Samakal:
2025-04-18@11:52:47 GMT

লেখকের টাকায় বের হয় ৭০ ভাগ বই

Published: 27th, February 2025 GMT

লেখকের টাকায় বের হয় ৭০ ভাগ বই

অমর একুশে বইমেলার ৭০ ভাগ বই প্রকাশিত হয় লেখকের অর্থায়নে। বই ছাপার যাবতীয় খরচ বহন করেন লেখক; অথবা তিনি নির্দিষ্ট সংখ্যক বই কিনে নেন। লেখক-প্রকাশকরা বলছেন, এই ব্যবস্থায় দোষের কিছু নেই। সারা পৃথিবীতে নিজের উদ্যোগে বই প্রকাশের (সেলফ পাবলিকেশন) প্রচলন রয়েছে। তবে এ দেশে অপেশাদার প্রকাশক টাকা পেলে যেনতেন বই ছাপেন। এতে তিনি বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হলেও ভালো বইয়ের বদলে প্রকাশ হচ্ছে ‘জঞ্জাল’।

আবার বছর বছর বইয়ের বিক্রি বাড়লেও সম্মানী পান মাত্র ১০ শতাংশ লেখক। প্রকাশকদের ভাষ্য, বাকি ৯০ শতাংশ লেখকের বই সেই পরিমাণ বিক্রি হয় না, যাতে তাদের সম্মানী দেওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে প্রায়ই ভুল বোঝাবুঝি হওয়ায় লেখক প্রকাশককে দায়ী করেন। বই বের করার আগে লেখক-প্রকাশকের লিখিত চুক্তি হলে এই সমস্যার সৃষ্টি হয় না।

অন্বেষা প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী শাহাদাত হোসেন সমকালকে বলেন, লেখকের টাকায় বই বের করার পরিমাণটা এত বেশি, তার ভিড়ে ভালো বই হারিয়ে যাচ্ছে। প্রতি মেলার চার-পাঁচ হাজার বইয়ের মধ্যে ৫০০টিও মানসম্পন্ন না হওয়ার বড় কারণ এমন প্রকাশনা। একজন প্রকাশকের ৫০টি বইয়ের ৪৫টিই যদি এই প্রক্রিয়ায় বের হয়, তাহলে বাকি পাঁচটি ভালো বই তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। এটা দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। যদি প্রতি মেলায় এক হাজার মানসম্পন্ন বই বের হতো, তখন প্রতিটিই এক-দুই হাজার বা তার চেয়ে বেশি কপি বিক্রি হতো। এটা প্রকাশনার ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তিনি বলেন, কেউ যদি পত্রিকা বের করার জন্য নিবন্ধন নিতে চান, তাঁকে অনেক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। কিন্তু একটা প্রকাশনীর জন্য সেটা অনেক সহজ। এ কারণে যে কেউ হুটহাট একটি প্রকাশনা খুলে স্টল নিয়ে বসে যান। আমার মনে হয়, প্রকাশক হওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের বিধিবিধান ও যোগ্যতার শর্ত থাকলে ভালো হতো। দেশে দুই হাজার তথাকথিত সৃজনশীল প্রকাশক আছেন। কিন্তু বাস্তবে ২০০ মৌলিক প্রকাশক খুঁজে পাওয়া মুশকিল।

একটি শীর্ষ প্রকাশনা সংস্থার কর্মকর্তা বলেন, লেখকের টাকায় বই বের করাটা সমস্যা নয়। কিন্তু আমাদের এখানে ভিন্ন পরিস্থিতি তৈরি হয়। প্রকাশক লেখকের কাছে ৫০ বা ৪০ হাজার টাকা দাবি করেন। লেখক খুশি মনে তা দিচ্ছেন না, দিতে বাধ্য হচ্ছেন। তাহলে তো এটা জিম্মি করার মতো হয়ে গেল। আবার পরে দেখা যায়, প্রকাশক প্রতিশ্রুতি ঠিক রাখছেন না। যত কপি বই দেওয়ার কথা, তা দিচ্ছেন না। ঠিকঠাক বাজারজাত করছেন না। এ নিয়ে লেখক-প্রকাশক পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।

এ বিষয়ে কথাসাহিত্যিক জাকির তালুকদার বলেন, সম্মানীর ক্ষেত্রে প্রকাশকদের অসততা তো আছেই, সেই সঙ্গে অপেশাদারিত্বও আছে। তারা সেইসব লেখকের সঙ্গে অসততা করেন, যাদের বই প্রচুর বিক্রি হয়। কোনো লেখকের পক্ষে জানা সম্ভব নয় যে, তাঁর বই কত কপি ছাপা হলো। হয়তো চুক্তিতে একটা থাকল, ছাপা হলো বেশি। নতুন লেখক হোক বা পুরোনো, বই প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রকাশকের সঙ্গে চুক্তি থাকা উচিত।

তিনি বলেন, আমি যখন লিখতে শুরু করলাম, তখন সম্মানী দেওয়া হতো ১৫ শতাংশ। পরে সেটা কমিয়ে সাড়ে ১৩ শতাংশ করা হলো। এখন ৯ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। 

লেখকের অর্থায়নে বই প্রকাশে কোনো সমস্যা নেই জানিয়ে কথাসাহিত্যিক মোজাফফর হোসেন বলেন, বইয়ের দামে অন্যান্য ব্যয়ের সঙ্গে লেখকের সম্মানীর অংশটিও যুক্ত থাকে। তাই যত কপি বই-ই বিক্রি হোক না কেন, সম্মানী দেওয়া উচিত। লেখককে যদি শুধু লিখে জীবিকা নির্বাহের সুযোগ দেওয়া হয়; তাহলে তিনি যে বইয়ে এক মাস সময় দেন, সেখানে ছয় মাস দেবেন। তিনি আরও ভালো লিখবেন, সেটি আরও বেশি পাঠকের কাছে পৌঁছাবে, পাঠক তাঁকে গ্রহণ করবেন। এগুলো একটির সঙ্গে আরেকটি সম্পর্কিত। এতে লেখক-প্রকাশক-পাঠক সবাই উপকৃত হবেন। 

এ ক্ষেত্রে প্রকাশকদের মত অবশ্য কিছুটা ভিন্ন। একাধিক প্রকাশক জানান, যে লেখকের বইয়ের দুই-তিনটি সংস্করণ বের হয়, প্রকাশক তাদের সম্মানী দিতে উদ্গ্রীব থাকেন। তবে যখন প্রথম সংস্করণ শেষ হয় না বা বিক্রি হতে তিন-চার বছর লেগে যায়; তখন প্রকাশকের খরচ ওঠানো কঠিন। আর সম্মানী না পেয়ে লেখক অভিযোগের আঙুল তোলেন। এটার সহজ সমাধান হলো, চুক্তি ছাড়া বই বের করা যাবে না। চুক্তিতে উল্লেখ থাকবে, নির্দিষ্ট সংখ্যক বই বিক্রি হলে তিনি সম্মানী পাবেন। এই প্রক্রিয়ায় বই বের হলে কারও দায় থাকে না, অভিযোগও ওঠে না।

সঠিক পরিসংখ্যান না পাওয়া গেলেও প্রকাশকদের তথ্য মতে, প্রতি বছর বই প্রকাশ হয়– এমন লেখক প্রায় এক হাজার। তাদের সঙ্গে প্রতি মেলায় আরও প্রায় দুই হাজার অনিয়মিত বা নতুন লেখকের বই প্রকাশ হয়। এই তিন হাজার লেখকের মধ্যে আনুমানিক ৩০০ জন সম্মানী পান।

কথাসাহিত্যিক ইমন চৌধুরী বলেন, প্রকাশকরা অনেক নিয়মিত লেখকের সঙ্গেও চুক্তি করেন না। ৮০ ভাগ বই প্রকাশের ক্ষেত্রে লেখক-প্রকাশকের চুক্তি হয় না। চুক্তিতে দেড় হাজার বই বের করার কথা থাকলেও প্রকাশক যদি দ্বিগুণ ছাপেন, সেটা তদারকির সুযোগ নেই। চুক্তি হলেও সবাই ঠিকঠাক সম্মানী দেন না। হয়তো মোট প্রকাশনা সংস্থার ৫ শতাংশ লেখকের প্রাপ্য বুঝিয়ে দেন।

এ বিষয়ে অনলাইনে বই বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান রকমারি ডটকমের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান সোহাগ সমকালকে বলেন, ‘আমাদের ওয়েবসাইটে লেখক ও প্রকাশকদের আলাদা প্যানেল রাখা হয়েছিল। সেখানে লেখক ও প্রকাশকরা বই বিক্রির তথ্য দেখতে পেতেন। পরে কিছু প্রকাশকের আপত্তির কারণে লেখক প্যানেল বন্ধ রাখা হয়।

এখন যেসব প্রকাশক অনুমতি দিয়েছেন, শুধু তাদের প্রকাশিত বইয়ের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট লেখকের প্যানেল উন্মুক্ত আছে। তবে সেই সংখ্যা খুব বেশি নয়। রকমারি প্রায় আট হাজার প্রকাশনীর সঙ্গে কাজ করলেও দুই হাজার প্রকাশনীর সঙ্গে নিয়মিত লেনদেন হয়।’ লেখকের সম্মানীর বিষয়টি নিয়ে রকমারি ভাবছে বলে জানান তিনি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বইম ল ব র কর র বইয় র

এছাড়াও পড়ুন:

পলাতক আ.লীগ নেতা হলেন বিদ্যালয় কমিটির সভাপতি

খুলনার দৌলতপুর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সভাপতি হিসেবে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মোহাম্মদ আলীকে মনোনীত করেছে যশোর শিক্ষা বোর্ড। গত ৯ এপ্রিল তাকে সভাপতি করে ৪ সদস্যের একটি এডহক কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়।

শেখ মোহাম্মদ আলী খুলনার দৌলতপুর থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক এবং খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) ৫ নম্বর ওয়ার্ডের অপসারিত কাউন্সিলর। ইতঃপূর্বে তিনি ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। গত ৫ আগস্টের পর তার বিরুদ্ধে বিএনপি কার্যালয়ে ভাংচুরসহ বিভিন্ন অভিযোগে একাধিক মামলা হয়েছে। এসব মামলায় তিনি পলাতক রয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, গত ৭ মার্চ সভাপতি পদে ৩ জনের নাম প্রস্তাব করেছিলেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। অন্য দুইজন হলেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা সামসুল আলম ও ব্যাংকার রেজাউল ইসলাম। এরমধ্যে বোর্ড থেকে মোহাম্মদ আলীকে সভাপতি হিসেবে মনোনীত করা হয়।

পলাতক ব্যক্তিকে সভাপতি মনোনীত করা প্রসঙ্গে যশোর শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক ড. মো. কামরুজ্জামান বলেন, বিদ্যালয় থেকে ৩ জনের নাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হয়ে বোর্ডে আসে। সাধারণত তালিকার প্রথমজনকে মনোনীত করা হয়। বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তথ্য গোপন করেছেন বলে ধারণা করছি। এখন মামলার পলাতক আসামির নাম কীভাবে এক নম্বরে আসলো-এটা আমরা তদন্ত করে দেখবো। সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করবো।

বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক বলেন, মোহাম্মদ আলী প্রধান শিক্ষকের পাশাপাশি থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক, কেসিসির ওয়ার্ড কাউন্সিলর, দৌলতপুর বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক, বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটির মহাসচিবসহ অসংখ্য সংগঠনে জড়িত ছিলেন। বিদ্যালয়ে তিনি সময় দিতেন খুবই কম। এই সুযোগে আর্থিক নানা অনিয়ম সংগঠিত হয়। ২০২৪ সালের ১০ জানুয়ারি তিনি প্রধান শিক্ষক হিসেবে অবসর নেন। তার সময়ে হওয়া অনিয়ম ধামাচাপা দিতেই তদবির করে তিনি সভাপতি হয়েছেন।

অভিযোগ অস্বীকার করে শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, বিদ্যালয়ে আর্থিক কোনো অনিয়ম হয়নি। স্কুলটি আমার হাতে তৈরি, এজন্য শিক্ষক ও এলাকাবাসী মিলেই আমার নাম দিয়েছে। আমি সভাপতি হওয়ায় অনেকে ক্ষেপে গেছে। তিনি বলেন, মামলার বিষয়ে বিভিন্ন কিছু শুনেছি। আমি খোঁজ নেইনি, জামিন বা নকলও তুলতে যাইনি।

বিদ্যালয়ের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শরিফুল ইসলাম বলেন, সাবেক প্রধান শিক্ষক হওয়ায় মোহাম্মদ আলীর নাম দেওয়া হয়। এর বেশিকিছু তিনি বলতে চাননি।

নগরীর খালিশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, শেখ মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে খালিশপুর থানায় দুটি মামলা রয়েছে। একাধিকবার অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। তিনি পলাতক রয়েছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ