লাউয়াছড়া বনে আগুন, আতঙ্কিত স্থানীয়রা
Published: 27th, February 2025 GMT
কমলগঞ্জে হীড বাংলাদেশ নামের বেসরকারি সংস্থার টিলাভূমি ও লাউয়াছড়া বনে হঠাৎ আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। এতে বনের প্রায় দুই একর জায়গায় থাকা ছোট গাছপালা পুড়ে যায়। এতে সংশ্লিষ্ট এলাকায় ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
বুধবার দুপুর ১টার দিকে বনের ভেতরের অংশে লাগা আকস্মিক এই আগুনের খবর ছড়িয়ে পড়লে বন-সংশ্লিষ্ট লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন ফায়ার সার্ভিস ও বনকর্মীরা।
স্থানীয় সূত্র জানায়, হীড বাংলাদেশের পশ্চিমাংশের টিলাভূমি থেকে আগুনের সূত্রপাত। পরে তা লাউয়াছড়া বনে লাগোয়া অংশে ছড়িয়ে পড়ে। এতে মোট দুই একর অংশ পুড়ে গেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ইচ্ছে করে বনে আগুন লাগিয়েছে কোনো পক্ষ। আগুন দেখেই বন্যপ্রাণীরা দিগ্বিদিক ছুটতে থাকে। অনেক প্রাণীর আবাসস্থল ধ্বংস হয়েছে। বনের গাছপালাও পুড়ে গেছে।
কমলগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের লিডার ফারুকুল ইসলাম এ বিষয়ে জানান, তিন ঘণ্টার বেশি সময়ের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। নির্দিষ্টভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনুসন্ধানে কাজ চলছে।
লাউয়াছড়া বন রেঞ্জ কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম জানান, প্রথমে হীড বাংলাদেশের জায়গায় আগুন লাগে। পরে তা বনের প্রায় এক একর জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। কীভাবে আগুন লেগেছে তা এখনও নির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
মুগ্ধতা ছড়ানো মণিপুরিদের প্রাচীন উৎসব ‘লাই হারাওবা’
খোলা মাঠ পার হয়ে দমকা হাওয়া আছড়ে পড়ছে গাছে গাছে। হাওয়ায় ঝুমুর নাচে দুলে উঠছে গাছের শাখা-প্রশাখা। বাতাস বৈশাখের ভ্যাপসা গরমকে তেতে উঠতে দিচ্ছে না। একটা মনোরম, মন ভালো করা বিকেল তৈরি হয়েছে গ্রামে। মাঠের মধ্যে কিছু ভ্রাম্যমাণ দোকান বসেছে। খেলনা ও প্রসাধনীর দোকান। আছে পেঁয়াজু, বেগুনি, আলুভাজি, ঝালমুড়ি, চানাচুরসহ নানা রকম মুখরোচক খাবারের দোকানও।
বিকেলটা যত নুয়ে পড়ছে সন্ধ্যার দিকে, গ্রামের কাঁচা-পাকা পথ ধরে তত নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুণীসহ নানা শ্রেণির মানুষের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। শিশু, কিশোরী, তরুণী অনেকের খোঁপায় দুলছে ময়ূরের পেখমের মতো পালক। তারা অংশ নেবে নাচে, সে জন্য এ প্রস্তুতি। রঙিন হয়ে উঠেছে বিকেলটি। এই আয়োজন, ভিড় তৈরি হয়েছে একটি উৎসবকে ঘিরে। মণিপুরি জনগোষ্ঠীর একটি প্রাচীন ও তাৎপর্যপূর্ণ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ‘লাই হারাওবা’ বা ‘দেবতাদের আনন্দ’ উৎসব এখানে ডাক দিয়েছে সবাইকে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের তেতইগাঁওয়ে অবস্থিত মণিপুরি সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে এমন ভিড় জমেছিল। আগের দিন তিন দিনের এই উৎসব শুরু হয়। এর পর থেকে চলছে নানা আচার-অনুষ্ঠান। শেষ হয় আজ শুক্রবার। এতে অর্থায়ন করেছে ইউনেসকো-আইসিএইচ, উৎসব বাস্তবায়নে ছিল বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর। সহযোগিতা ও পরিচালনায় ছিল আইসিএইচ পিডিয়া বাংলাদেশ (সিআইবি), সাধনা-দক্ষিণ এশীয় সংস্কৃতির অগ্রগতি কেন্দ্র।
বিকেলটা ঘনিয়ে আসতে থাকলে জমে ওঠে মণিপুরি সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণ। ক্রমে শ্রোতা-দর্শকে পূর্ণ হয়ে ওঠে শামিয়ানার নিচে পেতে রাখা খালি চেয়ারগুলো। আচার-অনুষ্ঠান, নাচে অংশ নিতে কুশীলবেরাও সক্রিয়, সচল হয়ে ওঠেন। ঢোল-খোল, বাঁশিসহ নানা বাদ্যযন্ত্রের সুর বেজে ওঠে, প্রাঙ্গণজুড়ে চলতে থাকে সুরের ঝংকার। বাইরে সন্ধ্যার আঁধার নামলে উন্মুক্ত মঞ্চে উপস্থিত হন সমবেত শিল্পীরা। ক্রমে নারী, তরুণী ও শিশু-কিশোরীরা নৃত্যে অংশ নিতে থাকেন। গান ও সুরের তালে, নানা মুদ্রায় দীর্ঘ সময় ধরে নাচ চলতে থাকে। একটা সময় অনেকজনের অংশগ্রহণে উন্মুক্ত মঞ্চটি জলতরঙ্গের মতো দুলতে থাকে, ভাসতে থাকে। একদিকে খোলা হাওয়া, অন্যদিকে গান ও সুরের মূর্ছনা সন্ধ্যাটিকে প্রার্থনার মতো স্নিগ্ধ মুগ্ধতায় ডুবিয়ে রাখে।
ঢেউতরঙ্গে চলছে নাচ। বৃহস্পতিবার বিকেলে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের মণিপুরি সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে