আড়াই হাজার ‘মিনি গার্মেন্ট’ নিবন্ধন নেই একটিরও
Published: 27th, February 2025 GMT
মুন্সীগঞ্জে কয়েক দশক ধরে গড়ে উঠেছে তৈরি পোশাকের প্রায় আড়াই হাজার ছোট ছোট কারখানা, যা ‘মিনি গার্মেন্ট’ হিসেবে পরিচিত। কিন্তু এসব কারখানার নেই কোনো নিবন্ধন। সরকারি নীতিমালার আওতায় না থাকায় ন্যায্য মজুরি বঞ্চিত হচ্ছেন প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক।
মজুরি নিয়ে শ্রমিকদের অভিযোগ প্রসঙ্গে মালিকরা বলছেন, ভালো মুনাফা করতে না পারায় তারাও অপারগ। বাজারে পোশাকের দাম না বাড়ায়, শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানো সম্ভব হয় না।
অন্যদিকে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শক অধিদপ্তর সংশ্লিষ্টরা অবশ্য এগুলোকে কারখানা বলতে নারাজ। তারা বলেছেন, পোশাক তৈরি করা হলেও এগুলো মূলত দর্জি দোকান। কোনো নাম-ঠিকানা নেই। তাই তাদের শৃঙ্খলার আওতায় আনা যাচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েক দশক ধরে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার মিরকাদিম পৌরসভা, পঞ্চসার, রামপাল ও বজ্রযোগিনী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে গড়ে ওঠেছে বহু মিনি গার্মেন্ট বা তৈরি পোশাকের ক্ষুদ্র কারখানা। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) হিসাবে, এসব কারখানার সংখ্যা আড়াই হাজারের মতো। শীত মৌসুম, দুর্গাপূজা ও দুই ঈদের আগে এসব কারখানা থাকে জমজমাট। আসন্ন ঈদ সামনে রেখে এখন চলছে কর্মযজ্ঞ। তৈরি হচ্ছে শিশুদের বাহারি ডিজাইনের পোশাক।
শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কাজের চাপের সময় অনেকেই ১৮ ঘণ্টাও কাজ করেন। তবে আশানুরূপ মজুরি পান না তারা। এমনকি সবকিছুর দাম বাড়লেও গত ৫ বছরে বাড়েনি তাদের অনেকের মজুরি। অফ সিজনে কয়েক মাস এসব কারখানা বন্ধ থাকায় আরেক সংকটে পড়তে হয় শ্রমিকদের। বছর শেষে অনেকের ঘাড়ে চাপে ঋণের বোঝা। তারা আরও জানান, একজন শ্রমিক তাঁর সহযোগীকে নিয়ে দৈনিক এক ডজন পোশাক সেলাই করতে পারেন। আকার ভেদে এক ডজন পোশাকের মজুরি পান ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা।
মিরকাদিমের গোয়ালঘুন্নি এলাকার মাহবুব মিনি গার্মেন্টের শ্রমিক মো.
মিনহাজের মতো একাধিক শ্রমিকের একই ভাষ্য। শাঁখারীবাজার এলাকার এক কারখানার শ্রমিক রাজীব হাসান বলেন, ‘এখন ঈদের মাল তৈরি করছি। এই সময়ে চাহিদা অনেক বেশি থাকে, এ জন্য কাজের অনেক চাপ।’
সদটের সুখবাসপুর এলাকার রাসেল মিনি গার্মেন্টের শ্রমিক (কাটিং মাস্টার) আবেদ আলী জানান, এখানে ১১ বছর ধরে কাজ করেন। মাসে বেতন পান সাড়ে ১১ হাজার টাকা। দেশের সব শ্রমিকদের বেতন বাড়লেও তাদের এখানে বেতন বাড়েনি। ফলে ঋণ নিয়ে সংসার চালাতে হয়।
রাসেল গার্মেন্টের নারী শ্রমিক শিলা আক্তার জানান, তারা প্রতিদিন ৩০ ডজন করে মালপত্র প্যাকেট করেন। কাজ বেশি থাকলে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা আয় হয়। কাজ না থাকলে তা অর্ধেকে নেমে যায়।
মিরকাদিম পৌরসভার গোয়ালঘুন্নি এলাকার মাহবুব আলম মিনি গার্মেন্টের মালিক মাহবুব আলম জানান, এখন তারা ঈদের পোশাক তৈরি করছেন। বর্তমানে কাঁচামালের দামও অনেক বেড়ে গেছে। এই ঊর্ধ্বমূল্যের জন্য সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় পোশাক শিল্প।
রাসেল মিনি গার্মেন্টের মালিক রাসেল শেখ জানান, এখন ঈদের কাপড় তৈরি হচ্ছে। এগুলো নারায়ণগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ, ঢাকার সদরঘাট, টাঙ্গাইলের করোটিয়াহাট, কিশোরগঞ্জের ভৈরবহাটেই মূলত বেশি বিক্রি করেন। এই ব্যবসায় প্রচণ্ড পরিশ্রম করতে হয়। এখানে প্রচুর খরচ হয় কিন্তু সে অনুপাতে লাভ হয় না।
মুন্সীগঞ্জ বিসিকের উপ-ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, মুন্সীগঞ্জ সদরে অসংখ্য মিনি গার্মেন্ট রয়েছে। প্রায় আড়াই হাজার রেডিমেড কারখানা রয়েছে, যারা পোশাক তৈরি করে থাকে। এসব কারখানায় প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক পোশাক তৈরির কাজ করেন।
এসব কারখানায় শ্রমিক মজুরির বিষয়ে জানতে চাইলে মুন্সীগঞ্জ কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শক অধিদপ্তরের উপমহাপরিদর্শক জাবেদা খাতুন জানান, মুন্সীগঞ্জের সদরের ২ হাজার ৫০০ ক্ষুদ্র কারখানার নিবন্ধন নেই। এসব কারখানাকে নোটিশ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে তাদের জবাব দিতে সময় বেঁধে দেবেন। এ ছাড়া শ্রমিকদের বেতনের বিষয়ে মালিক-শ্রমিকদের ডেকে সমাধান করার চেষ্টা করা হবে। বেতনের বিষয়ে কোনো শ্রমিক অভিযোগ করেনি। তার পরও বিষয়টি নজরদারি করা হবে বলে জানান তিনি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক জ কর ন এল ক র সহয গ
এছাড়াও পড়ুন:
ইমোতে প্রেম: চট্টগ্রামে তরুণী খুন, প্রেমিক গ্রেপ্তার
ব্রাহ্মণবাড়িয়া এক সন্তানের জননী টুম্পা আক্তারের সাথে ইমো অ্যাপে প্রেম গড়ে ওঠে চট্টগ্রামে বসবাসকারী বেকার ইব্রাহিম হাওলাদারের। এই প্রেমের সূত্র ধরেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে চট্টগ্রামে চলে যান টুম্পা। বিয়ে না করে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে থাকেন নগরীর বন্দর থানার কলসিদীঘি এলাকায়।
তবে সুখের হয়নি সে জীবন। অন্য পুরুষের সাথে টুম্পার সম্পর্ক থাকতে পারে। সবসময় এমন সন্দেহ করতেন ইব্রাহিম। সেই সন্দেহ থেকেই একদিন টুম্পার গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাস রোধ করে হত্যা করে ইব্রাহিম।
সম্পুর্ণ ক্লু লেস এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করে ঘাতক ইব্রাহীমকে গ্রেপ্তার করেছে চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশ।
শনিবার (২৯ মার্চ) দুপুরে নগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত তুলে ধরেন উপ-কমিশনার (ডিবি-পশ্চিম) মোহাম্মদ মাহবুব আলম খান।
মাহবুব আলম খান জানান, গত ২৬ মার্চ সন্ধ্যায় বন্দর থানার ওয়াসিম চৌধুরী পাড়া পেলাগাজীর বাড়ি আলী সওদাগরের বিল্ডিংয়ের নিচ তলার একটি বাসা থেকে এক অজ্ঞাত নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়। এরপরই ঘটনার ছায়াতদন্ত শুরু করে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। বাড়ির মালিকের কাছে ভাড়াটিয়ার তথ্য না থাকায় তাৎক্ষণিক পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পরে একই এলাকার একটি দোকানের ক্যাশমেমো থেকে পাওয়া নম্বর ধরেই এগোয় তদন্ত। এরপরই শনাক্ত হয় ইব্রাহিম; যিনি চট্টগ্রাম থেকে বাগেরহাট যাচ্ছিলেন।
পুলিশ জানায়, ইব্রাহিমকে রাজধানীর পোস্তগোলা ব্রিজ এলাকায় বাসের ভেতর থেকে গোয়েন্দা পুলিশ আটক করতে সক্ষম হয়। তারপর তাকে জিজ্ঞাসাবাদে উদঘাটিত হয় খুনের রহস্য।
পুলিশ জানায়, ইমোতে প্রেমে সম্পর্কের সূত্র ধরে টুম্পা ও ইব্রাহীম বিয়ে ছাড়াই স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বাসা ভাড়া নিয়ে সংসার করছিলেন। ভিকটিম টুম্পা আক্তার একজন গার্মেন্টসকর্মী। তার পরিচয় মূলত ইব্রাহিমকে গ্রেপ্তারের পরই জানতে পারি। তারা বন্দর এলাকার ওই বাসায় লিভ টুগেদার করত। কাগজে-কলমে তাদের বিয়ে হয়নি। দুজন ব্যক্তিকে স্বাক্ষী রেখে তাদের মুখে মুখে বিয়ে হয়।
টুম্পা আক্তার যখন কর্মস্থলে যেতেন ইব্রাহিম মোবাইল নিয়ে যেতে দিতেন না। মোবাইল বাসায় রেখে যেতেন। বাসায় রাখার পর অনেকসময় তার ফোনে পুরুষ কণ্ঠে কল আসত। ইব্রাহিমের সন্দেহ হয় তার কথিত স্ত্রীর আরও কয়েকজনের সাথে সম্পর্ক থাকতে পারে। এই সন্দেহের জেরে তাদের মধ্যে মানসিক দূরত্ব তৈরি হয়।
ঘটনার দিন এই বিষয় নিয়েই তাদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক হয়। এক পর্যায়ে ইব্রাহিমের মাথার কাছে একটি শেলফে থাকা রশি দিয়ে টুম্পার গলা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। ওই সময় টুম্পার বাচ্চাটি পাশের রুমে ঘুমাচ্ছিল। কিছুক্ষণ পর বাচ্চাটি ঘুম থেকে উঠলে তাকে একজন মহিলার কাছে দিয়ে ইব্রাহিম ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।
এ হতাকাণ্ডের ঘটনায় বন্দর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। গ্রেপ্তার আসামিকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
ঢাকা/রেজাউল/এস