ঘাটাইল-সাগরদীঘি সড়ক পাহারায় গ্রামবাসী
Published: 27th, February 2025 GMT
বর্তমানে আলোচিত টাঙ্গাইলের ঘাটাইল-সাগরদীঘি সড়ক। রাত নামলেই সেখানে ডাকাত আতঙ্ক। ১০ দিনে এই সড়কে ঘটেছে তিনটি ডাকাতির ঘটনা। লক্ষণেরবাধা এলাকাতেই দুটি ডাকাতির ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ মঙ্গলবার ভোরে ডাকাতদের কবলে পড়ে শিক্ষা সফরগামী চারটি স্কুলবাস। এর পরই সড়কের ওই স্থানে সারারাত পাহারা দিচ্ছেন গ্রামবাসী।
স্কুলবাসে ডাকাতির ঘটনায় মঙ্গলবার রাতেই থানায় মামলা করেন ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার সোয়াইতপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ খলিলুর রহমান। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দু’জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
এর আগে গত ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে একই স্থানে ডাকাতি হয়। এ ঘটনায় মোটরসাইকেল ও কাঁচা পণ্যের ট্রাক আটক করে তাদের থেকে সব লুট করে নিয়ে যায় ডাকাতরা। একই সড়কে ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে উপজেলার সন্ধানপুর ইউনিয়নের ফকিরচালা এলাকায় ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাতির কবলে পড়েছিল ১০টি ট্রাক, সিএনজি অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল। ডাকাতরা চালকদের কাছ থেকে নগদ টাকাসহ নিয়ে যায় স্মার্টফোন। তিনটি ডাকাতির ঘটনাতেই সড়কের পাশে থাকা বনের গজারি গাছ কেটে সড়কে ফেলে রাখা হয়।
ঘাটাইল উপজেলা সদর থেকে সাগরদীঘি পর্যন্ত সড়কের দৈর্ঘ্য প্রায় ৩০ কিলোমিটার। প্রতিবছর এই সড়কে দুটি স্থানে ডাকাতি হয়। এ বছরও ঘটনা ঘটেছে সেই দুটি স্থানেই। স্থান দুটি সাগরদীঘি ইউনিয়নের লক্ষণেরবাধা ও সন্ধানপুর ইউনিয়নের ফকিরচালা। লক্ষণেরবাধা স্থানের দূরত্ব সাগরদীঘি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র থেকে প্রায় চার কিলোমিটার এবং ফকিরচালার দূরত্ব ঘাটাইল থানা থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার। লক্ষণেরবাধা এলাকায় সড়কের আশপাশে এক কিলোমিটারের মধ্যে নেই জনবসতি। এলাকাটি ঘন জঙ্গলে ভরা। ফকিরচালার আশপাশেও তেমন বসতি নেই।
এদিকে, ঘাটাইল-সাগরদীঘি সড়কের লক্ষণেরবাধা এলাকায় আধা কিলোমিটারের মধ্যে রাতে পাহারার ব্যবস্থা করেছেন এলাকাবাসী। ১০ থেকে ১৫ জনের একটি দল কামালপুর থেকে মালিরচালা ব্রিজপাড় পর্যন্ত সড়কের আধা কিলোমিটার এলাকায় হাতে লাঠি নিয়ে পাহারা দেয়।
মালিরচালা গ্রামের আব্দুস সালাম ভূঁইয়া লিটন বলেন, এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে লক্ষণেরবাধা এলাকায় পুলিশ চেকপোস্টের দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু কাজে আসছে না। পুলিশ চেকপোস্ট বসানো হলে হয়তো ডাকাতির ঘটনা বন্ধ হবে।
এদিকে ডাকাতির কবলে পড়া শিক্ষার্থীদের এখনও আতঙ্ক কাটেনি। সহকারী শিক্ষক ওবায়দুল হক রুবেল বলেন, ডাকাতদের কবলে পড়ে আমরা মারাত্মকভাবে আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। ডাকাতরা আমাদের স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী তামিমকে আহত করে তার মোবাইল ফোনসহ টাকা লুটে করে নিয়ে যায়। শিক্ষার্থী তামিম জানায়, এক দল ডাকাত বাসের ভেতরে উঠে চালককে মারতে শুরু করে। পরে আমাদের গাড়ির সবার শরীর চেক করে মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ নিয়ে যায়।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ড ক ত র ঘটন স গরদ ঘ এল ক য় সড়ক র র কবল ই সড়ক
এছাড়াও পড়ুন:
বিভিন্ন স্থানে কারিগরি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ চলছে
ছয় দফা দাবিতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কাফনের কাপড় পরে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা। শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) জুমার নামাজের পর থেকে তারা এ কর্মসূচি পালন করেন।
ঢাকা: ছয় দফা দাবি আদায়ে আজ জুমার নামাজ শেষে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের হল মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে কাফনের কাপড় পরে মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা ‘তুমি কে, আমি কে, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার’, ‘কুমিল্লায় হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
ফরিদপুর: শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক ফলপ্রসূ না হওয়া এবং কুমিল্লায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে আজ দুপুরে কাফনের কাপড় মাথায় বেঁধে গণমিছিল করেছে ফরিদপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। প্রতিষ্ঠানের অডিটোরিয়ামের সামনে জড়ো হয়ে তারা এ কর্মসূচি পালন করেন।
আরো পড়ুন:
কারিগরি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ছাত্রলীগের সমর্থন ‘ঘৃণাভরে’ প্রত্যাখ্যান
কুয়েট ভিসির পদত্যাগ দাবিতে মশাল মিছিল
ফরিদপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের মেকানিক্যাল ডিপার্টমেন্টের সপ্তম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী বুলবুল আহমেদ মাহিম বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের দাবি জানালেও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় আমাদের সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। শিক্ষার পরিবেশ ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। কুমিল্লায় আমাদের সহপাঠীদের ওপর হামলা রাষ্ট্রেরই ব্যর্থতা।”
কম্পিউটার ডিপার্টমেন্টের পঞ্চম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী নাফিজুল রোহান বলেন, “আমরা কাফন পরেছি এই বার্তা দিতে যে, যদি আমাদের ন্যায্য দাবি না মানা হয়, তবে আমরা মৃত্যু পর্যন্ত লড়াই করতে প্রস্তুত। সরকারকে অবিলম্বে আমাদের দাবিগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে।”
ইলেকট্রিক্যাল ডিপার্টমেন্টের তৃতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী লামীম ইসলাম বলেন, “আমরা কোনো রাজনৈতিক দলের অংশ নই, আমরা শুধু আমাদের অধিকার চাই। শিক্ষা মন্ত্রণালয় যদি আমাদের সমস্যা সমাধানে আন্তরিক না হয়, তাহলে আন্দোলন আরো তীব্র হবে।”
ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ওসি আসাদুজ্জামান বলেন, "জুমার নামাজের আগে থেকেই আমরা ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অবস্থান করছিলাম, যাতে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি না হয়। শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে তাদের কর্মসূচি পালন করেছেন। কোনো ধরনের উত্তেজনাকর ঘটনা ঘটেনি।”
রংপুর: একই দাবিতে দুপুরে কাফনের কাপড় মাথায় বেঁধে শিক্ষার্থীরা রংপুর পলিটেকনিক ক্যাম্পাসে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে তারা সেখান থেকে একটি গণমিছিল বের করেন। মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে পুনরায় ক্যাম্পাসে ফিরে আসে। এসময় সেখানে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন দাবি নিয়ে আন্দোলন করা হলেও কর্তৃপক্ষ তাদের কথা শুনছে না। তাই বাধ্য হয়ে এবার তারা প্রতীকী ‘কাফনের কাপড়’ পরে মাঠে নেমেছেন। অতি দ্রুত দাবি আদায় না হলে সামনে আরো কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন শিক্ষার্থীরা।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সপ্তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হাফিজুর রহমান, ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের সাব্বির হোসেন ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২১ শিক্ষাবর্ষের ফুয়াদ।
গোপালগঞ্জ: শুক্রবার জুমার নামাজের পর বেলা ৩টার দিকে গোপালগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সামনে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। তারা মাথায় কাফনের কাপড় পরে বিক্ষোভ মিছিল করেন। মিছিলটি বিভিন্ন সড়ক ঘুরে সদর উপজেলার চন্দ্রদিঘলীয়া এলাকায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে গিয়ে শেষ হয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে ক্যাম্পাসে ফেরত পাঠায়।
এর আগে, সমাবেশে শিক্ষার্থীরা জানান, সরকারকে বলব, তারা যেনে দাবিগুলো দ্রুত মেনে নেয়, তাহলে শিক্ষার্থীরা রাজপথ ছেড়ে দেব। কারিগরি শিক্ষা সেক্টরে যে বৈষম্য আছে, শিক্ষার্থীরা চায় সরকার যেন তা দূর করে। তা না হলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- শিক্ষার্থী মো. ফয়সাল, মো. রাব্বি, মো. ফজলে রাব্বি বাঁধন ও মো. মোস্তাকিন মিয়া।
নরসিংদী: কুমিল্লায় পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ও ছয় দফা দাবি আদায়ে মিছিল করেছে নরসিংদীর সরকারি-বেসরকারি সব পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে বিক্ষোভ মিছিলটি নরসিংদী সরকারি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট থেকে শুরু হয়। সেটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে সাহেপ্রতাপে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা জানান, বাংলাদেশ কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে একাত্বতা পোষণ করে তারা ছয় দফা দাবি জানিয়ে আসছেন। তাদের দাবি মেনে নিতে কর্তৃপক্ষ ব্যর্থ হলে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তারা।
ফেনী: জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে অষ্টম শ্রেণি বা এসএসসি পাস ‘ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের’ পদোন্নতির প্রতিবাদে কাফনের কাপড় মাথায় বিক্ষোভ মিছিল করেছেন ফেনী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। প্রতিষ্ঠানটির জামে মসজিদের সামনে থেকে বের হওয়া মিছিলটি শহরের সদর হাসপাতাল মোড়সহ বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে ‘জুলাই ২৪ শহীদ স্মৃতি চত্বরে’ গিয়ে সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা।
ফেনী পলিটেকনিকের শিক্ষার্থী রাতুল বলেন, ‘আমরা ৬ দফা দাবি নিয়ে আন্দোলন করছি অনেকদিন। সরকার বলেছে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা হবে। কিন্তু কাল যে বৈঠক ডাকা হয়েছিল, সেখানে কেউই ছিল না। তাহলে আমাদের যৌক্তিক দাবি মানতে গড়িমসি কেন?’
শিক্ষার্থী সানি বলেন, “ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের বেশির ভাগই অষ্টম শ্রেণি বা এসএসসি পাস। তাদের পক্ষে ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দেওয়া সম্ভব নয়।’
এই প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদক ও জেলা প্রতিনিধিরা।
ঢাকা/মাসুদ