সব ধরনের বিপরীত বিশ্বাস থাকা সত্ত্বেও গত নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট পদে জয়লাভ করেছেন ট্রাম্প। তার পর থেকে ধনকুবেররা ডোনাল্ড ট্রাম্পের চারপাশে ঘুরঘুর করছে। তারা ট্রাম্পের শুধু দোসর নয়; বিষয়টি ওয়াশিংটন পোস্টের সাবেক রাজনৈতিক কার্টুনিস্ট অ্যান টেলনেসের জানা উচিত।

গত মাসে তাঁর আঁকা কার্টুনটি পত্রিকাটির সম্পাদক প্রকাশ করতে অস্বীকার করেছিলেন। এর জের ধরে টেলনেস চাকরি ছেড়ে দেন। ওই কার্টুনে টেলনেস অ্যামাজন ও ওয়াশিংটন পোস্টের মালিক জেফ বেজোস, লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমসের মালিক প্যাট্রিক সুন-শিয়ং, ওপেনএআই বিলিয়নেয়ার স্যাম অল্টম্যান, মেটার মার্ক জাকারবার্গ, মিডিয়া জায়ান্ট ডিজনি ও আমেরিকান ব্রডকাস্টিং কোম্পানির প্রতিনিধিত্বকারী মিকি মাউস হয় প্রেসিডেন্টের সামনে হাঁটু গেড়ে বসেন অথবা নতজানু হয়ে যাওয়ার চিত্র উঠে এসেছে।

পদত্যাগ করার সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে টেলনেস লিখেছেন, ‘এ ধরনের প্রেস সংস্থার মালিকের হাতেই মুক্ত সংবাদপত্রের সুরক্ষা ন্যস্ত এবং একজন স্বৈরাচারীর অনুগ্রহ পেতে চেষ্টা করা শুধু সেই মুক্ত সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করবে।’

ট্রাম্পের অনুগ্রহ পেতে বিলিয়নেয়ার ও মেগা করপোরেশনের প্রচেষ্টার কারণ নিজেদের ব্যবসায়িক স্বার্থ ও সরকারি চুক্তি রক্ষা করা। আর টেলনেস ও অন্য সমালোচকরা যাতে ‘জি হুজুরে’ পরিণত হন, সেই লক্ষ্যে তারা সক্রিয়। 

ধনী ও বিশাল করপোরেশনগুলোর শেষ লক্ষ্য ট্রাম্পের সঙ্গে থেকে নিজেদের স্বার্থ অক্ষুণ্ন রাখা। যদি ফেডারেল সরকারের অর্থাগারের আরও বেশি শেয়ার বা আরও বেশি ক্ষমতা লাভের জন্য একটু বাঁকানো হাঁটু বা প্রশংসার দরকার পড়ে, তবে তাই হোক।

বিলিয়নেয়ার শ্রেণি প্রকৃতপক্ষে ফেডারেল সরকারের অগ্রাধিকারগুলো পুনরায় সাজিয়ে নিতে ট্রাম্পকে ব্যবহার করছে। তাদের ক্ষেত্রে ট্রাম্প যেন শর্তাদি জুড়ে না দেয় এবং কর্তৃত্ব না চালাতে পারে, তা খুঁজে বের করার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো গত এক বছরে ট্রাম্পের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের দিকে নজর দেওয়া। ইলন মাস্ক, মিরিয়াম অ্যাডেলসন ও লিন্ডা ম্যাকমোহনের মতো লাখ লাখ মাল্টি-বিলিয়নেয়ার ট্রাম্পের ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রচারণা চালিয়েছিলেন। নির্বাচন-পরবর্তীকালে মাস্ক, অল্টম্যান, বিবেক রামস্বামী ও অ্যাপলের টিম কুক, অ্যামাজন, মেটা, ব্যাংক অব আমেরিকা ও গোল্ডম্যান স্যাকসের মতো ট্রিলিয়ন ডলার করপোরেশনগুলোর সঙ্গে তারা ট্রাম্পের ১৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের তহবিল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অর্থ দেন। গত কয়েক মাসে ডিজনি-এবিসি ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের জন্য ট্রাম্পের করা একটি মানহানির মামলা নিষ্পত্তি করেছে। আবার ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি বিদ্রোহের পর ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম থেকে ট্রাম্পকে নিষিদ্ধ করার জন্য মেটা ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়ে নিষ্পত্তি করেছে।

এ ধরনের বিপুল পরিমাণ অর্থ জোগান দেওয়ার সঙ্গে জড়িত থাকার মধ্য দিয়ে অন্তত তারা ট্রাম্পের প্রশাসনে প্রধান প্রধান ভূমিকার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। অবশ্যই তাদের পদক্ষেপের অন্যান্য সম্ভাব্য কারণ রয়েছে। যেমন তাদের ব্যবসার জন্য সরকারি চুক্তিতে আরও প্রবেশাধিকার বা প্রেসিডেন্টের কাছে অনায়াসে পৌঁছা। কেননা, তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক ও সামাজিক নীতি গ্রহণ করেন। তাদের কারণ যা-ই হোক, এই পুঁজিপতি ও করপোরেশনগুলো শুধু সম্মান প্রদর্শনের জন্য ট্রাম্পকে এই অর্থ দিচ্ছে না।

কারণ দ্বিতীয়বার ট্রাম্প ক্ষমতায় থাকলে তারা তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্যের কাছাকাছি যেতে পারে। একটি পুঁজিবাদী ব্যবস্থা, যাকে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও সরকারের কাছে জবাবদিহি করতে হয় না; মার্কিন জনগণ তাদের থামাতে গিয়ে খুব বিভ্রান্ত এবং ক্লান্ত হয়ে পড়ে। সব ধরনের উপস্থিতি সত্ত্বেও নার্সিসিস্টিক ডাকাত ব্যারন অভিজাতরা ট্রাম্প ও মার্কিন সরকারকে তাদের পুতুল বানানোর প্রক্রিয়ায় রয়েছে। 

ডোনাল্ড আর্ল কলিন্স: ওয়াশিংটন ডিসির আমেরিকান ইউনিভার্সিটির প্রফেসরিয়াল লেকচারার: আলজাজিরা থেকে ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন য সরক র করপ র ধরন র

এছাড়াও পড়ুন:

আন্তর্জাতিক আদালতে আওয়ামী লীগের বিচার না হলে দেশে শান্তি আসবে না: সামান্তা শারমিন

আন্তর্জাতিক আদালতে আওয়ামী লীগের বিচার না হওয়া পর্যন্ত দেশে শান্তির পরিবেশ সৃষ্টি হবে না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন।

আজ শনিবার দুপুরে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার ফ্যাশন স্কয়ারে শহীদ মিনার চত্বরে পথসভায় এমন মন্তব্য করেন সামান্তা শারমিন। চরফ্যাশন উপজেলা জাতীয় নাগরিক পার্টির আয়োজনে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপ, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এবং জুলাই-আগস্টে নিহত শহীদ ও আহতদের স্মরণে এই পথসভা অনুষ্ঠিত হয়।

সামান্তা শারমিন বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি সন্ত্রাসী দল। এদের জায়গা বাংলাদেশের মাটিতে হতে দেওয়া হবে না। আওয়ামী লীগ একটি ফ্যাসিস্ট, গণবিরোধী ও দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী দল। এ দলের বিচার হবে আন্তর্জাতিক আদালতে। আন্তর্জাতিক আদালতে আওয়ামী লীগের বিচার না হওয়া পর্যন্ত দেশে রাজনৈতিক সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরে আসবে না।’

গত ১৫ বছর বাংলাদেশে একটি দলই রাজত্ব কায়েম করেছে মন্তব্য করে সামান্তা শারমিন বলেন, ‘৫ আগস্ট বাংলাদেশ থেকে সেই আওয়ামী লীগকে বিতাড়িত করেছেন ছাত্র-জনতা। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি পুরো ক্রেডিট নিয়ে নেওয়ার জন্য কিছু পক্ষ নিজেদের গুছিয়ে নিয়েছে। যাদেরকে গত ১৫ বছর খুঁজে পাওয়া যায়নি। তারা এখন বড় বড় কথা বলছে। তাদেরকে দেখছি এলাকায় চাঁদাবাজি করতে। তাদেরকে দেখছি এলাকায় ত্রাস সঞ্চার করতে। কিন্তু এই বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা ঘোষণা দিতে চায়, বাংলাদেশে লুটপাট আর সন্ত্রাস মেনে নেওয়া হবে না।’

এ সময় সামান্তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সদস্য হাসান মাহামুদ, চরফ্যাশন উপজেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ওহিদ ফয়সালসহ জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ