‘বাবা গো আমার মেয়েডা কী দোষ করছিল? দুই মাস ধইরা বিয়া অইছে আমার মেয়েডার। আমার মেয়েডারে ওরা মাইরা ফালাইছে। আমার মা কত না কষ্ট করছে। আমার মার বুকে, কমরে, পিঠে মারছে।’ এভাবেই বিলাপ করছিলেন নববধূ মাকসুদার মা রেহেনা খাতুন।

মাকসুদার বাড়ি ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার বাঘবেড় ইউনিয়নের খড়িয়া এলাকায়। সে ওই এলাকার হযরত আলীর মেয়ে। দুই মাস আগে পাশের চানপাগার এলাকার তোতা মিয়ার ছেলে নাঈমের সঙ্গে বিয়ে হয় মাকসুদার। প্রেমের বিয়ে হলেও পরিবার মেনে নিলে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বামীর সংসারে যায় মাকসুদা। সংসারও ভালো চলছিল। হাতে লাগা মেহেদী রং এখনও শুকায়নি। এরই মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ওই নববধূর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। স্বামীর বাড়ি থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ। তবে এ ঘটনায় মেয়ের বাবা একটি হত্যা মামলা করেছেন। এ মামলায় মাকসুদার স্বামী ও শাশুড়িকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

জানা গেছে, টানাপোড়েনের সংসারে সহযোগিতা করতে ঢাকার গুলশান এলাকায় গৃহকর্মীর কাজ নেন মাকসুদা। সেখানে কিছুদিন কাজ করার পর পরিচয় হয় পাশের এলাকার নাঈমের সঙ্গে। এক পর্যায়ে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। শুধু তাই নয়, পরিবারকে না জানিয়ে কোর্ট ম্যারেজ করে বাড়ি ফেরেন। পরে স্থানীয়দের সুপারিশে আনুষ্ঠানিকভাবে দুই পরিবারের সম্মতিতে স্বামীর সংসারে যান মাকসুদা। সংসারও ভালোই চলছিল। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে স্বামী নাঈম গরুর জন্য ঘাস কাটতে মাঠে চলে যান বলে দাবি তাঁর। ফিরে এসে দেখতে পান ঘরের দরজা বন্ধ। দরজা ভেঙে ভেতরে গিয়ে দেখেন মাকসুদার ঝুলন্ত লাশ। তবে মাকসুদার পরিবারের দাবি, তাদের মেয়ে আত্মহত্যা করেনি। পরিকল্পিতভাবে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে।

রেহেনা খাতুন বলেন, ‘আমার মা তো মরতো না, পরে গলার মধ্যে উরনা পেঁচাইয়া মারছে। মাইরা ঝুলায়া রাইখা মাইসেরে কইছে সে নিজে মইরা গেছে। আমার মা মরতে পারে না। ওরা মা পুলা মিল্লা আমার মাইয়াডারে মাইরা ফালাইছে।’

মাকসুদার চাচা শহীদুল্লাহর দাবি, এটা আত্মহত্যা হতে পারে না, মেয়ের শ্বশুর-শাশুড়ি, ভাশুর ও জামাই মিলে এ হত্যাকাণ্ড ঘটান। নিজেরাই গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যা বলে প্রচার করেন। তিনি বলেন, ‘আমি নিজে ভাতিজিকে দেখেছি, তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। আমরা সঠিক তদন্তসাপেক্ষে বিচার চাই।’

বাঘবেড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেজবাহ উদ্দিন মামুন জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এটা আত্মহত্যা নয়। অন্য কিছু হতে পারে।

ধোবাউড়া থানার ওসি আল মামুন সরকার বলেন, ‘এ ঘটনায় লাশ উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ময়মনস হ আম র ম য় ড পর ব র

এছাড়াও পড়ুন:

গাজীপুরে দুই মহাসড়কে বেড়েছে যানবাহনের চাপ, কিছু জায়গায় ধীরগতি

আর মাত্র কয়েক দিন পরই উদ্‌যাপিত হবে পবিত্র ঈদুল ফিতর। এর মধ্যে শুরু হয়ে গেছে ঈদযাত্রা। ঘরমুখী মানুষ ও যানবাহনের চাপ বেড়েছে ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে। আজ বুধবার সকাল থেকে এই দুই মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ বাসস্ট্যান্ডগুলোতে যাত্রীদের ভিড় দেখা যাচ্ছে। কিছু কিছু পয়েন্টে রয়েছে যানবাহনের ধীরগতি।

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ঘুরে দেখা গেছে, মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তা, ভোগড়া বাইপাস মোড়, বোর্ড বাজার, স্টেশন রোডসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে অতিরিক্ত ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। যাত্রীর তুলনায় যানবাহন কম থাকায় অনেককে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। যাঁদের আগে ছুটি হয়েছে, তাঁরা গতকাল মঙ্গলবার রাত থেকে গ্রামের বাড়ির পথে ছুটতে শুরু করেছেন। আজ সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত একই অবস্থা দেখা গেছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মহাসড়কে ঘরমুখী মানুষ ও যানবাহনের সংখ্যাও বেড়েছে। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তাসহ আশপাশে যানবাহনের চাপ দেখা গেছে।

একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন মোফাজ্জল হোসেন। নগরীর ভোগড়া এলাকায় কথা হয় তাঁর সঙ্গে। মোফাজ্জল বলেন, চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় বিআরটির নির্মাণ কাজ এখনো শেষ হয়নি। যত্র–তত্র মালামাল ফেলে রাখা হয়েছে। এ কারণে যানবাহনগুলোর চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ ছাড়া ময়মনসিংহগামী সড়কের উড়ালসড়ক যেখানে নেমেছে, সেখানেও অবৈধ পার্কিং এবং যাত্রী ওঠানামার কারণে প্রায়ই যানজট হচ্ছে।

ভিআইপি ইন্টারন্যাশনাল পরিবহনের একটি বাসের চালকের সহযোগী খাইরুল ইসলাম বলেন, উড়ালসড়কের ওপর দিয়ে এসে যাত্রী নামানোর জন্য বাস থামাতে হয়। বাসস্ট্যান্ড নেই, তাই যাঁর যেখানে খুশি, সেখানেই দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানো ও নামানো হয়। এতে কিছুটা যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।

অন্যদিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড়ে যাত্রী ওঠানামা করানোর কারণে সকাল থেকেই যানবাহনের ব্যাপক চাপ ছিল। তবে চন্দ্রা থেকে কালিয়াকৈর অংশে যানবাহনের তেমন চাপ না থাকলেও কালিয়াকৈর-নবীনগর সড়কে বিকেল থেকে যানবাহনের সারি দেখা গেছে। হাইওয়ে পুলিশ বলছে, চন্দ্রা ত্রিমোড়ে যাত্রীবাহী বাসগুলো ইচ্ছেমতো থামিয়ে যাত্রী ওঠানোর ফলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। এতে পেছনের গাড়িগুলো স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারছে না।

আরও পড়ুনযমুনা সেতু সড়কে চাপ বাড়লেও যানজট নেই, এক দিনে টোল ২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা৩ ঘণ্টা আগে

পরিবহনমালিক ও শিল্পকারখানা সূত্র জানা গেছে, অল্প কিছু কারখানায় এরই মধ্যে ঈদের ছুটি হয়ে গেছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে পর্যায়ক্রমে শিল্পকারখানায় ছুটি হবে। এরপর কিছু কারখানা শুক্রবার এবং বাকি কারখানায় ঈদের ছুটি হবে শনিবার। মূলত আগামীকাল থেকেই দুই মহাসড়কে যাত্রীদের চাপ কয়েক গুণ বাড়বে। অধিকাংশ কারখানা ছুটি হয় একসঙ্গে। তখন হাজার হাজার ঘরমুখী মানুষ মহাসড়কে নেমে আসবেন। ওই সময়টায় সড়কে যাত্রীর চাপের পাশাপাশি যানবাহনের সংকট এবং যানজটের আশঙ্কা করছেন পরিবহনসংশ্লিষ্ট ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের চৌহালীতে যাচ্ছিলেন ওমর ফারুক নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘ফুড কোম্পানির মার্কেটিংয়ে কাজ করি। পরিবার নিয়ে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়েছি। আজ মহাসড়কে কোনো ভোগান্তি নেই। আশা করছি, আরামে বাড়িতে যেতে পারব।’ পাবনার সাথিয়ার রিনা খাতুন বলেন, ‘আমার হাজবেন্ডের ছুটি শুক্রবার থেকে। তখন যানজট হবে। এ জন্য আজ আমি সন্তানদের নিয়ে বাড়িতে যাচ্ছি।’

কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা এলাকার পোশাক কারখানার শ্রমিক হাকিম মিয়া বলেন, ‘কারখানা ছুটি হবে আরও এক দিন পর। তখন বাসে অনেক ভিড় হবে। তাই স্ত্রী ও দুই সন্তানকে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিচ্ছি। এখনই বাস পেতে অনেক সমস্যা হচ্ছে। ভাড়াও আগের চেয়ে বেশি নিচ্ছে।’

আরও পড়ুনঈদযাত্রায় সদরঘাট টার্মিনালে যাত্রীর চাপ নেই২ মিনিট আগে

নাওজোর হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রইছ উদ্দিন বলেন, যানজট প্রতিরোধে পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আজ কিছুটা যাত্রীর চাপ বেড়েছে। আগামীকাল বিকেল থেকে যাত্রীর চাপ শুরু হবে। যানজট নিরসনে হাইওয়ে পুলিশ, থানা-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্বপালন করছেন।

সিরাজগঞ্জগামী সেবা পরিবহনের চালক হারুন অর রশিদ বলেন, ‘সড়কে অনেক গাড়ি থাকলেও যানজট নেই। তবে চন্দ্রা এলেই গাড়ি যেন আর আগায় না।  বাসগুলো দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠাতে সময়ক্ষেপণ করছে। এ কারণে পেছনের বাসগুলো সামনে আগাতে পারছে না।’

গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক) এস এম আশরাফুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘মহানগরীর টঙ্গীর চেরাগ আলী, কলেজ গেট, ভোগড়া, চান্দনা চৌরাস্তাসহ বেশ কয়েকটি স্থানে যানজট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যানজট নিরসনে সাড়ে ৩০০ পুলিশ সদস্য দায়িত্বপালন শুরু করেছেন।’

আরও পড়ুনঢাকা-সিলেট মহাসড়কে তিন ঘণ্টা ছিল ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট, ভোগান্তি৩ মিনিট আগে

এদিকে আজ দুপুরে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক পরিদর্শন করেন হাইওয়ে পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি দেলোয়ার হোসেন মিয়া।এ সময় তিনি বলেন, ফিডার রোডে তিন চাকার গাড়ি উঠতে পারবে। মহাসড়কে উঠলেই তা অবৈধ হয়ে যাবে। ৪ হাজারের অধিক পুলিশ সদস্য, ৮২০টি টহল দল, ৩০০টির অধিক চেকপোস্ট, মোটরসাইকেল প্যাট্রলিং, ড্রোন মনিটরিং ও ওয়াচ টাওয়ারের সহায্যে মহাসড়কে শৃঙ্খলা বিধান করা হবে। খোলা ট্রাক ও বাসের ছাদে ভ্রমণ থেকে বিরত থাকতে যাত্রীদের নিরুৎসাহিত করেছেন।

অতিরিক্ত আইজিপি আরও বলেন, চালকদের ক্লান্ত অবস্থায় গাড়ি চালাতে নিষেধ, ওভারটেকিং থেকে বিরত থাকা এবং দ্রুতগতিতে গাড়ি চালাতেও বারণ করেছেন। লাইসেন্সবিহীন চালকদের দিয়ে গাড়ি না চালাতেও বাসমালিকদের তিনি নির্দেশনা দিয়েছেন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি আবুল কালম আজাদ, ডিআইজি শফিকুর রহমান, ডিআইজি হাবিবুর রহমান, ডিআইজি রুখফাত সুলতানাসহ পুলিশের ঊর্ধতন কর্মকর্তারা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজীপুরে ৬৬ ভাগ কারখানা ছুটি, মহাসড়কে থেমে থেমে যানজট 
  • ময়মনসিংহে বহুতল ভবন থেকে ‘লাফিয়ে পড়া’ তরুণীর পরিচয় মিলেছে
  • ময়মনসিংহে বহুতল ভবন থেকে পড়ে তরুণী নিহত
  • ময়মনসিংহে ভোগান্তিবিহীন ঈদযাত্রা, কোনো সড়কে যানজট নেই
  • ময়মনসিংহে বহুতল ভবন থেকে ‘লাফিয়ে পড়ে’ তরুণীর মৃত্যু
  • বাঘায় স্বামীর নির্যাতনে হাসপাতালে প্রতিবন্ধী নববধূ
  • স্থানীয় বাজারে মুরগি জবাই ও বিক্রিতে অবহেলা, টাইফয়েডের ঝুঁকি
  • ‘তুই’ বলে সম্বোধন করায় বাগ্‌বিতণ্ডা, তরুণকে কুপিয়ে হত্যা
  • তুই বলায় যুবককে কুপিয়ে হত্যা 
  • গাজীপুরে দুই মহাসড়কে বেড়েছে যানবাহনের চাপ, কিছু জায়গায় ধীরগতি