া হবে আজিমপুর কবরস্থানে। সেখানে মায়ের কবরের পাশে শায়িত হবেন গুণী এ নির্মাতা।
কথাসাহিত্যিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘রেইনকোট’ গল্প অবলম্বনে পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা ‘মেঘমল্লার’ নির্মাণ করেন অঞ্জন। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে মুক্তি পায় সিনেমাটি। এটি ছিল তার প্রথম ফিচার ফিল্ম। প্রথম ছবির জন্যই তিনি ‘শ্রেষ্ঠ পরিচালক’ ও ‘শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা’ হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।
সরকারি অনুদানে সর্বশেষ তিনি নির্মাণ করেন ‘চাঁদের অমাবস্যা’। শুটিং সম্পন্ন করে গেল বছরেই সিনেমাটি মুক্তির পরিকল্পনা থাকলেও দেশের সার্বিক অবস্থা এবং নিজের অসুস্থতার কারণে মুক্তি দিতে পারেননি। তবে খুব শিগগির সিনেমাটি দর্শকদের সামনে নিয়ে আসতে আগ্রহী ছিলেন।
এখন নির্মাতাকে ছাড়াই দর্শক দেখবেন চলচ্চিত্রটি।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র আন্দোলন কর্মী, শর্টফিল্ম ফোরামের সাবেক সভাপতি ও চলচ্চিত্র শিক্ষকের মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শোক ও স্মৃতিচারণা করছেন চলচ্চিত্রের সহকর্মী থেকে অগণিত মানুষ।
জাহিদুর রহিম অঞ্জন স্ত্রী কথাসাহিত্যিক শাহীন আখতার, দুই ভাই, এক বোন ও অসংখ্য বন্ধু-স্বজন রেখে গেছেন। তিনি ভাষাসৈনিক মিজানুর রহিমের সন্তান। ১৯৬৪ সালের ২৭ নভেম্বর ফরিদপুরের রাজবাড়ীতে তাঁর জন্ম।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চলচ চ ত র র মরদ হ প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
‘ও’ পজিটিভের বদলে ‘বি’ পজিটিভি রক্ত পুশ, রোগীর মৃত্যু
মানিকগঞ্জে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় চিকিৎসাধীন এক রোগীর শরীরে ‘ও’ পজিটিভের বদলে ‘বি’ পজিটিভ রক্ত পুশ করায় সেই রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) বিকেল ৪টার দিকে রক্ত দেওয়ার পর রাত ১০টার দিকে রোগীর মৃত্যু হয়। নিহত ওই রোগীর নাম মো. বিল্লাল। তিনি মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার খাগড়াকুড়ি গ্রামের বাসিন্দা।
এর আগে, গত বুধবার শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি।
আরো পড়ুন:
চোর সন্দেহে গণপিটুনির ২ দিন পর যুবকের মৃত্যু
ধান মাড়াইয়ের সময় বজ্রপাত, নারীর মৃত্যু
রোগীর স্বজনেরা অভিযোগ করে বলেন, হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংক থেকে আমাদের ভুল রক্ত দেওয়া হয়েছে। আমরা সেটি এনে নার্সের কাছে দেওয়ার পর নার্সরা বলেন, ডাক্তারের অর্ডারপত্র লাগবে। ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পর ডাক্তার রক্ত দেখে অর্ডারপত্র দিয়েছেন। এরপর নার্সরা রোগীর শরীরে সেটি পুশ করেন। এরপর থেকেই রোগীর সারা শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়। আমরা তখনো বুঝিনি যে রোগীকে ভুল রক্ত দেওয়া হয়েছে। পরে বাইরের একজন লোক বলেন, রোগীকে ভুল রক্ত দেওয়া হচ্ছে। এরপর আমরা হাসপাতালের নার্স ও ডাক্তারদের অনেক ডাকাডাকি করলেও তারা এসে রোগীর কোনো চিকিৎসা দেননি। তারা তড়িঘড়ি করে সেই রক্তের ব্যাগ ও রক্ত সংক্রান্ত কাগজপত্র নিয়ে চলে যান। পরে রাত ৮টার দিকে আরেকজন ডাক্তার এসে আমাদের রোগীকে ঢাকায় নিয়ে যেতে বলেন। আমরা বলেছি, রোগীকে ঢাকায় নেওয়ার মত অবস্থা আমাদের নেই। এটা একটা সরকারি মেডিকেল, আমাদের রোগীর চিকিৎসা এখানেই করেন। তারপর তারা রোগীকে আর কোনো চিকিৎসা দেয়নি। এটি ভুল রক্ত নাকি সঠিক রক্ত সেটি বোঝার ক্ষমতা তো আমাদের নেই। তারা তিন জায়গায় চেক করে রক্ত দিয়েছে। এক জায়গায় ভুল হতে পারে, তিন জায়গায় তো ভুল হওয়ার কথা না। তাদের ইচ্ছাকৃত অবহেলার কারণেই রোগীর মৃত্যু হয়েছে। আমরা এর সঠিক বিচার চাই।
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, ‘‘বিকেল ৪টার দিকে ডিউটিতে ছিলেন ইন্টার্ন চিকিৎসক ঐশী ও মেডিকেল অফিসার ডা. নূরজাহান। সেসময় রোগীর শরীরে ‘ও’ পজিটিভ রক্তের পরিবর্তে ‘বি’ পজিটিভ রক্ত পুশ করা হয়েছে। এরপর থেকে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। আমি রাত ৮টায় ডিউটি শুরু করেছি। আমি ডিউটি শুরু করার পর যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করেছি। এরপরও রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘রোগীর শরীরে খুব বেশি রক্ত যায়নি। তবে, কাগজপত্র না দেখে রক্ত পুশ করা ঠিক হয়নি। এটি একটি মারাত্মক ভুল।’’
রোগীর মৃত্যু সনদে মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে ওই চিকিৎসক বলেন, ‘‘শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা উল্লেখ করা হয়েছে।’’ ভুল রক্ত পুশ করার বিষয়টি উল্লেখ না করার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে এটি করা হয়েছে।’’
এ বিষয়ে জানতে ইন্টার্ন চিকিৎসক ঐশী ও মেডিকেল অফিসার ডা. নূরজাহানকে খুঁজলেও পাওয়া যায়নি।
মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. শফিকুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
মানিকগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এসএম আমান উল্লাহ বলেন, ‘‘এ ঘটনায় এখনো আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
ঢাকা/চন্দন/রাজীব