কলমাকান্দা উপজেলায় তিন দফায় মেয়াদ বাড়িয়েও গজারমারী থেকে খারনৈ ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত সাড়ে ৫ কিলোমিটার সড়কের সংস্কার কাজ শেষ হয়নি। ১০ মাসের কাজ প্রায় চার বছর চলে গেলেও এখন পর্যন্ত অর্ধেক কাজ বাকি। ভাঙাচোরা সড়ক দিয়েই হেলেদুলে চলছে যানবাহন। সড়কের সেতুগুলোর কাজও শেষ হয়নি। ফলে স্থানীয়রা সেতুর ওপর বাঁশের চাটাই দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও ঠিকাদারের সীমাহীন গাফিলতির কারণে এমনটা হচ্ছে। তবে উপজেলা প্রকৌশলীর দাবি, দ্রুত কাজ শেষ করতে ঠিকাদারকে বারবার তাগাদা দেওয়া হচ্ছে।

উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ের তথ্যমতে, গজারমারী থেকে খারনৈ ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৫ কিলোমিটার সড়কের সংস্কার কাজ পায় মেসার্স বিলকিছ এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ব্যয় ধরা হয় ৬ কোটি ৩৫ লাখ ৫৮ হাজার ৪৮২ টাকা। ২০২১ সালের ৮ এপ্রিল কাজ শুরু হয়ে ২০২২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে কাজটি শেষ করতে পারেনি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। এ কারণে সময় বাড়ানো হয় তিন দফায়। সে অনুযায়ী ২০২৪ সালের ৩০ আগস্ট কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু এখনও বাকি রয়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ কাজ।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, শুরু থেকেই সড়কে ঢিমেতালে কাজসহ নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করেন ঠিকাদার। এ নিয়ে স্থানীয় লোকজন প্রতিবাদ করলেও কোনো কাজ হয়নি।

খারনৈ এলাকার বাসিন্দা রহমত আলী বলেন, ঠিকাদার সড়ক সংস্কারে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করছেন। এ ছাড়া তিন দফা মেয়াদ বাড়িয়েঅর্ধেক কাজ বাকি রেখে পালিয়ে গেছেন। স্থানীয়রা বারবার প্রতিবাদ করলেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, সড়ক সংস্কার কাজ বন্ধ রয়েছে। যানবাহন চলাচল করায় আশপাশের এলাকা ধুলায় ছেয়ে যাচ্ছে। ধুলা থেকে কিছুটা রক্ষা পেতে ইজিবাইক, অটোরিকশা, রিকশা, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনে থাকা যাত্রীরা নাক-মুখ ঢেকে রেখেছেন।

সড়কের বিভিন্ন অংশে ইটের খোয়া উঠে গেছে। অনেক জায়গায় সৃষ্টি হয়েছে বেশ কিছু গর্ত। তা ছাড়া সড়কের সেতুগুলোর কাজও শেষ হয়নি। ফলে স্থানীয় লোকজন সেতুর ওপর বাঁশের চাটাই দিয়ে চলাচল করছে।

গজারমারী গ্রামের আবুচান বলেন, ‘১০ মাসের কাজ চার বছর হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত শেষ হয়নি। এই সড়কে চলাফেরা করতে গেলে ধুলায় কাপড়চোপড় ময়লা হয়ে যায়। কোনো যানবাহনও সহজে যেতে চায় না। গেলে বেশি ভাড়া দিতে হয়। এই সড়ক দিয়ে খারনৈ, লেংগুরা ও নাজিরপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে প্রতিদিন অন্তত ২০ হাজার মানুষ চলাচল করে।’

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী শামসুদ্দীন হায়দারের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি।

তবে কলমাকান্দা উপজেলা প্রকৌশলী মমিনুল ইসলাম বলেন, এই সড়কের সংস্কার কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য ঠিকাদারকে বারবার তাগাদা দেওয়া হচ্ছে। ঠিকাদার কয়েক দিনের মধ্যে আবারও কাজ শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন। না করলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ ষ হয়ন সড়ক র স ই সড়ক উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

সাতছড়ি উদ্যানের আয়তন বাড়লো

হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাটের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশের সবচেয়ে ছোট বন। মাত্র ২৪৩ হেক্টর বা ৬০০ একর। ছোট বন হওয়ায় বন্যপ্রাণীর চলাফেরা ও রক্ষায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

এ বিবেচনায় নিয়ে সাতছড়ি সহব্যবস্থাপনা কমিটি ও বন বিভাগের প্রস্তাবে বন পরিবেশ ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় সম্প্রতি জাতীয় উদ্যানের ৬শ’ হেক্টর আয়তন বাড়ানোর প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে। ফলে এখন থেকে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের আয়তন হচ্ছে ৮৪৩ হেক্টর। 

বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে এসব তথ্য দেন সাতছড়ি বন্যপ্রাণী রেঞ্জের বিট কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ।

পার্শ্ববর্তী জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে উদ্যানটির আয়তন তিনগুণ বাড়ানো হলো। প্রকৃতিবিদরা বলছেন, এই জাতীয় উদ্যান সম্প্রসারণের ফলে বন্যপ্রাণীরা উপকৃত হবে।

জানা যায়, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের এতসব সমৃদ্ধ বন্যপ্রাণীকে সংরক্ষণ ও বাঁচিয়ে রাখতে সাতছড়ি সহব্যবস্থাপনা কমিটি জাতীয় উদ্যানের আয়তন বাড়ানোর একটি প্রস্তাব পাঠায় বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সিলেটে। তৎকালীন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী প্রস্তাবটি বন অধিদপ্তরে পাঠালে অধিদপ্তর থেকে যাচাই বাছাই শেষে মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। মন্ত্রণালয় সম্প্রতি উদ্যানের আয়তন বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন করে।

প্রকৃতির আপন মায়ায় সুনিপুণভাবে বেড়ে ওঠা এই বনটি চুনারুঘাট উপজেলা ও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের ত্রিপুরা সীমান্তের গা ঘেঁষে অবস্থিত। মিশ্র চিরসবুজ এই বনটি আঁকাবাঁকা ৭টি পাহাড়ি ছড়া ও উঁচু-নিচু পাহাড়ি টিলায় পরিবেষ্টিত। বনাঞ্চলটি ঘিরে ৯টি চা বাগান রয়েছে। পশ্চিমে সাতছড়ি চা বাগান ও পূর্বদিকে চাকলাপুঞ্জি চা বাগান অবস্থিত।

বনবিভাগ সংশ্লিষ্টরা জানায়, সাতছড়িতে প্রায় ২৪ প্রজাতির স্তন্যপায়ী রয়েছে। বড় আকারের স্তন্যপায়ীদের মধ্যে রয়েছে লেজবিহীন স্তন্যপায়ী উল্লুক। ইতোমধ্যেই সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান পৃথিবীর অনেক দেশ থেকে হারিয়ে যাওয়া এই মহাবিপন্ন উল্লুকের অন্যতম উপযুক্ত আশ্রয়স্থল হিসেবে গণ্য। 

অন্যান্য স্তন্যপায়ীর মধ্যে রয়েছে- বিপন্ন প্রজাতির মায়া হরিণ, কালো কাঠবিড়ালি, খরগোশ, বন্যশুকর, শিয়াল, মেছোবিড়াল, চিতা বিড়াল, বনবিড়াল, গন্ধগোকুল, সজারু, হলদে-গলা মার্টিন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারি অধ্যাপক ও মাংসাশী প্রাণিবিষয়ক গবেষক মুনতাসির আকাশ জানান, এটি খুবই সমৃদ্ধ একটি বন। এখানে অনেক বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী রয়েছে। এই বনের আয়তন বাড়ানোর ফলে বন্যপ্রাণীদের থাকার জায়গা বাড়ল, সেই সঙ্গে এদের সংরক্ষণে সহযোগী হিসেবে কাজ করবে এই উদ্যোগ।

সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে প্রায় ২৮ প্রজাতির সরীসৃপ ও ১০ প্রজাতির উভচর প্রাণী রয়েছে। এদের মধ্যে সবুজ বোড়া বা পিট ভাইপার, কিং কোবরা, অজগর, মক ভাইপার, খয়ে গোখরা, শঙ্খিনী, লাউডগা, বাদামি গেছো সাপ, তক্ষক, গিরগিটি, চিতি বন আঁচিল, গুইসাপ, হলুদ পাহাড়ি কচ্ছপসহ রয়েছে নানান সরীসৃপ।

উভচরের মধ্যে চিত্রিত আঁচিল ব্যাঙ, ভেনপু ব্যাঙ, মুরগিডাকা ব্যাঙসহ রয়েছে ঝিঁঝিঁ ব্যাঙ, সোনা ব্যাঙ, গেছো ব্যাঙ, দুই দাগী বাঁশি ব্যাঙসহ নানা প্রজাতির ব্যাঙ।

বন্যপ্রাণী রক্ষায় সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের আয়তন বৃদ্ধি করায় কৃর্তপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ জেলা শাখার সাদারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল। তিনি বলেন- ‘বন রক্ষা পেলে বন্যপ্রাণী বৃদ্ধি পাবে। এখানে কর্তৃপক্ষ দায়িত্বশীল চিন্তা থেকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’

ঢাকা/মামুন/টিপু 

সম্পর্কিত নিবন্ধ