পুকুরে ছাড়া হয়েছে রুই, পাঙাশ, কাতলসহ নানা জাতের মাছ। পাড়ঘেঁষা জমি কেটে করা হয়েছে লম্বা ঢিবি। সেখানে আবাদ করা হয় টমেটো, লাউ, মরিচসহ মৌসুমি সবজি। একটু ওপরে আম, পেঁপে, কলা, বরইসহ হরেক রকম ফলের গাছ। 

সমন্বিত ফসল আবাদের এ চিত্র দেখা গেছে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার হরিহর ও নারিশ্চা বাজারে। এ গ্রামগুলো ছাড়াও কৃষি অফিসের পরামর্শ ও সহায়তায় ১৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় কৃষি অফিসের সহায়তায় গড়ে উঠেছে শতাধিক প্রজেক্ট। কাজ করছেন ১২৩ কৃষক। ৯ হেক্টেরজুড়ে থাকা ৯৮টি পুকুরে মৎস্য অফিসের তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ হচ্ছে। সবজি আবাদ হযেছে ২ হাজার ৮৭৫ হেক্টরে। এসব প্রজেক্টে কাজ করে সংসারে সচ্ছলতা এসেছে শত শত শ্রমিকের পরিবারেও। থেমে নেই ব্যক্তিগত উদ্যোগে চাষাবাদও। 

রাঙ্গুনিয়া চৌমহনী মাছের আড়তের এক মালিক নেজাম উদ্দিন। তিনি জানান,  সমন্বিত মাছের  প্রজেক্ট থেকে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৭০০ মণ মাছ আসে আড়তে, যার বাজারমূল্য ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা।  রাঙ্গুনিয়া ছাড়াও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এসব মাছ চাষ করা হয়। সুস্বাদু হওয়ায় এখানকার মাছের চাহিদা বাড়ছে। 

বছরে ৫ লাখ টাকা ভাড়া চুক্তিতে কৃষি প্রজেক্ট গড়ে তুলেছেন পদুয়া ইউনিয়নের হরিহর গ্রামের কৃষক শামসুল আলম। ১১টি পুকুর ঘিরে ৭২টি আম্রপালি গাছ আছে তাঁর। প্রতিটি গাছের মাঝখানের ফাঁকা জায়গায় আবাদ করা হয়েছে হাইব্রিড মরিচ, টমেটো, লাউ, তরমুজসহ বিভিন্ন ফসল। প্রজেক্টের কাজে তাঁকে সহায়তা করেন ১৩ শ্রমিক। চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত ৬০ হাজার টাকার ধনিয়া পাতা, ৫০ হাজার টাকার লাউ বিক্রি করেছেন। মাছ বিক্রি করেছেন প্রায় ২ লাখ টাকার। আনুষঙ্গিক খরচ বাদ দিয়ে মাছ, সবজি ও ফল থেকে বছরে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা আয় হয় তাঁর। মাছ, ফল, ফসল বিক্রির পর উদ্বৃত্ত পণ্য প্রতিবেশী ও আত্মীয়দের মধ্যে বিলিয়ে দেন এই কৃষক।

শামসুল আলম জানান, কৃষিকাজ তাঁর শুধু পেশা নয়, নেশাও। কৃষি অফিস এ কাজে যথেষ্ট সহায়তা করে। তাদের সহায়তায় চাষের আওতায় বাড়ানোর ইচ্ছে আছে তাঁর। 
শামসুল আলমের প্রজেক্টে কাজ করেন আমির হোসেন। দৈনিক ৮০০ টাকা মজুরি পান। এ আয় দিয়ে দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে ভালোভাবেই সংসার চলে যায়। 

আমির হোসেন বলেন, আগে সংসারে অভাব ছিল। প্রজেক্টে কাজ করে তা কাটিয়ে উঠেছি। দুই মেয়েকে লেখাপড়া শেখাচ্ছি। কিছু টাকা জমিয়েছি। আশা আছে সমন্বিত আবাদে যোগ দেব। 

একই ইউনিয়নের নারিশ্চা বাজারসংলগ্ন এলাকায় চারটি পুকুর লিজ নিয়ে সমন্বিত কৃষি প্রজেক্ট গড়ে তুলেছেন ছমির উদ্দিন। পুকুরে মাছ চাষের পাশাপাশি পাড়ে মালটা, লেবু, জাম্বুরা, কমলা, পেঁপে আবাদ করেছেন। মিষ্টি কুমড়া, লাউ, লালশাকসহ নানা সবজির ফলন এসেছে। এ বছর ৪ লাখ ১৯ হাজার টাকার মাছ বিক্রি করেছেন। ফল ও ফসল বিক্রি করেছেন লাখ টাকার। রমজান এলে বিক্রি আরও বাড়বে। সমন্বিত ফসল আবাদে সব মিলিয়ে ভালোই উপার্জন হচ্ছে এই কৃষকের। 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস জানান, মিশ্র ফসল আবাদ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন উপজেলার অনেক কৃষক। তাদের উদ্যোগে অনেকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। কৃষকসহ নতুন উদ্যোক্তাদের কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি প্রণোদনা দিয়ে সহায়তা করা হচ্ছে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সমন ব ত কর ছ ন ক জ কর অফ স র

এছাড়াও পড়ুন:

সম্পর্ক পুনরুজ্জীবনের ১ম ধাপ ঢাকার বৈঠক

প্রায় ১৫ বছরের বিরতি শেষে ঢাকায় গত বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসেছিলেন বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের দুই পররাষ্ট্রসচিব। পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের ঢাকা সফরের ৯ দিন আগে এ বৈঠক হলো। দুই পররাষ্ট্রসচিবের আলোচনাকে দেখা হচ্ছে দেড় দশকের স্থবির সম্পর্ক পুনরুজ্জীবনের প্রথম ধাপ হিসেবে। কারণ, দুই পক্ষই সম্পর্ক এগিয়ে নিতে আলোচনার অন্য প্রক্রিয়াগুলো নিয়মিত রাখার ওপর জোর দিয়েছে।

বৃহস্পতিবারের বৈঠক নিয়ে দুই পক্ষই আলাদা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পাশাপাশি সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেছে। দুই পক্ষ সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার স্বার্থে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কৃষি, শিক্ষা, ক্রীড়া, সংস্কৃতি ও পর্যটন খাতে সহযোগিতার ওপর জোর দিয়েছে। ওই বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন ও পাকিস্তানের পক্ষে পররাষ্ট্রসচিব আমনা বালুচ নেতৃত্ব দেন। ২৭ এপ্রিল পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরের কথা রয়েছে।

সম্পর্ক জোরদারের লক্ষ্যে বাংলাদেশ পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, বোঝাপড়া ও অভিন্ন স্বার্থে জোর দিয়েছে। আর পাকিস্তান সম্পর্ক এগিয়ে নিতে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষাগত ও কৌশলগত সহযোগিতাসহ নানা বিষয়ে বিস্তারিত মতবিনিময় হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেছে।

স্থবির সম্পর্ক পুনরুজ্জীবনে দুই পক্ষের একমতের বিষয়গুলো তাদের সংবাদ সম্মেলন আর বিজ্ঞপ্তিতে প্রতিফলিত হলেও ব্যতিক্রমও আছে। বিশেষ করে একাত্তরে বাংলাদেশে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর গণহত্যার জন্য দেশটির আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়া, আটকে পড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসন এবং অবিভাজিত সম্পদে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা প্রদান—এই অমীমাংসিত ঐতিহাসিক তিনটি বিষয়ের সমাধানের প্রসঙ্গ ঊহ্য থেকেছে পাকিস্তানের বিজ্ঞপ্তিতে।

অথচ বৈঠক শেষে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব সাংবাদিকদের বলেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে উচ্চপর্যায়ের যোগাযোগের মধ্য দিয়ে সম্পর্কটা যে জায়গায় এসেছে, তাতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সম্পর্ককে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে হলে অমীমাংসিত বিষয়গুলোর আশু সুরাহা জরুরি। পাকিস্তান এ বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছে।

পাকিস্তানের পক্ষ থেকে একাত্তরের গণহত্যার জন্য ক্ষমাসহ তিন সমস্যার প্রসঙ্গ ঊহ্য রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের একাধিক সদস্য জানান, আলোচনা হলেও পাকিস্তান বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়গুলো বাদ দেওয়ার নীতি অনুসরণ করেছে।

প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের ১ নভেম্বর বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকের পরও একাত্তরে গণহত্যার জন্য ক্ষমাসহ তিন সমস্যার কথা পাকিস্তানের বিজ্ঞপ্তিতে এড়িয়ে যাওয়া হয়। বাংলাদেশের বিজ্ঞপ্তিতে প্রসঙ্গটি উল্লেখ ছিল। এবারের মতো ২০১০ সালেও পাকিস্তান অনিষ্পন্ন বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিয়েছিল।

এর দুই বছর পর পাকিস্তানের তখনকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রাব্বানি খার বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ জানাতে ঢাকায় এসেছিলেন। ৬ ঘণ্টার সংক্ষিপ্ত সফরের সময় শেখ হাসিনার হাতে ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনের আমন্ত্রণপত্র তুলে দেওয়ার পাশাপাশি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন তিনি। ওই সময় হিনা রাব্বানি অতীত ভুলে সম্পর্ক সামনে এগিয়ে নেওয়ার কথা বলেছিলেন।

আরও পড়ুনপাকিস্তানের ক্ষমা চাওয়াসহ তিন বিষয়ে সুরাহা চেয়েছে বাংলাদেশ১৭ এপ্রিল ২০২৫

সাবেক কূটনীতিক এবং গবেষণাপ্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের (বিইআই) প্রেসিডেন্ট এম হুমায়ুন কবীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঐতিহাসিক অমীমাংসিত বিষয়গুলোর সমাধান রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। সামনে রাজনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা হলে বাংলাদেশ জবাব আশা করতে পারে। যেহেতু বাংলাদেশের দাবি যৌক্তিক, পাকিস্তান আজ না হোক কাল আমাদের দাবি মানবে বলে আমাদের বিশ্বাস।’

এদিকে পাকিস্তানের ইংরেজি দৈনিক দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন একটি প্রতিবেদন ছেপেছে, যার শিরোনাম ‘শীর্ষ কূটনীতিক ১৫ বছর পর ঢাকায় বরফ গলিয়েছেন’। পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৫ বছর ধরে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্কের ‘শীতল যুদ্ধ’ বাণিজ্য, যোগাযোগ এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে অগ্রগতির পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে। দুই পররাষ্ট্রসচিব তাঁদের বৈঠকে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য অভিন্ন ভিত্তি খুঁজে পেয়েছেন।

আরও পড়ুনবিশ্বে পূর্বশত্রুদের মিত্রে পরিণত হওয়ার অনেক উদাহরণ রয়েছে : প্রধান উপদেষ্টার উপ–প্রেস সচিব৫ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ